শব্দেরা ডাকছে
রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
তরঙ্গহীন নদীতে নৌকোটা ছিল আপন খেয়ালে। হঠাৎ টালমাটাল, যেদিন জানা গেল অমৃতা লিখছে। ছোটদের পত্রিকায়। গল্প। পরিমলকে চমকে দেবে ভেবে অ্যাড- ইন্টারভ্যালের ফাঁকে পত্রিকাটা নিয়ে লাজুক মুখে অমৃতা --
--অ্যাই দেখো, আমার গল্প বেরিয়েছে
--তোমার গল্প মানে? তোমাকে নিয়ে আবার কে লিখল?
--আমাকে নিয়ে লিখবে কেন?
--তবে?
গলাটা একটু কেঁপে যায়। তবু জোর করে শব্দ বের করে অমৃতা -–
--আমার লেখা
--তুমি লিখেছ? মানে?
মুখ নিচু করে আঁচলের খুঁটটা হাতে নিয়ে জড়াতে থাকে অমৃতা। পরিমলের ঝাঁঝটা কানে বাজে। গুমরে থাকা ডিনার শেষে পরিমল বারান্দায়। চেনা মার্লবোরোর গন্ধেও অচেনা লাগে পরিমলকে। অমৃতা আস্তে আস্তে চেয়ারের পিছনটা ধরে দাঁড়ায়।
--রাগ করলে?
কঠিন একাক্ষর শব্দ ওঠে --
--না
--তবে যে কিছু বললে না...
--কী বলব? তুমি কি আমার বলার জন্য অপেক্ষা করেছিলে?
--না আসলে...
--আসলে পৃথিবী শুদ্ধু লোককে জানাতে চেয়েছিলে, দেখো আমি কেমন লিখতে পারি!
আমূল কেঁপে উঠল অমৃতা। তবে কি... তবে কি...
কী যেন ক্লান্তি জড়িয়ে ধরে অমৃতাকে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাইড টেবিলে রাখা তার পত্রিকাটা চোখে পড়ে। প্রচ্ছদে একটা দুষ্টু ছেলের মুখ। সামনের উঁচু দাঁত দুটো নিয়ে তখনও সমানে হেসেই চলেছে। মাথার ভেতরটা চলকে যায়। বিছানা থেকে ধাঁ করে উঠে প্রচন্ড বিদ্বেষে পত্রিকাটা টুকরো টুকরো করে ফেলল অমৃতা। কিন্তু টুকরোগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়তেই কেমন একটা মায়া গ্রাস করলো যেন। চোখ ভরে আসছে জলে। নিচু হয়ে পরম মমতায় টুকরোগুলো তুলে নিচ্ছিল একটা একটা করে --
--রাত্তিরবেলা এ আবার কি নাটক শুরু করলে?
চমকে উঠল অমৃতা। কাগজের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ল মেঝেময়। পাখার হাওয়ায় একটা দুটো উড়তে লাগল। তাদের ডানায় স্বপ্নমাখা উড়ান। অমৃতা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে টুকরোগুলোর দিকে। পরিমল তখনও কিছু বলে চলেছে। একনাগাড়ে। কিন্তু কোনো কথাই আর অমৃতার কানে ঢুকছে না। সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে শুধু কাগজ ওড়ার শব্দ। চোখে ভাসছে লক্ষ লক্ষ শব্দের ঢেউ। ডুবছে আর ভাসছে। যেন এক আশ্চর্য জগতের ভেলা। শূন্য ভেলায় এক অচিন পাখি। ডাকছে ডাকছে ডেকেই যাচ্ছে।
তরঙ্গহীন নদীতে নৌকোটা ছিল আপন খেয়ালে। হঠাৎ টালমাটাল, যেদিন জানা গেল অমৃতা লিখছে। ছোটদের পত্রিকায়। গল্প। পরিমলকে চমকে দেবে ভেবে অ্যাড- ইন্টারভ্যালের ফাঁকে পত্রিকাটা নিয়ে লাজুক মুখে অমৃতা --
--অ্যাই দেখো, আমার গল্প বেরিয়েছে
--তোমার গল্প মানে? তোমাকে নিয়ে আবার কে লিখল?
--আমাকে নিয়ে লিখবে কেন?
--তবে?
গলাটা একটু কেঁপে যায়। তবু জোর করে শব্দ বের করে অমৃতা -–
--আমার লেখা
--তুমি লিখেছ? মানে?
মুখ নিচু করে আঁচলের খুঁটটা হাতে নিয়ে জড়াতে থাকে অমৃতা। পরিমলের ঝাঁঝটা কানে বাজে। গুমরে থাকা ডিনার শেষে পরিমল বারান্দায়। চেনা মার্লবোরোর গন্ধেও অচেনা লাগে পরিমলকে। অমৃতা আস্তে আস্তে চেয়ারের পিছনটা ধরে দাঁড়ায়।
--রাগ করলে?
কঠিন একাক্ষর শব্দ ওঠে --
--না
--তবে যে কিছু বললে না...
--কী বলব? তুমি কি আমার বলার জন্য অপেক্ষা করেছিলে?
--না আসলে...
--আসলে পৃথিবী শুদ্ধু লোককে জানাতে চেয়েছিলে, দেখো আমি কেমন লিখতে পারি!
আমূল কেঁপে উঠল অমৃতা। তবে কি... তবে কি...
কী যেন ক্লান্তি জড়িয়ে ধরে অমৃতাকে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাইড টেবিলে রাখা তার পত্রিকাটা চোখে পড়ে। প্রচ্ছদে একটা দুষ্টু ছেলের মুখ। সামনের উঁচু দাঁত দুটো নিয়ে তখনও সমানে হেসেই চলেছে। মাথার ভেতরটা চলকে যায়। বিছানা থেকে ধাঁ করে উঠে প্রচন্ড বিদ্বেষে পত্রিকাটা টুকরো টুকরো করে ফেলল অমৃতা। কিন্তু টুকরোগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়তেই কেমন একটা মায়া গ্রাস করলো যেন। চোখ ভরে আসছে জলে। নিচু হয়ে পরম মমতায় টুকরোগুলো তুলে নিচ্ছিল একটা একটা করে --
--রাত্তিরবেলা এ আবার কি নাটক শুরু করলে?
চমকে উঠল অমৃতা। কাগজের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ল মেঝেময়। পাখার হাওয়ায় একটা দুটো উড়তে লাগল। তাদের ডানায় স্বপ্নমাখা উড়ান। অমৃতা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে টুকরোগুলোর দিকে। পরিমল তখনও কিছু বলে চলেছে। একনাগাড়ে। কিন্তু কোনো কথাই আর অমৃতার কানে ঢুকছে না। সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে শুধু কাগজ ওড়ার শব্দ। চোখে ভাসছে লক্ষ লক্ষ শব্দের ঢেউ। ডুবছে আর ভাসছে। যেন এক আশ্চর্য জগতের ভেলা। শূন্য ভেলায় এক অচিন পাখি। ডাকছে ডাকছে ডেকেই যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন