সমকালীন ছোটগল্প |
মেলাবেন তিনি মেলাবেন
মিঠা-ডিহিতে এত সুন্দর ভোর হয়। ভাগ্যিস সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে ছিল ধৌম্যদাসের। হাতে মুখে জল দিয়ে বারান্দায় একটা ঝুলন্ত গুহাপম দোলনা-চেয়ারে সেঁধিয়ে বসতেই চোখের সামনে যেন কমলকুমারের গদ্য 'আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তা-ফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ।'। তাছাড়া পাশের টিপয়ে নাড়ুর বানানো ধোঁয়া ওঠা দার্জিলিং চা আর নিমকিও এসে গিয়েছে। এ নাড়ু নারকেলের নয় পুরুলিয়ার। বাড়ির সব কাজের কাজী এবং হাসি মুখ। আসল দার্জিলিং কমলা পিকো চা, গরম জলে ঠিক দু মিনিট ভেজানো। এক চুমুকেই নওয়াজা শরিফ । মেজাজ তর। চোখ বুজে আসে। পরের চুমুকের জন্যে ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে পেয়ালা। আরেকবার সেই স্বর্গীয় অনুভব এলো বলে। ঠিক সেই সময়ে কানের কাছে যেন কাক ও কেকার ক্যাকাফোনি -
'প্রভু ব্রহ্ম কি'?
মারাত্মক চমকে ওঠায় চা চলকে সাদা
ফতুয়ার ভুঁড়ির উপর উগান্ডার ম্যাপ হয়ে গেল।আগন্তুকের এই শীত শীত সাত সকালে চান সারা।
মাথা যেন বর্ষার পাকা কদম ফুল, কেশরে শিশিরের মত জল ঝিকমিক করছে। কপালে ত্রিপুন্ডক, হাতে কুঁড়োজালি আর গলায় চকচকে
রূপোর ছোট্ট একটি গজাল। এক অঙ্গে বৈষ্ণব শাক্তর একমেবাদ্বিতীয়ম সমাহার - পিসিমা। ধৌম্যদাসকে চমকে উঠতে দেখে তার গলার স্বর কাক তাড়ানো
থেকে কোকিল তাড়ানো করে জিজ্ঞেস করলেন -
- 'গোপাল আমার বোধহয় ধ্যানে বসেছিলে
। বুঝিনি গো। আচ্ছা একটু পরে মালপো নিয়ে আসছি। তখন না হয় জেনে যাব'।
ধৌম্যদাস বাবাকে স্মরণ করল।
এ বাংলোটা অনেক পুরনো। ব্রিটিশ আমলের তো বটেই। নুড়ি পাথরের পথ খস খস করে পেরিয়ে সদর দরজায় আসতে হয়। দেওয়ালগুলোয় নানা রকমের পাথর মাঝে মাঝে সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা। বিরাট উঁচু ছাদ তাতে কড়ি বরগা। এত উঁচু যে ঝুল কি ভাবে ঝাড়ে তা এক বিস্ময়। বৈঠকখানায় ফায়ার প্লেস, অবশ্য এখন আর ব্যবহার হয় না। এ ছাড়া অন্তত সাত আটখানা ঘর রয়েছে। দু তিনটে বাথরুম। সে গুলোর মধ্যে অনায়াসে একটি করে পিয়ানো রাখা যায়। বাড়ির চার পাশে খোলা বাগান। প্রচুর বড় বড় গাছ - তারা বোধহয় ভারতের স্বাধীনতা দেখেছে।সবুজ মখমলি ঘাসের উপর ইতস্তত ছড়ান কারুকার্য করা জীর্ণ লোহার চেয়ার। দু একটির মাথায় লাল সাদা ডোরা কাটা ছাতা। লাল ইঁটের সীমানা ঘেঁসে রঙ্গিন ফুলের চাপ চাপ কেয়ারি করা। উত্তর পঞ্চাশে অনেকের যেমন মাথা ফাঁকা হয়ে যায় কিন্তু কানের পাশ দিয়ে বেড়া চাপা চুল থাকে । মালী খুরপি চালাচ্ছে গাছের গোড়ায়। বোঝা যায় বাড়ির বাসিন্দাদের ক্লোরোফিলের প্রতি কিছু দুর্বলতা আছে।
বাংলা সিনেমা সত্যি হলে এ বাড়ির কর্তার সকাল সকাল হাফপ্যান্ট আর বুট জুতো পরে প্রাতঃভ্রমণে বেরোনো উচিত। দাঁতে কামড়ানো পাইপ, হেলিয়ে দেওয়া 'প্রশ্ন চিন্হের' মত। ডান হাতে পেতলের সিংহ মুখী সরু ছড়ি আর বাঁ হাতে ডোবার-ম্যান কুকুরের গলার দড়ি। কিন্তু এখনকার নিবাসী তা করেন না।কারণ ব্যাপারটি সিনেমা নয় আর তিনিও কোনো 'পদ্ম মিত্র' বা 'চিত্র বিশ্বাস' নন। স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের একটু উঁচু দরের চাকুরে। বলনে অমায়িক, চলনে সাত্ত্বিক, গ্রহণে শাকাহারী আর এক বিশেষ বাবার ভক্ত। শ্রীমৎ স্বামী একশ আট শ্রী শ্রী গজালবাবা।
গজাল বাবা খুব জনপ্রিয় গুরু হতে
পারেননি কারণ ভারতে বোকা বাক্স আসার আগেই তাঁর তিরোধান ঘটেছে। তবে তিনি বেশ বৈপ্লবিক
মানুষ। যখন ধরাধামে ছিলেন - একশ আটটি গজাল লাগানো পিঁড়ে নিয়ে ঘুরতেন এবং কোথাও উপবেশন
করতে হলে - তা সে সোফাতেই হোক কিম্বা মাটিতে - সেই পিঁড়ে পেতেই বসতেন। গজালের কি মজাল
যে তার দেহ ভেদ করে। তিনি শাক্ত এবং বৈষ্ণব মত নিপাতনে সিদ্ধ করে এক নতুন পথ প্রণয়ন
করেছিলেন।অনেকটা আকবর বাদশার 'দীন এ ইলাহি' ধরনের। এতে মাংস ও মালপো তে কোনো বিভেদ রাখা হয়নি।শিষ্যরা হাতে খাঁড়া বা কুঁড়োজালি - যে যেমন ইচ্ছে ধরতে পারেন
। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল যাবতীয় অশান্তি মনের ব্যামো, পেটের নয়। পেট কষ্টে থাকলে মনের ও
ঠিক থাকা মুস্কিল। আর দ্বিতীয় প্রবচন আরো সরল। যদি সহজে কাউকে কিছু বোঝাতে পারো - অতি
উত্তম। আর নাহলে 'গজাল' তো রইলই গোঁজানোর জন্যে। ক্রান্তদর্শী ভাবনা। সুতরাং সংসারে ছিল - আছে 'গজাল'। দুঃখের কথা অনেকেই এ কথা বুঝতে
চায়নি। তিনি দেহ রাখার পর মাত্র মুষ্টিমেয় কিছু শিষ্য তার ভাবধারা ধরে রাখতে সচেষ্ট।
তাদেরি একজনের বাড়িতে এখন ধৌম্যদাস বসে।
বৎসরান্তে একবার এই মিঠা-ডিহিতে খুব ধুমধাম করে বাবার নাম গান হয়। কোনো ভক্ত অবশ্য
তাঁর মত গজাল পোঁতা পিঁড়ে ব্যাবহার করতে পারেন না তবে প্রতীক হিসেবে একটি করে রূপোর
গজাল কণ্ঠে ধারণ করেন। শহর থেকে কিছুটা দূরে
হবার কারণে এখানে সময় কাটানো কিছুটা মুস্কিল। তাই বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান - তা সে সাতদিন
অবিরাম সাইকেল চালনা , তে' রাত্তির যাত্রা পালা, অহোরাত্র সংকীর্তন - যাই হোক না কেন
বিরাম সহ লেগেই থাকে। সবেতেই স্থানীয়রা ঘোর উৎসাহে অংশ নিয়ে থাকেন। একের আয়োজকদের অন্যের
উপর হালকা টেক্কা দেবার গোপন বাসনা ধুপের মত পোড়ে। এতেই ফান্দে পড়েছে বগা মানে আমাদের
নায়ক - ধৌম্যদাস। তার ভুঁড়িতে সদ্য সদ্য গরম
চা পড়ে অল্প পুড়ে গেছে। সে তাতে একটু হাত বুলিয়ে নিক। আমরা জেনে নি বিপদটা কিরকম।
ধৌম্যদাসের বাবা বিবস্বান ভট্টোপাধ্যায়, একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। বাংলা
হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় সুললিত বক্তা। চাকরি
মুক্ত হলেও তার সে ভাবে অবসর হয়নি। বিভিন্ন সভায় সমিতিতে বক্তা হিসাবে তার নিত্য ডাক
পড়ে। তিনিও নির্দ্বিধায় - সুররিয়ালিস্ট কবি,
রেনেসাঁ কালীন ছবি আর জীবনমুখী নব রবি - অর্থাৎ যে যেমন চায় তেমনি ভাবে নিজেকে মিলিয়ে
-কথা বিলিয়ে দেন। ধৌম্যদাসের মায়ের ফোটোতে দেবার মালার কোনদিন অভাব
হয় না।এক সুটকেস ভরা রকমারি ব্যাজ,আলমারিতে একটি তাক ভর্তি উত্তরীয়। ধৌম্যদাস একবার
ভেবেছিল দু তিনটে জুড়ে লুঙ্গি বানাবে কিন্তু বাবার ভয়ে পারেনি। এমন নয় যে এরকম না হলে
তার পরিধেয় জুটবে না। সে আর্থিক ভাবে আদৌ বাবার উপরে নির্ভর শীল নয়। বরং গবেষণা শেষ
করার পরে যে ম্যানেজমেন্ট ইশকুলে পড়ায় তাদের দেওয়া থোওয়ার হাত ভালই।আসলে নির্ভরশীলতা অন্য জায়গায়, বন্ধুজনচিত। অবাক পৃথিবী
মনে হলেও - ধৌম্যদাস প্রায়ই বসে বাবার সঙ্গে গল্প করে আর বাবাও তাকে ' কি ছিল - কি
হল' শুনিয়ে পীড়ন করেন না। দুজনে বসে ক্রিকেট / ফুটবল দেখা চলে, সঙ্গে পপকর্ন। মা চলে যাবার পর দীনু খুড়োর
ওপর সংসার। এই নিয়ে মাঝে মধ্যে বাবা গাঁই গুই করেন, তবে ধৌম্যদাস পাত্তা দেয় না। আরো কিছু দিন
তার মুক্ত বিহঙ্গ থাকার ইচ্ছে।
তবে কিছুকাল হল তাঁর মনে একটু অপরাধ-বোধ ঢুঁ দিচ্ছে। বিবস্বান বাবুর পা পিছলে পায়ে পলস্তারা। ডাক্তারের কড়া আদেশ বাথরুম ছাড়া নড়া চড়া নয়। চাকরির চাপে ধৌম্যদাস খুব একটা সময় দিতে পারছে না বাবাকে। ভাবছে - এখন আর কেউ থাকলে বাবাকে সঙ্গ দিতে পারত।যদিও শুয়ে বসে থাকতে বই-পোকা বিবস্বান বাবুর খুব যে আপত্তি রয়েছে - তা নয়। তিনি গোটা দশেক বই ডাক যোগে আনিয়ে নিয়েছেন। তারপর কখনো - 'ভারতের প্রাচীনতম মেহেরগড় সভ্যতা' কিম্বা কখনও ' পিকাসোর নীল থেকে গোলাপি রং এ উত্তরণের' ইতিহাসে মগ্ন আছেন। এ রকমই একদিন তিনি যখন - 'অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা কেন বার বার জেলে যায়' - সেই গবেষণায় ব্যস্ত তখন 'জয় প্রভুর জয়'বলে দুজন গোলগাল বিনীত মানুষ এসে তার সামনে দাঁড়ালেন। সুদূর স্ট্রেইট দ্বীপের আদিবাসীদের চারণ ভূমি থেকে নিজের শয়নাগারে ফিরতে বিবস্বান বাবুর কয়েক মুহূর্ত লাগলো। আরো কিছুটা সময় লাগল আগন্তুকদের চিনতে। চিনেই সাদর অভ্যর্থনা জানালেন।। প্রতিবছরই এনারা আসেন এবং তাকে নিয়ে যান গজাল বাবার বাৎসরিক সভায়। বিবস্বান বাবুর কিছুদিনের মুক্তি ঘটে ইঁট পাথরের শহর থেকে।তাই তিনি সানন্দে কদিন গুজরান করতে যান মিঠা-ডিহি।
খুচরো আলাপ, দীনু খুড়োর চা আর 'আবার খাই' মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সিঙ্গাড়া শেষ হলে তারা কাজের কথা পাড়লেন। অর্থাৎ বিবস্বান-বাবুকে যেতে হবে দিন চারেক পরে। এবারের বাবার একশো পঁচিশ বছরের জন্ম বার্ষিকী। কার্ড ছাপা হয়ে গেছে। যেহেতু তিনি প্রতি বছরের প্রধান অতিথি - তাকে আর আগাম জানানো হয়নি। বিবস্বান-বাবু প্রমাদ গুনলেন । পদ স্খলনের বিপদের কথা জানালেন। এখন যে ' পাদমেকং ন গচ্ছামি'। এবার প্রমাদ গোনার পালা আগন্তুক দের। কি হবে এখন। আয়োজন সারা। সম্বর্ধনার মানপত্র বাঁধিয়ে তৈরি। যিনি পাঠ করবেন তিনি নিয়মিত গার্গল করছেন।তাছাড়া বিবস্বান বাবুর মত ওজনদার কাউকে না নিয়ে যেতে পারলে পরের মাসে 'ওলাইচন্ডি ' পুজো উপলক্ষে যে তান্ত্রিকের আসার কথা - সেই বাজী মেরে যাবে। এরকম ঝড়ের আগে শান্ত পরিস্থিতিতে কলেজ ফেরত ধৌম্যদাসের প্রবেশ। বাবার বেডরুমে দুজনকে বসে থাকতে দেখে সে একটু সপ্রশ্ন চোখে চাইল। বিবস্বান বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন। আগন্তুক দুজন ধৌম্যদাসকে বিলক্ষণ নিরীক্ষণ করল মিনিট দুয়েক। নিচু স্বরে আলাপ করে নিল নিজেদের মধ্যে। তারপরে প্রায় সমস্বরে বলে উঠলেন 'জয় গজাল বাবা। কেমন গোঁজের খোঁজ মিলিয়ে দিলেন প্রভু। সব তার ইচ্ছে'।
কি মেলালেন বাবা? আগন্তুকদের ইচ্ছে এবার বিবস্বান বাবুর বিকল্প হিসাবে ধৌম্যদাস বাবাজীবন তাদের উৎসবে সামিল হোক। একদিন ঘণ্টা খানেকের বানী বিতরণ। সে যখন কলেজ শিক্ষক - এ ব্যাপার তার কাছে দুধ ভাত।ধৌম্যদাসেরও নামের আগে 'ডঃ' রয়েছে। তাছাড়া তার চেহারাটি ধর্ম সম্মেলনের জন্যে ই যেন সৃষ্টি। বিবস্বান বাবুর চেহারায় গ্রীক ভাস্কর্যের ছোঁয়া আছে। ধৌম্যদাস বাবার রংটি পেলেও - চেহারা তেমন পায়নি। বরং তার মায়ের আদলে ও আদরে কিঞ্চিৎ গোলালো । চুল আধুনিক রীতি মাফিক রগ ঘেঁসে মুড়িয়ে দেয়নি। একটু লম্বা - হয়ত চাঁচর কেশ ও বলা যায়। ধুতি,পাঞ্জাবী,উত্তরীয়,চন্দন টিকা,গাঁদার মালা পরিয়ে দিলে - ক্যালেন্ডারে যেমন আঁকা থাকে - তেমনি চৈতন্যদেবের নৃত্য সঙ্গী লাগতেই পারে। গোঁপ টি শুধু মুড়োতে হবে। বিড়ম্বিত ধৌম্যদাস প্রতিবাদ করেছিল যথাসাধ্য কিন্তু তাঁরাও গজাল বাবার শিষ্য। তাদের অবস্থান সত্যাগ্রহ আর বিবস্বান বাবুর বিপদে পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ - এড়ানো সম্ভব হল না। তবে সেদিন কিছুতেই সে তার সযত্নে লতিয়ে রাখা গোঁপ কাটতে রাজি হয়নি। তাতে আগন্তুকরা ঈষৎ মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন।
কথা হল বাকি তিনদিন ধৌম্যদাস বাবার কাছে গজাল বাবা ও তাঁর কাজ কলাপ বিষয়ে একটু পড়া করে নেবে। তারপর চতুর্থ দিনে কেউ একজন এসে তাকে নিয়ে যাবে অকুস্থলে। এতেও ধৌম্যদাস প্রতিবাদ করেছিল। সে কোন দুগ্ধপোষ্য নাবালক নয় - উনত্রিশ বছরের সাজোয়ান মদ্দ। তার ছড়িদার লাগবে না। কিন্তু আগন্তুকরা রাজি হয়নি। হয়ত তাদের ভয় ছিল শেষ-বেলায় যদি ধৌম্যদাস ' ছেড়ে দিলাম পথটা বদলে গেল মতটা'শোনায়। তাই তারা স্বয়ং এসে পুঁটলি বেঁধে নিয়ে যাবে। অগত্যা আত্ম সমর্পণ আর আজ ধৌম্যদাস এখানে বারান্দায় বসে। বলা হয়নি সেই দুজন আগন্তুকের একজন - এই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা - শ্রী বিভু অনন্ত করালি। যে মহিলা সক্কাল সক্কাল ধৌম্যদাসের জামায় চা ফেলিয়েছেন - তিনি করালি-বাবুর যৌবনে বিধবা দিদি। তাঁর নাম যে কোন কালে নৃমুণ্ডমালিনী ছিল তা তিনি নিজেই ভুলেছেন। তবে নামের প্রতাপটি ভোলেন নি। এখন তিনি সারা মিঠা-ডিহির - আট থেকে আশির - পিসিমা। হাঁক ডাকে এলাকা কাক চড়াই মুক্ত। তিনি গজাল বাবার একাই একশ ভক্ত এবং ব্রাহ্মণ দেখলেই গরম কড়ায় ডালডার মত গলে যান।তাঁর ধারনা ব্রাহ্মণ মাত্রই নচিকেতার বংশধর। সুতরাং তাঁরা - জন্ম থেকে যম,চাল থেকে গম - সমস্ত জ্ঞানের ছলছলে কলসি। যে কোন প্রশ্নের জবাব - শুধু তাদের একটু কাত করতে পারলেই বগ বগ করে বেরিয়ে আসবে। ধৌম্যদাসের আসল বিপদের কারণ তিনিই।
বাবার কাছে এক ঘণ্টা বলার মত গুরু গম্ভীর কথা ধৌম্যদাস শিখে এসেছে মিঠা-ডিহিতে। কিন্তু সে বিজ্ঞানের ছাত্র। পিসিমার জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করার ক্ষমতা তার সিলেবাসে নেই। কাল সন্ধেবেলা ধৌম্যদাস আসা ইস্তক মাঝে মাঝেই তিনি ইষ্টক প্রমাণ প্রশ্ন নিয়ে ধেয়ে আসছেন আর ধৌম্যদাস 'মেসির ' মত পাস কাটাচ্ছে। শেষে ঘুমের দোহাই দিয়ে গত বিশ বছরে প্রথমবার রাত দশটায় শুয়ে পড়েছিল। তাতেই তাঁর আজ ভোর সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে। পিসিমা যে তারও আগে উঠে তাঁর প্রশ্ন বাণে শান দিয়ে রেখেছেন - বেচারা জানবে কি করে? তার ডক্টরেট ডিগ্রি আছে বটে কিন্তু 'বর্তমান জাপানী যুব মানসে ম্যাকডোনাল্ডের প্রভাব' নিয়ে ঘাঁটা গবেষণা পত্র এ ব্যাপারে তাকে কোনো সাহায্যই করতে পারছে না। একটু পরেই আবার পিসিমা আসবেন মালপোয়া নিয়ে কিন্তু সঙ্গে নিশ্চয়ই কিলো খানেক প্রশ্ন থাকবে। জখম ভুঁড়ি তে হাত বোলাতে বোলাতে সেই কথাই ভাবছিল ধৌম্যদাস হঠাৎ -
- হাই। আমি গান্ধার্বিকা। কালকে
এসেছি। ড্যাডি বলল এবার বিব আঙ্কল আসবেন না।সো ... আপনি এসেছেন। কালকে তো সন্ধেবেলাই
শুয়ে পড়েছিলেন।মোস্ট আন লাইকলি। আই থট ইয়ু আর অ্যান এজেড চ্যাপ বাট...। আচ্ছা আপনি
কি করছিলেন। ডু ইয়ু এডোর ইয়োর বালজিং বেলি? কেমন আয়েস করে হাত বোলাচ্ছিলেন '।
বছর পঁচিশের সদ্য ঘুম ভাঙা যুবতীর
ঝঞ্ঝা বেগে প্রবেশ আর পরের পর প্রশ্নের মিসাইল। এটা বাড়ি না গাজা স্ট্রিপ? তাছাড়া এ
আবার তাকে ভুঁড়ি মালিশ করতে দেখে ফেলেছ। খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি। ধৌম্যদাস সাত তাড়াতাড়ি
ফতুয়া নামাতেই উগান্ডার ম্যাপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। যুবতীটি চাঁপার কলি আঙ্গুল মুখে চাপা
দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল -
- 'মাই মাই। চা ফেলেছেন জামায়। এখনও ঠিক ঠাক চা খেতে শেখেন নি। রিডিকুলাস। কি নিয়ে যেন বলবেন আজ সন্ধ্যায়।দাঁড়ান দাঁড়ান ...আই রিমেম্বার - মোক্ষ লাভের মার্গ - আমরা কি পারবো? আর ইয়ু শিয়োর আপনি আমাদের পথ দেখাতে পারবেন'?
- 'দেখুন বাবার পা ভেঙ্গেছে বলে
আমাকে ...'।
- 'রিলাক্স রিলাক্স। দেয়ার আর মেনি
মোর ওয়েজ...। আপনার পা তো ঠিক আছে। তাহলে হেঁটেই পথ দেখিয়ে দেবেন। খুক খুক। যাই। ব্রেকফাস্ট
টেবিলে দেখা হচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে আপনি - কি যেন বলে - হ্যাঁ - শা-কা-হা-রি নন তো'?
- 'না। আমি বলছিলাম......'।
- 'হ্যাঁ হ্যাঁ শুনবো। বাই ফর নাও'।
ধৌম্যদাস শাকাহারি না হলেও মেয়েটি
মূর্তিমান মাতাহারি। স্বভাব আর সৌন্দর্যের ভয়ঙ্কর সুন্দর সংমিশ্রণ। এখুনি পালাতে পারলে
ভাল হত। এক পিসিমাতে রক্ষা নেই, ভাইঝি দোসর। বাবা তাকে একবার ও বলে নি এখানে গজাল বাবার
দুই পাগলী শিষ্যা বাগালি করে বেড়াচ্ছেন। ধৌম্যদাস যে দিকেই পালাতে চায় - তেড়ে এনে খোঁয়াড়ে
ফেলছে। তাড়াহুড়ো করে ঘরে যাবার জন্যে উঠে দাড়াতেই দরজায় পিসিমা। হাতে মালপো, মুখে হাসি
-
- ' আচ্ছা গোপাল আমার । কোন মার্গ
ভাল - ভক্তি না জ্ঞান? কি করে জীবনের মালিন্য যাবে '?
- ' আজ্ঞে মার্গো সাবানে। ওটাই
সব থেকে কার্যকারী। এবার একটু স্নান সারি'?
- ' হ্যাঁ। হ্যাঁ। সারবে বৈকি ।
নাদুকে বলি তোমার স্নানের জলে একটু কপ্পুর, চন্দন বাটা,তিল তুলসি দিয়ে দিক। বাল গোপালকে মা যশোদা এ ভাবেই তো স্নান
করাতেন'।
ধৌম্যদাস পিসিমাকে প্রায় ঠেলা দিয়ে
ঘরের ভিতরে পালাল। শুনতে ভুল হল কি না কে জানে - আবার কে যেন চাপা গলায় খুক খুক হাসল
দু তিন বার। স্নানঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা বন্ধ করে কিছু ক্ষণের মুক্তি। যদিও হেমন্তের
শেষ। বাতাসে শিরশিরানি। ধৌম্যদাস সজোরে মাথার উপরে ঝর্না কল খুলে দিল। বেশ খানিকক্ষণ
ধারা স্নানের পর মাথা ঠাণ্ডা হতে জিভ কাটল। তাড়াহুড়োতে কাপড় খোলাও হয়নি আর শুকনো কাপড়
গামছা কিছু নেওয়াও হয়নি। এখন বেরোয় কি করে? কাউকে সে ভাবে চেনেও না যে ডেকে বলবে কাপড়
দিয়ে যাবার জন্যে। বাথরুমের এদিক ওদিক তদন্ত করে পরবার যোগ্য কিছু পাওয়া গেল না। নিকুচি
করেছে, এ ভাবেই বেরনো যাক। জল টপটপ জামা কাপড়ে বাইরে বেরোতেই সামনে গোল গোল চোখ গান্ধার্বিকা।
হাতে তোয়ালে।
- ' মাই গড। মম বলল আপনাকে তোয়ালে
সাবান দিয়ে আসার জন্যে । বাট আই কান্ট বিলিভ আপনি পোশাক পরেই স্নান করেন '?
- ' আরে না। একটা অ্যাকসিডেন্ট
হয়ে গেছে।
- ' অ্যাকসিডেন্ট! ও এম জি'।
- ' না না সেরকম অ্যাকসিডেন্ট নয়
- আসলে আমি এনেছি সবই - নিতে ভুলে গেছলাম'।
- ' তাই এ ভাবে...বাট স্টিল...
ও আই আন্ডারস্টান্ড। ড্যাড বলছিল আপনি না কি জাপানিদের উপর কি যেন রিসার্চ করেছেন।
ইজ ইট দেয়ার স্টাইল'?
- ' না না। মানে জানি না । আমি
জাপানে গিয়ে দেখিনি '।
- ' না গিয়েই রিসার্চ? না জেনেই
ডক্টরেট? বি স্কুলের চাকরিটাও কি ...। না... না... কিছু মনে করবেন না। আজকাল কিছু কিছু
ক্ষেত্রে কিছু না জেনেই শিক্ষকের চাকরি হচ্ছে তো। তাই বলছিলাম। ধরুন আপনিই তো - হয়ত
পেরেক ও চেনেন না কিন্তু আজ বিকেলে আমাদের গজাল বাবার মোক্ষ মার্গ দেখাবেন '?
- ' আমি কি দেখাতে চেয়েছি না কি?
আপনার ড্যাড মানে বাবা আর কোন কাকু জোর করে ধরে এনেছেন আমাকে। এখন এই মার্গ দেখানোর
চক্করে আমিই না মর্গে পৌঁছে যাই। আর শুনুন আমি পেরেক চিনি বা না চিনি - আলপিন চিনি।
প্রয়োজনে ব্যাবহার ও করতে পারি '।
- ' আপনি রেগে যাচ্ছেন। কুল, কুল।
বি ফ্রেন্ডলি। প্রফেসর ইরিন এঙ্গেল বলেছেন রাগের বিস্ফোরণ শারীরিক স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার
মান এবং সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। মনে হচ্ছে চাপে আছেন। সমস্যাটা কি আমাকে বলা যায়?
আমি সাইকোলজি নিয়ে এম এ করেছি। বেশ ইন্টারেস্টিং স্টাডি মেটেরিয়াল পাচ্ছি আপনার মধ্যে'।
- ' গান্ধার্বিকা দেবী -আমি কি
শুকনো কাপড় পরে নিতে পারি তার আগে? একটু যেন ঠাণ্ডা লাগছে'।
- ' সরিইইইই সরি। আপনি রেডি হয়ে
ডাইনিং রুমে আসুন। বাই দ্য ওয়ে আমাদের বাথরুমে কিন্তু স্পাই ক্যাম নেই। ভালো ভাবেই
চান করতে পারতেন। খুক খুক'।
সদা সপ্রতিভ ধৌম্যদাসের এ রকম ফুটো বেলুন অবস্থা হয়নি কোনোদিন। কোনো রকমে আজকের দিন রাত কাটলে পালিয়ে বাঁচে । কাপড় পরে খাওয়ার ঘরে যাবে সহাস্য পিসিমা সামনে -
- ' গোপালের চান হল? আহা কি দিব্য
মূর্তি। একটু চন্দনের তিলক কেটে দি। আচ্ছা মীরা বাই আর শ্রীরাধা কে পরমতর ভক্ত রক্ষাকর্তা
শ্রী মধুসূদনের? তোমার শাস্ত্র কি বলে'।
- ' শাস্ত্রে বলে চান করে কিছু
না খেলে পিত্ত রক্ষা হয় না। পিসিমা খিদে পেয়েছে'।
- ' অ মোর গোপাল। এখুনি ব্যবস্থা
করছি। অ বৌদি ... পোড়ারমুখো নাদুটা গেল কই '?
এলাহি প্রাতরাশের পর গান্ধার্বিকা আর ধৌম্যদাস বসল বাগানে ছাতার তলায়। ধৌম্যদাস পিসিমার প্রশ্ন বিচিন্তার তত্ত্ব বুঝিয়ে বলল গান্ধর্বিকাকে। তার অজ্ঞানতা কবুল করল অকপটে। 'মেঘে ঢাকা তারা'র ধাঁচে জানাল যে সে বাঁচতে চায়। গান্ধর্বিকা খুব মন দিয়ে শুনল সবটা। তারপর খুক খুক করে হেসে যে বিধান দিল ধৌম্যদাস মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। বুঝল যে ম্যানেজমেন্ট পাস করলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়াটা - তার এখনো শেখা বাকি। নিজের ঘরে ফিরে দোর বন্ধ করে দিল। গান্ধার্বিকা সবাইকে জানিয়ে দিল ধৌম্যদাস এখন প্রাত্যহিক ধ্যানে মগ্ন, কোনো অনুপ্রবেশ নয়। দুপুরে খাওয়ার পর একটু যোগ নিদ্রা। তখনো পরমপিতার সঙ্গে একটু বোঝাপড়ার ব্যাপার থাকে। কাজেই কেউ বিরক্ত করলো না। বিকেলে মানসিক একাগ্রতার জন্যে 'গজাল গীতি 'শোনাল গান্ধার্বিকা।পরে ধৌম্যদাসের ঢুলু ঢুলু চোখের অনুরোধে কয়েকটি গজল আর সামান্য সঙ্গীতও পরিবেশিত হল। পিসিমা গোপাল ছেড়ে গান্ধার্বিকার গুন কীর্তন নিয়ে পড়লেন। একটু বেশী হওয়াতে ধৌম্যদাস খুক খুক করল আর গান্ধার্বিকার কড়া চোখ - পিসিমাকে থামাল। বিভু অনন্ত বাবু সমস্তই অবলোকন করলেন। তাঁর মন এখন শরতের কাশ ফুলের মত ফুরফুরে। এবার আর দার্জিলিং নয়,গান্ধার্বিকার মা আনলেন বলবর্ধক আয়ুর্বেদিক চা।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান। সৌম্যকান্তি ধৌম্যদাসের প্রবচন শুনে বার বার জোকার দিলেন মা লক্ষ্মীরা। প্রতিবার জোকার দিলেই পিসিমার ছাঁটা চুল খাড়া হয়ে উঠছিল। ধন্য ধন্য করতে লাগলো মিঠা-ডিহির লোক। ধৌম্যদাসের বক্তব্য, স্বরের ওঠা নামা, গৌর বরণ, চাঁচর চুল, কপালে পিসিমার দেওয়া চন্দনের টিপ, শ্বেত বস্ত্র, সিল্কের লুঙ্গি, অল্প ভুঁড়ি সবই উচ্চ প্রশংসিত হল। এমন কি তাঁর লতিয়ে নামা গোঁপ জোড়া দেখেও কেউ কেউ কামানো মোচে তা দিলেন। 'ওলাইচন্ডি ' পুজোর আয়োজকরা অবশ্য একবার বলার চেষ্টা করেছিল যে আগামী মাসে তাদের কাপালিকের তেজ এর থেকে বেশী হবে। কিন্তু জনতা তাতে আমল দিল না। সময় কুল কুলিয়ে কেটে গেল। পরদিন সকালে তাজা ভাজা শিঙ্গাড়ার মত মুচমুচে ধৌম্যদাস - সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। সবাইকে – মানে বিগলিত বিভু অনন্ত বাবু ( তুমি না এলে যে কি হত বাবা), সাশ্রু নয়ন পিসিমা (গোপাল আমায় ফাঁকি দিল)
নাড়ু - দ্য হোয়াট নট (দাদাবাবুকে
নিরামিষ পাঁঠার কালিয়া খাওয়াতে লার লম।)
দ্রবীভুত বিভুবাবুর স্ত্রী (আহা
যদি এমন...)
চোখের তারায় গান্ধার্বিকা (আবার
হবে তো দেখা)
বিবস্বান বাবু একটু উদ্বিগ্ন ছিলেন । তবে মোবাইলে বিভু অনন্ত বাবু তাকে নিয়মিত সবই জানাচ্ছিলেন । যা জানান নি - এখন ধৌম্যদাস উচ্ছ্বসিত বর্ণনা দিলো যত্ন আত্তির। বিশেষত গান্ধার্বিকার কথা বিশেষ গুরুত্ব পেলো তাঁর ধারাভাষ্যে । বিবস্বান বাবু মন দিয়ে শুনলেন। মন দিয়ে দেখলেন মোবাইলে তোলা অনেক ছবি। স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবলেন বেশ কিছুক্ষণ। একা একাই হাসলেন পাঁচ মিনিট। তারপর মোবাইল তুলে নম্বর মেলালেন - পর্দায় নাম দেখাল - বি এ করালি -
- ' বিভু অনন্তবাবু? জয় গুরু। আশা
করি সব আপনার মনোমত হয়েছে। কি বলছেন ... না না আমি আর কি করলাম। আপনাদের খাতির যত্নের
কথা শত মুখে বলছে আমার ছেলে। আপনার দিদি তাকে চোখে হারাচ্ছিলেন... এমন কি নাড়ু ও। হ্যাঁ
হ্যাঁ খুশি বৈকি। এত প্রশংসা ... সেও আপনাদেরই আশীর্বাদ। ভাল কথা শুনলাম আপনার সর্ব
গুণান্বিত কন্যাটি এখন বাড়িতে? বিয়ে থাওয়া?
...ঠিক হয়নি এখনও। সব তাঁর ইচ্ছে। মেলাবেন তিনি মেলাবেন। আমার ছেলেকে তো আপনি...
আপনারা দেখলেন...যদি আপত্তি না থাকে...হ্যাঁ হ্যাঁ বটেই তো । আজকাল ছেলে মেয়েরাই স্থির
করবে তাদের ব্যাপার...তবে...। এ ক্ষেত্রে বোধহয় একরকম হা… হা… হা… আগামী রবিবার তাহলে
সপরিবার আমার বাড়িতে... মানে আমি তো ইদানীং ঘোরাঘুরি করতে অপারগ তাই... মাকে মোবাইলে
দেখলাম তা প্রায় পাঁচ বছর বাদে... একবার সচক্ষে দেখি... হ্যাঁ... হ্যাঁ তিনিই তো শেষ
গজালটি ঠুকবেন ... আমরা আর কি... তবে ওই কথাই স্থির। আগামী রবিবার দুপুরে দুটি ডাল
ভাত আমার বাড়ি'।
এখন থেকে অন্য গল্প শুরু হবে। তবে লিখবেন আর কেউ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন