বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০


নোম্যানস ল্যান্ড

হাসানের বাড়ি নওদাপাড়ায়। এই অঞ্চলটাকে অনেকে 'ইণ্ডিয়াপাড়া' বলে। তার আধার ভোটার সব কাগজ ইণ্ডিয়ার। কিন্তু দুই পা হাঁটলেই তাদের বাজার বাংলাদেশে। এখানে সচরাচর বিএসএফও আসে না। দশ বারো ঘর নিয়ে এই গ্রাম।

হাসানের বারো বছরের ছেলে মিজানুর কথা বলে খুব। হাসান সকাল সকাল বেরিয়ে যায় নারকেল পাড়তে। সন্ধ্যার আগে ফিরতে হয়। নাহলে কাঁটাতারের গেট বন্ধ হয়ে যায়। ঘরে ফিরলেই মিজানুর বলে, "আব্বা। আমার কোন দেশ? ইণ্ডিয়া না বাংলাদেশ।"

হাসান ঘাম মুছতে মুছতে বলে, "ইণ্ডিয়া।"

-আচ্ছা আব্বা। গেল মাসে গোপালকাকার ছাগলটা ওপারে বাজারে দিকে চলে গেল। আর ফিরল না। কেন?

-ও কাটি খেয়ে ফেলিসে কেউ?

-আচ্ছা আব্বা, ওরা কি মানুষ পেলেও কাটি ফ্যালে?

হাসান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। তার চাহনির ভিতর ক্রমশ ভয় নেমে আসে।

-ক্যানে বলছিস এমন?

-আলিফচাচার ছেলেটা ওপারে গেছিল। আর ফেরেনি। মলিনাচাচি এপারে গেল সেই। ফিরল না।

-নে। খেয়ে নে।

হাসানের বিবি চলে গেছে ঘর ছেড়ে বছর তিনেক হল। লোকে বলে সে শহরে এক বাবুর সঙ্গে ঘর করেছে। মিজানুরকে নিয়ে হাসানের চিন্তা হয়। খেতে খেতে মিজানুর বলল, "আব্বা। তোমাকে যদি ওরা খাই নেয় কুনোদিন?"

হাসান ম্লান হাসে। দু’তার দিয়ে ঘেরা তাদের গ্রাম। কখন কাকে খেয়ে নেবে কে জানে। তাই উত্তর দিতে পারে না কিছুতেই।

পরদিন আবার কাজে বের হয় হাসান। ছেলেটা ঘরে তার বুড়ি মায়ের কাছে রেখে যায়। যাবার সময় দুরুদুরু বুকে বলে, "বেশি এদিক ওদিক যাবিনি যেন..."

তারপর শহরের দিকে চলে। সাইকেল চড়ে নওদাপাড়া পেরিয়ে, কাঁটাতার পেরিয়ে হাসান লোকালয়ে ঢুকে পড়ল। ঢুকতেই বাজার। সে বাজারে মাংসের দোকান। হাসান দেখল পাঁঠার কাটা মাংস বেয়ে চর্বি গড়িয়ে গড়িয়ে কাঠের টুলে পড়ছে। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাসান এগিয়ে চলল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন