প্রসঙ্গ বারীন ঘোষাল
কবি বারীন ঘোষাল এবং আমি প্রকৃত অর্থেই দূর বাস্তব। গুগল কবির দুটি একটি ছবি দেখাচ্ছে, কবির সৃষ্ট কোনো সাহিত্য-কর্ম কি কোনো প্রবন্ধ
নিবন্ধ অথবা ব্যক্তিজীবন … সবটাই বাক্যহীন। যাইহোক শুরুটা
হচ্ছে নব্বই
দশক থেকে বাংলাসাহিত্য যা কিছু সেটা
দুই জায়গা ভিত্তিক নিজস্বতায় বাঁচতে শুরু করেছে – ১) কলকাতা
ভিত্তিক ২) জামশেদপুর ভিত্তিক। অন্তত নতুন কিছু লেখালেখির ভিত্তি হিসেবে ধরলে জামশেদপুর কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে এব্যাপারে। বারীনদার নতুন কবিতা সবাই (সবাই নয়,
অনেকেই) যেমন জেনেছে, আমিও জেনে শুনে কিছু কিছু কবিতা পড়ে এবং কিস্যু না বুঝেই আবার পড়ে
আবার উল্টেপাল্টে মুড়ে রেখে দিয়েছি। আর তারপরে চিঠি লিখে
বারীনদাকে শুধিয়েছি- কী জন্য এসব
লিখলেন? ততদিনে আট ন’মাস কাবার, উনি আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রবন্ধ - অতি চেতনার বিষয় পড়েও জিজ্ঞাসাা করেছি – এ চেতনা দৈনিক জীবনে কী কাজে
লাগে? সে উত্তরও তিনি যথাসময়ে
লিখে পাঠিয়েছেন।
গুটিকয় উজ্জ্বল মানুষ দিয়ে একটা শহরকে যেমন চেনা যায়, একটা সময়কেও চেনা যায় নিশ্চিত, বারীনদার লেখা চিঠিগুলো হারিয়েছে তবুও স্মৃতিতে এতদিন অব্দি যা ধরা আছে,
যেটুকু ধরে রাখা সম্ভব, সেটা লিখছি। বারীনদা বলেছিলেন – মূলত আমি সাহিত্যিক সত্য আবিষ্কার করতে চেয়ে কবিতাগুলো লিখেছি, অনেকের কাছেই তা হেঁয়ালী আর উদ্ভট
বলে মনে হবে, জামশেদপুরে আমার প্রতিবেশিরাও আমার এই বয়ে চলাকে
নীরবে প্রত্যক্ষ করেন, বাড়িতে আমি খুব বেশি সময় দিই না, যতটুকু দিলে বাংলা ভাষার একদম নিজস্ব কোনো কবিতা লেখা যাবে…, আমার বই-এ যেজন্য প্রথমেই বড় বড় করে
লিখে দিয়েছি – মানুষের জীবনে কবিতার কোনো মূল্য নেই, কোনো প্রয়োজনও নেই। আর সত্যি বলতে কী
আনন্দের সাথে সত্যের কোনো যোগাযোগ নেই…। বস্তুত যা অতি
চেতনা তাইই কবিতা। বাহ্যিক জীবনে
প্রতিটা মানুষ আলাদা বাঁচে। একটু ভাল থাকা ভাল খাওয়া এসবের পরেও কাল্পনিক এক জগৎ ব্যক্তি-মননে
ব্যক্তির জানতে / অজান্তে তৈরী হয়। বস্তুত এই কাল্পনিক
বিমূর্ত দ্বিতীয় জীবনে বসবাসকারী মানুষটিকেই কবি বলা হয়, তা তিনি কবিতা
লিখুন বা নাইই লিখুন।
কবির এই দ্বিতীয় জীবন তাঁর
নিজস্ব সৃষ্টি, তাঁর স্বেচ্ছা নির্বাসন।
বারীন ঘোষালকে চিনতে গেলে আগে তাঁর ভাষাকে চিনতে হবে, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক, কোনো রাবীন্দ্রিক / লোকায়ত / বিদ্যাসাগরীয় / বাজার-চলতি যাবতীয় নান্দনিক ভাষা প্রকরণকে ত্যজ্য করে বারীনদা আপন সৃজন কর্ম আপনিই করে গেছেন।
“আলোকিত অন্ধকারে
আদর জড়ো করি
চেষ্টা করি এ বিশ্বে
একটা ফুলদানি রাখার সাহস”।
(সৎকার, কবি – বারীন ঘোষাল)
বারীনদাকে খারিজ করার লোকের অভাব নেই। তাঁর ভাষা নিয়ে কথার শেষ হবে না। আমি বলব সফল লেখক তিনিই যিনি শুধু অপরকে নয়, নিজেকেও উৎরে যেতে পারেন। কলকাতা বইমেলায় কৌরব পত্রিকার স্টলে একটা চেয়ারে চুপ করে বসে থাকতেন, প্রতিবার গায়ে সেই একই কটস্-উলের চেক জামা। কলকাতায় সেরকম কিছু শীত পড়ে না, অন্তত আমরা যারা আসানসোল দুর্গাপুর দিল্লীতে থাকি, আর দিল্লীতেও ওনার পরনে সেই একই পোষাক। হয়ত, উলের চাদর নিয়েছেন একটা এই যা আর আমরা দিল্লী হাটে সব বন্ধু বান্ধবেরা জড়ো হয়েছি শুধু কবিতা গদ্য ইত্যাদি পড়ব, আড্ডা হবে গল্প-গুজব হবে, দিলীপ ফৌজদার কৃষ্ণা মিত্র গৌতম দাশগুপ্ত এমনি অনেক অগ্রজ কবি এসেছেন, জামশেদপুর থেকে বারীনদা গেছেন, কমল চক্রবর্তী গেছেন, জমাটি আড্ডা ছেড়ে কেউ বাড়ি ফিরতে চাইছি না। বারীনদার ছেলে শুক দিল্লীতে থাকতেন তখন, কী যে উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে গেছে সেসব দিনগুলো সন্ধ্যেগুলো কী বলব! বারীনদাকে কখনো অতি কথনেও দেখিনি কেউ। আমি এটুকু দেখেছি নিজের চোখে। এক খন্ডকালে কত কবি সাহিত্যিক আড্ডা জমিয়ে গল্প বলিয়ে প্রবন্ধ লিখিয়ে ছবি আঁকিয়ের সংস্পর্শে এলাম কিন্তু বা্রীনদার ব্যক্তিত্ব আজো যথেষ্ট উজ্জ্বল। নাতিদীর্ঘ্ ব্যক্তিত্বটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়, শব্দবন্ধকে নতুন আকারে লেখা, যে সত্য নিজে উপলব্ধি করেছেন তা প্রতিষ্ঠা করে দেওয়া, তাকে কেউ মানুক না মানুক, কবিতাকে যে যার উপলব্ধি থেকে লিখবে, রূপ দেবে শব্দে বর্ণে হাইফেনে কমায় – এই হল বারীনীয় পথ। যার ইচ্ছে তিনি চলুন সে পথে, মাঝখান থেকে আমি কেন আগ বাড়িয়ে বারীনদার তাবৎ সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করতে যাব? বরং লিখে যেটুকু বলার বোঝানোর তা বললা, বাকি তাঁর লেখা কবিতাগুলি একক পড়তে পড়তে যে ভাব জন্মায়, সেইগুলিই প্রকৃতপক্ষে বলবার যা কখনও লেখা হবে না।
বারীনদার হাতের লেখায় কৌরব পত্রিকা ২০১৩
সুন্দর ভাবে বলেছেন। ওনার লেখা পড়ার ইচ্ছা । অনলাইন পাওয়া যায় কি?
উত্তরমুছুন