বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য

 

গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ


 

তা নয় নয় করে প্রায় পনের বছর হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়াতে। যখনই দেশে মানে কলকাতাতে বেড়াতে যাই আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডার সময় অস্ট্রেলিয়ার গল্প এসেই যায়। অনেকেই জানতে চান - বাঙালির সংখ্যা কেমন?  মাছ পাওয়া যায়? পালংশাক? আচ্ছা পুজো হয়? এখন ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টসরা কি সেফ? ইত্যাদি প্রভৃতি। তারপর গল্প আরও এগোতে এগোতে  এসে পরে সেই মোক্ষম প্রশ্ন, ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ’ দেখেছ? সেকি এতদিন আছো আর ওটা দেখনি! আরে ওটা ইউনেস্কো হেরিটেজ। আমাদের দেশে আবার ইউনেস্কো হেরিটেজ-এর বেশ বাড়-বাড়ন্ত। হামেশাই খবর বেরোয় ইউনেস্কো বাঙলা ভাষাকে সবচাইতে সুইট ভাষা বলে ডিক্লেয়র করেছে। সেই হেরিটেজ আমি এখনও দেখিনি এতে অনেকেই বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়। তখন আমতা আমতা করে বলতে হয়, মানে অনেকটা দূর তো তাই আর হয়ে ওঠেনি, তবে ইচ্ছা আছে যাওয়ার। আর যারা দেশ বিদেশ সন্মন্ধে ওয়াকিবহাল তারা সদুপদেশ দেন, “দেরি কোরো না, তাড়াতাড়ি দেখে এস, আর কতদিন যে থাকবে তার ঠিক নেই, জানো তো গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য সব কোরাল মরে যাচ্ছে! সত্যি  কথা বলতে কি, নিজেরও আফসোস হয়, নাহ ব্যাপার্টা ঠিক হচ্ছে না, এবার প্ল্যান করে ঘুরে আসতেই হবে। হ্যাঁ, শেষপর্যন্ত  এই বছর সবাই মিলে মানে সপরিবারে ঘুরে এলাম গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ। এইবার কলকাতাতে বুক ফুলিয়ে আড্ডা দিতে বসবো, একবার জিজ্ঞাসা করলেই ভরভরিয়ে শুনিয়ে দেব ভ্রমণ বৃত্তান্ত। এর মধ্যে আমাদের ভ্রমণ-এর কিছু ছবি পাঠিয়েছিলাম কলকাতার বন্ধু বান্ধবদের আর সেটা দেখেই অগ্রজ প্রতিম-এর উপদেশ এল, খালি ছবি কেন, একটা ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখে ফেল না কেন? প্রস্তাবটা  বেশ মনে ধরল, অগত্যা কলম ধরে, থুড়ি ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লাম।

অস্ট্রেলিয়া যে বেশ বড় দেশ সেটা আমরা সবাই ভূগোলে ছোটবেলাতে পড়েছি কিন্তু ঠিক কতটা বড় সেটা একটু আন্দাজ করা যাক। আমরা থাকি পার্থে – দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে আর ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ’ হল উত্তর-পূর্ব প্রান্তে। গাড়ি চালিয়ে গেলে দুটোর মধ্যে দূরত্ব পাঁচ হাজার কিমি, অর্থাৎ কলকাতা-মুম্বাই দূরত্বের প্রায় তিনগুণ। আমরা প্রথমে গেলাম ব্রিসবেন – পাঁচঘন্টার ফ্লাইট। তারপর সেখান থেকে কেয়ার্নস দুই ঘন্টার আর একটা ফ্লাইট। মাঝখানে ব্রিসবেন-এর ব্রেকটা কাজে লাগিয়ে আমরা ব্রিসবেন সিটি টূর করে নিতে ভুলিনি, তবে সে গল্প অন্য আর একদিনের জন্য তোলা রইল।

কেয়ার্নস পৌঁছলাম আমরা সন্ধ্যেবেলায়, গাড়ি আর হোটেল আগে থেকে  বুক করে রাখা ছিল, এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি কালেক্ট করে আমরা সোজা হোটেল-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। লম্বা ফ্লাইট আর  সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে সবাই খুব ক্লান্ত ছিলাম। ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।

দুই হাজার চারশ কিলোমিটার লম্বা এই প্রবালের (কোরাল) জগত তৈরী করেছে  অতি ছোট জেলিফিশের  মতো জীবন্ত কোরাল বা প্রবাল-এর ইউনিট যাকে বলে কোরাল পলিপ। এইগুলো মাত্র এক থেকে দশ মিমি লম্বা কিন্তু একের পর একটা  জমা হয়ে-হয়ে তৈরী করে ফেলেছে এই বিশাল সাম্রাজ্য। এটা এতই বড় যে মহাকাশ থেকেও গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ চোখে পড়ে। প্রবাল-এর এই রাজ্যকে ঘিরে মানুষের গবেষণা এত গভীর যে তার প্রতিবেদন পাতার পর পাতা চলতে পারে। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ভ্রমণলিপি লেখা, কোরাল নিয়ে গবেষণাপত্র লেখা নয়, তাই ফিরে আসি  আমাদের প্রবাল রাজ্যের ভ্রমণলিপিতে।

কেয়ার্নস ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের মতই  ঝকঝকে এবং সাজানো গোছানো। তবে একটা তফাত আছে, এখানে হামেশাই রাস্তাতে আমাদের দেশের অতি পরিচিত “ঝুড়ি নামিয়ে গুছিয়ে বসা বটগাছ” খুঁজে পাওয়া যায়। আর আছে বাতাসে আর্দ্রতা। অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর এই প্রথম বাতাসের গন্ধটা কেমন চেনা-চেনা লাগলো। ভালবেসে ফেললাম কেয়ার্নসকে। নিজের অজান্তেই মনটা খুশি-খুশি হয়ে উঠল আর প্রাণটা ভাল কফির জন্য আঁকুপাঁকু করে উঠল। অদূরেই আমাদের প্রিয় ক্যাফে ‘কফি ক্লাব’ খুঁজে পাওয়া গেল। সাওয়ারডো টোস্ট আর একটা লার্জ লাতে নিয়ে জানলার ধারে বসে পড়লাম। কেয়ার্নস-এর প্রথম সকালটা এক লহমাতে স্মৃতির মণিকোঠাতে বন্দী হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ ঘড়ির চোখ পড়তে  খেয়াল হল, গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ-এর বোট ছাড়তে আর মাত্র পনের মিনিট বাকি। কি সর্বনাশ, অনেক আগে থেকে, বেছেবুছে এই ট্রিপ বুক করা, হাত ছাড়া হলে, এ যাত্রায় কোরাল দেখার ইতি। গুগল ম্যাপ-এ দেখলাম চৌদ্দ  মিনিট লাগবে, জয় মা বলে গাড়ি স্টার্ট করলাম। পৌঁছলাম তিন মিনিট লেটে। ও বাবা, কে জানে কি কৌশলে এরা জেনে গিয়েছিল যে ভারতীয়দের টাইমটা সবসময় এক্সটেন্ডেড হয় – অর্থাৎ সকাল নয়টা মানে নয়টাও হতে পারে আবার  প্রায় সাড়ে নয়টাও হতে পারে। ক্যাটাম্যারান (আমাদের বোট) তখন আশি  শতাংশ ভর্তি এবং প্রায় সবই সাদালোক। আমরা খুবই লজ্জা-লজ্জা মুখ করে এক্সট্রিমলি সরি বলতে-বলতে ব্যস্ত সমস্ত হয়ে প্রায় দৌড়ে উঠছি, এমন সময় পিছনে কোলাহল। প্রায় জনা বারোর মত আমাদের সমগোত্রীয় একটি  দল দুলকি চালে ধীরে সুস্থে মঞ্চে প্রবেশ করলেন। তাদের বোটে ওঠার কোন তাড়া নেই। কিছুক্ষণ সময় নিল সেল্ফি তুলতে, কিছুক্ষণ দেশের ব্যবস্থার সাথে তুলনা করতে, তারপর ধীরে সুস্থে তারা বোটে উঠলেন। মুচকি হেসে বোটের টূর লীডার নোঙর তুললেন। ভাবখানা - এমনটা যে হবে এ তো  জানাই  ছিল।

আমাদের গন্তব্য গ্রিন আইল্যান্ড। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ। দুইতলা বোট, নিচের তলাতে টূর অপারেটরদের কাউন্টার এবং ছোট্ট বার, সফট ড্রিংক, বিয়ার, স্ন্যাক্স পাওয়া যায়, যাতে সবাই যে যার মত আয়েস করে যাত্রা উপভোগ করতে পারে। বোটের পিছন দিকে সিঁড়ি আছে ছাদে যাওয়ার। এখানেও সুন্দর বসার ব্যবস্থা, নীল আকাশের নীচে নাতিশীতোষ্ণ রোদে বোটের ছাদে ভ্রমণ করার ইচ্ছা যাদের  তাদের জন্য। যাত্রা শুরু হতেই টূর লীডার এই ট্রিপের সন্মন্ধে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করলেন ভিডিও এবং অডিও দুই মাধ্যমেই। গ্রিন আইল্যান্ড-এর মতন অনেক ছোট-ছোট দ্বীপ রয়েছে  এখানে। প্রায় ষাট হাজার বছর আগে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় একটু উঁচু জায়গাগুলো দ্বীপ হয়ে যায়। 

একটু লক্ষ্য করে দেখলেই সংলগ্ন অঞ্চলের গভীরতা যে কম সেটা বোঝা যায় জলের রঙ দেখে। আর এই কারণেই কোরাল বংশবৃদ্ধি করেছে এই অঞ্চলে। আমাদের বোট থামল দ্বীপ থেকে প্রায় ৭০০-৮০০ মিটার দূরে। বেশিরভাগ লোকই বোটের থেকে স্নরকেলিঙ-এর গিয়ার ভাড়া নিয়ে নেমে গেল সাঁতার কেটে ডুবে ডুবে কোরাল দেখতে। আমরা সাঁতার জানি না তাই গ্লাস বটম বোট আর সেমি সাবমেরিন ট্রিপ বুক করে রেখেছিলাম। আমরা এবং আরও জনা দশেক বোটে রয়ে গেলাম। প্রথমেই গ্লাস বটম বোটের ট্রিপ আমার তখনই চোখে পড়ল প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সিগন্যাল টাওয়ার-এর মাথায় Osprey বা মাছমুড়াল পাখির বাসা। পাখির ছবি তোলা আমার নেশা। কিন্তু এখন সময় নেই পরে চেষ্টা করা যাবে। আমাদের গ্লাস বটম বোট রেডি হতে বেশি সময় নিল না। আমাদের দেশে ছোটবেলাতে গঙ্গাতে যেরকম  লঞ্চ চলত প্রায় সেইরকম তবে অনেক ছোট সাইজের। বোটের মাঝখানটা ট্রান্সপারেন্ট বোধহয় ফাইবার  গ্লাস। বেশ রোমাঞ্চ মনে নিয়ে বোটে গিয়ে বসলাম। একটি মেয়ে বোটের শেষে বসে। সেই এই ট্রিপ-এর কর্ত্রী এবং গাইড। ফটফটিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করে বোট-এর যাত্রা শুরু হল। আমরা সবাই নীচের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে, পাছে কিছু মিস হয়ে যায়। কয়েক মিনিট বাদেই কোরাল-এর দেশ শুরু হল। কিন্তু কোথায় সেই কালার আর কোথায় সেই অসংখ্য কোরাল-এর মায়াবি জগত? চারদিকে ছোট-ছোট কোরাল-এর মৃতদেহ টুকরো- টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে। কোথাও-কোথাও বড়-বড় জীবিত কোরাল  আছে, কিন্তু নীচের নীল ফাইবার গ্লাসের মধ্যে দিয়ে তার রঙ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে কেউ একজন স্পট করল এক অতিকায় স্টিং রে। ঘাপটি মেরে সাদা বালির ভিতর শরীর ঢুকিয়ে শিকার-এর অপেক্ষাতে বসে আছে। আমাদের অনুরোধে বোট দাঁড় করান হল ছবি তোলার জন্য,কিন্তু দুর্ভাগ্য, ক্যামেরা সেট করে সবে তুলতে যাব তার আগেই  তিনি উধাও। কোরাল হতাশ করলেও প্রচুর মাছ দেখা গেল। ‘ফাইন্ডইং নিমো’ ফিল্মের সেই বিখ্যাত ক্লাঊন ফিশ দেখার কোন সম্ভাবনা নেই বুঝেই গিয়েছিলাম,   কারণ কোন সফট কোরাল চোখে পড়েনি। ভারাক্রান্ত মনে বোটে ফিরে এলাম। বলাই বাহুল্য উৎসাহে  বেশ ভাঁটা পড়েছে। বোট প্রায় ফাঁকা কারণ অধিকাংশ লোক নেমে গিয়ে জলের মধ্যে ডুব দিয়ে কোরাল দেখছে অথবা আইল্যান্ড -এর ভিতর গেছে। এরই মধ্যে ডাক এল আমাদের সেমি সাবমেরিন ট্রিপ-এর।

এটা একটু বড় বোট। আমরা সিঁড়ি বেয়ে সেই বোটের খোলের মধ্যে মানে জলের নিচে ডুবে থাকা অংশে ঢুকলাম। খোলের দুই দিকে সারি - সারি জানলা আর মাঝখানে বসার জায়গা। মনে যেন একটু আশার সঞ্চার হল কারণ বাইরে জলের ভেতরে আমাদের জানলার পাশে কিছু মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এক একটা জানালার এত কাছে চলে আসছিল যে মনে হচ্ছিল আমাদেরকে ছুঁয়ে দেবে। বোট চলতে শুরু করল। ক্রমশ কোরাল-এর ঘনত্ব বাড়তে শুরু করল। মনে হচ্ছিল স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ একটা রীফ সার্ক আমাকে চমকে দিয়ে জানলার পাশে এসে উপস্থিত, তারপরই স্পীড বাড়িয়ে আমাদের ছাড়িয়ে উধাও হয়ে গেল কোরালচ-এর জঙ্গলে। নীল কাঁচের ভিতর দিয়ে কোরাল-এর রঙের বাহার বোঝা না গেলেও হরেক রকমের ছোট বড় কোরাল-এর এই জগতের মধ্যে দিয়ে যেতে-যেতে মনে হচ্ছিল কোন ভিন্ন গ্রহে পৌঁছে গেছি। মনে হয় বোটের ওপরে বসে থাকা চালক এই সময় জলে খাবার ছড়িয়ে দিল।  হঠাৎ শান্ত সমাহিত এই অপার্থিব জগতে ঝড় এল। ছোট বড় রঙ বেরং-এর মাছ আমাদের বোটকে  ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল। ছোট বড় মাছ বিদ্যুতগতিতে এসে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আমাদের আগে বসে থাকা কেউ চেঁচিয়ে উঠল ‘Tartle Tartle’। আমাদের বোটের কিছু দূরে একটা Tartle কোরাল-এর ভিতর খাবার খুঁজছিল। সবাই আনন্দে হাততলি দিয়ে উঠল। কখন যে নামার সময় হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। সম্বিত ফিরল গাইড-এর কথায়। গ্লাস বটম বোটের হতাশা তখন দূর হয়ে গেছে। কিন্তু বুঝলাম, কোরাল-এর জগত-এর দর্শন ঠিকভাবে করতে গেলে স্নরকেল করে অথবা ডাইভ করে দেখতে হবে।

বোটে ফিরে এসে রওয়ানা দিলাম গ্রিন আইল্যান্ড  দ্বীপ ঘুরে দেখার জন্য । দৈর্ঘে  প্রায় আধা কিলোমিটার এর বেশি এই দ্বীপে ধরা পড়ে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক রেনফরেস্ট। আমার প্রধান লক্ষ্য পাখিদের লেন্স বন্দী করা। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগছিল। তারপর কফি ও স্যান্ডউইচ দিয়ে লাঞ্চ সেরে রওনা দিলাম বোটের উদ্দেশে। আমার মন পড়েছিল Osprey পাখির বাসায়, যদি সুযোগ পাওয়া যায়। বোটে এসেই সোজা উঠে গেলাম ছাদে। বেলা গড়িয়ে তখন দুটো বাজে। ক্যামেরা সেট করে  জাস্ট ফোকাস করেছি দূরে Ospreyর বাসাতে আমাকে ভীষণ খুশি করে ও উড়ে ফিরে এল পায়ের মধ্যে একটা মাছ নিয়ে। দূরত্ব লেন্সের আয়ত্তের প্রায় বাইরে হওয়ায় ক্লোজআপ হলো না, কিন্তু একটা ইচ্ছা তো পূরণ হল। আমি এতেই খুশি।

মনের আনন্দে  এ পর্যন্ত তোলা ছবিগুলো পরীক্ষা করছি এমন সময় বোট থেকে মাত্র একশ মিটার দূরে ভেসে উঠল গ্রিন টারটল। সঙ্গে-সঙ্গে লেন্সের মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, ফটাফট ছবি তুলতে থাকলাম একের পর এক। এ এক অভাবনীয় সুযোগ, আমি তার সদ্ব্যবহার পূর্ণ মাত্রাতে করে নিতে ভুলিনি। আমাদের বোট ট্রিপে এদের সম্বন্ধে শুনছিলাম। এদের গায়ের রঙ খয়েরী কিন্তু  নাম গ্রিন।  তার কারণ এরা একমাত্র  টারটল যারা নিরামিশাষি। রাতে এদের ঘুম পেলে, নিজের হৃত্পিণ্ড-এর গতি কমিয়ে নয় মিনিট একবার করে ফেলে। তারপর আরামসে প্রায় পাঁচঘণ্টা জলে ডুবে থেকে ঘুমিয়ে নেয়। নাই  বা  হল কোরাল-এর রঙ রূপ সঠিক ভাবে দেখা, এই প্রাপ্তিগুলো কি কিছু কম?

বেলা তিনটে বেজে গেছে তখন। বোট ছাড়ার সময় হয়ে এল। গ্রিন আইল্যান্ড কে বিদায় জানিয়ে আমরা ফিরে চললাম কেয়ার্ণসের পথে। কাল যাব পোর্ট ডগলাস আর তারপর Daintree রেনফরেস্ট। সে গল্প আর একদিন হবে।

 

 

 


২টি মন্তব্য: