মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪০


পেশা

খুব অল্প বয়সেই এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে এক বছরের মাথায় কিঙ্করবাবুর স্ত্রী গত হয়েছে। একদিকে চাকরি অন্যদিকে মেয়ে শিঞ্জিনীকে মানুষ করে তোলার চিন্তায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছিলেন।

তখন তার অনেক বন্ধু-বান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীরা তাকে বলেছিল,

-- মেয়েটি ছোট থাকতে থাকতেই আর একটা বিয়ে করে নাও। মেয়েটি তার হারানো মায়ের স্নেহ যেমন ফিরে পাবে তেমনি তুমিও নিশ্চিন্ত হতে পারবে। আর তাছাড়া তোমার কিই বা বয়েস! এভাবে কি জীবন কাটানো যায়!

কিঙ্করবাবু কারুর কথাই শোনেননি। একজন সর্বক্ষণের অল্পবয়সী বিধবা কাজের মহিলা রেখে দিয়েছিলেন। তার উপরই শিঞ্জিনী এবং সংসারের সব দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। অবশ্য আড়েঠারে এ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছে, কিন্তু কিঙ্করবাবু তা কোনদিনই গায়ে মাখেননি।

শিঞ্জিনী পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। ইংরেজিতে অনার্স কমপ্লিট করে বেশ ভালো মায়নেতে একটা ইন্টার ন্যাশনাল হোটেলে রিসেপশনিস্টের চাকরি পেয়ে গেল। যদিও তিনি আপত্তি করেছিলেন এবং ইচ্ছা ছিল তার মেয়ে মাস্টার্সটা করে অধ্যপনা করুক। কিন্তু মা মরা মেয়ের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হয়েছিল।

রোজ ঠিক বেলা বারোটা সাড়ে বারোটার সময় শিঞ্জিনী তার অফিসে চলে যেত এবং ফিরতে ফিরতে রাত নটা সাড়ে নটা হয়ে যেত। কিঙ্করবাবু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে অফিস থেকে ফিরে আসতেন। কাজের মহিলা কল্পনা টিফিন করে রাখত।

আজ রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল এখনো শিঞ্জিনী অফিস থেকে ফেরেনি। কিঙ্করবাবু এবং কল্পনার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। বারবার ফোন করে দেখেছেন ফোন সুইচড অফ্।

রাতের কলকাতা শহরে যে কত কিছু ঘটে যাচ্ছে দিনদিন! এ কথা মনে হতেই তার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো।

কিছুতেই তিনি এবং কল্পনা স্থির থাকতে পারছেন না। এমন সময় ডোরবেলটা বেজে উঠতেই তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাঁড়িয়েই হতবম্ভ হয়ে গেলেন। দরজার ওপারে একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।

-- আপনি কিঙ্করবাবু?

-- হ্যাঁ, কিন্তু আপনি…

ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপের হাসি ঝুলিয়ে দিয়ে পুলিশ অফিসারটি বলল,

-- মেয়েকে তো ভালোই মানুষ করেছেন দেখছি! চলুন, আপনাকে আমাদের সঙ্গে একটু লোকাল থানায় যেতে হবে।

-- কেন?

-- গেলেই বুঝবেন!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন