চুমু
পঞ্চমীর শীতের
বিকেল। বাতাসে গরম ভাব। মাঠের মাঝে একা গাছটা ভাতঘুম দিয়ে দূরের দিকে তাকাল।
ভাবছিল পাহাড় আর রোদের সম্পর্কের কথা। ভাবছিল তেজী রোদ কেমন করে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জাপটে রেখেছে পাহাড়টাকে।
পাশের অন্য গাছটা
অনেকক্ষণ উসখুস করছিল আর দেখছিল, পাতার ছায়া কেমন হাল্কা হয়ে অন্য আলোর সাথে খেলছে। ঘন হচ্ছে। বসন্ত আসছে। ঐ গাছটা এইসব দৃশ্য
ছাড়িয়ে কোথায় তাকিয়ে আছে বুঝল না। তাকে ডাকল।
একা গাছটা চারপাশ দেখল। কে কাকে ডাকছে বুঝল না।
- তোমাকেই
ডাকছি। নরম গাছটার দুটো পাতা তিরতির করে উঠল।
এতো বয়স হলো, কেউ তাকে ডাকেনি। সে অবাক হলো। তার এতো পাশে এই গাছটা কখন চলে এসেছে, খেয়ালই করেনি। বলল – আমাকে কেন?
গম্ভীর আওয়াজে ভয় না
পেয়ে অন্য গাছটা বলল – তোমার কাণ্ডের কাছে দেখেছ?
গাছটা নিচের দিকে তাকাল। বলল – হ্যাঁ, এটা দেখার কী আছে? দুটো মানুষ। রোজ কত মানুষই তো দেখি!
- ব্যাস। শুধু দুটো
মানুষ? আর কিছু না? ভালো করে দেখ।
গাছটা দেখল – মানুষই
তো! ছায়াতে বসে জিরোচ্ছে।
অন্য গাছের একটা পাতা উত্তেজনায় কেঁপেই চলেছে। বলল, মোটেই না।
একটা মানব, আর অন্যটা মানবী।
একা গাছটা দেখল।
মানব আর মানবী পাশাপাশি বসে। ঠোঁটের পাতা মাঝে মাঝে ঠেকে যাচ্ছে। তাকাল পাশের গাছটার দিকে। সে তখন
যেন ভুলেই গেছে, এক মনে পাহাড়টাকে
দেখছে। দিগন্তে লাল সূর্য। সে তাকালই না। একা গাছটা অপলক। তাই বাধ্য হয়ে চোখ নামিয়ে বলল – কী?
তার পাতাগুলো তখন
শান্ত। বাতাসের নিঃশ্বাস শুনছে।
গাছটা বলল – এর মানে
কী? কিছুই তো বুঝলাম না।
সেই অন্য গাছটা অনেক পরে বলল - যাদের পাতা অমনি করে ছোঁয়, তারাই বুঝতে পারে।
শুনে একা গাছটা তার
বাঁ হাত বাড়িয়ে দেয়। যেমন করে নিচের মানুষটা। তিনটে বসন্ত চলে গেল তার হাতটা অন্য গাছকে জড়াতে।
ঠিক পঞ্চমীর দুপুর।
তার পাতা এসে লাগল পাশের গাছটার পাতায়। তারা থরথর করে কেঁপে উঠল।
আর, একটা বসন্ত বৌরী
এসে বসল সেই ডালে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন