বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০



একদিন জন্মদিন

চোখ বুজলেই একটা বৃত্তাকার চাকতি ঘুরতে থাকে। না, শুধু ঘোরে না। কেন্দ্রে একটি কালো ঘুরন্ত বৃত্ত যা চাকতির পরিসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং তিনটি মৌলিক বর্ণের ঘুরন্ত ঢেউ ঘুরতে ঘুরতে একে অপরের সাথে মিশে যায় এবং অসংখ্য ছুঁচোলো রঙের জন্ম হতে থাকে। কালো বৃত্তটা বড় হয়ে চলেছে চাকতির প্রান্ত ঘিরে বিস্তার করে চলেছে মুগ্ধ অন্ধকার। কিন্তু অগণন আলোক সুতিকাগার অন্ধকারের কেন্দ্র ভেদ করে মাকড়সার জালের মত অন্ধকারেই তাদের অস্তিত্ব জাহির করছে। তাদের অট্টহাসি ...শৈবাল, রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। তাই তোর দেশে ফেরার খবর পেয়েই চলে এলাম।

এই পর্যন্ত বলার পর দম ফেলার মত একটা ঘণ উষ্ণ বাতাস সমিধের বুক থেকে বেরিয়ে এলো। শৈবাল প্রথিতযশা মনোবিদ এবং তার বাল্যকালের বন্ধু, একটু থতমত খেয়ে বলল, আচ্ছা  শেষ কবে আমাদের দেখা হয়েছিল তোর মনে আছে? একটু চিন্তা করে, 'বোধহয় দুহাজার দুই-এর ফেব্রুয়ারি, পুরীতে। সাথে ছিল ত্রিধারা আর তোর মেয়ে মৃত্তিকা।  তারিখটা মনে নেই, তবে সেদিন মৃত্তিকার জন্মদিন ছিল' -- সমিধ বলে চললো, এও মনে আছে তোর পরিচিতদের প্রায় কেউই জানতে পারেনি তুই আগেই বিদেশে সংসার পাতার ব্যবস্থা করে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলি। এবং পর দিনই সকালের ফ্লাইটে দুবাই... এবং হাওয়া, ফুস মন্তর হয়ে গেলি, তখন নার্সিংহোমে আমার হৃদিতার যন্ত্রণায় ছটফট করছে, তোর বিয়ের সানাই, আর অন্তরালে এক দানবীয় অট্টহাসির তোলপাড়।‌ মিলে মিশে ভোর রাতে হৃদিতার ছেলে হল। খবরটা তুই জানতে পারলি না।

সবচেয়ে বড় সমস্যা আজ আমার আত্মপ্রকাশ আমার অধীনে নয়। যেমন এই যে আমরা দুজন, মুখোমুখি। ধর এমন কোন কথা উঠলো  উঠতেই পারে, ওঠেই তো বল তাই না, হয়তো আমার পছন্দের নয় সে কথা, যে কথা তোকে বা আমাকে দেখলেই বিদ্রুপ করে --- তখন আমরা কে কি বলব আর কি করব কেউ কি বলতে জানি?। ভয়ে থাকি সারাক্ষণ। এই দ্যাখনা একটা বড় আকারের তরকারি কাটার ছুরি। আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী, এ দিয়ে কাউকে কি চরম আঘাত করা যায় না? যায়।

তুই কেন এলি রে এদেশে, এবেশে? আমরা দুজনাই শ্বশুরের জামাই। আমি তোকে খুব ভালোবাসি শৈবাল এবং আজীবন ভালোবাসব। এছাড়া আমি আর কিই বা করতে পারি বল? আজ বিকেলে‌ আমার ছেলের জন্মদিন অর্থাৎ তোর বিবাহ বার্ষিকীর পরের দিন। তাই নিমন্ত্রণ করতে এলাম। সন্ধ্যায় আসবি কিন্ত। সপরিবারে। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ভিজিটিং কার্ডটা শৈবালের টেবিলে রেখে সমিধ চলে গেল। হঠাৎ যেন সম্বিৎ হারিয়ে ফেলেছিল শৈবাল। ঘোর কাটতেই চেম্বার থেকে ছুটে বাইরে এল সে। ততক্ষণে সমিধ অনেক দূরে।

শৈবাল ভাসছিল। তার চারদিকে জল আর জল। যে করেই হোক তাকে কিনারায় পৌঁছতেই, হবে।

সন্ধ্যার একটু আগেই, তখনও নিমন্ত্রিত অতিথিদের আসার কথা নয়, বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছে গেল শৈবাল। স্বাভাবিক ভাবেই সমিধের দরজায় তালা মারা ছিল।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন