সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

শৌনক ঠাকুর

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৯




চাঁদোয়া

 

অবশেষে সমুদ্রের নুন আর বালির সঙ্গে লীন হয়ে যাই

এখন আমি নোনা আর কণা

ফোঁস ফোঁস শব্দ দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঘুরে ফিরে আসে বারবার

প্রতিধ্বনি ফেলে যায় আকাশে বাতাসে,

ফিরে আসি

ঘুরে দাঁড়ায়

দেখি দ্বীপের কিনারে কিলবিল করছে যন্ত্রণা

বাঁচার মন্ত্র জানা নেই

চিনি না ত্রাতাকেও

যখন আমরা মহা অন্ধকারের দিকে মরিয়া হয়ে ছুটে যাই হোঁচট

খেয়ে পরার আগের মুহূর্তে

সাদা চাঁদোয়া বিছিয়ে দেয় জোছনা।

 

কবিতা যে বড়ই অভিমানী

 

যদি পাতার কোণ বেয়ে ঝরে পড়া অশ্রুকে

শিশির ভেবে ভুল করো

তাহলে কবিতা তোমার জন্য নয়।

 

ব্যর্থ তারার অপমৃত্যু দেখে যদি

তোমার তারা খসা মনে হয়

তাহলে কবিতা তোমার থেকে অনেক দূরে।

 

যদি তোমার নিঃশ্বাসে গোলাপের গন্ধ মিশে

তোমায় মাতাল না করে

তাহলে কবিতা তোমার জন্য নয়।

 

নদীর ঢেউ খেলানো চুলে বাতাসের আদরকে যদি

তোমার জলের স্রোত বলে মনে হয়

তাহলে কবিতা তোমার থেকে অনেক দূরে।

 

যদি পুকুরে পড়ে থাকা নিশ্চল চাঁদকে দেখে

তোমার চোখ পাথর না হয়

তাহলে কবিতা তোমার জন্য নয়।

 

কার্তিকের শেষ রাতে পাকা ধানে যদি

নূপুরের শব্দ না পাও

তাহলে কবিতা তোমার থেকে অনেক দূরে।

 

মৃত্যুবাণ

 

ক্রৌঞ্চবধূর শব্দহীন ক্রন্দনে

বাষ্পাকুল হল বনানীর পথ।

একদিন যে দম্পতির চোখে ছিল মৃগনাভির নেশা,

পালকে ছিল সোহাগ;

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যারা বুনেছিল ভবিষ্যৎ,

কাঠি দিয়ে গেঁছে ছিল স্বপ্ন-নীড়;

নিস্তব্দ দুপুরে যারা গা ভাসিয়ে ছিল নদী-স্রোতে,

কাটিয়েছিল কত বসন্তের বিনিদ্র রাত;

তাদেরই মাঝে এঁকে দিল জীবন মৃত্যু,

শবরের লোলুপ বাণ।

 

গড্ডালিকা প্রবাহ

 

স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতারের চেয়ে অনুকুলই শ্রেয়, তাতে

শ্যাওলা হওয়া, তার গতিতে গতি রাখা যে

কতটা দুষ্কর পরাধীনতা কতখানি,

শেষে পড়ে থাকে একটা সস্তা শরীর, যাকে

নিয়ে খেলা করে জল কখনও ডানে কখনও বাঁয়ে, পোষা মোবাইল যেন

আঙুলের যথেচ্ছ অত্যাচারের পরেও অনুগত

টবে গুটিয়ে থাকা মেরুদন্ডহীন বটের শিকড়।

প্রতিবাদী হতে বলেছে ইতিহাস কতবার,

অন্তত রাখতে বলেছে ফোঁস করার সাহসটুকু

কে শোনে, তার কথা

কেউ শোনেনি, আর শোনেনি বলেই তো

গড্ডালিকা প্রবাহ

এত পপুলার।

 

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন