শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

০৫ শ্রাবণী দাশগুপ্ত

আমি ও মেমসাহেব
শ্রাবণী দাশগুপ্ত



লম্বা ডান্ডার নিচে বাঁধা ন্যাতাটা দিয়ে মুছছিলাম। ওরা বলে মপ্‌। মেমসাহেব জিজ্ঞেস করল, “কি নাম?” বললাম, “আমনি গো আমনি!” মেমসাহেব হেসে বলল, “ও! কাছেই থাকো? কতদিন কাজ করছ গেস্টহাউসে?” মেমসাহেব ভালো করে হিন্দীও বলতে পারে না, আমি তো দেহাতি। মেমসাহেব এখানে প্রথমবার এসেছে, সাহেবের অফিসের কাজ। ঘর পরিষ্কার করে পর্দাটর্দা সব টেনে দিলাম। মেমসাহেব চশমাচোখে কাগজ পড়তে পড়তে আমার কথা জানতে চাইছিল। কি হবে? বরটা মাল টেনে মরে গেছে কবেই। চার চারটে বাচ্চা বিইয়েছি। বড় করলাম তো! সব একলা। মেয়েটার বিহা দিয়েছি আগের বছরে। ছেলেটা মেট্রিক লিখেছিল, ফেল হয়েছে। মেমসাহেবের চোখ কপালে, “ওমা, কেউ বলবে গো তোমায় দেখে!” আড়চোখে দেখি। আমার সব পাটপাট। ইস্তিরি করা। পা দুটো কোদালের ফাল। বরটা বলত। তবু বাঁশঝাড়ে তিরিতিরি। সুন্দরার মরদটা কবে থেকে মজে বসেছে। আস্কারা দিই না, তাই। বললাম, “আপনার বালবাচ্চা ইশকুলে যায়?” মেমসাহেব হেসেই খুন। রোগাপাত্‌লা, ফুট্‌ফুটে, ছোটছোট দাঁত, চিক্‌চিক্‌ চশমা, “একটাই, চাকরি করে যে। অনেক দূরে থাকে।” খুব চমকে উঠলাম। মেমসাহেব বলল বলেই আমিও আরো বেশি করে, “হায় ভগবান! শুরুতে ভেবেছিলাম আপনার নতুন বিহা। কত সুন্দর আপনি।” মেমসাহেবের ছোট পায়ের পাতায় কালো নখপালিশ। মুখে নীল ওড়না চেপে দুলে দুলে হাসছিল, “ধ্যাত্‌। কী যে বলো।” খুশি দেখছি আমার মতোন। ভালোই হলো। আমি ডান্ডা টেনে টেনে চকচকে মেঝের আনাচকানাচ মুছি। আরশি পালিশ, মুখ দেখা যায়। টেবুল থেকে নিয়ে যন্ত্রটা দিয়ে খুট্‌ করে ঠান্ডা মেশিন চালালো মেমসাহেব। সোফার পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছি ডান্ডা। ঘরটায় আস্তে আস্তে শীত... আমি ঢিলেমি করছি। মেমসাহেব বুঝতে পারছে? নরম হাসছে, “হো গয়া? একটু জলদি। দরজাটা বন্ধ না করে দিলে যে ঠিকমত...।” জানি তো। সেলাম ঠুকে দরজা বন্ধ করে বেরোতেই ভক্‌ করে গায়ে গরম হল্কা। মেমসাহেব কি ঘুমোবে এখন? আমি ডান্ডাওলা মপ্‌ টানি লম্বা গেস্টহাউসের বারান্দা ধরে। আকাশ তেতে পুড়ে খাক্‌। কম্বল গায়ে? মুন্নি বলল, “হেই আমনি, পাগলের পারা হাসছিস কেন?” আঁচলটা ঠেসে ধরলাম ওর গালে। “দ্যাখ তো, চুরি করলাম... আরাম না?”

৩টি মন্তব্য:

  1. শ্রাবণী, গল্পটা চমৎকার। কিন্তু লেখক চরিত্রটি মানায়নি। কাজের মেয়ে এভাবে গল্প লেখে, সেটা চলেনা।

    উত্তরমুছুন
  2. শ্রাবণী, গল্পটা চমৎকার। কিন্তু লেখক চরিত্রটি মানায়নি। কাজের মেয়ে এভাবে গল্প লেখে, সেটা চলেনা।

    উত্তরমুছুন
  3. ভাবনাটি কাজের মেয়ের, দর্শন ও লেখন - লেখকের... ! :)

    শ্রাবণী।

    উত্তরমুছুন