শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

জিনাত ইসলাম

ধারোষ্ণ


শম্পা বাস থেকে মাটিতে পা রাখতেই বুঝতে পারে ফ্ল্যাটের চাবি ব্যাগে নেই। আজ নিয়ে ২৭ দিন প্রকাশের সঙ্গে কোনো কথা নেই। নো ফোন, নো মেসেজ। ওখানেই শম্পার ভুবন জোড়া সুখ। মুখে মাখা আলোভেরার গাছ, প্রসাধনী, শাড়ি-জামার  সুবিশাল সম্ভার। রাগারগী হলে কদিনের জন্য বাপের বাড়ি থেকে স্কুল। তারপর নয়  প্রকাশের ফোন, না হলে শম্পা নিজে থেকেই চলে যায় ফ্ল্যাটে। দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতে পারে না বেশিদিন। এবারেই অভিমানের পালাটা দীর্ঘদিন চলল। প্রকাশের অহং, আমি তোমার জন্য সব ছেড়েছি। পরিবার দুই সন্তান। শম্পার যুক্তি, আমিও এই শহরের বুকে গোপন চোরাচোখ, বিষমাখানো কটুক্তি, অবাঞ্ছিত প্রশ্নবাণ সব উপেক্ষা করে তোমার মতো এক চর্চিত মানুষের সঙ্গে লিভিং রিলেশন রক্ষার সাহস দেখিয়েছি প্রায় ৫ বছর মনে একটা আশঙ্কা নিয়ে শম্পা ছটপট করতে থাকে। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে চাবি নিয়ে রওয়ানা দেবার আগে প্রকাশকে একবার জানান  দেওয়া ঝপ করে মনের কথা লুকিয়ে বলে, চার্জ হচ্ছে না তাই ঘরে রাখা চার্জার  লাগবে। প্রকাশ ফোন ধরে পাক্কা ২০ মিনিট পর। কোথায় আছ? জিজ্ঞাসা করতেই জড়ানো গলায় উত্তর দেয় প্রকাশ, থামো তোমার বাড়িতে দিয়ে আসছি। শম্পা মুহূর্তের মধ্যে আন্দাজ করে ফেলে বড় কোনো গন্ডগোলের কথা। অফিস টাইমে  নেশা? ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা কর্মীকে ফোন লাগায় শম্পা কাকু কোথায়? উত্তর আসে, অফিসে। ঘরে কে আছে? ওপার থেকে ভেসে আসে ভরাট গলায়, কাকীমা। পায়ের তলায় পিছলে যেতে থাকে যেন পৄথিবী। এবার দাঁড়াবে কোথায় শম্পা? হা-হা হাসির উন্মাদনায় যেন ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা বাতাসে প্রকাশের স্ত্রী। কী অসহ্য এক দন্ডের নিঃশ্বাস! একে হ্যাঁ, একেই তো ডিভোর্স দিয়েছিল প্রকাশ কয়েক বছর আগে!  তবে? গড়িয়ে পড়ে শম্পার ৭৭ কেজি ওজনের বিরাট দেহ সিটের উপর। ভেঙ্গেচুরে একাকার হতে থাকে মাথা সংলগ্ন সব শিরা উপশিরা। রিক্সাওয়ালা ডাকতে থাকে, দিদিমনি কোথায় যাবেন? কানে কানে হারাতে থাকে এক একটি করে শব্দ। অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে শম্পা। যাব ষ্টেশন। না, না, গোরাবাজার। না, রানীবাগান, না, রঘুনাথগঞ্জ। অবচেতনার ঘোরে ঠোঁটের আগেই লুকিয়ে যায় শম্পার উত্তর।                     

1 টি মন্তব্য: