শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

হে নেপথ্যচারিণী




(১৩)

দৌরমনস্য

এই ক'দিন শহরবিচ্ছিন্ন হয়ে রবিনসন ক্রুশোর মতোই দেওয়ালে আঁকড় কেটে দিন গুণেছি। জগদলপুরের রামকৃষ্ণপল্লীতে এতোদিন দুর্গাপুজো হতো ছোট করে। এই বছর উদ্যোগের অভাবে তাও হয়নি। তবু একচিলতে বাঙালি প্রবাস মনের ভিতর জিয়ন্ত রেখে দিলাম। কলকাতা ফিরে বুঝলাম এই শহরে উৎসব প্রায় শেষ। বিসর্জন ভাসান পর্ব শুরু হয়ে গেছে। অন্য জীবিকার মতো আমার পেশায় প্রলম্ব উৎসবযাপনের অবকাশ নেই। ফলত কলেজে যোগ দিতে হলো। অত্রিও আমার সাথেই যোগ দিল। এর ভিতর একবার শুধু সোহরাব ফোন করেছিল আশুদাকে। ভাসান নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানাবার সুযোগ পেয়েছে সে। এই প্রজেক্ট নিয়ে সে বেশ ব্যস্ত। কলকাতা ফেরা মাত্র আশুদা বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বলল লালবাজারে তথাগত অধিকারীর সঙ্গে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা সেরে নিতে হবে।

কলেজে এখনও সেভাবে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু হয়নি। তবে ময়নাতদন্তর বিভাগের কাজ জয়ন্তর হাত থেকে বুঝে নিতে হল। দুপুরে ফাইলের কাজ সারছি, হঠাৎই ওয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ এল অজানা নম্বর থেকে। 'আজ আইয়ে। হামারে ঘর। আশুজি কো ভি লাইয়ে'। কে হতে পারে? জল্পনার অবসান ঘটাতে ফোন করে বসলাম। ওপার থেকে একটি পুরুষকণ্ঠ ফোনটি ধরল প্রথম। তারপর বলল, "এক মিনিট হোল্ড করুন"। ঠিক পরেপরেই ওপারে ভেসে এল ডাক্তার সবিতা আগরওয়ালের গলা।

--হেলো ডক্টর অর্কজি। বিজি?

--নেহি ম্যাডাম।বলিয়ে।

কথোপকথনে যা বুঝলাম, ডাক্তার সবিতা আগরওয়াল তাঁর ট্রিভোলি কোর্টের বাড়িতে আমাদের নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করতে চান। আশুদাকে ফোন করেছিলেন। তার ফোন বন্ধ।অগত্যা গুগুল দেখে আমার ফোন নম্বর বের করে ফোন করছেন। আমি বললাম আশুদার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করছি। বলতে উনি অদ্ভুত সম্মোহনের স্বরে বললেন,"প্লিজ আইয়ে। আপলোগ কো এক সারপ্রাইজ ভি মিলেঙ্গে।"

কী সারপ্রাইজের কথা বললেন এই স্নায়ুগবেষক কে জানে?তাঁর নতুন কোনও আবিষ্কার? সে যাই হোক, ঘরে ফিরে আশুদার সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলা যাবে না। ঘরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এসে দেখি আশুদা সোফার ওপর গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ঘরির হোম থিয়েটারে লুপে বেজে চলেছে আশুদার প্রিয় গানটি। অর্ঘ্য সেনের গলায় 'যে ছিল আমার স্বপনচারিণী'। আমি আসতেই আশুদা বলল,"বোস। কথা আছে"। আমি সবিতা আগরওয়ালের নিমন্ত্রণের কথা কখন আশুদাকে বলব, সেই ঔৎসুক্যে ছটফট করতে লাগলাম।

কেন্দ্রের টেবিলে আশুদার তৈরি রঙের গোলক থেকে মিশ্র বর্ণালীর আভা পড়ছে আশুদার চোখেমুখে। আশুদা সেই দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "অতোগুলো বছর আগেকার লালবাজারের সেই কেসটা আবার তথাগতকে বলে অপেন করালাম জানিস। অলোককৃষ্ণর শরীরে স্ট্রিকনিন ছিল। কিন্ত সেই স্ট্রিকনিন এলো কোথা থেকে? সেলের ভিতর অলোককৃষ্ণর মৃত্যুর কারণ মৃগীরোগ। মৃত্যুর সময় তার কানে ইয়ারফোন ছিল। কী বাজছিল ইয়ারফোনে? সেই গানটিই কি যা আমাদের ওই ফ্লপির ভিতর রয়েছে? যে গান মনোরঞ্জন শিকদারের বয়ান অনুযায়ী অপূর্ব গাইতেন শকুন্তলাদেবী! সে গান শুনে অলোককৃষ্ণর মৃগীর ট্রিগার হবেই বা কেন? তথাগতকে বললাম, অনুসন্ধান করে বের করতে। তখন অলোককৃষ্ণর সেলে তার দৈনিক খাবার কোথা থেকে আসত? তখন অলোককৃষ্ণর জেলে ডাক্তার মুরারী পালচৌধুরী। কিন্তু তার বয়ান তো নেবার উপায় নেই। তাই তথাগতকে তখনকার জেলের রাধুনি কে ছিল খোঁজ করতে বললাম।"

-আর?

-আরও কয়েকটি প্রশ্ন থেকেই যায়। এক।শকুন্তলাদেবীর গোপন প্রেমিক কে?দুই। অভিনন্দন ছাড়া কে ছিল তার দ্বিতীয় ধর্ষক?তিন। রত্তিমিত্তির মুখোশের রহস্য কী?

-এমন তো হতে পারে যে ওই গোপন প্রেমিকই তার দ্বিতীয় ধর্ষক?

-হতেই পারে। অসম্ভব নয়। রহস্যভেদের গোলক অনেকটাই থিয়েটারের আলোর বর্ণালীর মতো। মাত্র তিনটি প্রাইমারি রঙ ও তার তিনটি কমপ্লিমেন্টারি রঙ দিয়ে তৈরি হবে অসংখ্য সম্ভাবনা।

-আর কোথায় গেলে সারাদিন?

-আর গেলাম বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে।ওখানে আমার এক গবেষকবন্ধু আছেন। চেতন অবচেতন ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে তার সঙ্গে আমার প্রায়শই কথা হত। বন্ধুটির সহযোগিতায় ফাইল সেকশনে গিয়ে খুঁজে বের করলাম অলোককৃষ্ণর সমসাময়িক ফাইল। সেখানে ফাইল ঘেঁটে এক আশ্চর্য তথ্য পেলাম!

-কী সেটা?

-অলোককৃষ্ণ যে সময়ে এই কলেজে গবেষক ছিলেন, সেই সময়ে মনসুর গাজী কলেজের ল্যাবরেটরিতে ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট ছিল। অলোককৃষ্ণর আণ্ডারেই সে কাজ করত।

-তাহলে রেশমিকে ভুডু পুতুল সাজিয়ে ঘরের ভিতর সম্মোহনক্রিয়ায় মনসুরের সেই রসায়নজ্ঞান কার্যকরী।

--হতেই পারে। পৃথিবীর সব দর্শনের শেষ দর্শন হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞানকে অতিক্রম করতে পারে না কোনও তন্ত্র বা মন্ত্র।

-তবে কি শকুন্তলাদেবীর ধর্ষণকাণ্ডে মনসুর গাজীও জড়িত?

--বর্ণালীর সম্ভাবনা অর্ক। হতেই পারে। আবার নাও হতে পারে। কিন্তু মন বলছে এই মুহূর্তে রত্তিমিত্তির মুখোশ রহস্য ভেদ করতে মনসুরকে আমাদের দরকার।

আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। মনসুর সেদিনের প্ল্যানচেটের পর একেবারে গায়েব। আমরাও তো জগদলপুরের ক্ষণিক সফরে কিছুদিন এই শহরে ছিলাম না। কোথায় আছে মনসুর?

-খুঁজে বের করতে হবে? দেখি। তথাগতকেও বলেছি। আপাতত বল সবিতা আগারওয়ালের নিমন্ত্রণটা কখন? আমাকে ফোন করেছিল।ধরিনি। তোর ঔৎসুক্য দেখে বুঝতে পারছি কোনও একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছে।

আশুদার এই এক গুণ। অনেক কথাই না বলা থাকতেও বুঝে যায়। ফলত আমরা ট্রিভোলি কোর্টের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। সবিতা আগরয়াল নটা সাড়ে নটায় আসতে বলেছেন। ফলত তাড়া নেই তেমন। রাস্তায় বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আটকে গেলাম দুইবার। মা সুসজ্জিতা হয়ে ফিরে যাচ্ছেন শশুরবাড়ি। বছরের পর বছর এই প্রথায় দেবী এসে ফিরে যান। অথচ চারপাশ দেখি আর ভাবি। পরিবার কোথায়?সবই তো ভগ্নস্তুপ। বাফামায়ের থেকে সন্তান বিচ্ছিন্ন। স্বামী থেকে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন। দুই ভাই দুই বোন ছোট ছোট শিশু বিন্দুর মতো একা একা সঞ্চরমান। কেউ আর ঘরে ফেরে না মায়ের মতো। সকলে নিষ্ক্রান্ত হয়। কারো যেন ঠিকানা নেই নিশ্চিত। জগদলপুরের রামকৃষ্ণপল্লীর মতোই সকলে উদ্বাস্তু।

ভাবনার জলতরঙ্গে ভাসতে ভাসতে অবশেষে পৌছে গেলাম ট্রিভোলি কোর্ট। দারোয়ান ডাক্তার সবিতা মালহোত্রার নাম বলতেই কোন টাওয়ার আর কতো নম্বর ফ্লোর জানিয়ে দিল। আমরা সেই মতো পৌঁছে দরজায় টোকা দিতে শুভঙ্কর শাসমল দরজা খুলে আমাদের ভিতরে আসতে বলল। সবিতা ম্যাডামের ফ্ল্যাটটি বেশ বড়সড়। অনেকগুলো ঘর ভিতরে। আমাদের বসার ঘর পেরিয়ে ভিতরের একটি ঘরে নিয়ে গেল শুভঙ্কর। কাছ থেকে দেখলাম শুভঙ্করের মাথার খুলিতে শুকিয়ে যাওয়া পুরনো ক্ষতর দাগটি।

--আসুন।

ছোট্ট ঘরের ভিতর থেকে ডাক্তার সবিতা আগরওয়ালের গলার শব্দ ভেসে এল। ঘরটি একটি অপারেশন থিয়েটারের মতো। চারপাশে কোনও জানলা নেই। শুধু এক কোণে একটি উইণ্ডো এসি এই নাতিশীতোষ্ণ সময়তেও নিঃশব্দে চলমান রয়েছে। ঘরের কেন্দ্রে একটি হেলানো চেয়ার। চেয়ারের উপরিভাগে যেখানে মাথা হেলান দেওয়া হয়, সেখানে একটি যান্ত্রিক খাঁচার মতো। তার থেকে তার বেরিয়ে পাশে থাকা একটি মনিটরে সংযুক্ত হয়েছে। সিটে একটি মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে। বয়স ত্রিশ ছুঁইছুঁই। তার মাথায় ওই খাঁচাটি লাগানো। অনেকটা ইন্টার্নশিপের সময় ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপির সেটআপে যেমন থাকে, এই সেট আপটিও অনেকটা সেইরকম। সবিতা আগরওয়ালে আমাদের ঘরের এক কোণে রাখা সোফায় বসতে বলল। তার কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বসে কী বোর্ডে বোতাম টিপতে লাগল। মহিলটির চোখ বন্ধ। ঠোঁটদুটি কাঁপছে তিরতির করে। সবিতা একটি বোতামে চাপ দিতেই ঠোঁটের সেই মৃদু উলম্ফন থেমে গেল। আবার খানিক পর শুরু হলে ঘটনার অনুরূপভাবেই পুনরাবৃত্তি ঘটল। পরপর চার পাঁচবার এভাবে চলার পর সবিতা আগরওয়াল কম্পিউটার বন্ধ করলেন। তারপর উঠে এসে মহিলাটির মাথা থেকে খাঁচাটি খুলে দিয়ে বলল, "আব থোরা আচ্ছা লাগ রহা হ্যায়?"মহিলাটি চোখ খুলে মৃদু হেসে সীট থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল শুভঙ্করের সঙ্গে।

সবিতা আগরওয়াল এইবার আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, "ওয়েলকাম। ইয়ে মেরা ন্যায়া ইনভেনশন হ্যায়। রিভাইসড ইনট্রাক্রেনিয়াল ডিব ব্রেন ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন।"

ব্যাপারটা সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন সবিতা আগরওয়াল। মস্তিষ্কে চৌম্বকিয় ক্ষেত্র তৈরি করে মস্তিষ্ককোষদের উজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া মনোবিজ্ঞানে নতুন নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কেতাবি নাম রিপিটিটিভ ট্রান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন বা আরটিএমএস। মানুষের মস্তিষ্কের কোন অংশ কীভাবে তার ভাবনাচিন্তা প্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল, তা এই মাধ্যমে সহজেই ধরে ফেলা যায়। কিন্তু সবিতা এই প্রক্রিয়াকে তার গবেষণার মাধ্যমে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেখানে তার যন্ত্র মস্তিষ্কের শুধু চিন্তাভাবনার বর্তমান অবস্থাটিই নয়, বের করে ফেলতে পারবে তার অতীতের শিকড়। অর্থাৎ যদি কোনও অবসাদগ্রস্ততা থাকে, সেই অবসাদজনিত মস্তিষ্কের কোষগুলি ছাড়াও এই যন্ত্রের তরঙ্গ ঢুকে পড়বে মস্তিষ্কের স্মৃতিযন্ত্রে। মানুষটির শৈশব কৈশোর ঘেঁটে ঘেঁটে বের করে ফেলবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আর অবসাদের উৎপত্তিগত ট্রিগারটি কোথায় লুকিয়ে আছে। তারপর তরঙ্গ সহযুগে সেই অভিজ্ঞতাটুকু সে মুছে ফেলবে দক্ষতার সাথে। এককথায় জীবতত্ত্ব ও মনস্তত্ত্বর ভিতর একটি সেতু রচনা করবে ডাক্তার সবিতা আগরওয়ালের এই যন্ত্র। ওই মহিলাটি সবিতা আগরওয়ালের ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট। দীর্ঘদিন মনোচিকিৎসার পরেও তার অবসাদ কাটছিল না।বরং চেপে বসছিল আত্মহত্যাচিন্তা। সবিতার এই যন্ত্র তাকে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে। সবিতা আগরওয়ালের গবেষণাপত্র আপাতত ব্রিটিশ জার্নাল অব সায়কিয়াট্রিতে বিবেচনাধীন। তবে শীঘ্রই তা প্রকাশ্যে আসবে আশা করা যায়। আমি আর আশুদা বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।

-ব্রাভো। অসামান্য এই আবিষ্কার আপনার।

-ইউ ওয়াননা ট্রাই ডক্টর অর্ক?

এই আমন্ত্রণের প্রত্যাশা আমি করিনি। কিন্তু আশুদা আশ্বস্ত করায় দুরুদুরু বুকে আমাকে সবিতা আগরওয়ালের যন্ত্রে চেপে বসতে হলো। আমার মাথায় যান্ত্রিক খাঁচা বসিয়ে দিতে দিতে ডাক্তার সবিতা আগরওয়াল বললেন, "রিল্যাক্স ডাক্তার অর্ক। আপনি শুধু আপনার আপনজনদের কথা ভাবুন। এখন ঘরে আমরা তিনজন ছাড়া কেউ নেই।"

চোখ বন্ধ করতেই ভেসে এল আলিপুরদুয়ারের পথঘাট। ছেলেবেলার স্মৃতি। ভাইকে দেখলাম বাবা মাকে একঝলক। তারপর ঝলংবিন্দুতে জঙ্গিদের হাতে অপহরণের দৃশ্য। দেখতে দেখতে হঠাৎ ভেসে উঠল একটি মুখোশ। রত্তিমিত্তির মুখোশ।

-দ্যাটস অল ডক্টর অর্ক।

ডাক্তার সবিতা আগরওয়াল আমাকে চোখ খুলতে বলে মাথা থেকে খাঁচা খুলে নিলেন। আশুদা মুচকি হেসে বলল, "কী বুঝলেন?"

-বহুত ইমোশনাল হ্যায় আপকা অ্যাসিসটেন্ট। হি হ্যাজ আ ভেরি স্ট্রং লিম্বিক সিস্টেম। ডর্সোলাম্বার প্রিফ্রন্টাল করটেক্স ভি বহুত হাইপার অ্যাকটিভ হ্যায়। হি ইজ মিসিং হিজ চাইল্ভহুড।"

নিজের মনের এমন গাণিতিক বিশ্লেষণ শুনে খানিকটা লজ্জিতই হলাম। কিন্তু আশুদাকে এসব শুনে তেমন বিস্মিত মনে হল না। এর কারণ আমি জানি। আশুদা আমার নাড়ি নক্ষত্র জানে।

নৈশ ভোজে চোলা বাটুরা আর বাটার নান। ডাক্তার সবিতা আগরওয়াল জৈন। নিরামিষভোজী। কিন্তু রান্নার সুস্বাদু প্রকরণে সেই ভোজে অসুবিধা হলো না তেমন। খেতে খেতে আশুদা সবিতা আগরওয়ালের নিদ্রানিয়ন্ত্রক ওষুধের কথা জিজ্ঞেস করল। সবিতা বললেন সে ওষুধ বাজারে উত্তরোত্তর আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলাম।

-আপকা লড়কা শুভাত্রেয় কো নাহি দিখ রহা?

-উও আভি বাঙ্গালোর মে হ্যায়। নিমহান্স মে আপনি মসি কে সাথ।

মনে মনে খানিকটা নিশ্চিন্ত হলাম। কলামন্দিরে সবিতা আগরওয়ালের ছেলে শুভাত্রেয়র সেই ভয়ানক পাশবিক মুখ বারবার মনে শঙ্কা জাগাচ্ছিল অকারণবশতই। কে জানে সেই শঙ্কার কথা ম্যাডামের মস্তিষ্কযন্ত্র ধরতে পারল কি না। ফেরার পথে আশুদাকে বললাম।

-অত্রিকে একবার ম্যাডামের যন্ত্রটায় বসালে হয় না? অত্রির দুঃস্বপ্নর সেই নেপথ্যচারিণী কে, তা অনায়াসেই তো তাহলে বের করা যাবে!

আশুদা হেসে বলল, "মন্দ বলিসনি তুই ।দেখি সবিতার সঙ্গে কথা বলে।"

ঘরে ঢোকার মুখেই আশুদার ফোনটা বেজে উঠল। গাড়ি গ্যারেজ করতে যাব, আশুদা ফোনে কথা শেষ করে গাড়ি ঘোরাতে বলল।

-টালিগঞ্জের দিকে চল। এক্ষুণি।

-আবার কী হল?

-তথাগত অধিকারীর ফোন ছিল। টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় খুন। আবার ত্রিনেত্র!

(ক্রমশ)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন