রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

১৩) ইন্দ্রনীল ঘোষ


হাবুলের নোবেল

বাবা ভাবত, হাবুল ডাক্তার হবে। মা ভাবত, হাবুল হবে মস্ত বড় সাহিত্যিক। ইয়া ইয়া পেল্লাই বই লিখবে। আর সব কাজ শেষ হলে নোবেল পাবে। অমর্ত্য সেন বা মাদার টেরিসা না, যেমন আমাদের রবি ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল। সাহিত্যে না হলে কি আর জন্মদিনে ছুটি থাকে? গান বাজে? লোকজন ঘরে ঘরে ধূপধুনো দেয়?
দুর্ভাগ্য! হাবুলের সেসব কিছুই হলো না। মা-বাবা তাঁদের সমস্ত প্ল্যান-পরিকল্পনা সমেত, টুপ করে ডুবে গেলেন ভবসাগর থেকে অখিলসাগরের জলে। হাবুল, তখন ছোট, দিলে বড় দাগা, একা একা ঘুরে বেড়ায় ময়নামতির মাঠে... একা একাই বড়  হয়। মা থাকলে এতদিনে হয়তো ব্যাঙ্কের লকার ভাড়া করে ফেলত নোবেল রাখার জন্য। এ যাত্রায় যেন আর সেটা চুরি না যায়, আগে থেকে সাবধান হতে বাধা কীসের? কিন্তু বাপ-মা মরা হাবুলের, নোবেল তো দূরস্ত, জীবনটা সামলানোর  মতোও আর কেউ রইল না।
তবু কথা রইল। রামপ্রসাদে ছিল না, সময় তো থাকবে না শ্যামা, শুধু মা তোর কথা রবে। তেমনই। হাবুলকে নিয়ে তার মা-বাবা যা কথা দিয়েছিল পৃথিবীকে, হাবুল নিজের কাজে তা পূর্ণ করল। ডাক্তার হতে পারল না বটে, কিন্তু ডাক্তারের মতোই হাতে ধরলো ছুঁরি কাঁচি, একটু এডভান্সড হয়ে বন্দুক। আর সাহিত্যও রইল দশ টাকার পানু বইয়ে হরেকরকম বৌদির সায়া, মালার ব্রেসিয়ার, মিলির পেটিকোট জমে জমে হাবুলের পৃথিবী তৈরি হতে থাকলহরেকরকমবা তাপ্পি মারা সে পৃথিবীর যৌনতা। এক রঙ দিয়ে ছুঁচ ফোটায় তো ফোঁড় ওঠে অন্য কোনো রঙে। রঙের দিলদারি যাকে বলে!
যেমন, রাণুবৌদি। বর থাকে ফ্রান্সে, কাজের সূত্রে। বছরে দু একবার দেশমুখো। তার রঙ ইদানীং বড় ফেভারিট হাবুলের। কালচারড, দুপুরে পর্দা দেওয়া ঘরের ছায়ায়, ধীর-গতি বিদেশি মিউজিক, হাতে হাত, চুমু, বুকের লোমে আঙুলের নার্সারি স্কুল সময়টা যেন ফ্রান্স থেকে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে বৌদি, তার ভারতীয় ঘরে।

ফ্রান্সের লোকরা হরবক্ত নোবেল পায়, না?
বৌদি হাবুলের নিপলে জিভ ঘষছিল। এহেন কথায় থতমত খেয়ে থুতু পড়ে যায়।
কে বলল?
মনোহরদা বলছিল। ফ্রান্স আর আমেরিকার লোকরা নাকি উঠতে বসতে নোবেল পায়।
ধুর। তা আবার কেন হবে? নোবেল পাওয়ার মতো কাজ করলে তবে না!
হাবুল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। রাণুকে একখানা চুমু খায়। তারপর বলে,
তোমার বর তো ফ্রান্সে। বলো না, আমায় একটা নোবেল দেবে।
রাণু ঠোঁট দিয়ে হাসি ধরে। হাবুলের নিপল দাঁড়িয়ে ছিলখেলাচ্ছলে নখ ঘষতে থাকে।
তা কীসের জন্য দেবে শুনি? আমার সাথে প্রেম করার জন্য?
হাবুল একটু উদাস হয়। রাণুর আঙুল সরিয়ে দেয়
মার ইচ্ছা ছিল। তাই জন্যই বললাম।
উঠে বসে।
তাছাড়া, আমি কি পারি না নাকি সেরম কোনো কাজ করতে? ছোটবেলায় কত্ত ছড়া লিখেছি। রীতা মাসি, হারু কাকা সবাই তারিফ করততুমি তো সেসব পড়োইনি। বললে, লিখে দেব ফের সে। এতে কী আছে? কী লিখতে হবে, জানো না একবার, তোমার বরকে ফোন করে।
আহ, কী মুশকিল! আমার বর কি নোবেল পাওয়ানোর দালাল? নোবেল প্রাইজের  কমিটি থাকে সোনা, তারাই ঠিক করে কে পাবে, না-পাবে।
আমার মায়ের ইচ্ছে, তাই তুমি পাত্তা দিচ্ছ না। নিজের মা হলে পারতে, কথা ঠেলতে?
রাণু কী বলবে, না বুঝতে পেরে চুপ করে থাকে। হাবুলকে কীভাবে বোঝাবে! সে  তো বলেই চলেছে। সেক্স মাথায় উঠেছে তার নোবেলের ভারে। জাঙিয়ার ওপর প্যান্ট ওঠাতে ওঠাতে বলে,
নোবেল না দিলে, তোমার বরকে মার্ডার করবখুন করে বাঁড়া নোবেল পাব
রাণুর হাসি পায়।
খুন করে নোবেল?
হ্যাঁ। এমনভাবে মারব, গোটা দুনিয়া, আগে দ্যাখেনি।
হাসি চেপে রাণু বলে,
কীরকম!
এর উত্তরটা ভেবে রাখেনি হাবুল। একটু ভাবে।
সোজা গুলি করব না। Gun দেখিয়ে, gun দেখিয়ে মালটাকে গাছে তুলবতারপর সেখান থেকে ধাক্কা মেরে, মারব
হাসতে হাসতে চোয়াল ধরে যাচ্ছিল রাণুর। হঠাৎ হাবুলকে থামানোর উপায় তার মাথায় আসে। প্রায় জোর করেই প্যান্টটা নামিয়ে দেয় আবার। আর দুহাতে হাবুলের  কোমর জড়িয়ে জাঙিয়ায় নাক ঘষতে থাকে।
দুপুর আবার আগের মতোই শান্ত। বিদেশি মিউজিক। হাবুলের দাঁড়াচ্ছে ক্রমশ।
সেদিকে ভণিতা করে রাণু বলে,
বাব্বা, কী সাইজ!
হাবুল রাণুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। বলল,
নোবেলের শিল্ডটা এর চেয়েও লম্বা, না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন