কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯ |
দাগ
মাঝে মাঝে ক্রমবিবর্তনের চক্করে নেশার জগৎ বিকেল থেকে নেমে আসে অর্পার জ্বরে। হয়তো ঠান্ডায় জমে যায় সাতটি তারার তিমির। ব্রাত্য মামুলি বর্ণমালা। পাঁচতলার হলুদ ব্লিডিং ব্রাউনিংয়ের উদভ্রান্ত জগতকে করে তোলে আরও পালিয়ে যাবার কর্মী। মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে সুবর্ণের বুকের পাঁজরে।
এই ঘরে রেখে গেছে বোদলেয়ারের পাগলামি। মৃত্যুর এতো সুন্দর সেন্ট।তুহু মঁম শ্যাম সমান। মানুষ মরে। মানুষ হারিয়ে যায়। মানুষ যাকে ভালোবাসে সে রূপবতী হয়ে ওঠে। বুকে এসে ধরে হাঁপ। নরকের ভেতর রংতুলির খেলা। অন্ধকার আর অর্পার ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট।
: আচ্ছা কেন আসো? কেন বলো মরে যাও আবারও রক্তের ভেতর? একদিন নেশার কম্পজিশন, ফুটনোট ক্যানভাস রেখা টেনে টেনে দেখতে হবে।
: মিউচুয়াল সব হয়। বিরল খনিজ আর
আমার জন্য মরণ।
অর্পা হাসে। এই হাসি। এই হাসির
জন্য সব শেষ আমার। তবুও ছুটছি নেশার মতো।
: সব মায়া। সব শালা ইলিউশান। তোমার
হাতের চা সুন্দর।
: শুধু সুন্দর।
: না তার চেয়েও বেশি। ঐ যে হেঁটে
ফিরছে রোমান্টিক আগুন ধরানো পশ্চিম আকাশের মাতাল রঙ। গতকাল শাওয়ারের নিচে ড্রেস চেঞ্জ।
মাথা ঠিক থাকে।
: খিলখিল হাসার শব্দ। তুমি এখনও
মরোনি।
: মরার কি বয়স লাগে?
সত্যি সত্যি অর্পা অনেকদিন পর বুকের ভেতর আগুন। আর সেই আগুন তছনছ করে সব। তারপর নামে সাইবেরিয়ার শীতলতা। এতো ঠান্ডা!
জানালা ধরে ধরে নিয়তির পাঠ। মারা
যাওয়ার আগে নিপুণ পেইন্টিং।
অর্পা কিছু বলে না। চুপচাপ। কী যেন ভাবছে? কী? কী? কী ভাবনা অর্পার? অনেক অনেকদিন আগে খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটার সময় বলেছিল, মরার আগে তোমার ঘরে আসবো।
শালা ঐ সময় তো অর্পার শরীরে ঘ্রাণ
আর বডি সেন্টের গন্ধ কেমন আউলা করে ছিল।
এতোদিন পর অর্পার আসা। না চাইতে
এতো আদর। এতো ভালোবাসা। বুকের ভেতর ঝটকা টানে টেনে নিয়ে বলা, বুকের এখানে একটা দাগ
করে দাও।
: জানালা খোলা। খোলা হাওয়া। তুমি চিনতে পারছো সব। সবাইকে।
দৃশ্য। দৃশ্যর ভেতর থাকে স্টোরি।
কমপ্লিট পাগলামি।
: পাগলামি।
অর্পা নাকি কিছুই জানে না। যেহেতু অর্পা কিছুই জানে না তাই আপনারই কিছুই জানার দরকার নেই। তবে এতো বছর বাদে কদম গাছে ফুল এসেছে। একটি পাখি। অর্পার মতো বুকের গভীরে নেশা ধরা দাগ। নেশা একটু একটু করে ধরেছে। নেশা। দৃশ্যর ভেতর স্টোরি তৈরি হচ্ছে। খাটের ওপর শরীর। আর খোলা শীতলতায় বরফ নামছে। বোদলেয়ারের পাগলামি সাইবেরিয়ার বরফের কাছে টেনে নিয়ে চলেছে দেহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন