কলকাতার কালীকথা
একসময় যে যুক্তিবাগীশ মানুষটি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের আরাধ্যা দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী কালী মাকেও একপ্রকার তুচ্ছজ্ঞান করে বলেছিলেন— ও তো মাটিপাথরের একটি মূর্তিমাত্র, শ্রীশ্রীঠাকুরের আদরের সেই ‘লরেন’ যেদিন বিশ্বের মানুষের কাছে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে উঠেছিলেন, সেদিন সেই পাথর আর মাটির মূর্তিমাত্র সম্পর্কে বলেছিলেন— "আমার দৃঢ় বিশ্বাস কোথাও এমন এক মহাশক্তি আছেন যিনি নিজেকে প্রকৃত সত্তা বলে মনে করেন। তাঁর নাম কালী, তাঁরই নাম মা।"
ভারতবর্ষে এই মহাশক্তির এক বৃহৎ ক্ষেত্র আমাদের এই বঙ্গভূমি। যার মধ্যে কলকাতা সেই প্রাচীন সময় থেকেই প্রসিদ্ধ হয়ে আছে পুণ্য কালীক্ষেত্র রূপে। কলকাতায় কালীর অভাব নেই। যার ইতিহাস শুরু কালীঘাটের কালী দিয়ে। এরপর ক্রমান্বয়ে একটি একটি করে গড়ে উঠেছে ফিরিঙ্গী কালী, ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মন্দিরের মতো খাস কলকাতায় রয়েছে আঠারো হাত কালীবাড়ি; যার ইতিহাস-ঐতিহ্য কোনও অংশে কম নয়। দক্ষিণেশ্বর যেহেতু বর্তমানে গ্রেটার কলকাতার মধ্যে ধরা হয়, এই মন্দিরটিও সেই অর্থে কলকাতার কালীক্ষেত্রেরই অংশ। এছাড়াও ছোটো-বড়ো আরও অসংখ্য কালী ছড়িয়ে আছে কলকাতা-সহ গোটা বঙ্গদেশে। যার মধ্যে ছিন্নমস্তা, বিপত্তারিণী প্রভৃতি নানা রূপের মা কালীর অবস্থান এই গৌরবকে অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে। এছাড়াও আছে কলকাতার বেশ কিছু বিখ্যাত বনেদি পরিবারের নিজস্ব মাতৃপ্রতিমা। যেগুলি হয় বিভিন্ন ধাতুর অথবা মৃণ্ময়ীরূপী মা। কয়েকটি পরিবারে আজও মহামূল্যবান অষ্টধাতুর মূর্তিও দেখতে পাওয়া যায়। এরকমই একটি পরিবারে নেপালের দুর্গম পাহাড়ি গুহা থেকে পাওয়া ১৮ হাত কালীমূর্তি আজও পূজিত হচ্ছে কলকাতায়।
মুণ্ডক উপনিষদে বৈদিক সাহিত্যে প্রথম মা কালীর উল্লেখ আছে। দেবী কালিকা হলেন মা দুর্গা বা পার্বতীর সংহারী রূপ। ঊনবিংশ শতকে লেখা ‘শব্দকল্পদ্রুম’ বলছে 'কাল শিবহ্। তস্য পত্নতি কালী।' অর্থাৎ শিবই কাল বা কালবোধক। তাঁর পত্নী কালী। কালী হচ্ছেন মা দুর্গার বা পার্বতীর ভয়াল রূপ। তিনি সময়ের, পরিবর্তনের, শক্তির, সংহারের দেবী। তিনি কৃষ্ণবর্ণা বা মেঘবর্ণা। তিনি অশুভ শক্তির বিনাশকারিণী, শাক্ত সৃষ্টিতত্ত্ব মতে এবং শাক্ত-তান্ত্রিক বিশ্বাস মতে তিনিই পরম ব্রহ্ম। কালীকে এই সংহারী রূপের পরেও মা সম্বোধন করা হয়, কারণ তিনি মঙ্গলময়ী, তিনি কল্যাণী। তিনি অশুভ অসুরকালকে কলন করে সৃষ্টি করেছেন শুভাশুভ এক সুর বিশিষ্ট ব্রহ্মের। আর তাই তাঁর নাম হয়েছে কালী। এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তাঁর গাত্রবর্ণের জন্যই তিনি কালী নামে ভূষিতা। সাধারণের মধ্যে প্রচলিত কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। এছাড়াও তাঁর অসংখ্য নাম আছে। কোথাও তিনি দক্ষিণ সিদ্ধ, কোথাও গুহ্যকালী। আবার কোথাও ভদ্রকালী, কিংবা শ্মশান ও রক্ষাকালী রূপে পূজিত। কোথাও মহাকালী নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। তন্ত্র অনুসারে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত দশজন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম দেবী। আছে। দ্বিতীয় চরিত্রে বলা হয়েছে যে, মহিষাসুর ছিলেন দেবতাদের বলে বলীয়ান হওয়া পরাক্রমী এক অসুর। পিতা রম্ভাসুর এবং মহিষাণী তার জননী। সেই মহিষাসুর দেবতার বরে পুরুষের অবধ্য ছিলেন। এক সময় সে দেবগণকে স্বর্গ ছাড়া করলে তাঁরা পৃথিবীতে এসে ঘুরতে লাগলেন। কিন্তু এভাবে নিরাশ্রয় হয়ে কতদিন অতিবাহিত করা যায়! তাই সমস্ত দেবতা একত্রিত হয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন কোনো একটি সুরাহার পথ বের করার জন্য। কারণ তাঁরই বরে যে মহিষাসুর অপরাজেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু তাঁর করণীয় কিছুই ছিল না, তাই তিনি দেবতাদের নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর শরণাপন্ন হতে, বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন, শ্রীবিষ্ণু আর শিব কথা বলছেন। বিষ্ণু এবং শিব দেবতাদের কাছে তাঁদের দুর্দশার কথা শুনে ক্রোধান্বিত হলেন। ব্রহ্মা মহিষাসুরকে অপরাজেয় বর দিলেও তার অনৈতিক দুরাচারে ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন। দেবতারাও তার অত্যাচারে রোষানলের আগুনে তপ্ত হয়েছিলেন। ফলে শিব ও বিষ্ণুর সদিচ্ছায় দেবতাদের তেজ থেকেই সৃষ্টি হলেন জগৎজননী দেবী মহামায়া দুর্গা। শম্ভুর তেজে সৃষ্টি হল এই দেবীর মুখমণ্ডল, বিষ্ণুর তেজে বাহুযুগল ইত্যাদি এবং সমস্ত দেবতারা তাকে নানা অলংকার এবং বিবিধ অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করলেন। তারপর তিনি অসুরকে বধ করতে গেলেন এবং বধ করলেন।
মহিষাসুর বধে দেবী যে রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা হচ্ছে মহালক্ষী। ইনি অষ্টাদশভূজা অর্থাৎ আঠারো হাত এবং প্রসন্নবদনা। মুক্তারামের গুহ্যকালীও আঠারোভূজ বিশিষ্টা। তবে আমরা মহিষসুরমর্দিনী রূপে যে দুর্গা পুজো করি, সেখানে সেই মৃন্ময়ী মূর্তিতে দেবীর দশ হাত থাকে। এখানে দেবীর আঠারো হাতের কারণ ‘কালিকা পুরাণ’-এর ৬০তম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে এই ভাবে— প্রথম কল্পে ভগবতী মহামায়া অষ্টাদশভূজা উগ্রচন্ডারূপে মহিষাসুরকে বধ করেন। অন্যদিকে তার আগেই শিবের বর লাভ করে মহিষাসুর রম্ভাসুরের ঔরসে তিনবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং দেবী তিনবার বা তিন কল্পে তিন রূপে অসুর বধ করেন। দ্বিতীয় কল্পে ষোড়শভূজা ভদ্রকালীর রূপে অসুর বধ করেন। আর তৃতীয় অর্থাৎ শ্বেতবরাহ কল্পে দেবী দশভূজা মহিষাসুরমর্দিনী। রামায়ণের রাম রাবণ বধের উদ্দেশ্যে দেবীর এই রূপেরই বন্দনা করে ছিলেন। বাঙালিও এই তৃতীয় কল্পের দেবীকেই দশভূজা দুর্গা হিসাবে পুজো করে আসছে।
মাকালী সম্পর্কে পুরাণ ও বৈদিক আচারে অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্নমত দেখা যায়। প্রচলিত মতে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তৈরি করেন, তার আগে কোনও কালীমূর্তি ছিল না। যদিও আগমবাগীশের তিনশো বছর আগে ত্রয়োদশ শতকের ‘বৃহদ্ধর্ম পুরাণ’-এ হুবহু একই রকম কালীমূর্তির বর্ণনা পাওয়া যায়। তারও আগে, পালযুগে বজ্রযানে ও সহজযানে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপের প্রথম উদ্ভাস বলেই তাত্ত্বিক ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন, বাঙালির ইতিহাস নিরবিচ্ছিন্ন নয়, তাই বাঙালির সর্বাধিক জনপ্রিয় এই দেবী মাতৃকার ইতিহাসও সুস্পষ্ট ও সম্যকভাবে জানা যায় না।
বর্তমানে প্রচলিত শিবের বুকের ওপরে
পা দিয়ে জিভ কেটে দাঁড়িয়ে থাকা যে মা কালীর রূপ আমরা বন্দনা করি, তার মুণ্ডক ঔপনিষদিক
ব্যাখ্যায় অগ্নির সাতটি জিহ্বার মধ্যে কালী ও করালীর নাম করা হয়েছে। বৈদিক আর্যের
কল্পনাতেও মা কালীর প্রসারিত জিহ্বার উল্লেখ
ঘটেছে। কিন্তু কালী বৈদিক দেবী নন। ঊষা ও নিশা হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃকা, সেখান থেকে দুর্গা
এবং কালী এসেছেন। মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে, মা কালীর মূর্তিরূপ পরিকল্পনায় লোলজিহ্বা
রূপটি অতি প্রাচীন। চামুণ্ডা, পালযুগের অত্যন্ত জনপ্রিয় মাতৃকা, তিনিও লোলজিহ্বা ছিলেন। বজ্রযান ধর্মের একাধিক মাতৃকাও
জিহ্বা প্রসারিত করে থাকেন। বলা হয়, আমাদের মা আমাদের শত্রুদের রক্তমাংস ভক্ষণ করবেন
বলে প্রাচীনকাল থেকে তাঁর জিহ্বা প্রসারিত করে আছেন। পালযুগের নৈরাত্মা। ইনি কালীর
বর্তমান মূর্তিরূপে মিশে আছেন। বর্তমান অবস্থান তাঁর অবস্থান কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর।
শিবের ওপরে পা দিয়ে লজ্জায় জিভ
কাটার বিষয়টি ইতিহাস বিচ্ছিন্ন মধ্যযুগের সৃষ্টি। এও শোনা যায়, কালী অর্বাচীন দেবী।
আদিযুগে তাঁর কোনও মূর্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু পৌরাণিক ইতিহাস বলছে কালী অর্বাচীন
নন। অত্যন্ত প্রাচীন। প্রাচীনকাল, খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই সেই তথ্য নথিবদ্ধ আছে। প্রথমাবস্থায়
তিনি মূর্তির বদলে প্রস্তর ও যন্ত্রে পূজিত হয়েছেন অনেকদিন। তাঁর বর্তমান রূপের উত্থানের
অনেক আগে থেকেই তিনি পূজিতা। পাণ্ডু রাজার ঢিবি ও চন্দ্রকেতুগড় সভ্যতার বলাকামাতৃকা কালীর সেযুগের রূপ ছিল, তার একাধিক প্রমাণ আছে। অন্তত চার হাজার বছর আগে থেকেই কালী পূজিতা।
পালযুগে কালীপ্রতিমা মাতৃকাদের
মূর্তি পাওয়া গেছে। নৃমুণ্ডমালিনী, পদপিষ্ট করছেন একটি পুরুষমূর্তি। এর সঙ্গে লোলজিহ্বা
চামুণ্ডা-চর্চিকা এক হয়ে গিয়ে আজকের কালীর এই মূর্তিরূপ। কিন্তু কালীর প্রাচীনত্ব আর
কালীর মূর্তিরূপের প্রাচীনত্ব এক নয়। এছাড়া ‘aniconic’ ভাবে দীর্ঘদিন তাঁর পুজো হয়েছে
এবং আজও হয়, কারণ জগদকারণ প্রকৃতি হলেন অব্যক্ত। তিনি অসীম অনন্ত, আদ্যা ও নিত্যা।
এখানে একটি বিষয় আলোচিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কথিত বাংলার বৈষ্ণবরা নাকি কালীকে পছন্দ করেন না। কিন্তু সত্য হল বলছে গৌড়ীয় বৈষ্ণবরাও শাক্ত। নিত্যানন্দ মহাপ্রভু শাক্ত অবধূত ছিলেন, তাঁর সঙ্গে সর্বদা ত্রিপুরাসুন্দরী মূর্তি থাকত। রাধার উপাসনা নিঃসন্দেহে এক প্রকারের শক্তির উপাসনা। চৈতন্যযুগে শাক্তদের মধ্যে গুহ্যবিকৃতির প্রাবল্য দেখা দিয়েছিল। ফলে সেই সময়ে জগাই-মাধাইয়ের মতো চরিত্রের অসংখ্য মানুষের উদ্ভব গিয়েছিল। তাদের আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছিল পাপে। তাদের উদ্ধার করতেই বাঙালির আবহমানকালের প্রকৃতি-মাতৃকা বৈষ্ণবের বেশে এই ধরায় অবতীর্ণ হয়। যার চালকের আসনে ছিলেন শ্রীশ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। রামপ্রসাদও তাই গেয়ে উঠেছিলেন— ‘কালী হলি মা রাসবিহারী নটবর বেশে বৃন্দাবনে’।
প্রাচীন বাঙালি শাস্ত্রকাররা বলে
এসেছেন, এমনকি আজও কারও কারও মতে, কালী অতি ভয়ানক দেবী। কালীর পুজো করতে গিয়ে ভুল হলেই
সর্বনাশ। কৃষ্ণচন্দ্র আগমবাগীশ সার্বজনীন পুজো বা গৃহে গৃহে পুজো প্রচলন করে অন্যায়
করেছেন। কালীকে বাড়িতে পুজো করলে বাড়ির ক্ষতি হতে পারে।
অথচ কালী এই উপমহাদেশে প্রাচীনকাল
থেকে পূজিতা। মাতৃকার একটি রূপ বোধন করা হয়
হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকে, ঊষার বোধন হত এই শারদ ষষ্ঠীর দিনে। আর নিশা হেমন্তের দীপান্বিতা অমাবস্যায়, ঠিক কত বছর আগে থেকে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না, কিন্তু জৈন ঐতিহ্য দেখে বোঝা যায়
যে, এই দিনটির তাৎপর্য প্রাচীন। কৃষ্ণচন্দ্র একটি পুরনো প্রথাকে মধ্যযুগের শেষ লগ্নে
পুনরুত্থিত করেছিলেন মাত্র।
মা কালীর উত্থান ও সহজ পদ্ধতিতে
তাঁর পুজোর এক সার্বজনীন আন্দোলন একসঙ্গে ঘটেছে বাংলায়। সহজ পদ্ধতিতে তাঁর পুজো করা
সহজ। আধুনিককালের বাঙালি পণ্ডিতদের মতে তিনি আমাদের সভ্যতার রক্ষক। আর তাই প্রত্যেক
ঘরে তাঁর পুজো হতে কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষত বাঙালিও একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিশ্বমানবতায় বিদীর্ণ জাতি। ব্রাত্য সভ্যতার উত্তরাধিকারীদের ইনিই তো প্রকৃত মা। বেদকে ঢাল করে একটা সময় পর্যন্ত
নানা রকম অপপ্রচার করে মাতৃপূজা থেকে, বিশেষত কালী উপাসনা থেকে জনসাধারণকে দূরে রাখা
হয়েছিল। এর একটা বড় কারণ ছিল সাধারণ বাঙালি যেহেতু বাংলায় বেদ পড়ার সুযোগ পেত না।
সুদৃঢ় সংস্কৃত জ্ঞান সবার তো ছিল না। আর যাঁদের
ছিল, তাঁরা ছিলেন বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই সেইসব তথাকথিত শাস্ত্রকার, যাদের নিদান তত্ত্বে
ছিল মা কালীর ভয়াল চরিত্রের রূপ।
অনেকের মতে, মা কালীর সঙ্গে বাঙালির কোনও বিশেষ সংযোগ নেই। সারা ভারতেই তাঁর পুজো হয়। কিন্তু সত্যতা বলছে— “কালিকা বঙ্গদেশে চ।” প্রকৃতিমাতৃকা এই কালী রূপেই বঙ্গদেশে পূজিতা। হরপ্পা সভ্যতার উত্তরাধিকার যে বাঙালি মহাজাতি বহন করে, দুর্গা-কালী সে জাতির নিজস্ব উত্তরাধিকার। দুর্গা-কালী সারা ভারতেই থাকার কথা, দুটো কারণে। এক, মাতৃকা উপাসক হরপ্পা সভ্যতার উত্তরাধিকার কিছু পরিমাণে সারা ভারতেই আছে। দুই, বাঙালি জাতির পূর্বসূরিদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ও দার্শনিক ধর্মীয় প্রভাব সারা উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে সেই আদিকাল থেকে।
সব শেষে বলতে হয়, মায়ের স্নেহময়ী
ঘরোয়া রূপ যেভাবে বাঙালিদের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে, সেভাবে আর কোথাও হয় না। আর তাই
মা কালীর আরাধনা উপমহাদেশের অন্যত্র যেভাবেই আচরিত হোক না কেন, কলকাতা-সহ বঙ্গের বাঙালি
ঘরে তিনি বিচরণ করে আসছেন হয় মাতৃ রূপে অথবা কন্যা রূপে। সে কৃষ্ণচন্দ্র থেকে রামপ্রসাদ
হয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পর্যন্ত। এমনটা আর কোথাও তিনি আদরণীয় হতে পেরেছেন বলে মনে হয়
না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন