ধারাবাহিক উপন্যাস
দ্য ক্লাউড
(তৃতীয় পর্ব)
রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র। তার ভেতরে
রাষ্ট্র। তার ভেতরে সমাজের ছোটো ছোটো মানুষের আকাশ মেঘে মাখানো খেজুর গাছের কান্ড।
এ গাছে উঠতে জানতে হয়। যারা জানে, তারা সরস ভান্ডারের কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। যারা জানে
না, তারা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে এক জীবন দুঃখকে বইতে বইতে প্রথমে বেঁকে যায়। তারপর বাঁকের
মুখে কপাল - এই শব্দটা লিখে সাইনবোর্ড হয়ে লটকে যায়।
গভীর নিম্নচাপের ঝড়ে এমনই একটি সাইনবোর্ড উড়ে এসে নিমচাঁদের বর্তমান ঠিকানা পতাকার লাঠির গোড়ায় থেমে গেলো। প্রথমে লাঠিটা থরথর করে কেঁপে উঠেও আবারও বেশ স্থির হয়ে গেলো। আসলে, শুধু মাটিতে তো আর কোনো বস্তু বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না! সাপোর্ট লাগে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে এই সাপোর্টটা খুব জরুরি। তো, এই মুহূর্তে তেমনই একটি সাপোর্ট - সাইনবোর্ডের ভেতর থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনে নিমচাঁদ বললো, কে গো আপনি?
শুরু হলো কথাবার্তা।
তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন বলতে স্কার্ট-টপ
পরিহিতা একটি কিশোরী মেয়ে নাচতে নাচতে ‘নির্মা, ওয়াশিং পাউডার নির্মা’
বলে দর্শককে ক্রেতা বানানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে নিজেকে জাহির করতো। ততক্ষণে নিমচাঁদ জেনে গেছে, লোকটার পরিত্যক্ত শরীরের নাম
আনন্দ।
নিমচাঁদ বললো, ভাই আনন্দ, সিরিয়ালের
মাঝে ওরকম নাচাকোঁদা দেখে আমি কিন্তু খুব বিরক্ত হতাম। আনন্দ অট্টহাসি দিয়ে উঠতেই
পতাকা দন্ডটি থরথর করে কেঁপে উঠলো। অবাকই হলো নিমচাঁদ-এর লটকানো আত্মা। সে বললো, হাসলে
যে!
হাসছি এমনি না কি! পাচ্ছে হাসি।
তাই হাসছি! এই যে আমার দাঁত বের করা হাসি, এর মূল্য কতো জানো? নিমচাঁদ বললো, তা আমি
কি করে জানবো!
সে মানে, আনন্দ। আনন্দ মানে জৈবনিক
এক প্রক্রিয়া। তবে আনন্দ এখন আর জৈবনিক বিষয়ের মধ্যে পড়ে না। কেননা তার শরীরের বদল
ঘটেছে। সে এখন বিজ্ঞাপন বাজারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পরিত্যক্ত একটি ভাঙা সাইনবোর্ড
ছাড়া আর কিছুই নয়।
দন্ডায়মান পতাকার মাথার ওপরে নিমচাঁদ।
আর পতাকাদন্ডের গোড়ায় ভাঙা সাইনবোর্ডে বয়স্ক, এক হাসিতেই বাজিমাৎ করা লোকটি আনন্দ।
গল্প চলছে। গল্প পাঠে আনন্দ।
শহর জুড়ে, গ্রাম বেষ্টিত রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ জুড়ে একটা বিজ্ঞাপন বাজারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে – ‘হাসিখুশি' বৃদ্ধাবাস এখন আপনার হাতের মুঠোয়। টু-বিএইচকে থেকে ত্রি-বিএইচকে। সঙ্গে সুইমিংপুল, খোলামাঠ, ক্লাবহাউজ ইত্যাদি। বয়স এখন আর আপনাকে একদম ছুঁতে পারবে না। নীচে কনট্যাক্ট নাম্বার সহ ইমেইল ঠিকানা। বিজ্ঞাপনের একেবারে মাঝখানে দাঁত বের করা একটি লোকের হাসির ছবি।
তখন আমি আনন্দ ঘোষ, ঢালাই সেতু
মার্কেটের ফুটপাতে মেয়েদের পোশাকের একটি দোকান করি। সকাল দশটার দিকে মার্কেটে লোকচলাচল
শুরু হলে খদ্দের ধরতে আমি দরজা খোলা এক উন্মুক্ত হাসি দিই। ওই হাসিই যে একদিন আমাকে
প্রভূত বিত্তবান করবে, এ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
(ক্রমশঃ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন