রমাকান্তনামা - খুচরো ভাবনা
কারো ভাবনার ওপর কারো বন্দিশ নেই।
ব্যাপারটা রমাকান্তর কাছে খুব ভালো লাগে। আর শুধু রমাকান্ত কেন, সবাই এই এক জায়গায় একান্ত
স্বাধীন।
আর্থিক সম্পন্ন মানুষের ভাবনার
অবসর অনেক। নিশ্চিন্ত অবসরে নিজেকে ঢেলে দেওয়া যায় ভাবনায়, স্মৃতিতে, স্বপ্নে। অবসর সময় আদিরসের
চিন্তাগুলি রমাকান্তকে বড় নাড়া দিয়ে যায়। ঘরে সুন্দরী
স্ত্রী আছে, শরীর সুখের অভাব কোথায়? আছে, অভাব আছে, দশটা বছর যেতে
না যেতে এখন থেকেই বউ সঙ্গ দিতে ক্যাঁৎ ক্যুঁৎ করে ওঠে। নানান বাহানায় নিজেকে সরিয়ে নেয়। আরে পুরুষ প্রকৃতি যে বড় উতল! বয়স বাড়তে থাকলে ওপর শরীরের চঞ্চলতা কমে আসে বটে, কিন্তু অন্তঃস্থলের
উচ্ছলতা কতটা কমে?
একেবারে নিরাশ হয়ে রেগে যান
রমাকান্ত। হারামজাদী, কী একটা যন্ত্র
ধরে আছিস তোরা যে সেটাকে সব সময় আগলে রাখতে হয়! আরে আমি তোর স্বামী, তোকে নিয়ে যখন তখন যা ইচ্ছে তাই করব -- তাতে কার
বাপের কি? কিন্তু ওই ভাবনা পর্যন্ত। সভ্য সমাজে মুখে এমন কিছু বলার
উপায় নেই। তবে ওই ভাবনা, ভাবনায় স্বয়ংক্রিয়
কিছু দৃশ্য মনোচক্ষু দান করতে পারে। আর এই অনুভূত মনোচক্ষুর
মানসে মানুষ অনেকটা শারীরিক সুখ পেতে পারে।
বিন্দু থেকে এই দিনদুনিয়া শুরু
হয়। একমাত্র রং হলেও এই বিন্দু বৃত্তাকারে যত বাড়তে থাকে, ততই নিত্য
নতুন বর্ণছটা ছাড়তে থাকে। বর্ণ থেকেই ফুল, আর ফুল ভাবনা থেকেই ধীরে ধীরে নারী ভাবনার উদয়। এই নারী, তার যৌবন, তার
প্রসাধন মাত্রা, তার শরীর দোলন প্রবণতা, সব মিলিয়ে উঠে আসে
বাসনা হয়ে। বাসনা
শুরুতে সুপ্ত, ধূমায়িত। আর ধূমায়িত মানে কোথাও তা আগুন উৎসের অস্তিত্ব!
পুরুষকে নিয়ে নারীর ভাবনার কথা রমাকান্ত বলতে পারবেন
না। তবে পুরুষদের আদল নাকি অনেকটা কাদামাটির মতো। অন্তত রমাকান্ত তাই ভাবেন। দুর্দান্ত পুরুষেরাও
নাকি নারীর সামনে দলামাটি হয়ে যান! তার চরিত্র চিত্রণ করার মতো অবস্থা আর থাকে না -- একেবারে
ন্যাড়া ল্যাংটা যাকে বলে!
এই তো সেদিনের কথা। রমাকান্ত
মাঝরাতে উতলা হয়ে উঠেছিলেন। স্ত্রী তাঁর নারাজ। মাঝখানে আট-নয় বছরের
ছেলেটাকে শুইয়ে দিয়ে তিনি ঘঁত ঘঁত নাক ডাকছিলেন।
--হারামজাদী! না মুখ থেকে নয়, মন থেকে রমাকান্তর
আবার গালি বেরিয়ে এলো।
উঃ রাত কত দীর্ঘ! শরীরের রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ মাঝে
মাঝে ফুলে-ফুঁসে উঠছিল। নির্ঘুম
রাত্রি। এবার দুষ্প্রাপ্য কোনো দৃশ্য রমাকান্তর
চোখের সামনে ভেসে এলো। ওই তো চির পরিচিত এক নারী! আলুলায়িত কেশে, অবশ দেহ বন্ধনী বেশে হেঁটে চলেছে! আকাশে তখন মরা চাঁদ, আঁধার আলোর বনস্থলী। বাতাসে তখন কামিনী গন্ধ, দেহে কাঁটাময়
যন্ত্রণা। রমাকান্তর নেশায়িত ঢুলু ঢুলু শরীর। সেই নারীর টানা
কাজল ভুরু নেচে উঠল। হাসির তালে
তালে তার দমকে উঠল শরীর। নাম না জানা এক নারী, অথচ চেনা জানার মাঝামাঝি একজন। তাকিয়ে ছিল রমাকান্তর
দিকে, তাঁর নগ্নতার দিকে।
আর সময় ছিল না। রমাকান্ত বেড় দিলেন সেই নারী দেহ। তরুদেহে বল্কলের মতো মিশে যাবার তৎপরতায় সক্রিয় বাহুবেগে রমাকান্ত সংগম দৃশ্যে
মেতে উঠলেন। আর অমোঘ নিয়মে এক সময় সমস্ত ভাবনারা ফেটে পড়ল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন