শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

চিঠি

তোকে বলব কিনা ভাবিনি
এখানে সাদা জীবন ঘুম ভাঙলেই
এখানে শবদের গাড়ি যায় হামেশা
আমি ঝুরি ঝুরি ফুল দিই
জন্ম-মৃত্যুর ব্যবসা আমার
আমি জীবন্ত কুলি
মৃত ভগবানের সাথে
বুঝে নিই সব লেন-দেন।

এখানে আগুনের ঘনত্ব কম
শোকার্ত আবহাওয়াতে জলীয়বাষ্প ওড়ে
যখন সাত রঙ এক নিমেষে জ্বলে ওঠে
আমি আমার শিশুর মুখে মৃত্যু দেখি
পুরনো প্রেমিকার নাভিতেও
এখানে জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে যাচ্ছে
বেঁচে থাকার গল্প
এখানে ফুলের গন্ধে ভ্রমর ভয় পায়
রঙে বড্ড চোখ জ্বলে আমার
সাদা রঙে
চল শীতের ফসল ফলাই এবার
আগুন নতুন জন্ম পাক
উষ্ণতায়।



প্রিয় হাত

অচল শকট ঠেলে চলেছে
নিরন্তর দুটি হাত
নিরামিষ শব্দঘর, সাদা দেওয়াল
খাট, ঝুলবারান্দা, জুতোর বাক্স
সবাই তাকে একই নামে ডাকে
যাকে ছুঁলেই খুচরো পয়সাগুলোর-
ভালো নাম মোহর
আর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেই
জিভে ইলিশের স্বাদ
সেই হাতে আয়ুরেখা দীর্ঘ স্পষ্ট
আর ভাগ্যরেখা প্রাণত্যাগ করেছে
অর্ধেক রাস্তায়
আঙুলের কড়ে কয়েকশো বছরের গল্প
আমি শুধু সেই হাতকেই হাত বলে জানি
যে হাত আঁচলে মুছলে
আরেক জন্মের গন্ধ পাই।


শুক্লপক্ষ

এক এক করে ক্ষয়ে গেল পৃথিবীর চারপাশ
হাত – পা – গোড়ালি
কয়েকটা সোনালি গম মুখে
ফিরে গেল উজ্জ্বল পায়রারা
আর ঘুম ভুলে সোনালি শীতলপাটি
মাটির দাওয়ায়।

কাল থেকে ধান চাষ শুরু হবে
সাদাশাড়ি, পাতকুয়ো, জোয়ান ছেলে, চাঁদমুখ
ওরা চারজন একসাথে জাবর কাটে
শুক্লপক্ষে আলো পড়ে শান্ত গাভীর গর্ভে
নিঃশব্দে শিশির পড়ে দাওয়ায়
উচ্ছল টুপটাপ রাত
ওরা চারজন একসাথে তাকায় আকাশে
আলতো হাসে চাঁদ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন