শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

০৪ সাধন চট্টোপাধ্যায়

ট্যাটুর হাত
সাধন চট্টোপাধ্যায়


ছুটে এখানে আশ্রয়। দোকানঘরটার বাড়তি চালাটুকুর নিচে। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে নেমে ছিল কিনা! টু-হুইলারটাও ঝটপট। ছেলেটি লাফিয়ে ঢুকে পড়ল। ওকে চিনি না। বিশ-বাইশ বছরের কচি আদুরে মুখ। গাড়ির বডি ভিজছে। ছিটকোচ্ছে জল। কী করি! বৃষ্টি ধরছে না –- ধরছে না –- ধরছে না। দেখি, ছেলেটির স্বাস্থ্যল বাহুর পেশিতে নীলচে ট্যাটু। চিত্তির-বিচিত্তির। নেমেছে কনুই তক্‌।

--কত নিল ট্যাটু করতে? হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম। পছন্দের একজন সেজে।

--পাঁচ হাজার।

--সময়?

--দু ঘন্টা।

--ব্যথা কেমন লাগে?

বৃদ্ধের দলে ফেললেও, ছেলেটি আগ্রহে জবাব দিল, --যারা জিম করে, পেশিগুলো শক্ত আর বাড়ন্ত, তাদের একটু ব্যথা লাগবে। না হলে কম।

--চাইলে তুলেও ফেলা যায়?

--হ্যাঁ, তখন খরচ পঞ্চাশ হাজার। সময় দশ মিনিট। লেজার অপারেশন হয় কিনা!

--ব্বা!

--ক্রিকেটার কোহ্‌লির হাতে দেখেছি। শখে তাই করালাম!

ছেলেটি হেসে হাল্কা কৈফিয়ৎ গোছের জবাবের পর, চাবি লাগিয়ে, গাড়িটার শরীর মুছে সার্থকতায় চলে গেল। তখন বৃষ্টি ধরতে চলেছে।

ঘন্টাখানেক বাদে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ফের এ-পথে ফিরে এসে দেখি, চালাটা ফাঁকা। এই স্পটেই দু’জন ছিলাম। কয়েক ঘন্টার ব্যবধ্যানে। বৃষ্টি হঠাৎ নামলে। ছেলেটা ট্যাটুর শখ আজন্ম ধরে রাখবে? তখন লেজার অপারেশন একলাখ, সময় আরও সংক্ষিপ্ত! উন্নত প্রযুক্তিতে এক সেকেন্ডে। একটা বুদবুদের আয়ুষ্কালে।

শখভোগ্যা বসুন্ধরায় ক্রমাগত বুদবুদের বৃষ্টি ঝরতে থাকে। হাজার, লক্ষ, মিলিয়ন ডলারের। শ্যামল, বাদামি, পীত –- নানা বর্ণের হাতগুলো শুধু বদলায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন