এক বাক্স হাউই
অচিন্ত্য দাশ
ওস্তাদজির হাতে আমরা সকলে শিবকাশীতে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। পুরোপুরি যখন তৈরি, তখন ওস্তাদজি বললেন, তোরা দশজন এবার বাক্স করে শহরে যাবি। বাইরের দুনিয়ায় এগিয়ে যেতে হবে, মনে মনে তৈরি আছিস্ তো? সকলের ভেতরেই মশলা ভরে দিয়েছি, শুভেচ্ছা রইল, যেন সকলে ভালো করিস!
শহরে এসে চোখ খুলে দেখলাম আমরা একটা দোকানে, চারপাশে আরও অনেকে, নানান জায়গা থেকে এসছে। ধারণাই ছিল না যে, শহরে এত হৈচৈ, এত কেনা বেচা। ভয় হচ্ছিল আবার ভালোও লাগছিল, নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে।
বাক্স থেকে পাঁচ, ছয় আর তিন নম্বর চলে গেল। একটা লোক তাদের নিল। কিছুক্ষণ অপে্ক্ষার পর আরও পাঁচজনের সুযোগ এসে গেল। আমরা বাকি দুজন যখন ভাবছি আমাদের কী হবে, তখন আমাদেরও গতি হয়ে গেল।
আমার সঙ্গে রইল দশ নম্বর। মনে আছে, ওস্তাদজি বলেছিলেন, দশ নম্বরের ভেতর মশলা একটু কম হয়ে গেছে – ওর জন্য চিন্তা রইল। তা সবার মধ্যে তো আর সমান জিনিস থাকে না, এদিক ওদিক হবেই! ওস্তাদজি কিন্তু আমাকে বলেছিলেন, তোর ভেতর ফার্স্টকেলাস জিনিস আছে। আশা থাকলো, তুই খুব ভালো করবি।
দুপুরের দিকটায় রদ্দুরে গা-গরম করে নিলাম, বেশ চনমনে লাগছিল। সন্ধ্যেবেলায় দীপাবলী শুরু হলো। বাড়ির সামনে বাগান। একটা ছেলে দু’তিনটে বোতল রাখলো ঘাসের ওপর। সময় এসে গেছে, মনে মনে ঈশ্বর আর ওস্তাদজির নাম নিলাম।
প্রথম সুযোগ এলো দশ নম্বরের। বোতলটা ভালো, বসানোটাও সঠিক হয়েছিল। সলতেতে আগুন লাগলো – দু’একটা ফুলকি ঝরলো – বাঃ, বেশ উঠল দশ নম্বর। সকলে হাততালি দিল...
এবার আমার পালা। বুক ধুকধুক করছিল, তবে আমার ভেতরের মশলা আরও উঁচুদরের। আমি নিশ্চয়ই ভালো করব।
একি, বেঁটে বোতলটায় কেন বসালো আমাকে? এ তো ওজন নিতে পারবে না! যা ভেবেছি তাই, বোতল সমেত উল্টে পড়লাম। পড়লাম ভিজে মাটিতে, প্রাণপণ উপুড় হবার চেষ্টা করেও সলতেটা বাঁচাতে পারলাম না। স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেল। একটা ছেলে এসে দেশলাই জ্বালালো। আগুন ধরেছিল, কিন্তু নিবে গেলো। আরেকবার আগুন দিলে হয়তো ধরে যেত, কারোর লক্ষ্যেই পড়লাম না। শেষে একজন টান মেরে রাস্তায় ফেলে দিল। বলতে চাইলাম, আমি ঠিক আছি, বড় বোতলে বসিয়ে ফুলঝুড়ি দিয়ে আগুন দিলে আমি পারব, নিশ্চয়ই পারব। কেউ শুনল না।
রাস্তার কোণে পড়ে আছি সেই থেকে। হিম পড়ছে – শরীর-মন কমজোর হয়ে এলো। জীবন আমাদের ক্ষণস্থায়ী, তাও প্রায় শেষ হবার মুখে। কীই বা করার আছে - ভাগ্যে যা ছিল, তা তো মানতেই হবে। এক চিলতে আপশোষ তবু রয়ে যায়, এত ভালো মশলা ছিল, একটু যদি সুযোগ পেতাম...
ওস্তাদজির হাতে আমরা সকলে শিবকাশীতে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। পুরোপুরি যখন তৈরি, তখন ওস্তাদজি বললেন, তোরা দশজন এবার বাক্স করে শহরে যাবি। বাইরের দুনিয়ায় এগিয়ে যেতে হবে, মনে মনে তৈরি আছিস্ তো? সকলের ভেতরেই মশলা ভরে দিয়েছি, শুভেচ্ছা রইল, যেন সকলে ভালো করিস!
শহরে এসে চোখ খুলে দেখলাম আমরা একটা দোকানে, চারপাশে আরও অনেকে, নানান জায়গা থেকে এসছে। ধারণাই ছিল না যে, শহরে এত হৈচৈ, এত কেনা বেচা। ভয় হচ্ছিল আবার ভালোও লাগছিল, নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে।
বাক্স থেকে পাঁচ, ছয় আর তিন নম্বর চলে গেল। একটা লোক তাদের নিল। কিছুক্ষণ অপে্ক্ষার পর আরও পাঁচজনের সুযোগ এসে গেল। আমরা বাকি দুজন যখন ভাবছি আমাদের কী হবে, তখন আমাদেরও গতি হয়ে গেল।
আমার সঙ্গে রইল দশ নম্বর। মনে আছে, ওস্তাদজি বলেছিলেন, দশ নম্বরের ভেতর মশলা একটু কম হয়ে গেছে – ওর জন্য চিন্তা রইল। তা সবার মধ্যে তো আর সমান জিনিস থাকে না, এদিক ওদিক হবেই! ওস্তাদজি কিন্তু আমাকে বলেছিলেন, তোর ভেতর ফার্স্টকেলাস জিনিস আছে। আশা থাকলো, তুই খুব ভালো করবি।
দুপুরের দিকটায় রদ্দুরে গা-গরম করে নিলাম, বেশ চনমনে লাগছিল। সন্ধ্যেবেলায় দীপাবলী শুরু হলো। বাড়ির সামনে বাগান। একটা ছেলে দু’তিনটে বোতল রাখলো ঘাসের ওপর। সময় এসে গেছে, মনে মনে ঈশ্বর আর ওস্তাদজির নাম নিলাম।
প্রথম সুযোগ এলো দশ নম্বরের। বোতলটা ভালো, বসানোটাও সঠিক হয়েছিল। সলতেতে আগুন লাগলো – দু’একটা ফুলকি ঝরলো – বাঃ, বেশ উঠল দশ নম্বর। সকলে হাততালি দিল...
এবার আমার পালা। বুক ধুকধুক করছিল, তবে আমার ভেতরের মশলা আরও উঁচুদরের। আমি নিশ্চয়ই ভালো করব।
একি, বেঁটে বোতলটায় কেন বসালো আমাকে? এ তো ওজন নিতে পারবে না! যা ভেবেছি তাই, বোতল সমেত উল্টে পড়লাম। পড়লাম ভিজে মাটিতে, প্রাণপণ উপুড় হবার চেষ্টা করেও সলতেটা বাঁচাতে পারলাম না। স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেল। একটা ছেলে এসে দেশলাই জ্বালালো। আগুন ধরেছিল, কিন্তু নিবে গেলো। আরেকবার আগুন দিলে হয়তো ধরে যেত, কারোর লক্ষ্যেই পড়লাম না। শেষে একজন টান মেরে রাস্তায় ফেলে দিল। বলতে চাইলাম, আমি ঠিক আছি, বড় বোতলে বসিয়ে ফুলঝুড়ি দিয়ে আগুন দিলে আমি পারব, নিশ্চয়ই পারব। কেউ শুনল না।
রাস্তার কোণে পড়ে আছি সেই থেকে। হিম পড়ছে – শরীর-মন কমজোর হয়ে এলো। জীবন আমাদের ক্ষণস্থায়ী, তাও প্রায় শেষ হবার মুখে। কীই বা করার আছে - ভাগ্যে যা ছিল, তা তো মানতেই হবে। এক চিলতে আপশোষ তবু রয়ে যায়, এত ভালো মশলা ছিল, একটু যদি সুযোগ পেতাম...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন