সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

০৮) সোনালি বেগম

সহচর
সোনালি বেগম




ভোর সাড়ে পাঁচটা। প্রতিদিনের মতো ব্রেকফাস্ট রেডি করতে ব্যস্ত দীপালি। কিন্তু এলোমেলো পদক্ষেপে ভেঙে যেতে থাকল ভূমি...

‘হ্যালো... ডক্টর পাণ্ডে’ উদ্বিগ্ন দীপালি ‘হ্যাঁ, বলছি। এম. আর. আই. রিপোর্টে ব্রেন হেমারেজ... ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে’

‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন নেওয়া যায় না?’ ‘পেশেন্টের কন্ডিশন ক্রিটিকল হয়ে যাচ্ছে’ ‘ওঃ...’ চোখের চারপাশে অন্ধকার। পারস্পরিক শর্ত ডিঙিয়ে অরিন্দমের নিথর অচৈতন্য মুখটা মনে পড়তে থাকল দীপালির। ‘শুনুন, তিন লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে হবে, এখুনিই’ ডক্টর পাণ্ডের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর।

এটা কি সাময়িক বিবাহ? কমপ্যানিওনেট ম্যারেজ? হ্যাঁ, কমপ্যানিওন মানে সহচর, সঙ্গী। বিবাহের তেইশটা বছর ধূসর মরুপথে ক্যাকটাস-বাগান, কখনও মরুদ্যান রচনামগ্ন স্বপ্নবিলাস।

আবার মোবাইল রিং হচ্ছে... ‘হ্যালো’ ‘ফর্টিস হসপিটাল নয়ডা-৬২’ ‘বলুন’ ‘মিসেস অরিন্দম রায়?’ ‘বলছি’ ‘কখন ক্যাশটা জমা করছেন?’ ‘খুব তাড়াতাড়িই। কখন অপারেশন শুরু হবে?’ ‘আপনি যত তাড়াতাড়ি ক্যাশ্ জমা করবেন, ম্যাম্, তবেই...’ ‘বুঝলাম। ডায়াবেটিক কনসালট্যান্ট এবং নিউরো সার্জেন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করছি এখুনি।’

মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল। সামাজিক লঙ্গরখানায় ছায়ানাচের রাজনীতিতে সে বড় বেমানান।

‘প্লিজ ডক্টর পাণ্ডে, মিস্টার রায়কে ম্যাক্সিমাম মেডিক্যাল সাপোর্ট দিন। আমার পার্সোনাল রিকোয়েস্ট, প্লিজ! এই মুহূর্তে ক্যাশ দেবার ক্ষমতা আমার নেই। উনি সেরে উঠে সমস্ত টাকা শোধ করে দেবেন’

‘ওঁর পাশবুক, এল. আই. সি., ইত্যাদি আপনাকে গোপন করেন উনি, কেন? হাও স্যাড! দেখি আপনাদের জন্য কী করতে পারি’ ‘অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার’

দিনের শেষ আলোটুকুর সহজ যাতায়াত স্বশাসিত আদানপ্রদানে চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে আসে -- দীপালি ব্যালকোনিতে আসে -- নিমফলগুলোয় কয়েকটি টিয়াপাখির ব্যস্ত পদচারণায় আকাশটা সন্ধিক্ষণ রচনা করতে থাকে।


1 টি মন্তব্য:

  1. এইভাবে সম্পর্কের সুতো আলগা হলে সাহচর্য রঙিন প্রচ্ছদ হয়, সাময়িক। অভিনন্দন সোনালি দি।

    উত্তরমুছুন