কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৭ |
অপারগতা
চান্ডিলের মোড়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি। সম্ভবত বাসের অপেক্ষায়। রজত খেয়াল করেনি। মেয়েটির পাশ দিয়েই বাইকে যাচ্ছিল। মেয়েটি হঠাৎ বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে হাত তুলল। হেলমেটে রজতের মাথা ও মুখ ঢাকা। চোখ ঢাকা রোদ চশমায়। রজত বাইক থামালো।
মেয়েটি মুখ খুলল, আমি জয়িতা। অনেকক্ষণ
বাসের অপেক্ষায় আছি। শুনলাম, কী একটা গন্ডগোলে খুব কম বাস চলছে। অথচ একটা জরুরি কাজ
আছে রাঁচিতে। যেতেই হবে। আপনি কি রাঁচিতে যাচ্ছেন? তাহলে প্লিজ আমাকে লিফট দিন!
রজত মেয়েটির অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে
বলল, আমি রাঁচি নয়, নামকুমে যাব। ঠিক আছে, আপনি পেছনে বসুন। নামকুমে নেমে আপনি রাঁচি
চলে যেতে পারবেন।
বুন্ডু পেরিয়ে যেখান থেকে পাহাড়ের চড়াই শুরু হয়েছে, শীতের বিকেল ফুরিয়ে দ্রুত সন্ধ্যা নামছে, রাস্তাটা নির্জন, দুপাশে নিবিড় জঙ্গল, আচমকা সেই জঙ্গল ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে এলো চারটি ছেলে। দেখা মাত্র সচেতন হলো রজত। অবাকও হল। কর্মসূত্রে এই রাস্তায় তার আসা যাওয়া অনেকদিনের। দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটলেও অন্য কোনো অঘটনের কথা তার জানা নেই। চারটি ছেলের এভাবে রাস্তার পাশ থেকে উঠে আসা দেখে তার বুঝতে অসুবিধে হলো না, তাদের উদ্দেশ্য কী! ছেলেগুলোর মুখ কাপড়ে ঢাকা। সবার হাতে উদ্যত ভোজালি। সঙ্গে সঙ্গে এক্সিলেটরে চাপ দিয়ে উড়ে যেতে চাইল রজত। পারল না। রজত ও জয়িতাকে টেনে-হেঁচড়ে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেল ওরা।
ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই ঘাবড়ে গেছিল জয়িতা, তার মুখ থেকে কোনো শব্দই বেরোচ্ছিল না। প্রতিবাদে ফেটে পড়ছিল রজত। চারটি ছেলেই নীরব ছিল। একটু পরেই তারা হামলে পড়ল রজতের ওপর। অবিশ্রান্ত ঘুষি ও লাথিতে সে ছিটকে পড়ল মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হলো তার দুহাত-পা। মুখে গুঁজে দিল কাপড়।
রজত এখনও অবিবাহিত। নারীসঙ্গ কখনও করেনি। সন্ধ্যের অন্ধকার ক্রমশ ঘন হচ্ছিল। কোনো কিছুই স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তবু তার মধ্যেই রজত শুনতে পেল, জয়িতা কাঁদছে। কাকুতি মিনতি করছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। চারটে ছেলে কোনো কথাই বলছিল না। ক্রমশ রজত বুঝতে পারল, জয়িতাকে একটু একটু করে বিবস্ত্র করা হচ্ছে। রজত জানে না জয়িতার পরিচয়। জয়িতা বিবাহিত অথবা অবিবাহিত, তাও লক্ষ্য করেনি। একবারই শুধু জয়িতার মুখ দেখেছিল, যখন জয়িতা তার বাইকের সামনে হাত তুলে দাঁড়িয়েছিল।
রাত তখন কত গভীর, বোঝার উপায় নেই। রজত ও জয়িতার মোবাইল, ব্যাগ, পার্স সব নিয়ে চলে গেছে ওরা। তাছাড়া রজতের হাত-পা বাঁধা, তাই মোবাইল থাকলেও তাতে সময় দেখা সম্ভব নয়। একটূ নড়ারও ক্ষমতা নেই। জয়িতা তখনও মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে আছে বস্ত্রহীন হয়ে। হয়তো অত্যাচারে সংজ্ঞা হারিয়েছে। রজত নিজের প্রতি ঘেন্না ও লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল। না, সে জয়িতাকে বাঁচাতে পারেনি। এখনও চারিদিক অন্ধকার। এরপর ভোর হবে। ভোরের আলো ফুটলে জয়িতা জেগে উঠবে। শরীর আবরণে ঢেকে নেবে। রজতের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেবে। তারপর? তারপর জয়িতাকে কী বলবে রজত?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন