ধর্ষণের ক্রমাগত খবরে যা হয়ে থাকে
অনিশ্চয় চক্রবর্তী
(১)
সকালের প্রত্যাশিত ডোরবেলের শব্দ শুনে, তবু শব্দের তীব্রতা ও আকস্মিকে চমকে উঠে, তার একক ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেয় অনিশ্চয়। দেখে, তার প্রতিদিনের রান্নার ও অন্যান্য কাজের মেয়ে আদৌ নয়, সামনে দাঁড়িয়ে তার বোন, মামন। শেষ ডিসেম্বরের শীতের সকালে এসেছে আসানসোল থেকে কলকাতায় তার দাদার বেঁচে থাকার খবর নিতে, বেঁচে থাকার চেহারাটা যেটুকু পারা যায় গুছিয়ে দিতে। প্রতিবেলার টেলিফোন যোগাযোগের মধ্যেও সেই বেঁচে থাকার চেহারা ও মনের সবটার নাগাল যে পাওয়া যায় না কিছুতেই! টেলিফোনে আত্মপ্রকাশ যেমন থাকে, তেমনই, আত্মগোপনও তো থাকে সকলেরই! সে কথা সকলের মতোই এই ভাই-বোনও জানে। সে গোপনতার চেহারা আর চরিত্রটা বুঝতেই যে একেবারে দাদার দরজায়!
বোনকে দেখে অনিশ্চয় যেমন অবাক হয়, তেমনই তার জীবনের, যাপনের, আকাঙ্ক্ষার, আড়াল খসে যাওয়ার আশঙ্কায়, একটু বিরক্তও হয়। সেই বিরক্তি উপেক্ষা করে বা মেনে নিয়ে মামন ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে পড়ে। কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রাখে অনিশ্চয়ের বইয়ের র্যাকের পাশে। খাটের ওপর তখনও ছড়ানো সেদিনের খবরের কাগজগুলি।
(২)
ক্রমে নীরবতা গাঢ় হয়, স্থায়ী ও দীর্ঘতর হয়। ভাই-বোনে এতদিন পর দেখা হলেও কেউ কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে যে যার নিজের কাজ করে যায়। অনিশ্চয় তার খবরের কাগজের গোছা খুলেও দেখে না। ভাই-বোন দুজনেই এক চরম অস্বস্তিকর নীরবতা ও আত্মগোপনে সময় কাটায়, প্রাত্যহিকে ব্যস্ত হয়। কাজের মেয়ে এসে কাজ সেরে, রান্না করে দিয়ে চলে যায়। মামন সে-সব তদারক করে, দাদার এলোমেলো সংসার গোছায়। স্নান করে, খায় দুজনেই, তবু ঘরে কেউ কোনো কথা বলে না। কেন বলছে না, তা নিয়ে ভাই-বোন কেউ কাউকে প্রশ্নও করে না।
(৩)
অনেক ভোরে উঠে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ ট্রেনযাত্রায় ক্লান্ত মামন বিছানায় গা এলিয়ে দেয় দুপুরে। অনিশ্চয় চেয়ার-টেবিলে বসে ভাঁজ করা খবরের কাগজের বোঝা নিয়ে। মামন ঘুমিয়ে পড়েছে, এমন অনুমানে নিশ্চিত ভরসা রেখে।
‘দাদা, ঘুমোবি না? সকালে কাগজ পড়িসনি?’
‘না, অফিস যেতে হবে তো! কাগজগুলো একটু দেখে না নিলে কাজ করব কী করে? তুই ভালো করে শো’।
‘এই তো অনেকটা জায়গা রয়েছে। জায়গার জন্য তুই দুপুরে না ঘুমিয়ে রাত্তিরে আবার অফিস করবি? তোর কী হয়েছে বল তো?’
মামন বিছানা ছেড়ে উঠে বসে প্রায় ভৎর্সনার সুরে জানতে চায়। ‘সকাল থেকে কথা বললি না একটাও। কী হয়েছে তোর?
‘কেন জানি না আমার নিজেকে একজন ধর্ষণকারী মনে হচ্ছে, কয়েকদিন ধরেই। আসলে না হলেও, বাসনায়-আকাঙ্ক্ষায় নাউ আই অ্যাম এ রেপিস্ট’।
‘সে তো আমারও মনে হচ্ছে, আমি যে-কোনো সময় দিল্লির সেই মেয়েটির মতো এভিল ডিজায়ারের ভিকটিম হয়ে যেতে পারি। কিন্তু তার সঙ্গে তোর দুপুরে না ঘুমোনোর কী সম্পর্ক?’ মামনের স্বরে ও উচ্চারণে যেন সহস্রাব্দীর জিজ্ঞাসা ও বিপন্নতা।
‘তুই কি জানিস না যে,আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমস্ত সম্পর্ক নির্ভর করে পুরুষের বাসনা চরিতার্থতা আর আধিপত্যের ওপর? তোর পাশে শুয়ে ঘুমোনোর সাহস আজ দুপুরে আমার অন্তত নেই। আর কী বলব, বল? নিজের ওপর বিশ্বাসটাও যে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের মর্গে আরও অনেক মৃতদেহের সঙ্গে পড়ে আছে!’
(১)
সকালের প্রত্যাশিত ডোরবেলের শব্দ শুনে, তবু শব্দের তীব্রতা ও আকস্মিকে চমকে উঠে, তার একক ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেয় অনিশ্চয়। দেখে, তার প্রতিদিনের রান্নার ও অন্যান্য কাজের মেয়ে আদৌ নয়, সামনে দাঁড়িয়ে তার বোন, মামন। শেষ ডিসেম্বরের শীতের সকালে এসেছে আসানসোল থেকে কলকাতায় তার দাদার বেঁচে থাকার খবর নিতে, বেঁচে থাকার চেহারাটা যেটুকু পারা যায় গুছিয়ে দিতে। প্রতিবেলার টেলিফোন যোগাযোগের মধ্যেও সেই বেঁচে থাকার চেহারা ও মনের সবটার নাগাল যে পাওয়া যায় না কিছুতেই! টেলিফোনে আত্মপ্রকাশ যেমন থাকে, তেমনই, আত্মগোপনও তো থাকে সকলেরই! সে কথা সকলের মতোই এই ভাই-বোনও জানে। সে গোপনতার চেহারা আর চরিত্রটা বুঝতেই যে একেবারে দাদার দরজায়!
বোনকে দেখে অনিশ্চয় যেমন অবাক হয়, তেমনই তার জীবনের, যাপনের, আকাঙ্ক্ষার, আড়াল খসে যাওয়ার আশঙ্কায়, একটু বিরক্তও হয়। সেই বিরক্তি উপেক্ষা করে বা মেনে নিয়ে মামন ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে পড়ে। কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রাখে অনিশ্চয়ের বইয়ের র্যাকের পাশে। খাটের ওপর তখনও ছড়ানো সেদিনের খবরের কাগজগুলি।
(২)
ক্রমে নীরবতা গাঢ় হয়, স্থায়ী ও দীর্ঘতর হয়। ভাই-বোনে এতদিন পর দেখা হলেও কেউ কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে যে যার নিজের কাজ করে যায়। অনিশ্চয় তার খবরের কাগজের গোছা খুলেও দেখে না। ভাই-বোন দুজনেই এক চরম অস্বস্তিকর নীরবতা ও আত্মগোপনে সময় কাটায়, প্রাত্যহিকে ব্যস্ত হয়। কাজের মেয়ে এসে কাজ সেরে, রান্না করে দিয়ে চলে যায়। মামন সে-সব তদারক করে, দাদার এলোমেলো সংসার গোছায়। স্নান করে, খায় দুজনেই, তবু ঘরে কেউ কোনো কথা বলে না। কেন বলছে না, তা নিয়ে ভাই-বোন কেউ কাউকে প্রশ্নও করে না।
(৩)
অনেক ভোরে উঠে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ ট্রেনযাত্রায় ক্লান্ত মামন বিছানায় গা এলিয়ে দেয় দুপুরে। অনিশ্চয় চেয়ার-টেবিলে বসে ভাঁজ করা খবরের কাগজের বোঝা নিয়ে। মামন ঘুমিয়ে পড়েছে, এমন অনুমানে নিশ্চিত ভরসা রেখে।
‘দাদা, ঘুমোবি না? সকালে কাগজ পড়িসনি?’
‘না, অফিস যেতে হবে তো! কাগজগুলো একটু দেখে না নিলে কাজ করব কী করে? তুই ভালো করে শো’।
‘এই তো অনেকটা জায়গা রয়েছে। জায়গার জন্য তুই দুপুরে না ঘুমিয়ে রাত্তিরে আবার অফিস করবি? তোর কী হয়েছে বল তো?’
মামন বিছানা ছেড়ে উঠে বসে প্রায় ভৎর্সনার সুরে জানতে চায়। ‘সকাল থেকে কথা বললি না একটাও। কী হয়েছে তোর?
‘কেন জানি না আমার নিজেকে একজন ধর্ষণকারী মনে হচ্ছে, কয়েকদিন ধরেই। আসলে না হলেও, বাসনায়-আকাঙ্ক্ষায় নাউ আই অ্যাম এ রেপিস্ট’।
‘সে তো আমারও মনে হচ্ছে, আমি যে-কোনো সময় দিল্লির সেই মেয়েটির মতো এভিল ডিজায়ারের ভিকটিম হয়ে যেতে পারি। কিন্তু তার সঙ্গে তোর দুপুরে না ঘুমোনোর কী সম্পর্ক?’ মামনের স্বরে ও উচ্চারণে যেন সহস্রাব্দীর জিজ্ঞাসা ও বিপন্নতা।
‘তুই কি জানিস না যে,আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমস্ত সম্পর্ক নির্ভর করে পুরুষের বাসনা চরিতার্থতা আর আধিপত্যের ওপর? তোর পাশে শুয়ে ঘুমোনোর সাহস আজ দুপুরে আমার অন্তত নেই। আর কী বলব, বল? নিজের ওপর বিশ্বাসটাও যে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের মর্গে আরও অনেক মৃতদেহের সঙ্গে পড়ে আছে!’
কি বলব? একটা বিষণ্ণতা মঙ্কে ছুঁয়ে গেল। চমৎকার উপস্থাপনা, চমৎকার বিষয়, ভাববার মতন কিছু রশদ পাওয়া গেল। লেখাটা খুব ভাল লেগেছে।
উত্তরমুছুনকি বলব? একটা বিষণ্ণতা মঙ্কে ছুঁয়ে গেল। চমৎকার উপস্থাপনা, চমৎকার বিষয়, ভাববার মতন কিছু রশদ পাওয়া গেল। লেখাটা খুব ভাল লেগেছে।
উত্তরমুছুনকী বলব? একটা বিষণ্ণতা মনকে ছুঁয়ে গেল। চমৎকার উপস্থাপনা, চমৎকার বিষয়, ভাববার মতন কিছু রসদ পাওয়া গেল। লেখাটা খুব ভাল লেগেছে।
উত্তরমুছুনমাধবী দত্ত
গল্পটা বেশ বাজে হয়েছে
উত্তরমুছুন