সম্পাদকীয়
সময়ের হিসেব অনুযায়ী
আমরা এখন শরৎকালে জীবনযাপন করছি। শুনেছি, এই শরৎকাল অতীতের রাজা ও সম্রাটদের কাছে
খুব প্রিয় ঋতু ছিল। বর্ষাকাল পেরোলেই তাঁরা
তাঁদের সাম্রাজ্য বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বেরিয়ে পড়তেন যুদ্ধযাত্রায়। পরবর্তীকালে,
অর্থাৎ রাজা ও সম্রাটদের যুগ যখন প্রায় অস্তমিত, তখন সদ্যজাত জমিদার শ্রেণীর কাছেও শরৎকাল খুবই সমাদৃত
হয়েছিল। তাঁরা অবশ্য সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য নয়, বরং তাঁদের এই ঋতুতে আগ্রহের
কারণ ছিল মৃগয়া। তবে শুধুমাত্র হরিণের
পেছনে দৌড়ে বেড়ানোয় আর কৃতিত্ব কোথায়! বরং তাঁদের সাহস ক্ষমতা ও পৌরুষ জাহির করার জন্য
বাঘশিকার ছিল একান্ত জরুরি প্রমোদসূচি। ইদানীং কালে অবশ্য ক্ষমতাশালীদের পুরুষত্ত্ব প্রমাণ করার
জন্য বাঘ বা হরিণশিকারে অনেক হ্যাপা, রীতিমতো দন্ডনীয় অপরাধ। তাই তাঁদের শিকারের
ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আসলে দুনিয়া জুড়েই তো ফাঁদ পাতা আছে রকমারি
শিকার পর্ব বা উৎসবের। এবং একথাও অনস্বীকার্য যে, যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্ব জুড়ে যে নৃশংসতম
শিকার উৎসব উৎযাপিত হয়ে আসছে, যে উৎসবে ক্ষমতাশালীদের আমোদ প্রমোদ চূড়ান্ত পর্যায়ে
উপনীত হয়, তা হচ্ছে মানুষশিকার। এবং এজন্য শরৎকাল আসার অপেক্ষায় হা পিত্যেশ করে
বসে থাকারও কোনো প্রয়োজন হয় না, বছরের ছ’টি ঋতুই তার জন্য সমান অনুকূল। আরও দুঃখের
কথা, এইসব শিকার উৎসব আজন্ম দেখতে দেখতে আমরাও
মানে নিতান্তই আম জনতা এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, আমাদেরও আর তেমন কোনো বিকার হয়
না। ভাগ্যবাদী মানুষ আমরা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে সব রকম পরিস্থিতিতেই নির্বিকার থাকি।
না না, এসব কোনো নতুন কথা নয়। আমরা সবাই এসব
কথা শুরু থেকেই জানি। বুঝি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই, আমরাই আবার নিজেদের সভ্য-ভদ্র
বলে জাহিরও করি। ‘মানুষ’ রূপে জন্ম নিয়েও
মানবিকতা কিছুতেই আয়ত্ত্ব করতে পারি না। আবার আমাদের মধ্যে যাঁরা
সাহিত্য-কলা-সংস্কৃতি চর্চা করেন, তাঁরা একথা প্রায়ই বলে থাকেন যে, আমাদের যাবতীয়
সৃজন উঠে আসে আমাদেরই সমাজজীবন থেকে। কথাটা হয়তো খুবই সত্যি। আর তাই হয়তো ইদানীং
কালের সাহিত্য-কলা-সংস্কৃতির মধ্যে প্রতিবাদী ভাবনার বড়ই অভাব। লড়াকু মানসিকতার
অভাব। মানুষের অধিকার ও বোধ সম্পর্কে নিতান্তই নিরুচ্চার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে,
আমরা কি এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুগের পর যুগ ক্ষমতাশালীদের প্রমোদ উৎসবে
নিজেদের সমর্পণ করে যাব? তাদের শিকার পর্বের নিশানা হয়ে থাকব? প্রতিবাদ প্রতিরোধের
কোনো সৎসাহস দেখাব না? তাহলে আর মানুষজন্মের সার্থকতা কোথায়?
দিন কয়েক আগে প্রয়াত
হলেন আমাদের একান্ত প্রিয়জন এবং ‘কালিমাটি’র খুবই আপনজন দীপক চট্টোপাধ্যায়। দীপকদা
ছিলেন মূলত নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক। ‘দ্যোতনা’ নামে একটি নাটকের দলও তিনি
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামশেদপুরে। তাঁর রচিত দুটি নাটকের বই প্রকাশিত হয়েছিল এবং
সমাদৃত হয়েছিল নাট্যানুরাগীদের কাছে। পরবর্তী কালে তিনি ‘কালিমাটি’ পত্রিকার সঙ্গে
অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হবার পর নিয়মিত ভাবে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর অনেক গল্প
‘কালিমাটি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মূলত ‘কালিমাটি’তেই গল্প লিখতেন।
‘কালিমাটি প্রকাশনী’ থেকে তাঁর প্রথম গল্প সংকলন ‘আপাহিজ’ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর
দ্বিতীয় গল্প সংকলন ‘তরল আগুন উষ্ণ আগুন’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘কৌরব প্রকাশনী’ থেকে। তিনি
‘কৌরব’ পত্রিকার সঙ্গে আরও অনেক আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বস্তুত পক্ষে, ‘কালিমাটি’ পত্রিকার ক্রম উত্তোরণের ক্ষেত্রে
একদিকে যেমন স্বদেশ সেনের একটা বিরাট ভূমিকা আছে, অন্যদিকে তেমনই বিশাল ভূমিকা আছে
দীপক চট্টোপাধ্যায়ের। এছাড়া আরও অনেক অগ্রজের অনেক অবদান আছে, যাঁদের মধ্যে আজ
অধিকাংশই প্রয়াত। এই প্রসঙ্গে সেইসব প্রয়াত অগ্রজদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়
– সুধীরচন্দ্র সেনগুপ্ত, সত্যেন্দ্রনাথ দে, পদ্মলোচন বসু, গোপালহরি
বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভাত চক্রবর্তী...। সময়ের নিয়মেই একে একে চলে গেছেন তাঁরা। আর আমরা
একটু একটু করে একা হয়ে যাচ্ছি, নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। সদ্য দীপকদাকে হারিয়ে সেই
একাকীত্ব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
‘কালিমাটি অনলাইন’
ব্লগজিনের ১৮তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো। আমরা এই ব্লগজিনের বিভিন্ন বিভাগের জন্য
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু কিছু লেখা নিয়মিত পাচ্ছি। আমরা আরও লেখা ও ছবি পেতে
আগ্রহী। আপনারা লেখা ও ছবি পাঠিয়ে সহযোগিতা করুন।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের
ই-মেল ঠিকানা :
প্রয়োজনে দূরভাষে
যোগাযোগ করতে পারেন :
0657-2757506
09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen,
Flat 301, Parvati Condominium,
Phase 2, 50 Pramathanagar Main Road,
Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India