উমা
সেবার শরিকি বিবাদ হল খুব। নামো বাখুলের সাথে উপর বাখুলের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। দুই বাড়ির বৌ বিষ্টু মন্দিরে শীতল সাজাতে গিয়ে এ ওর মুখ এড়িয়ে যায়। ওবাড়ির গিন্নির গায়ে এবাড়ির বৌয়ের ভুল করে পা লেগে গেলে দেওয়ালে পেন্নাম ঠুকে আসে। কিন্তু শীতলের থালা নামিয়ে দুজনেই গড় হয়ে ঠাকুরের পেন্নাম সেরে উঠতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে যায় ঠিক। আর ঠিক তখনই ফিক করে হেসে ফেলে দুই বৌ।
সেবার তো গন্ডোগোলের জেরে দুবাড়ির দুগ্গাপুজো অব্দি আলাদা হয়ে গেলো। সে বেশ মনে আছে সুখলতার। পুরুত, ভটচাজের কি জ্বালা বলো দেখিনি? দুই বাখুলে টানাটানি তাদের নে। বয়স তো কম হলো না সব । তিনকাল গিয়ে এককালে থেকেছে অথচ বুদ্ধি পাকে কই? নিজের মনেই গজ গজ করে সুখলতা।
তিন কুড়ি পেরোনো এই বয়সে ঝগড়া বিবাদ কম দেখেনি সুখু। মস্ত ঝুড়ির ভেতর থেকে পদ্ম কুঁড়িগুলো ফোটাতে ফোটাতে তার বিয়ে হয়ে আসা প্রথম দিনগুলো মনে পরে। কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা, মাথায় ছোট্ট ঘোমটা টেনে শাশুড়ি ঠাকরুনের পায়ে পায়ে ঘুরতো। হাতেহাতে এগিয়ে দিতো এটা সেটা। আর হাঁ করে দুগ্গা ঠাকুরের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে শুধোত কোন দেশের মেয়ে গো তুমি? এমন আগুনপারা রূপ, এমন সুয্যির মতো তেজ, তুমি কেন মরতে বুড়ো শিব ঠাকুরের বৌ হলে গা?
দীঘির টলটলে কালো জলের ওপর রং ঢেলে ওপারে লালরঙা সূর্য উঠলে সুখলতার এ পৃথিবীকে মনে হয় আহা, যেন কনে বৌটি! সুখে থাকো বাপু, বুড়ি হয়ে তুমি যেন বড়গিন্নি'র মতো হওনি আবার!
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে সুখলতা। থাকতে থাকতে তার ঘোর লেগে যায়। সুখলতা যেন এ গাঁয়ের বৌ না, পাশের গাঁয়ের মেয়েটিও না। যেন পৃথিবীর কোণে কোণে আসনপিঁড়ি এক মেয়ে। মাথার ওপর এ আকাশটা তার চেনা, বড্ড চেনা।
সে তখন এক আধো আঁধার সময়। মানুষের স্রোত ভেসে যাচ্ছে এদিক সেদিক। সুমেরিয়ান, স্কাইথিয়ান, আক্কাডিয়ান সব মানুষ, তলে তলে মিশে যাচ্ছে স্রোতের মতো। তখন থেকেই পৃথিবী মা, আকাশ পিতা।
দীঘির জলে ছপছপ শব্দ শোনে সুখলতা আর জলের তলে তলে আকাশ পৃথিবীর গল্প শুয়ে থাকে শ্যাওলার মতো জড়াজড়ি করে। সুখলতা খোঁজে উমার মুখ।
এদেশ তখনও ভারত নয়। সিন্ধু নদীর এপার ওপার দেশ নয়, বিদেশও নয়, কেবলই মানবজমিন। মানুষ তখন অনবরব গড়িয়ে যাচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে। মিশে যাচ্ছে কালো মানুষ, সাদা মানুষ, গোল মাথা, লম্বা মাথা আর এক হয়ে কাছে পৃথিবীজোড়া দেবদেবী, মিথ আর চাকার দাগ। দুর্গা নামের মেয়েটি দেবী হয়ে উঠছে লতায় পাতায় আর সন্ধ্যার দিগন্তে এক হয়ে যাচ্ছে ভারত, ইজিপ্ট, রোম, গ্রীস, মেসোপটেমিয়ার, ব্যাবিলনিয়ার রূপকথারা।
পৃথিবীর পথে পথে মানুষ সেদিন উর্বরতার সন্ধানে। ফসল চাই, চাই নতুন প্রাণ। মাটিই ফসলের উৎস, মাটিকে সরস করে তোলে আকাশ, সূর্য দেয় তেজ। প্রাণ জেগে ওঠে মাটির গভীরে। বসুন্ধরা, পৃথিবীই সেই আদিমাতা। দৌ, আকাশ নামের পুরুষটিই যেন আদিপিতা। এই দ্যাবা-পৃথিবীর স্তব করেছে মানুষ। দেশে দেশে তার নানান নাম, রূপ। তবু মিলেমিশে গেছে তলেতলে, মানুষের পায়ে পায়ে।
অম্ভৃণ ঋষির বাক্ নামের মেয়েটি হঠাৎ যেদিন ব্রহ্মজ্ঞানী, ব্রহ্মবাদিনী হয়ে উঠল সেদিন নিজেই নিজেকে স্বয়ং ব্রহ্ম বলে ঘোষণা করল মেয়ে। চমকে তাকিয়ে থাকল চরাচর, মেয়েটি বলল আমিই সৃষ্টি, আমিই স্থিতি। আমিই লয়। আমিই জগতের অধিশ্বরী, জ্ঞানরূপা, অন্নদায়ী... আর জগৎ লুটিয়ে পড়ল তার পায়ের তলায়। ঋগবেদ তার দশম মণ্ডলের একশ পঁচিশতম সূক্তে সেইটিই ধরে রাখল দেবীসূক্ত হিসেবে। এইটিই দেবীর সূচনা বলে ধরা হয়।
দিনে দিনে দুর্গা বেড়েছে ষোলকলায়। শস্যদেবী পৃথিবী আর উমা-পার্বতীর রূপ মিশে গেছে দুর্গার শরীরে। দুর্গা নামের প্রথম উচ্চারণ পাওয়া গেল তৈত্তিরিয় আরণ্যকের যাঞ্জিকা উপনিষদে, "কন্যাকুমারী ধীমহি তন্ন দুর্গি প্রচোদয়াৎ " ... দেবীদুর্গা কুমারী অর্থাৎ core, ভূগর্ভস্থ শক্তি। এই কোর ইজিপ্টের দেবী প্রকৃতিদেবী কোরের সাথেই তুলনীয়।
ঘাটের কাছে ধুমসো নিমগাছটার ডাল ঝুঁকে থাকে জলে। ছায়া ছায়া ছবির মতো তাল গাছের সাথে খুনসুটি হয় রোজ। সুখলতা কোশাকুশি এগিয়ে দেয় হাতের কাছে। কলাবউ উঠছে ঘাটে ঘাটে। মানিক নাপিত মানকচুর পাতায় মুড়িয়ে রাখছে ধান, কলা, হলুদ, অশোক, জয়ন্তী, কচু, ডালিম, আর বেলপাতা। পাকা ধানের শীষ ঢেউইয়ে উঠছে হাওয়ায়। মালো পাড়ার উমা আসছে দুহাতে ধানের শীষ সরিয়ে। কালো কুচকুচে মেয়েটার মুখে বড্ড মায়া। মুচড়ে ওঠে সুখলতার বুক। মেয়েটার দিকে চেয়ে মনে হয় এই বুঝি সেই দেবী, চরাচরের ঈশ্বরী। মেয়েটার মুখ অমন দেবীর মতন লাগে কেন তার?
দেবী। হরপ্পার সেই মূর্তি তার নাভি থেকে উঠে আসছে গাছ, সেই তো মা। পৃথিবীর মতো মা। ঋগবেদ বলেছে অদিতিই আদি জননী, শস্যদেবী। অদিতিই মহী, অদিতিই ইলা।
মার্কন্ডেয় চণ্ডীর শ্লোকটি এরকম
"আধারভূতা জগৎ স্ত্বমেকা
মহীস্বরূপেন যতঃ স্থিতাসি।"
দেবী মহী (পৃথিবী) রূপে স্থিত। আর তৈত্তীরিয় ব্রাহ্মণে বলা হল পৃথিবী সরঘা মানে মৌমাছি। পৃথিবী মধুমতী, মধুব্রতা, মধুদুঘা। এই ভ্রামরী পৃথিবীর মতো দেবীরও আরেক নাম ভ্রামরী।
আবার এই দেবীই বলছেন যতদিন বৃষ্টি না হয় আমি শাক দিয়ে প্রাণীর পালন করব। দেবী তাই শাকম্ভরী। শাক শব্দ শস্য হিসেবেই ব্যবহার হয়েছে। এই দেবীই শস্যদেবী, অদিতি, মহী। ঠিক যেমন সুমেরু সভ্যতার ইস্তার, ব্যবলোনিয়ার এস্টার্তে, দক্ষিণ আরবের আথতার, আবিসিনিয়ার এস্টার। সুতোর গায়ে সুতোর বুননে যেমন বেড়ে ওঠে জাল তেমনই জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে মিথিক্যাল কল্পনারা পৃথিবীর এপার ওপার।
বড় গিন্নির মতন হাড়কেপ্পন জেবনে
দেখেনি সুখলতা। বিধু বোষ্টমের গান শুনেও তার বুক গলে না গো!
"গিরি, এবার আমার উমা এলে, আর
উমা পাঠাব না।
বলে বলবে লোকে মন্দ, কারো কথা শুনবো না"।
বিধু করেছে কী? না নামো বাখুলের মেজবউয়ের সুখ্যাত করছেল খুব। করবে না? বলো? মেজবউ যে মালো পাড়ার ওই উমাকে মেয়ের চোখে দেখে। মা মরা মেয়েটার মেজবউ ছাড়া কে আছে বলো দিনি?
উমা নামটি সংস্কৃত কিনা কেই বা জানে? শব্দটির যে প্রকৃতি প্রত্যয়জাত রূপই পাওয়া যাচ্ছে না! বরং পাওয়া যাচ্ছে নামের কিছু কাল্পনিক ব্যাখ্যা। উ হল শিব, মা শ্রী। শিবের শ্রী অর্থে উমা। কিম্বা মা হল পরিমাপক, শিবকে পরিমিত করেন বলে উমা। কিম্বা মেয়েকে করা মেনকার নিষেধ "ওহে (উ), এত কঠিন তপস্যা করো না (মা)"।
সেই যে ইউফ্রেটিস নদীর উত্তর উপত্যকা আর তারই অগ্নিকোণে ব্যবিলোনিয়া রাজ্য, তারা মাকে বলে উম্মা, উম্মু। আর উত্তর মেসোপটেমিয়ার আক্কাডিয়ানরা মাকে ডাকে উম্মি। অমরকোষ মা শব্দের মানে লিখছে ভার্গবী, ভৃগুদের উপাস্য দেবী বলেই তিনি ভার্গবী। কেউ কেউ বললেন ভৃগু হল সেই ফ্রিগিয়ানরা যাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এল ইন্দ্র। সিন্ধু নদীর ওপারে থাকে বরুণদেশের লোক, তারাই ফ্রিগিয়ান। মেসোপটেমিয়া আরব পেরিয়ে সমুদ্রপথে সেইসব মানুষেরা এসে থামল বোম্বের ভৃগুকচ্ছ (ভারহুচ) বন্দরে। একুশবার পৃথিবী ক্ষত্রিয়হীন করে ফেলা পরশুরামও সেই ভৃগু বংশীয়, ভার্গব।
দেবীর আসল নামটি কিন্তু পার্বতী। পর্বতের মেয়ে বলে নয়, পর্বতে থাকেন বলেই তিনি পার্বতী। শতপথ বলে পর্বতস্বরূপা বলে দেবীর নাম পার্বতেয়ী। ঠিক সেখানেই সাংখ্যায়ন ব্রাহ্মণ বলছে পর্বতপুত্র অর্থে দক্ষই পার্বতি। মার্কন্ডেয় চণ্ডীতে সেনাপতি ধূম্রলোচন বলেছে দেবী "তুহিনাচল সংস্থিতাম্"। এই যে সিংহবাহিনী পর্বতবাসিনী পার্বতী, ঠিক এমনই মাউন্টেন গডেসদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের নানান দেশে। গ্রীসের পার্বত্য দেবীর হাতে বর্শা, পাহাড়ের মাথায় দাঁড়ানো, চারপাশে সিংহ। ক্রিট দ্বীপের পার্বত্য দেবী, রোমের সিবিলি ইত্যাদি।
কেন উপনিষদে প্রথম পাওয়া গেল উমার নাম। এই হৈমবতী উমাকে প্রথম দেখলেন দেবরাজ ইন্দ্র। আর এরপর রামায়ণকার লিখলেন সমস্ত ধাতুর আকর হিমবানের দুই মেয়ে গঙ্গা ও উমা। মহাভারতের হর পার্বতী সংবাদ অংশটি প্রক্ষিপ্ত ধরে নিলে রামায়ণের পর উমা এলেন কালিদাসের হাত ধরে, কুমারসম্ভব কাব্যে।
অথচ আগমনী গানের উমা, আদরের গিরিজা তিনি তো শস্ত্র ধরেন না। শস্ত্র ধরেন দুর্গা। দুর্গা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত দিক দেখলে পাওয়া যায় দুর্গ নামের অসুর, মহাবিঘ্ন, অতি ভয়, অতি রোগ হনন করেন যিনি তিনিই দুর্গা। আ প্রত্যয় যোগে - হননকারী।
যাঞ্জিকা উপনিষদের পর মহাভারতে যে দুটি দুর্গা স্তব পাওয়া যাচ্ছে সে দুইই পণ্ডিতরা প্রক্ষিপ্ত বলে নস্যাৎ করেছেন। মহাভারতের পরবর্তী খিল হরিবংশতেও দেবী হিসেবে দুর্গার প্রভাব তেমন নেই। এই খিল হরিবংশ আর দেবী পুরাণে দুর্গাকে দুর্গ-পরাক্রমা বলা হয়েছে। দুর্গ রক্ষা করেন এমন দেবী। সেই দেবীর শস্ত্রধারী রূপটি বোধহয় পর্ণশবরী হিসেবে পুজো পেত শবর, পুলিন্দ এদের কাছে। সেটিই ধীরে ধীরে উমা রূপের সাথে জুড়ে পরিশ্রুত হয়ে বৈদিক দুর্গার মেটামরফসিস।
দুই বাখুলের মাঝের খোলা জায়গাটায় এসে দম নেয় সুখলতা। কপালে গোল কয়েনের মতো টিপ। সকালের প্রথম আলো পড়ে আগুনের মতো গনগন করছে সুখলতার মুখ। লালপেড়ে গরদে সুখলতাকে দেখাচ্ছে মহিষাসুরমর্দিনীর মতো। ফুলে ফুলে উঠছে নাকের পাটা, নাকফুলে রোদের ঝিলিক। টানা পরিশ্রমে হাঁফাচ্ছে সুখলতা। দেবীর পায়ের নিচে পড়া মহিষটাকে দেখে বড় মায়া হয় ওর।
যুদ্ধবাজ দেবী বাইর্গর পুজো করত ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের একদল উপজাতি। আর থাকত কাস্পিয়ান, অষ্ট্রালয়েড আর আলপাইনদের এক মিশ্র প্রজাতির মানুষ মনখেমররা। বাইর্গো উপাসকদের সাথে তাদের না জানি কবেকার শত্রুতা। মহিষ ছিল মনখেমরদের টোটেম। এই মহিষ টোটেমের মানুষদের হারিয়ে দেয় বাইর্গোর উপাসকরা। গবেষকদের ধারণা সেটিই মহিষাসুরমর্দিনীর আদিম রূপকল্প। এরই পাশাপাশি টিকাকার সায়নাচার্য ঋগবেদের অষ্টম মণ্ডলের বারোতম সূক্ত অনুযায়ী মহান অসুর অর্থে মহিষ শব্দটি নিয়েছেন। মহান অসুরকে মেরেই দেবী মহিষাসুরমর্দিনী।
উমা পার্বতীর পাশাপাশি আরেকটি দেবীর ধারা পাওয়া গেল মার্কন্ডেয় চণ্ডীতে। দেবী চণ্ডী। সম্ভবতঃ বিভিন্ন লৌকিক চণ্ডীর ধারাও মিশে গেছে এই মার্কন্ডেয় চণ্ডীর চণ্ডী বর্ণনায়। সেখানেই চণ্ডীকা, অম্বিকা, উমা, দুর্গা, ভ্রামরী, শাকম্ভরি, ভীমা ইত্যাদি নামের সাথে এক করে দেওয়া হয়েছে দেবী চণ্ডীকে।
যদিও উমা নামটি চণ্ডীতে কোথাও বলা হল না, দেবীর পার্বতী নামটি পাওয়া গেল পর্বতবাসিনী হিসেবে। মার্কন্ডেয় চণ্ডীরই রাত্রি সূক্তে দেবীকে কালরাত্রি মহারাত্রি বলা হল, আবার তারই উল্টোদিকে মুন্ডক উপনিষদে যজ্ঞের আগুনের সাতটি শিখাকে তুলনা করা হল দেবীর সাথে। আগুন সমস্ত শক্তির উৎস জ্ঞানে আগুনই শক্তিরূপা দেবী। যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি বলছেন অরণি দিয়ে আগুন জ্বালানোই বোধন। বেলকাঠের অরণি বলেই দেবী বেলপাতায় অধিষ্ঠান করেন। তিনি কুমারী, তিনিই শক্তি।
মহিষাসুরমর্দিনীর প্রথম মূর্তিটি পাওয়া গেল দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে। পুজোর ইতিহাসও মোটামুটি বারোশ শতাব্দীর। এগারোশ শতকে রাজা হরিবর্মদেবের মহামন্ত্রী ভবদেব ভট্ট তাঁর স্মৃতিগ্রন্থে উল্লেখ করলেন জীকন ও বালকের কথা। এঁরাই দুর্গাপুজো বিধি বিষয়ক প্রথম স্মৃতিশাস্ত্রকার। আরো প্রায় দুশ বছর পর শূলপাণি তাঁর স্মৃতিগ্রন্থেও জিকন ও বালকের বিভিন্ন বাক্য ব্যবহার ও বিশ্লেষণ করেন। শরৎ থেকে বসন্ত পর্যন্ত শস্য উৎসবের মাসজুড়ে দেবীর পুজো হল নানান নামে - দুর্গা, লক্ষী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা, সরস্বতী। শস্য আর বিজয় উৎসবের দুটো আলাদা আলাদা ধারা মিশে গেল দেবীর পূজা বিধিতেও। উত্তর আর পশ্চিম ভারতে বিজয়া বা দশেরা আজও বিজয় উৎসব, শমী গাছের ডালটিই সেই বিজয়ের প্রতীক। পেকে ওঠা ফসলের গন্ধে উৎসব আসে এদেশের ঘরে ঘরে। দুর্গাপুজোও তাই উৎসবের পুজো। সব শাস্ত্র ছাপিয়ে দেবী জয়ের দেবী, ভয় রোগ আর মারীর দমন করে ঘরে ঘরে উৎসব এনে দেওয়ার দেবী।
ধানক্ষেতের গায়ে হাতের তালু ছড়িয়ে দেয় উমা। ছোট্ট উমার কোমর ছাপিয়ে উঠেছে ধানের শীষ। কাঁচা সোনার মতো রঙ এখন ধানে। শরৎ বুঝি শস্যঋতু। এই শরতেই দিকে দিকে দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে পড়ে রাজা। দলে দলে মানুষ পেরিয়ে যায় পৃথিবীর মাঠঘাট, বন বাদাড়, নদী। আর মিথগুলো ছড়িয়ে পড়ে মানুষের পায়ে পায়ে, শীতের সকালে কিম্বা আগুন পোহানো রাতে। প্রদীপ জ্বালছে সুখলতা। সিংহের পিঠে ডিগবাজি খেয়ে আস্তে আস্তে আলো পড়ছে দুগ্গার চিবুকে। মালোপাড়ার উমা এসে দাঁড়িয়েছে জোড়হাত করে। ওবাড়ির বড় গিন্নির দেওয়া জামাটায় বড্ড মানিয়েছে মেয়েটাকে। ওর হাতে খুচরো শসা, কলা, বাতাবি লেবুর প্রসাদ দেয় পুরুত ঠাকুর। প্রদীপের আলোয় ঝিকিয়ে ওঠা ত্রিশূলটা দেখে ভয়ে ভয়ে গড় করে মেয়েটা। মা গো, পরেরবার সুখুমাসির মতো আসিস মা, ত্রিশূলটিশুল ছাড়াই। অসুরটার বুকে বড্ড লাগে মাগো!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন