সমকালীন ছোটগল্প |
গোবিন্দর বেঁচে থাকা
আকাশের ঈশান কোণের এক টুকরো কালোমেঘ, সকলের অগোচরে নিজের শক্তি বাড়িয়ে গোটা আকাশটাকে যেভাবে দখল করে, গোবিন্দর জীবনে হেলাভরে পা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া — বা, তার থেকেও তুচ্ছ, যৎসামান্য একটা ঘটনা ছড়াতে ছড়াতে, বাড়তে বাড়তে যেখানে এসে দাঁড়াল — তার জন্য সে আদৌ প্রস্তুত ছিল না। একটা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের টপমোস্ট ফ্লোর থেকে নিচের শহর দেখার দূরত্বে গোবিন্দকে দেখার চেষ্টা করলে, তার হাহুতাশ ভঙ্গি আর অসহায় ভাবে দাঁত কিড়মিড় করা দেখা যায় না। শুধু দেখা যায়, সে তার বাড়ির ছাদের এমাথা থেকে ওমাথা ঝড়ের বেগে হাঁটার চেষ্টা করেও মন্থরতম গতির বেশি পায়চারি করতে পারছে না, অথচ তার এই সামান্য চেষ্টাটুকু মাঠে মারা যাচ্ছে দেখে — যা অবশ্যই দূর থেকে দেখা যাবে না — তা হল, সে রাগ করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে, আর এই বোধ — তাকে আরো বেশি করে ক্রুদ্ধ হবার মশলা সরবরাহ করতে থাকায় সে রাগ এবং না-রাগের মাঝামাঝি একটা জায়গায় — এইখানে এসে মনে হবে — সে আর হাঁটছে না — ঝুলে আছে।
ঘটনাটা যে ঘটেছে, সে ব্যাপারে গোবিন্দ একশ ভাগ নিশ্চিত। সুতরাং তার এই — ঝুলে আছি — মনে হওয়ার কোন কারণ ছিল না।
সেক্ষেত্রে, না ঝুলে থাকার মতন একটা মানসিক
স্থিতিই তার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল, যা তার স্বভাব দোষে উল্টো দিকে এগিয়ে গেল।
স্বচক্ষে সে যা দেখেছে, বা — যা
দেখে তার মনে হয়েছিল, ঝিমলির বাবা বেশ গন্ডগোলের মানুষ — সেটা আর কিছু নয়, ঝিমলির বাবাকে
সকালে বাজারে মাছ কিনতে দেখা পর্যন্ত ঠিক ছিল — সে তো রোজকার ব্যাপার — কিন্তু সেদিন,
মাছ ভর্তি একটা বড় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ঝিমলির বাবার হাতে — গোবিন্দর চোখ সেই দিকে, আর তারপরেই ঘটনাটা! গোবিন্দ দেখল,
ঝিমলির বাবা মাছের দাম না দিয়ে দিব্যি চলে গেল।
বাকিতে মাছ কিনতেই পারে ঝিমলির
বাবা, অথবা মাসকাবারি বন্দোবস্ত, সে সবে গোবিন্দর কী-ই বা এসে যায়, কিন্তু সে যেন স্পষ্ট শুনেছিল মন্টু বিড়বিড়
করে বলছে, শালা, আজও মাছের দাম দিল না। হ্যাঁ, এই বিড়বিড়ানি সে নিজের কানে শুনেছিল।
শুনে তাকাতেই, মন্টু হেসে — কী মাছ দেব? — জিজ্ঞাসা করায়, সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে থতমত খাওয়া হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে একটু ডানদিকে সরে, সবে আলু-পেঁয়াজের
সারিতে ঢুকতেই ঝিমলির বাবার থলেতে সুরেন আলু ঢালছে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এবারও ঝিমলির
বাবা পয়সা দেয়নি, গোবিন্দ স্পষ্ট শুনেছিল সুরেনের বিড়বিড় করা কথাগুলো।— শালা,একদিনও
পয়সা দেয় না।
ঝিমলির বাবার সঙ্গে সেই মুহূর্তে
গোবিন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বলা ভালো, গোবিন্দ নিজেই একটা সম্পর্ক তৈরি করে
নিয়েছিল।
ঝিমলি গোবিন্দর মেয়ে ঝুমঝুমির বন্ধু।
ঝিমলির বাবা তারক দত্তর সঙ্গে সেই সূত্রেই তার যতটুকু পরিচয়। কিন্তু ঘটনাটা ঘটে যেতেই সে তারক দত্তকে
ছাড়তে পারল না। ভীষণ কৌতূহলী হয়ে তারক দত্ত সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করল। ঝিমলির
বাবা তারক দত্তকে একজন সুভদ্র, পরোপকারী মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছিল গোবিন্দর এক নিকটতম
প্রতিবেশী। ঘটনাটা ঘটে যাবার পরে, সেই প্রতিবেশীই প্রথম ব্যক্তি, যার সঙ্গে সে তারক
দত্ত সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করেছিল। তারক দত্ত যে খুব প্রভাবশালী — একথাও তার মুখ
থেকে শুনেছিল। প্রভাবশালী — এই কথাটা তার মনে গেঁথে গিয়েছিল। এ সম্পর্কে তার একটা ধারণা
ছিল — সেই ধারণার মধ্যে মন্ত্রী ছিল, আমলা, এম পি, এম এল এ— আর হ্যাঁ, পুলিশ তো অবশ্যই, এ বাদে মন্ত্রীর আমচা চামচাদের সে তার হিসেবে
রেখেছিল, কিন্তু এর মধ্যে তারক দত্তর জায়গা
সে খুঁজে পাচ্ছিল না।
অথচ সে তারক দত্তকে ভালোমতোই চেনে।
তার সঙ্গে আলাপ আছে। তবু তার সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। যদিও চাকরি সূত্রে গোবিন্দর
মতো সেও সরকারি কর্মচারী, শুধুমাত্র সে কারণে আর যাইহোক, তার পক্ষে প্রভাবশালী হওয়া
সম্ভব না।
তারক দত্তর অফিসে পাশাপাশি টেবিলে
কাজ করে মনোজিত কুন্ডু।অফিসে যাতায়াতের পথে তার সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হওয়ার সুবাদে
গোবিন্দর জানাশোনা, কথাপ্রসঙ্গে সে একবার বলেছিল, — যে পার্টি সরকারে — তারক সে-ই পার্টির সঙ্গে থাকে।
এটা একটা কারণ হতেই পারে। এর ফলে
ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি থেকে প্রভাবশালী হওয়া তারকের পক্ষে অসম্ভব নয়। এভাবেই তারক
দত্ত সম্পর্কে একটা ধারণা গোবিন্দর মনে জন্ম নিতে শুরু করল। সে তার প্রভাব খাটিয়ে কী
কী করেছে, তার খুঁটিনাটি ভাবতে শুরু করল, আর কী আশ্চর্য, গোবিন্দ দেখল, তারক দত্তর
যা কিছু, সবই তার প্রভাব খাটানোর ফসল।
গোবিন্দ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তার
একতলা বাড়ি কোনরকমে দেড়তলা করতে স্কুলে চাকরি
পেয়েছে দু বছর আগে। ওদের একটা কুকুর আছে, জাতে ল্যাব্রাডর। সে নিশ্চিত হল, এসবই সম্ভব
হয়েছে তারকের প্রভাব থাকার জন্য।
তারক দত্ত মাছ বা আলু কিনে দাম
দেয় না দেখে, তার জিনিস নিতে পারে ও মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা
তার পক্ষে সম্ভব কীভাবে,সেই রহস্যের সমাধান হিসেবে তার সামনে উঠে এসেছিল — তারকের বাড়ি,তার বউয়ের স্কুল
মাস্টারির চাকরি আর ল্যাব্রাডর। একটা সময়ে এসে
গোবিন্দর মনে হল এটাই সব না, এর পিছনে
আরো কিছু আছে। সেটি কী, খু্ঁজে না পেয়ে সে হতাশ হয় এবং সেই হতাশা তার ক্ষুদ্র পরিবার ও তার উপর এতটাই
প্রভাব ফেলে, সে খিটখিটে হয়ে ওঠে, সঙ্গে বদমেজাজ।
খিটখিটে মেজাজ তার সঙ্গী, অন্যদিকে
তারকের পিছনে লেগে থাকার অদম্য বাসনা— এর চক্করে পরে সে কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে গেল।
পারতপক্ষে সে অফিসে ছুটি নিত না,খুব মন দিয়ে
কাজ করার সুনাম ছিল তার, গলা তুলে কথা বলা তার ধাতে ছিল না, সেই গোবিন্দ মাঝে মাঝেই
আপিস কামাই করে তারকের অফিসের অন্য সব ডিপার্টমেন্টে গিয়ে তারক সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া
শুরু করলে, জানতে পারল, সে এক বছর আগে সাড়ে সাতশ স্কোয়ার অফিসেই ভাড়া খাটে। তারকের
বাড়ির আসেপাশের একটা মুদির দোকান থেকে জানতে পারল, লোকাল কাউন্সিলরের সঙ্গে তার খুব
দহরম মহরম আর তার সুফল ভোগ করে পাড়ার মানুষেরা। প্রায় ২৪ঘন্টা কর্পোরেশনের জল সব বাড়িতে।
তার কেরামতিতেই, তার বাড়ির কাছেই অটো স্ট্যান্ড, যেখান থেকে কাছের মেট্রো স্টেশনের
দূরত্ব দশ মিনিট। তাদের পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না।
তারকের বউয়ের স্কুল সম্পর্কে খোঁজ
নিয়ে জানতে পারল, সে তিন মাস আগে হেড দিদিমনি হয়েছে। তারকের শালিও সেই স্কুলে পড়ানোর
চাকরি পেয়ছে। ওই পাড়ায় চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে সে জানতে পারল, তার সুপারিশে লোন
পেয়ে বেশ কয়েকজন অটো কিনেছে।
তারক যে প্রভাবশালী, সে ব্যাপারে
গোবিন্দর সন্দেহ রইল না।মাছ বা আলু কিনে দাম না দেওয়ার
অধিকার তার আছে, সে যদি অটোয় চড়ে ভাড়া
না দেয়, কারুর কিছু বলার নেই।
তারকেরও অ্যান্টি আছে, তারা অপেক্ষায়
থাকে। এরকম কয়েকজনের সঙ্গে গোবিন্দর আলাপ হল, সেখান থেকেই সে জানল, তারকের আর একটা
বউ আছে, সে তারকের নতুন কেনা ফ্ল্যাটে থাকে।
পার্টির বিরোধী শিবিরের নেতার সঙ্গেও
তারকের খুব আশনাই। ফলে যতই হাত নিশপিশ করুক, তার অ্যান্টিরা তারকের টিকি ছুতে পারে
না। তারা তারকের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কিছু একটা
কিচাইন হবে, এই আশায় ওর ফ্ল্যাটের দিকে তীক্ষ্ণ
নজর রাখছে।
এমন অনেক মানুষ আছে, কোনরকমের বিপদ
আপদ তাদেরকে স্পর্শ করে না। মসৃণভাবে তারা জীবন কাটায়। কোন বিপদের মোকাবিলা তাদের করতে
হয় না এবং গোবিন্দ এই সিদ্ধান্তে এল যে, ঝিমলির বাবা তারক দত্ত সেই স্তরের মানুষ।
ঝিমলির বাবা প্রভাবশালী, তার অনেক
গল্প, যা গোবিন্দ জানত না — জেনে যাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে অনেক দিন পরে এক সন্ধ্যায়, সে
তার বউ, গোপাকে, সব কথা বলবে এবং তার গোয়েন্দাগিরির সাফল্য যৌথভাবে উপভোগ করবে ভেবে
একটা রামের পাঁইট কিনে বিছানায় জুত করে বসেছিল। সবে এক পেগ শেষ করে বাদাম চিবিয়ে দ্বিতীয়
পেগ হাতে নিয়ে বউয়ের কাছ থেকে তার গোয়ন্দাগিরির সাফল্য সম্পর্কে কিছু প্রশংসা সূচক শব্দ শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল, তার
একটু আগেই সে তাকে সবটুকু বলেছে, অথচ তাকে হতোদ্যম করে গোপা বলেছিল, এসব তো সবাই জানে।
ঝিমলির বাবাকে সবাই খাতির করে। কত লোকের যে উপকার করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। তোমার মতো
হাঁদা গঙ্গারাম যারা, তাদের কাজই হল, কোন খবর না রেখে, সমালোচনা করা।
গোবিন্দ তারকের ফ্ল্যাট নিয়ে কথা
বলতে চাইলে, এমনকি তারকের আর একটা বউয়ের প্রসঙ্গ
তুললে — গোপা এক মুখ বিরক্তি নিয়ে বলেছিল, বেশ করে। ঝিমলির মা যদি মেনে নেয়, তোমার
কী?
গোবিন্দ ততক্ষণে দু পেগ মেরে দিয়েছে।
নেশার ঘোরে সে তারককে দেখছিল। তারককে তার নতুন ফ্ল্যাটে ঢুকতেও দেখছিল। তারকের দ্বিতীয়
বউকেও দেখছিল। ওরকম একটা ফ্ল্যাটের জন্য তার মনটা আনচান করছিল। ওরকম একটা বউ তার সেই
ফ্ল্যাটে,...ভাবতে গিয়ে নিজেকে মনে করেছিল প্রভাবশালী, সেই অবস্থায় গোবিন্দ, নেশাটা
যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য, কোন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু সে পারেনি,
তার কারণ গোপা।
গোপা সেদিন যা যা বলেছিল, কিছুটা
শোনার পরেই গোবিন্দর মদের নেশা ছুটে গিয়েছিল,
তার মনে হয়েছিল, গোপা এত কিছু জানে, এত খবর রাখে! সে আরও বুঝেছিল, তার থেকে সবাই এব্যাপারে
এগিয়ে, এমনকী গোপাও, আর জেনেছিল, ওই রকম তারক দত্ত চারপাশে অনেক আছে।
নাড়ু, মানে নারায়ণের কথা বলেছিল
গোপা। তাকে গোবিন্দ চেনে, কবে থেকে, কতদিন ধরে চদম সে অনেক অনেক দিন—অথচ সে জানত না
নাড়ুর ব্যবসা ছিল খাদান থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা।
নাড়ুর দুই ভাই — হারু আর গারু
— তারাও ওই ব্যবসায় — কোটি কোটি টাকা — তারপর সে- সব ছেড়ে, রাস্তা বদলে, তিন ভাই একসঙ্গে,
তিন চার রকমের আইনি ব্যবসা করে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গোবিন্দ তিনজনকেই জন্মাতে দেখেছে,
এক-আধটু দু নম্বরি ঝোঁক ওদের মধ্যে সে-ও লক্ষ্য করেনি তা নয়, কিন্তু তার মানে এই! এতো
রীতিমতো ডাকাতি!
নাড়ুর বউ আবার গোপার স্কুল জীবনের
বন্ধু।এটাও গোবিন্দ জানত না। গোপার সঙ্গে তার যে সব কথাবার্তা, তাতে দুজনে দুজনার গোপন
কথা, গোপন ইচ্ছা আদান প্রদান করে, আর যেহেতু
গোপার গোপন বিশেষ কিছু নেই, নাড়ুর বউই কথা বলে আর গোপা শোনে।
নেতাদের খুশি করা, পুলিশকে খুশি
করা এসবতো আছেই, তার উপর রাতের অন্ধকারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারবার, ধরপাকড় হলে কোন
নেতা পাশে দাঁড়ায় না, তাই বেআইনি থেকে আইনি ব্যবসা। গারমেন্ট, প্রমোটিং,রেস্তোরাঁ,
বটলড্ ওয়াটার,মোটর বাইকের শো রুম। আর
নেতাদের করার টাকা যেত তারক দত্তর
মাধ্যমে।
ঝিমলির বাবা মাছ কিনে দাম দেয় না।
কেন?
ঝিমলির বাবা আলু কিনে দাম দেয় না।
কেন?
অটো চড়ে কিন্তু ভাড়া দেয় না।
কেন?
আর একটা বিয়ে করেছে। তার জন্য একটা
ফ্ল্যাট?
সবাই জানে, তুমি ছাড়া।
গোবিন্দ গ্লাসে রাম ঢালে।জল মেশায়।
তিন ঢোকে গ্লাস খালি করে।
তুমি এরকম কেন করছ?
গোবিন্দ হাসতে থাকে।
এখন এটাই তো হচ্ছে।
গোবিন্দ টের পায় নেশা চড়ছে।
সবাই সব জানে, তুমি শুধু জান না।
সবাই জানে?
হ্যাঁ।
শুধু আমি জানি না?
হ্যাঁ।
তারকও জানে?
কী?
গোবিন্দ উত্তর না দিয়ে ফের রাম
ঢালে। জল মিশিয়ে তিন ঢোকে সবটুকু শেষ করে গোপার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী দেখছ?
দেখার ক্ষমতা যার নেই, সে এভাবেই
চেয়ে থাকে। দেখেও, কিছুই যে দেখে না, সে এভাবেই চেয়ে থাকে। দেখেও, যে কিছুই বোঝে না,
সে এভাবেই চেয়ে থাকে।
কথাগুলো গোপা শুনতে পায় না কারণ
গোপাকে সে কিছুই বলেনি। সে নিজেকে বলেছিল।
নেশা হচ্ছে। গোপা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
গোবিন্দ টের পায় সে একটা অন্য পৃথিবীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাকে আরও বেশি চোখ কান খোলা
রাখতে হবে। জানি না বললে হবে না। বুঝি না বললে পিছিয়ে পড়তে হবে।
এখন তো এটাই হচ্ছে।
ঝাপসা হয়ে আসা চোখে গোপার ঠোঁট
নড়ে উঠতে দেখে গোবিন্দ। গোপার ঠোঁট নড়েই যাচ্ছে। অথচ সে কিছু শুনতে পায় না। সে তার
নতুন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকে, ঘুরতে ঘুরতে টের পায় এক জোড়া তীক্ষ্ণ চোখ তাকে নজরে
রেখেছে।
নেশার ঘোরে ঘুমিয়ে পড়ার মুহূর্তে
গোবিন্দ চমকে ওঠে। তীক্ষ্ণদৃষ্টির চোখদুটো তারকের। চোখ দুটো তাকে নজরবন্দী করে রেখেছে।
খাবে না?
গোপা তার দৃষ্টির আড়ালে। শুনতে
পেল গোপা বলছে, তোমার এই বদলে যাওয়ার কারণটা আজও বুঝতে পারলাম না। যে কথা সবাই জানে,
তুমি কেন জান না? যে কথা সবাই বোঝে তুমি কেন বোঝ না? এ ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন