শারদ উৎসব মানে পুজোর গান
পুজো আসছে, এই আনন্দের বার্তা নিয়ে
আসে মহালয়া, হৃদয়ে বেজে ওঠে সেতারের ঝংকার। সেই কাকভোরে মন ভরে ওঠা মন্ত্র উচ্চারণের
মধ্যে দিয়ে এক শুদ্ধ সকালকে আবাহন করে নেওয়া। পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের শুরু।
অলৌকিক আলোয় ভোর হয়ে উঠতো মনোরম।
মহালয়ার ভোরের চেহারাটাই হয়ে উঠতো অন্যরকম। রেডিও থেকে ভেসে আসা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের
দৃপ্ত কণ্ঠে সেই মন্ত্র উচ্চারণ যা আমাদের হৃদয়কে আলোড়িত করতো। সেই ভোর থেকেই শুরু
হয়ে যেত পুজোর শুভারম্ভ। সেই সঙ্গে শারদীয়া সংখ্যার নতুন ঘ্রাণ, আর পুজোর গানের জন্য
হাপিত্যেশ অপেক্ষা তো ছিলোই। পুজোর গান বলতে গেলে একটা ডাহুক দুপুর, কোকিল ভোর, আচমকা
বৃষ্টিতে ভেজা স্যাঁতস্যাতে মণ্ডপ, রৌদ্রস্নাত স্নিগ্ধ এক সকাল, পাড়ার প্যান্ডেলে
চোঙাওয়ালা মাইক, আর বেতার তরঙ্গ থেকে ভেসে আসা পুজোর গান। একগোছা রজনীগন্ধার মত টাটকা
স্মৃতি, উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রার মত ছটফটে তরতাজা কিছু মন, সবুজ কিছু সময়, স্মৃতির
ডালপালা মেলে আজও বসে ভাবনাগুলো জমে চিলেকোঠার বারান্দায়। কিছুই যেন হারিয়ে যায়নি।
সময় যেন আটকে আছে শরতের নীল মেঘে, কাশফুলের দোলায়। পুজোর গান সেই অপেক্ষার প্রহর
গোনা থেকে শুরু হত। একটা আস্ত ছেলেবেলা জুড়ে পুজোর গান আমাদের জীবনকে এনে দিতে শান্তির
নীড়।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় থেকে পূজামণ্ডপের
মাইকে প্রচারিত সেই সব গান, যা বাঙালীর হৃদয়কে আন্দোলিত করত। বঙ্গজীবনে প্রাণ সঞ্চারিত
করত। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, কিশোরকুমার, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়,
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মত অবিস্মরণীয় প্রতিভারা আজও বেঁচে আছেন এই পুজোর গানের মধ্যে দিয়ে। যেমন গীতিকাব্য,
সেরকমই সুরকাব্য, যেন এক বিস্ময়কর সামঞ্জস্য যা প্রবাহমান কাল ধরে বয়ে চলেছে। জীবনের
জলছবি যেন। নারী পুরুষের চিরকালীন সম্পর্কের আনন্দ বেদনার সীমানাটি ডিঙিয়ে গানগুলোর
সুর ও সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের কিন্নর কণ্ঠের অধিকারীরা সকল বাঙালির চিত্ত জয় করে।
বিমান ঘোষ একবার বলেছিলেন
"তবে গ্রামীণফোন কোম্পানির ঝুলিতে এবার একটা চমকপ্রদ উপহার আছে তা হল ওস্তাদ আলী
আকবর খাঁ এবং পন্ডিত রবিশঙ্করের সুরে হৈমন্তী শুক্লার আধুনিক বাংলা গানের long
playing Record রেকর্ডবাণী"…
পুজোর গান নিয়ে বলতে গেলে আরেকটা
বিষয় বলা খুব দরকার তা হলো, গানের আগে পুজো কথাটা থাকলেও, এই গান মানেই আধ্যাত্বিক
বা ধর্মীয় গান তা যে নয় সে বলার অপেক্ষা রাখে না। এক কথায় ভক্তিগীতিও বলা যায় না।
যদিও ভক্তিমূলক গান আমরা পুজোর সময় একাধিকবার প্রকাশ হতে দেখেছি। তার উদাহরণও আছে
কিন্তু পুজোর গান বলতে ভক্তিগীতি তা কিন্তু নয়। বিমান ঘোষ একবার বলেছিলেন,
"পুজোর গান আসলে পুজোর গান
নয়, আরাধনার গান, উপাসনার গান, ব্রহ্ম সংগীত ইত্যাদি সাধারণ অর্থে পুজোর গান",
কিন্তু পুজোর গান ইউনিভার্সাল। আমার মনে হয় পুজোর গানের মধ্যে যে বাংলাকে, বাংলার
সুরকে, বাংলার ঐতিহ্যকে, রোমান্টিকতাকে খুঁজে
পেয়েছিলাম তা একেবারে স্বতন্ত্র।
আর পুজো পর্যায়ের গান বা প্রকৃতি
পর্যায়ের গান বলতে আমাদের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতই হলো অপূরণীয় অপরিহার্য ভান্ডার। কিন্তূ
পুজোর গান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারা বহন করে চলেছে, যেখানে সব ধরনের গান এসে মিশেছে।
বলা যেতে পারে সব নদী এসে মিশেছে একই মোহনায়।
সেই সময় ভক্তিমূলক আগমনের বিজয়ের
গান অবশ্য বেশি প্রাধান্য পেত পুজোর গান হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে শারদীয়া
দুর্গা উৎসব উপলক্ষে প্রথম পুজোর গান প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৪ সালে গ্রামীণফোন কোম্পানি
থেকে। প্রথম বছর প্রকাশিত হয় ১৭টি রেকর্ড সংগীত শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মানদাসুন্দরী
কৃষ্ণভিমানী কে মল্লিক, অমলা দাসের মতো ডাকসাইটের শিল্পীরা। এই সালেই শারদীয়া রেকর্ডে
অমল দাস গেছিলেন রবীন্দ্রনাথের দুটি গান। কে মল্লিক সেই সময় বেশ কিছু আগমনী গান রেকর্ড
করেছিলেন। তিনি হিন্দু ছিলেন না মুসলিম চাসি
পরিবারের ছেলে ছিলেন। তাঁর আসল নাম ছিল মোহাম্মদ কাশেম। কিন্তু মুসলিম বলে তৎকালীন
হিন্দুসমাজ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখতেন না এবং রেকর্ড বিক্রি হতো না তাই গায়কের নামের
পাশে রেকর্ড লেভেলে ছাপা হল আগমনী গানে কে মল্লিক রেকর্ড বিক্রির কথা ভেবে সেই সময়
নাম বদলেও ফেলাও হতো। ১৯১৪ সালে খ্যাতনামা নর্তকী গায়িকা কৃষ্ণাভিমানী গাইলেন-
"মাকে কে না জানে ( মালকোষ)
"অলসে অবশে বল কালি"
সেই বছর যাদের রেকর্ড বেরিয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল শশীভূষণ দে চন্ডীচরণ
বন্দ্যোপাধ্যায় সরলাবাঈ বেদানাদাসী। ১৯১৪ সাল বাংলা গানের জগতেএকটি গুরুত্বপূর্ণ সাল।
বাংলার বেতার জগতে এবং বিশেষ করে পুজোর গানের ইতিহাসে ক্ষেত্রে এই সালটি ব্যতিক্রমী।
নথিপত্র ঘেঁটে গবেষকরা অনুমান করেন, এই সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামোফোন কোম্পানির
১৭টি পূজোর নতুন গানের রেকর্ড ক্যাটালগের সন্ধান পাওয়া গেছে। বেগুনি কালারের এই রেকর্ডগুলি
ছিল ১০ ইঞ্চি মাপের। দুই পিঠে রেকর্ডিং করা। দাম ছিল ৩ টাকা। বাংলা এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞাপিত
ঐ তালিকায় শিল্পীদের নাম, গানের প্রথম লাইন, গানের পর্যায়, ইত্যাদি মুদ্রিত ছিল।
সেই সময় থেকেই পুজোর গান হিসেবে স্থান পেত ভক্তিগীতি কীর্তন রবীন্দ্রসংগীত লোকসংগীত
বাউল ইত্যাদি। যেমন ওই ক্যাটালগের কয়েকটি হল সেই সময়ের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী মানদা
সুন্দরী দাসের গাওয়া। তার মধ্যে একটি হলো, "এসো এসো বলে রসিক নিয়ে" (কীর্তন),
নারায়ণচন্দ্র মুখার্জির "দেখা হল স্বজনী আয় ধরি ধরি "..(আগমনী) রাগ
বেহাগ খাম্বাজ) " কি হবে কি
হবে উমা চলে যাবে" বিজয়া ভৈরবী রাগ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বোন অমলা দাস
রেকর্ড বন্দি করেছিলেন "প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী" (সিন্ধুকাফী রাগে)
অমলা দাস প্রথম সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলা যিনি রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেছিলেন সেই
বছর। এবং তা জনপ্রিয় হয়েছিল। রেকর্ড ক্যাটালগে তার নাম ছাপা হত। মিস দাস নামে।
পুজোর গান এক দীর্ঘ ইতিহাস। সময়ের
বিবর্তনে বদলেছে গানের ভাষা চরিত্র। তবু দীর্ঘ সময় পুজোর গানের মধ্যেই আমরা পেয়েছি
নতুন গীতিকার, সুরকার, শিল্পী। শুধু ভক্তিগীতি বা ধর্মীয় গানই নয়, শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের
জন্য রেকর্ড কোম্পানিগুলো গানের পাশাপাশি থিয়েটার যাত্রাপালা, গীতিনাট্য প্রভৃতি প্রকাশ
করতেন ঠিক এই সময়টাতেই। ১৯১৬তে প্রকাশিত হয়েছিল গিরিশচন্দ্র
ঘোষের আবু হোসেন। এই দশকে আমরা প্রায় এক ঝাঁক প্রতিভা পেলাম। বাংলা গানের ইতিহাসে
যিনি উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করেছেন সেই কিংবদন্তি পেলাম গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে'কে।
১৯১৭ সালে পুজোর গানে কৃষ্ণচন্দ্র দে রেকর্ড করলেন "আর চলে না মাগো", "ও মা তোর মুখ দেখে কি”, ১৯২৩ সালে ইন্দুবালা দেবী পুজোর জন্য রেকর্ড করলেন। "তুমি এসো হে" (ইমান রাগে) এবং "ওরে মাঝি তোরি হেথায়" বাধবো না" যা দারুন ভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রখ্যাত গায়িকা কমলা ঝরিয়া প্রথম রেকর্ড করলেন ১৯৩০ এর পুজোতেই। "প্রিয় যেন প্রেম ভুলো না"। ১৯৩৫ সালে কৃষ্ণচন্দ্র দে রেকর্ড করলেন "সখি লোকে বলে কালো", ১৯৩৯-এ রেকর্ড করলেন "স্বপ্ন দেখেছে রাধারানী" এসবই ছিল পুজোর গান। বাংলা গানের জগতে সেইসময় পদার্পণ করয়েছেন শিল্পী আশ্চর্যময়ী দাসী, কমলা ঝরিয়া, আঙ্গুরবালা ইন্দুবালা, বীরেন্দ্রচন্দ্র দাস। বহু বছর ধরে যাঁরা স্বমহিমায় বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯২২ সালে প্রথমবার পুজোর গান হিসেবে আঙ্গুরবালা দেবী রেকর্ড করেছিলেন দুটি ভক্তিগীতি। ১৯২৫ সালে হরেন্দ্রনাথ দত্ত গেয়েছেন "জাতের নামে বজ্জাতি সব"..কাজী নজরুল ইসলামের কথা ও সুরে। ১৯২৩ সালে নজরুলের স্বকন্ঠে রেকর্ড করেছিলেন, "পাষাণের ভাঙ্গালে ঘুম”। ১৯২৩ সালেই মেগাফোন কোম্পানির সূচনা হয়। ভক্তিগীতি কীর্তন, বাউল, লোকগীতির পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গানও পুজোর গানের রেকর্ড জায়গা পেত। ১৯৩৮এ পুজোতে দিলীপকুমার রায় রেকর্ড করেন "বন্দেমাতরম এবং" ধনধান্যে পুষ্পে ভরা"। ১৯৪৭ সালের কথা রেকর্ড করলেন "বঙ্গ আমার জননী আমার"। আরেকজন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীর নাম বলতেই হবে, তিনি হলেন উমা বসু। দিলীপ কুমারের কথা ও সুরে ১৯৩৯ সালে তার পুজোর গান ছিল জীবনে মরনে এবং অতুলপ্রসাদ সেনের গান ও তখন রেকর্ড করেছিলেন ১৯২৫ এর বিখ্যাত শিল্পী শাহানা দেবীর গাওয়া "কত গান তো গাওয়া হল"j এরপর এলো ১৯৩০ সাল। এই বাংলার সংগীত জগতে একটি যুগ সন্ধিক্ষণ।
রেকর্ড হলো বাংলা আধুনিক গান। তৈরি
হলো এক বিশেষ ধারা। যা বাংলা আধুনিক গানেরই অন্তর্গত। বেসিক ডিস্কের গান এবং ছায়াছবির
গান। কলকাতা বেতারে সেইসময় হৃদয়রঞ্জন রায় নামে একজন শিল্পীর গানের অনুষ্ঠানে আধুনিক
বাংলা গান কথাটির প্রথম ব্যবহার হয় সেই বছরই চলচ্চিত্র নির্বাক থেকে সবাকে পরিণত হয়।
শুরু হয় চলচ্চিত্রের গান। ১৯৫৫ সালের পুজোতে প্রকাশিত হয়েছিল "অন্নদামঙ্গল"।
ছয়টি রেকর্ডে। গ্রামোফোন কোম্পানি তখন বিদেশী কোম্পানি। প্রথম স্বদেশী মিউজিক কম্পানি
হিসেবে হিন্দুস্তান রেকর্ড আত্মপ্রকাশ করে ১৯৩২এ। যতদিন গড়াতে লাগলো শারদীয়াতে গান
গাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত সম্মান জনক হয়ে উঠল। যেরকম ভাবে আমরা পেয়েছিলাম পুজোর গানে
আঙ্গুরবালা পঙ্কজকুমার মল্লিক শচীন দেব বর্মনকে যাদের পুজোর গানের রেকর্ড গ্রামোফোন
কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল এবং সাফল্য পেয়েছিল। সেরকম পরবর্তীকালেও আমরা পেয়েছিলাম
প্রথিতযশ অনেক শিল্পীকে। পুজোর গানের রেকর্ডে এইচএমভির দেখাদেখি অন্যান্য রেকর্ড কোম্পানিগুলিও
যেমন কলম্বিয়া আর মেগাফোনও তাদের প্রকাশিত গানের তালিকায় আলাদা বই প্রকাশ শুরু করে।
১৯৩৮এর কথা।শারদীয়া নামে একটি পুস্তিকার ভূমিকায় লেখা হয়েছিল, "সুর নিয়ে
আমাদের কারবার সেই সুরের ডালি শারদীয়া সাজিয়ে আমরা উপহার দিই শারদীয়া প্রতি বৎসর বাংলার সংগীত সংগীত প্রেমীদের কাছে”। এই মেগা তালিকাতে ছিলেন
স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম নলিনী সরকার হিমাংশু দত্ত আব্বাস উদ্দিনের মত খ্যাতনামা সংগীত
শিল্পীরা আর সেই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল সেই বছর পূজোতে গানের বিস্তারিত বর্ণনা সহ
রেকর্ডের তালিকা। এখানে যুথিকা রায় এর গানের কথা বলতেই হয় যার গান দিয়েই পুজোর গানের
রমরমা শুরু হয়েছিল। যে দুটি গানের কথা মনে পড়ে পুরনো ব্রা এর কথা এবং কমল দাশগুপ্তের
সুরে তা হল আমি ভোরের যুথিকা সাঁঝের তারকা আমি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল গান দুটি।
শুধু গানই নয় গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে সেই সময় বাদ্যযন্ত্র কীর্তন ভাটিয়ালির সুর
হাস্যকৌতুক ও প্যারোডি গানের রেকর্ড ও প্রকাশ পেত। ১৯৪৯ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের
কন্ঠে প্রথম পুজোর গান প্রকাশিত হলো সলিল চৌধুরীর সুর সংযোজনায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের
কবিতা অবলম্বনে। যা বাংলা গানের জগতে মাইলস্টোন হয়ে রয়েছে। "রানার চলেছে তাই
ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে রানার চলেছে রানার, রানার গ্রামের
এক হরকরা। সে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি বিলি করে। কিন্তু তার সুখ দুঃখের খবর
কে রাখে?” এই নিয়ে একটি অসাধারণ গান রচনা করে ফেলেছিলেন সলিল চৌধুরী। গীতিকার, সুরকার
এবং কবির মেলবন্ধনে সে বছর পূজোর গান হয়ে উঠেছিল এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
পুজোর গান বলতেই তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
যার নাম না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় কথা বলা। একবার মনে আছে বাবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের
একটি গান বারবার গাইতেন সেটি হল,
"অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি
জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি”
বাবাকে যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই
গানটি কার গাওয়া! বলেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছেলেবেলার সেই নামগুলো সেই সময়ে
অতটা নাড়া না দিলেও পরবর্তীসময়ে গান সম্পর্কে যখন সচেতনতা বাড়ে এবং আরো বেশি শুনতে
থাকি তখন শুধু নাম নয় সবাই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন। গানটি নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং
সলিল চৌধুরী। ওই একই বছরে যুথিকা রায় পুজোয় রেকর্ড করলেন “এমন বরষা ছিল সেদিন",
যা আজও এত বছর পরেও আমাদের হৃদয়ে বেজে ওঠে। একই সময় বাংলা গানে আরো একজন বলিষ্ঠ গায়কের
উদয় হলো। তিনি হলেন মান্না দে। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখায় প্রথম বাংলা গানে যার
প্রকাশ ঘটলো। "হায় হায় গো রাত যায় গো," কিংবা "কত দূরে আর নিয়ে
যাবে বলো" ১৯৫৪ সালের সলিল চৌধুরীর সুরে পুজোয় প্রকাশিত হলো আরো একটি গান
"ধিতাং ধিতাং বোলে"। ১৯৫৭তে পূজোয় পেলাম সেই হৃদয় নিংড়ানো গান "আমি
এত যে তোমায় ভালোবেসেছি" মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে। গানটি সুর করেছিলেন
স্বয়ং শিল্পী। যা আজও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক বাংলা গানগুলির মধ্যে অবশ্যই অন্যতম।
১৯৬৫তে পুজোর গানে আত্মপ্রকাশ ঘটাল
আর ডি বর্মন ঘরানার। তৈরি হল "আমি বলি
তোমায় দূরে থাকো কথা রাখো না" এবং "আমার মালতি লতা কি আবেশে দোলে,” রাহুল
দেব বর্মন এবং লতা মঙ্গেশকারের যুগলবন্দিতে বাংলা গানের জগতে তৈরি হল এক নতুন দিগন্ত।
নতুন স্টাইল। নতুন গায়কী নতুনভাবে বাংলা গানকে পরিচিতি দিলেন এই সুরকার। যা কালজয়ী
পূজোর গান হিসেবে চিরকালীন হয়ে রয়েছে। প্রতিবছর
রাহুল আশা জুটি বেঁধে পুজোর গানে সারা ফেলে দিতেন আর এই গান শোনার অপেক্ষায় মানুষ
একটা বছর শুধু অপেক্ষায় থাকতেন। ১৯৬৭তে পুজোর গান পেল আর ডি বর্মন এবং কিশোরকুমার
ম্যাজিক। এই যুগলবন্দী নিয়ে এলেন পুজোর গানের আরবাধুনিক সংস্করণ। "একদিন পাখি
উড়ে যাবে আকাশে।" এই গানটি সেইসময় থেকে শুরু করে প্রত্যেক বছর পুজো আসলে বেজে
উঠতো প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। গানটি শুনতে শুনতে নিজের সাথে মাকড়সার জলের মতো বুনতাম
কল্পনার জগত। বলা যেতে পারে তৈরী হত এক ঘোর। শুধু আমার নয়, আমার মতো অনেক ছেলেবেলাই
সোনালী রোদ হয়ে পূজার গানের উষ্ণতা পেয়েছে। বৃষ্টিভেজা সকলের মত স্নিগ্ধতা পেয়েছে।
বাংলা গানকে ভালবাসতে শিখিয়েছে এই পুজোর গান। এক নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দ দিয়েছে। সুখ
দুঃখের সঙ্গী করেছে আমাদের। সব থেকে বড় কথা কল্পনার জগৎ দিয়েছে, যাকে পাথেয় করে
আমরা বড় হয়েছি। তাই আজ এত বছর পরেও "একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে"..এখনও
মন কেমন করা কোনও সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৯১৪ থেকে ১৯৮০ ১৯৯০ এই সময়টা
গানের ভাষার বিবর্তন ধরা পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন ধারার বা স্টাইলের বাংলা গান।
১৯৬৯ এর প্রথম নিজের সুরে নিজের গান রেকর্ড করেছিলেন রাহুল দেব বর্মন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল
কিশোরকুমার গাইবেন পরে রাহুল ঠিক করলেন নিজেই গাইবেন। গানের কথা লিখলেন শচীন গুপ্ত।
তৈরি হল রুবি রায় এর মতন আদ্যন্ত একটি রোমান্টিক বাংলাগান। বাংলা গানের ইতিহাসে এটি
উল্লেখযোগ্য রোমান্টিক নারী চরিত্র হিসেবে থেকে গেলেন। বা জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেনের
থেকে কোন অংশে কম নয়। কলেজ পড়ুয়াদের বুকে ঝর তুলেছিল সেই গান - "মনে পড়ে রুবি
রায় কবিতায় তোমাকে একদিন কত করে ডেকেছি, আজ হায় রুবি রায় ডেকে বল আমাকে তোমাকে
কোথায় যেন দেখেছি"। ১৯৭৩ সালে একই সুর ব্যবহৃত হল অনামিকা সিনেমায়। “মেরি ভিগি
ভিগি সি"। বাংলা গান এতদিন পর চূড়ান্ত বিরহকে সুর কথার মধ্যে দিয়ে অসাধারণ স্টাইলে
পরিবেশিত করল। বাংলা গানে আর ডি বর্মন নির্মাণ করলেন আধুনিকতার আর এক মোড়ক।র
১৯৭৬ সালে এইচএমভি নিয়ে এল অপর
একটি কালজয়ী শারদ অর্ঘ্য "আয় খুকু আয়".. চিরকালীন এক সম্পর্ককে গানের
কথায় নিয়ে এলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরারোপ করলেন ভি বালসারা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
ও শ্রাবন্তী মজুমদারের যুগলবন্দিতে তৈরি হল আয় খুকু আয় চোখে জল এনেছিল এই গানটি।
একটা গানের মধ্যে দিয়ে যে এত সুন্দর গল্প বলা যায় সেই কাজটি এমন দক্ষতার সঙ্গে দেখিয়েছিলেন
গীতিকার সুরকার, বাবা মেয়ের চিরকালীন ভালোবাসার গল্প গানের মধ্যে প্রকাশ পেল। সেই
সময়ে ঘরে ঘরে রেডিওতে বেজে উঠেছিল এই গান যা পূজোর গান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
এরপর সৃষ্টি হয়েছিল মা মেয়ের মিষ্টি সম্পর্কের গল্পকথা। "তুমি আমার মা, আমি
তোমার মেয়ে, বলো না মা কি পেয়েছ আমায় বুকে পেয়ে, মা গো আমায় বুকে পেয়ে"।
মেয়ের ভূমিকায় সেই শ্রাবন্তী মজুমদার, মায়ের ভূমিকায় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
বাবা মেয়ের জুটি এবং মা মেয়ের জুটির অনবদ্য সম্পর্ককে সেই সময়ে গানে রূপ দিয়েছিলেন
পুলক বন্দোপাধ্যায়। সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৭২ সালে পূজার গানে আমরা পেলাম বিদেশি
হৈমন্তী শুক্লাকে শৈলেন মুখোপাধ্যায় গাওয়ালেন “এত কান্না নয় আমার” এবং “ময়ূর নাচে
দেখবি আয়”। এরপর এইচএমভি কোম্পানি থেকে প্রকাশিত
হলো সেই কালজয়ী গান মান্না দের সুরে, "আমার বলার কিছু ছিল না", "কেন
নয়নে আবির ছড়ালে” এবং “ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছোঁয়া না"। এভাবে একের পর
এক পুজোর গান বাংলার হৃদয় জয় করল। বাংলা গানের এই ধারা অর্থাৎ পুজোর গান বাংলার চৌকাঠ
ছেড়ে আন্তর্জাতিক হয় উঠলো ধীরে ধীরে। বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিলেন হৈমন্তী
শুক্লা। ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ এবং পন্ডিত রবিশঙ্করের সুরে হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া একটি
আধুনিক বাংলা গানের লং প্লেয়িং রেকর্ড আজও গ্রামোফোন কোম্পানির ঝুলিতে চমকপ্রদ উপহার
হিসেবে থেকে গেছে পুজোর গানের অন্দরমহলে। লতা মঙ্গেশকরও গেয়েছিলেন আলী আকবরের সুরে।
বাংলা গানকে ভালবেসে একসময় আলী আকবার খাঁ সাহেব এবং পন্ডিত রবিশঙ্কর সুর সংযোজন করেছেন।
বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী স্বপ্না
চক্রবর্তীর কথা আমরা কেউই ভুলে যাইনি। পূজার গানেই আপামর বাঙালি পেল স্বপ্না চক্রবর্তীর
কন্ঠের জাদু। পেলাম সাড়া জাগানো সেই লোকসুর, "বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল,
এমন খোঁপা বেঁধে দিব লাল গেন্দা ফুল"। এই গানটি বাংলা ও বাঙালির জীবনের দুঃখ সুখের
সাথী হয়ে গেল। ছেলেবেলার পূজোর গানের সাথে এইসব গান জড়িয়ে গেল আষ্ঠেপৃষ্ঠে। রতন
কাহারের রচনা ও সুর করা "বড় লোকের বিটি লো" উপস্থাপন করে জনপ্রিয়তার শীর্ষ
পৌঁছে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী। আর রেকর্ডের অপর পিঠেই
ছিল, "বলি ও ননদী আর দুমুঠো চাল ফেলে দে হাঁড়িতে”। ১৯৭৮ সালে পুজোর সময় প্রকাশিত
হওয়া এই দুটি গান স্বপ্না চক্রবর্তীকে সাফল্যের তুঙ্গে নিয়ে যায়। যে সময় বেতারে
লোকসংগীত শুনলেই মানুষ বেতার বন্ধ করে দিত, সেই সময়ে লোকসংগীতকে সাধারণ মানুষের মধ্যে
এভাবে এতটা জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন বলে প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী
একসময় স্বপ্না চক্রবর্তীকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। খুব স্নেহ করতেন স্বপ্না চক্রবর্তীকে।
ঠিক তার আগের বছর ১৯৭৭ সালে পুজোর
গানে লোকসংগীতের মাদকতা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী রুণা লায়লা
ইপি রেকর্ডের মাধ্যমে। রুণা লায়লার কন্ঠে অনবদ্য সেইসব লোকসংগীত। লোকসংগীতকে একেবারে
ভিন্ন স্টাইলে উপস্থাপন করে বাংলার মানুষকে মাতিয়ে দিয়েছিলেন রুণা লায়লা। "সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী", "ইস্টিশনের
রেলগাড়িটা মাইপা চলে ঘিরে কাঁটা প্ল্যাটফর্মে বইস্যা ভাবি কখন বাজে বারোটা কখন বাজে
বারোটা", মানুষের মুখে মুখে আজও ঘুরছে সেইসব গান। লতা মঙ্গেসকার, আরতি মুখোপাধ্যায়,
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, শিবাজী চট্টোপাধ্যায় প্রত্যেক
বছর প্রমাণ করতে লাগলেন তাঁদের কণ্ঠের কারিশমা। এরপর এল ক্যাসেটের যুগ। ক্যাসেটের নতুন
বাজার তৈরি হল ১৯৮৮ সাল নাগাদ শেষ শারদ অর্ঘ্য প্রকাশ করল HMV। নয়ের দশকের শুরুতে আবির্ভাব হয় জনপ্রিয় শিল্পী
কুমার শানুর। পুজোর সময় আমরা পাই তাঁর বেসিক
অ্যালবামের মনে রাখার মতো গানগুলি। "প্রিয়তমা মনে রেখো" কিংবা "তোমার
সুরে সুর বেধেছি"। আশির দশকের শেষের দিকে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামটি
সারা ফেলে দিয়েছিল নতুন প্রজন্মের কাছে। তোমাকে চাই নিয়ে এসেছিল এক ভিন্ন এক স্বতন্ত্র
গানের ভাষা। আরো বেশি আধুনিক হয়ে উঠলো বাংলা গান। ‘মোহিনের ঘোড়াগুলি’র গানগুলি বাংলা
গানকে সমৃদ্ধ করেছিল। নচিকেতা চক্রবর্তীও আনলেন বাংলা গানে নিজস্বতা। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল সেই অ্যালবাম।
পুজোর চারটে দিন পাড়ায় পাড়ায় বেজে উঠত জীবনমুখী তকমা লাগানো সেইসব গান। অঞ্জন দত্ত,
শিলাজিৎ, রুপম ইসলাম, এবং আরো প্রতিভাবান শিল্পীরা নিয়ে এলেন বাংলা গানের এক নতুন
ভাষা। যে ভাষায় রোমান্স থেকে প্রতিবাদ সবকিছুই গানের মাধ্যমে তীব্রভাবে করা যায়,
তা দেখল তামাম দুনিয়া। বাজারে এল বাংলা ব্যান্ড কালচার। এল লোকসংগীতের ব্যান্ড। নব্বই
দশকের শেষের দিকে রেডিও তখন অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল সম্প্রচারের মাধ্যমে এনেছে এফএম
রেডিও। বেসরকারি এফএম চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের গান পুজো আসার আগেই
শ্রোতারা শুনে ফেলতে লাগলো। শারদীয়া বাংলা গান ধীরে ধীরে অস্তমিত হতে লাগলো। ইউটিউব
মিউজিক স্ট্রিমিং সাইট বা কোন মিউজিক কোম্পানির ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ পেতে লাগলো বিভিন্ন
শিল্পীদের মৌলিক গান। পুজোর গানের এখানেই মাহাত্ম্য। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গান, সেই
সময়ে সেই প্রেক্ষিতকে উপস্থাপন করেছে। প্রত্যেকটা গান মনের মণিকোঠায় আজও সংগ্রহে
আছে। থাকবেও সারাজীবন।
এখনো পুজো আসে। মহালয়ার সুর জানান দেয় আসন্ন শারদীয়া উৎসবের কথা। কিন্তু বদলেছে পুজোর ভাষা। উৎসবের ধরন। বদলেছে অপেক্ষার সমীকরণ। পুজোর গানের অপেক্ষায় আজকের প্রজন্ম কি থাকে? সেই উন্মাদনা বোধহয় অনেকটাই ধূসর স্মৃতি। বছরের প্রত্যেকটা সময় বা মাসে তারা নতুন নতুন গান আপলোড করছে কিংবা ইউ টিউবে শুনতে পাচ্ছে নতুন নতুন গান, মোবাইলে ডাউনলোড করা শ’খানেক গান। পথ চলতে চলতে কানে ইয়ার প্লাগ গুঁজে আধুনিক প্রজন্ম নতুন গান শুনে নিচ্ছে খুব সহজেই। কারণ এখন তো মুঠোয় চলে এসেছে গোটা পৃথিবী। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন একটা গোটা পৃথিবী শুধু অপেক্ষায় থাকত শারদীয়ার গানের অপেক্ষায়। প্রেমপত্রের মত, ডাকহরকরার মত, ডাকবাক্সর মত। ছাদে বড়ি শুকিয়ে দেওয়ার মত। ঠাকুমা দিদিমার কাছে ঠাকুরমার ঝুলি শোনার মতো। অপেক্ষাও কি তাহলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে?
হাত বাড়ালেই বন্ধুর মত এখন এসেছে ল্যাপটপ। মোবাইল। আইপড। এসেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা ঘটেছে কৃত্রিম মেধার বিকাশ। চ্যাটজিপিটিতে পাওয়া যাচ্ছে চট জলদি প্রশ্নের উত্তর। অপেক্ষার সমীকরণ এই প্রজন্মের কাছে এখন আলাদা। আধুনিক প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে বিরহ বেদনা অপেক্ষা অনুরাগের রসায়ন। বদলে গেলেও অপেক্ষা কখনো ফসিলস হয়ে যেতে পারে না। প্রেম ফিনিক্স পাখি হলেও অপেক্ষা আজও সৃষ্টির রসদ। কখনও কখনও ইতিহাস, ঐতিহ্য বর্তমানকেও নিষ্প্রভ করে। নতুনের মধ্যেও পুরাতন জেগে থাকে হিমালয়ের চূড়া হয়ে। আর এভাবেই ইতিহাস বেঁচে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন