কবিতার কালিমাটি ১৪০ |
বটগাছ ও আমি-রা
তখন
খাক্ হওয়া দুপুর, স্বপ্নে এল বিশাল এক বটগাছ! তলায় বসে আছে বাল্য, কৈশোর, মধ্য ও
প্রৌঢ় বয়সের আমি-রা। সমস্বরে সকলে বলল: 'একসঙ্গে যখন জুটেছি গল্পহোক'। বাল্যকাল
বলল: না বুঝেই সে শাকের আঁটির সঙ্গে কিভাবে বেঁধে ফেলেছিল পাপ পুণ্য! কৈশোর জানায়
তাকে কিভাবে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে একইসঙ্গে ঈশ্বর এবং শয়তান। মধ্য বয়সের আমি
স্ফূর্তিবাজ। গর্বের সঙ্গে আওয়াজ তোলে: গমের রুটিকে চাকা বানিয়ে সে ঘুরে এসেছে দেশ
দেশান্তর। গালে হাত দিয়ে প্রৌঢ় আমির ভাবনা: যোগ বলে সে আকাশের তারা খুলে রেখে আসবে
পাতালে! শুনেই খক্ করে কেসে দিল প্রবীণ বট...
পরস্পর
মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে বটের আশ্বাস: 'না না, তোমরা যেমন গল্পে মেতে আছো থাকো, আমি
শুধু গুণমুগ্ধ শ্রোতা যার কাজ ছায়া দিয়ে যাওয়া'...
অলৌকিক
অনন্তের
দিক থেকে একটা আলতাপরি পাখি উড়ে এসে বলল: 'জীবনে যা-ই অর্জন কর না কেন সময়ের শেকড়ে
কান পাত। শুনতে পাবে গোলাপি ভালবাসা জড়িয়ে মরমিয়া বৃক্ষ জানাচ্ছে: হাঁসের দলই
সামলাচ্ছে তোমার সান্ধ্যকালীন ঘর গেরস্থালী! একটি ডাহুক ঘড়ায় করে তুলে রেখেছে
পিপাসার জল, এক সারি ডেঁয়ো পিঁপড়ে মনে করাচ্ছে সামাজিক প্রথা। পাতার মর্মর ধ্বনি সরিয়ে
দিচ্ছে ভেতরের অন্ধকার। একটি ছোট্ট শিহরণ শোনায় গ্রাম্য উপকথা ও নদনদীর পোষাকি
নাম। একটি জং ধরা পেরেক খুঁচিয়ে দেয় অন্তরের আগুন এবং সামান্য সূচ-সুতো বুনে দেয়
যা কিছু স্বপ্ন ও সঙ্গীত যখন খানিক
ফুঁপিয়ে কাঁদার পর ঢালু পথ তৈরি করে দেয় ব্যক্তিগত রোদ'...
ত্রিশূল
ভূষন্ডি
কাকের মতো বসে বসে সময় দেখছে স্রোতের মতো কিভাবে দৌড়ে আসছে অনিয়ম, কিভাবে দেশে মশালের মতো হিংসা জ্বলছে বারোমাস। দীর্ঘ স্মৃতির ভেতর বেড়ে
উঠছে আর্তনাদ। ঘষটে ঘষটে সূর্যকরোজ্জ্বল দিন নেমে যাচ্ছে ঝোপের আড়ালে। সামান্য
হাওয়ায় নড়ে যাচ্ছে আকাট পৌরুষ! আঙুলের স্পর্শ এখন বিষাক্ত ফণা। ফসলের মাঠ ভরে আছে কুমড়োর মতো ইয়া বড় বড় লোভে!
আশ্বিনের
ভোর গড়াগড়ি খায় আর জি. হাসপাতাল চত্বরে। মধ্যরাত যেন তাড়কা রাক্ষসী। শূন্যের শহরে
ফাঁদ আঁকছে নানা মুদ্রা। ছাত্রদলের হাতে
অন্ধের লাঠি। ফুটপাত জুড়ে হাই তুলছে
অবহেলা। প্রহরগুলির গা পুড়ে যাচ্ছে ভীষণ জ্বরে। দুহাতে সরাতে হবে ধ্বংস
বীজ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন