শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

জয়িতা ভট্টাচার্য

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৭

ঝিলপাড়

অসংখ্য পালকের মতো উড়ে যাচ্ছে আলো। ছড়িয়ে পড়ছে সারা ঘরে, বারান্দা, পাড়ায়। কাটা মুরগির পালক। মনোজের প্রসণ্ণবদন ছবির মতো। ওই হাসিমুখ একই রকম থাকে যখন জড়োসড়ো বসে থাকা নির্বোধ চোখের এক একটা প্রাণী বার করে আনে। জীবন্ত মুরগীর পালকসহ চামড়া চড় চড় করে ছাড়িয়ে ফেলে। গলাটা কচ করে কেটে ফেলে, গলা তখনও থরথর করে কাঁপে, পা দুটো ঝরঝর করে পড়ে, কাটা গলা থেকে রক্ত পড়ে, লাল বধ্যভূমি থেকে পথে। এখন বেলা বারোটা। অনিমেষের কাঁধে ঝোলা। সত্তর পেরিয়ে বামদিকে এখন ঝুঁকে হাঁটে ছ ফুট চেহারাটা। এই অঞ্চলের পিচ রাস্তা বা গলিতে যত্রতত্র দেখা যায় তাঁকে, পার্টি অফিস থেকে বাজার কিম্বা প্ল্যাটফর্ম।

বোড়াল থেকে গড়িয়া স্টেশনের মাঝের গভীর জঙ্গল পথের ইতিকথা পঞ্চাশ বছর আগের সেসব অনেক দেখেছেন অনিমেষ। অনেক এমন কাটাকুটি খেলা। বড়ো মানুষেরা যখন মার্কস আর নিৎসিয়ান তত্ত্ব নিয়ে চিরে ফেলছে চুল, হারান একপাল গরু নিয়ে ফিরে আসত ঘরে, ওই খালের ওপারে অনিমেষরা চলে আসত  অন্ধকার মাঠটায়। ঝিলের জলে ভাসত চাঁদ। নক্ষত্র মণ্ডিত আকাশের নিচে স্তুপাকার বারুদ থেকে কালো কালো ঘাসের ওপর বাঁধা হতো বোমা, হাতে হাতে পাশ হতো পিস্তল, বাদুড় উড়ত আশেপাশে নিঃসাড়ে। এত আয়োজন কিসের তা আর মনে পড়ে না। তবে অতসী এখনও বৃদ্ধ কৃষ্ণচূড়া পার হয়ে উজ্জয়িনী নবগ্রামের দিকে থাকে বাপের বাড়ির সিঁড়ির ঘরে। আয়ার কাজ করে। পাঁচটা ঝিলের কোণটা যেন, নিশিকুটুম্বের মতো অনিমেষ আকন্ঠ মদ গিলে দলে পিষে ক্ষত বিক্ষত প্রায় ধুক পুক বন্ধ করে ফেলছিল অতসীর। দু মাস হাসপাতালে ছিল অতসী। কারা যেন ভোরের আলোয় ঝিলের ধারে পেয়েছিল। কখনও কখনও কেউ কিছু কেন করে তার উত্তর নেই। ওর নাম অতসী, ওর বয়স উনিশ অনেক পরে জেনেছিল অনিমেষ। অবশ্য না জানলেও ক্ষতি ছিলো না। কয়লা পট্টির স্তুপাকার কয়লার পাহাড় আর ওভারব্রীজের ওপর দিয়ে ঝমঝম আওয়াজ করে এখনও যায় তবে খনিজের স্তুপ গায়েব হয়ে গেছে। উজ্জ্বল আলোর দোকান আর পাশাপাশি মাংস কাটার দোকান সেখানে।

"অনিমেষ কাকু কাল রাতে মারা গেছে ঘুমের ভেতর।" শ্যামল বলল এবং ডানা দুটো কষে ধরে মনোজ স্মিত মুখে বলল, "যাহ একটা কাস্টমার কমল।"

অন্ধকার এখনও নেমে আসছে খালপাড়ে, এখনও রাতের অন্ধকারে অতসীর ছিন্ন বডি পড়ে আ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন