সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৫


সুখপোকা   

-"একী, বই নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? তুমি চুরি করছিলে? ছি ছি!"

সমীর চন্দর খেঁকিয়ে উঠে বলা কথাগুলো শীতের শিরশিরে হাওয়ার মত বিঁধলো শিবুকে। সাদা রঙের মলাটের পাতলা ম্যাগাজিনটা মলিন হয়ে যাওয়া সোয়েটার পরা বুকের কাছে চেপে সাইকেলে চড়ে বসলো। সমীর চন্দর গোডাউনের বাইরেই কটা ম্যাগাজিন রাখা ছিল। কেউ লিটল ম্যাগাজিন মেলায় নিয়ে যেত। শিবু তক্কে তক্কে ছিল। সমীর চন্দ দূর থেকে দেখে দৌড়ে আসতে আসতে শিবু পগার পার।

শীতের দুপুরের রোদ গায়ে মেখে তিতলি শিবুর কুঁড়েঘর আলো করে বসে। হাতে মাধুকরী উপন্যাস। বই ওর মুখে যতটা আলো ফোটাতে পারে আর কিছুই বোধহয় পারে না। শিবু জানে।

হুগলির আটঘরা গ্রামে সবচেয়ে বড় জেলা লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজন এখনো করে তিতলির বাবা।  একটা ম্যাগাজিনও ছাপায়। এখানেই প্রথমবার শিবুর লেখা কবিতা পড়ে তিতলি আলাপ করে এলোমেলো জীবনের এই মানুষটার সঙ্গে। চালচুলোহীন, বাউন্ডুলে টিউশন মাস্টার ছেলেকে পছন্দ ছিল না তিতলির বাবার। অনাথ শিবুর দূর সম্পর্কের পিসি আর মামারা বিয়ে দেয় ওদের। তিতলির পরিবার আজও ক্ষমা করেনি ওদের। শিবু এখন একটা ছোট্ট স্টেশনারি দোকানের মালিক। সংসার, কর্তব্য সামলে অক্ষরেরা শিবুর সঙ্গে লুকোচুরি খেলে । তবুও সেদিন যখন তিতলি ওদের সন্তান আসার সুখবরের সঙ্গে আলো-আলো মুখ  করে বলেছিল, "একটা কবিতা লিখবে আমার জন্যে", শীতের রোদের মতো মায়া ছিল ওর মুখে। সেদিন রাতেই কবিতাটা লিখে অন্য নামে সমীর চন্দর ম্যাগাজিনে মেল করেছিল শিবু। প্রকাশের দিন, সৌজন্য সংখ্যা পাওয়ার সম্ভাব্য সময় সমস্ত কিছু জানিয়ে কয়েক দিন আগেই মেলে প্রতিউত্তর এসেছে "নির্বাচিত।" তিতলির মুখটা ভেসে উঠেছিল। সৌজন্য সংখ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারিনি শিবু। সমীর চন্দ আজও নিজের মেয়ের নামেই ম্যাগাজিনটা চালায়। 'তিতলি'। শ্বশুরমশাইয়ের গোডাউন থেকে নিজেরই সৌজন্য সংখ্যা নিয়ে পালিয়ে আসার সময় তিতলির সঙ্গে শীতের দুপুরে কুলের আচার খাওয়ার মতই অনুভূতি হচ্ছিল শিবুর। কয়েক মাস বাদেই নতুন সদস্য আসবে ওদের জীবনে। তিতলি খুব আচার খাচ্ছে। একটা আচারের বাটি আর নিজের লেখা কবিতার লাইন কটা তিতলির সামনে খুলে দেয় শিবু। ভালোবাসার ওমে জড়িয়ে নেয়। একটা সুখপোকা শিবুকে কামড়াচ্ছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন