ফিদায়েঁ
বারীন ঘোষাল
অরুণের ডাকে শেষপর্যন্ত রওনা দিলাম। সেই কোন্কালে একসাথে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। এখনো খোঁজখবর রাখে। কলকাতায় এলে দেখা করতে বলে। থাকে মধ্যমগ্রামে। টিকিট কেটে ট্রেনে চাপার আগে জিজ্ঞেস করলাম –-
‘মধ্যমগ্রামের আগের স্টেশনটা কী রে?’
‘কেন?’
‘নামার জন্য তৈরি হয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে পারবো’।
‘দূর ব্যাটা! কামরার মধ্যে লক্ষ্য রাখবি, যে স্টেশনে সমস্ত সুন্দরী মেয়েদের নেমে যেতে দেখবি, সেটাই মধ্যমগ্রাম। তুইও পেছন পেছন নেমে যাবি’।
আমি সিটে বসে চোখ বোলাতে থাকি চারপাশে। অরুণের পরামর্শ স্মরণ করে মনে মনে হাসি। মনে মনে হাসলেও আমার মুখে হাসি ফোটে। আমি হাসিমুখে লক্ষ্য করি, কামরায় স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু করে থুত্থুড়ে বুড়ি পর্যন্ত অনেক মেয়ে। তাদের বয়স, পোশাক, সামাজিক আর আর্থিক অবস্থা বিভিন্ন। তবু সুন্দরী বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবার উপক্রম হলো। তারা স্টেশনগুলোতে নেমে যাচ্ছে, আবার উঠেও পড়ছে অনেকে। তক্কে তক্কে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠলো ক্রমশ। অরুণই বা কী! খালি ফাজলামি।
হঠাৎ নোটিশ করলাম, সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। দেখে সন্ত্রস্ত হলাম। হাসিমুখটা স্টিল ছবি হয়ে আছে হয়তো! আমার এই এক ব্যামো। হাসিমুখের মানুষ দেখলে লোকের তো ভালোই লাগে ভাবি। না কি আমার মুখের নার্ভের সমস্যা? হাসলে মুখ সোজা হতে দেরি হয়। সেবার আমার হাসির মধ্যেই যখন দুদা মারা গেল, সবার মুখ অন্ধকার, আমি হাসছি। কী বিপদ! এই যে সবাই আমাকে দেখছে জেনেও নর্মাল হতে পারছি না, লোকে ভাববে কী? তার চেয়ে ওসব না দেখাই ভালো। মুখ ঘোরালাম জানালার দিকে।
জানালার পাশেই বসা একজন মহিলা, রীতিমতো সুন্দরী। কচি বয়স। বিবাহিতা। ফর্সা। পাশে বসা বোধহয় তার বর। মহিলা বলছে –-
‘আমার না আইঢাই করছে। গ্যাস হয়েছে, জানো? কাল রাতে কাকার ওখানে অত খাওয়া ঠিক হয়নি। তুমি ম্যানেজ করলে কীভাবে? তোমার হচ্ছে না?’
‘বউয়ের পেট খারাপ হলে বরেরও হতে হবে বুঝি? সিম্প্যাথেটিক?’
‘ইয়ার্কি হচ্ছে, না?’
মহিলা পুরুষটিকে চিমটি কাটলে পুরুষটি কঁকিয়ে মুখ ঘোরাতেই আমার চোখে। আমি মন দিয়ে কূজন শুনছিলাম। টাইম পাস আর সুন্দরীকে নজরে রাখা। লোকটা কটমট করে তুলল তার চোখ। আমি থতমত খেয়ে বুঝলাম আবার হাসি আটকে গেছে মুখে। এতক্ষণের সুগন্ধী পারফিউমের বদলে একটা উৎকট গন্ধ এলো নাকে। জিজ্ঞেস করলাম –- ‘মধ্যমগ্রাম কদ্দূর?’
‘এই তো এসে গেলাম’ –- ব’লে ওরা দুজন উঠে দাঁড়ালো।
বাড়ি পৌঁছতেই অরুণ ড্রইংরুমে বসিয়ে বলল –- ‘কী রে, চিনতে অসুবিধা হয়নি তো? নে জল খা। কই শুনছো, বারীন এসেছে, চা-টা আনো!’
আমি কোনোমতে ট্রেনে আমার অস্বস্তির কথা গল্প করে বললাম –-
‘আচ্ছা অরুণ, সুন্দরী মহিলারা পাদে?’
‘ছিঃ বারীন, তুই না কবিতা লিখিস! ওটা কি ভাষা হলো? মহিলা না! পাদে বলতে নেই। বায়ু-বিদায় বলতে হয়’। অরুণ খিলখিল হাসতে হাসতে বলল।
‘ফিদায়েঁ?’ আমার সেই হাসিমুখের স্টিল।
‘হো হো হো হো –- তুই সেরকমই বাচাল থেকে গেছিস। লাইট কথা আর সিরিয়াস কথা মিশিয়ে ফেলিস। শোনো শোনো বারীনের কথা...’
অরুণের বউ হাসির লহরা শুনে ঘরে ঢুকেছে –- ‘ফিদায়েঁ! মানে কী?’
এবার আমার হাসির পালা। লুটোপুটি এক্কেবারে।
অরুণের ডাকে শেষপর্যন্ত রওনা দিলাম। সেই কোন্কালে একসাথে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। এখনো খোঁজখবর রাখে। কলকাতায় এলে দেখা করতে বলে। থাকে মধ্যমগ্রামে। টিকিট কেটে ট্রেনে চাপার আগে জিজ্ঞেস করলাম –-
‘মধ্যমগ্রামের আগের স্টেশনটা কী রে?’
‘কেন?’
‘নামার জন্য তৈরি হয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে পারবো’।
‘দূর ব্যাটা! কামরার মধ্যে লক্ষ্য রাখবি, যে স্টেশনে সমস্ত সুন্দরী মেয়েদের নেমে যেতে দেখবি, সেটাই মধ্যমগ্রাম। তুইও পেছন পেছন নেমে যাবি’।
আমি সিটে বসে চোখ বোলাতে থাকি চারপাশে। অরুণের পরামর্শ স্মরণ করে মনে মনে হাসি। মনে মনে হাসলেও আমার মুখে হাসি ফোটে। আমি হাসিমুখে লক্ষ্য করি, কামরায় স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু করে থুত্থুড়ে বুড়ি পর্যন্ত অনেক মেয়ে। তাদের বয়স, পোশাক, সামাজিক আর আর্থিক অবস্থা বিভিন্ন। তবু সুন্দরী বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবার উপক্রম হলো। তারা স্টেশনগুলোতে নেমে যাচ্ছে, আবার উঠেও পড়ছে অনেকে। তক্কে তক্কে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠলো ক্রমশ। অরুণই বা কী! খালি ফাজলামি।
হঠাৎ নোটিশ করলাম, সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। দেখে সন্ত্রস্ত হলাম। হাসিমুখটা স্টিল ছবি হয়ে আছে হয়তো! আমার এই এক ব্যামো। হাসিমুখের মানুষ দেখলে লোকের তো ভালোই লাগে ভাবি। না কি আমার মুখের নার্ভের সমস্যা? হাসলে মুখ সোজা হতে দেরি হয়। সেবার আমার হাসির মধ্যেই যখন দুদা মারা গেল, সবার মুখ অন্ধকার, আমি হাসছি। কী বিপদ! এই যে সবাই আমাকে দেখছে জেনেও নর্মাল হতে পারছি না, লোকে ভাববে কী? তার চেয়ে ওসব না দেখাই ভালো। মুখ ঘোরালাম জানালার দিকে।
জানালার পাশেই বসা একজন মহিলা, রীতিমতো সুন্দরী। কচি বয়স। বিবাহিতা। ফর্সা। পাশে বসা বোধহয় তার বর। মহিলা বলছে –-
‘আমার না আইঢাই করছে। গ্যাস হয়েছে, জানো? কাল রাতে কাকার ওখানে অত খাওয়া ঠিক হয়নি। তুমি ম্যানেজ করলে কীভাবে? তোমার হচ্ছে না?’
‘বউয়ের পেট খারাপ হলে বরেরও হতে হবে বুঝি? সিম্প্যাথেটিক?’
‘ইয়ার্কি হচ্ছে, না?’
মহিলা পুরুষটিকে চিমটি কাটলে পুরুষটি কঁকিয়ে মুখ ঘোরাতেই আমার চোখে। আমি মন দিয়ে কূজন শুনছিলাম। টাইম পাস আর সুন্দরীকে নজরে রাখা। লোকটা কটমট করে তুলল তার চোখ। আমি থতমত খেয়ে বুঝলাম আবার হাসি আটকে গেছে মুখে। এতক্ষণের সুগন্ধী পারফিউমের বদলে একটা উৎকট গন্ধ এলো নাকে। জিজ্ঞেস করলাম –- ‘মধ্যমগ্রাম কদ্দূর?’
‘এই তো এসে গেলাম’ –- ব’লে ওরা দুজন উঠে দাঁড়ালো।
বাড়ি পৌঁছতেই অরুণ ড্রইংরুমে বসিয়ে বলল –- ‘কী রে, চিনতে অসুবিধা হয়নি তো? নে জল খা। কই শুনছো, বারীন এসেছে, চা-টা আনো!’
আমি কোনোমতে ট্রেনে আমার অস্বস্তির কথা গল্প করে বললাম –-
‘আচ্ছা অরুণ, সুন্দরী মহিলারা পাদে?’
‘ছিঃ বারীন, তুই না কবিতা লিখিস! ওটা কি ভাষা হলো? মহিলা না! পাদে বলতে নেই। বায়ু-বিদায় বলতে হয়’। অরুণ খিলখিল হাসতে হাসতে বলল।
‘ফিদায়েঁ?’ আমার সেই হাসিমুখের স্টিল।
‘হো হো হো হো –- তুই সেরকমই বাচাল থেকে গেছিস। লাইট কথা আর সিরিয়াস কথা মিশিয়ে ফেলিস। শোনো শোনো বারীনের কথা...’
অরুণের বউ হাসির লহরা শুনে ঘরে ঢুকেছে –- ‘ফিদায়েঁ! মানে কী?’
এবার আমার হাসির পালা। লুটোপুটি এক্কেবারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন