কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪ |
প্রসন্নময়ীর হালখাতায় বৃষ্টি
হা কপাল! এটা নাম হলো? প্রসন্নময়ী!
এই ঝকঝকে সময়ে এরকম বেলুনকাঁদানে নাম। কিন্তু এটাই প্রসন্নময়ীর নাম। নামটা বোধহয় বড়ঠাকুমা
জেনেবুঝে খিল্লি করতেই রেখেছিলেন। প্রসন্নময়ীর ভাগ্য জীবন প্রসন্ন হলো কৈ! আউশমালি
গ্রামে ধ্বসে পড়া তিনশো বছরের পুরনো ঠাকুরদালান। চোদ্দপুরুষ তো ট্রাস্টি করে দিল মোড়ের
শিবতলাটা! সতেরো আঠারো কাঠা তো হবেই। বাঘা ঘোগের মতো ঠাকুরদালান আগলে বংশের শেষ সলতে
প্রসন্নময়ী বৃষ্টির অপেক্ষা করে। অবশ্য বৃষ্টি জিনিসটা নিয়ে যাবতীয় নেকুপুশু রোমান্টিকতার
দিন প্রসন্নময়ী পেরিয়ে এসেছে। বৃষ্টি নাববে কোথায়? রথীন বর হিসেবে ভালোই ছিল। অমন পট করে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মরবে কে জানত! তারপর
থেকে তার মনের ভিতর বৃষ্টি আসা বন্ধ। কয়েকটা ছোকরা তার ডবগা বয়স দেখে প্রথম প্রথম ছোঁক
ছোঁক করত। প্রসন্নময়ী পাত্তা দেয়নি। তার বয়স পঞ্চান্ন ছুঁইছুঁই। বৃষ্টিতে ভেজার শরীর
আর মন আর তার নেই। তাই প্রসন্নময়ী বৃষ্টির অপেক্ষা করে বটে কিন্তু মাথার উপর ছাতা খুলতে
ভোলে না। শরিকের উকিলচিঠির উত্তর দিতে দিতে প্রসন্নময়ী অশত্থ বটে ঢাকা ঠাকুরদালান দেখতে
থাকে। এখানে এসেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, রাণি রাসমণি। মা সারদা। প্রসন্নময়ী ছাতা মাথায়
বসে বসে ভাবে, মাথায় চাঙরাটা খসে পড়ে না কেন
প্রসন্নময়ী?
হালখাতা খুলে বৃষ্টির জন্য বসে থাকা ছাড়া এইমুহূর্তে প্রসন্নময়ীর আর কোনও উপায় নেই। রাস্তার ওপর পূর্বপুরুষের দোকানদুটোর ভাড়া আসছে না আর। ওরা পার্টির লোক। ওদের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা তার নেই! হাঁটুব্যথার ওষুধের দাম মাসে পাঁচহাজার। সঙ্গে হাঁপানি, সাপ তাড়ানোর কারবোলিক অ্যাসিড, রেশন। বৃষ্টি কবে আসবে? আজকাল আকাশের বৃষ্টিতে তেমন আর কাজের কাজ হয় না। প্রসন্নময়ীর অন্য বৃষ্টির প্রয়োজন। কীভাবে নামবে সে বৃষ্টি? কিডনি লিভার বেচে লাভ নেই, ডাক্তার বাতিল করবে, ঠাকুরদালান আর বাজারে খাচ্ছে না। প্রসন্নময়ী হালখাতা খুলে ছাতা মাথায় ভাবে। পরজন্ম হয়? যদি হয়, পরজন্মে প্রসন্নময়ী কী কী করবে? ভেনিসে গণ্ডোলা চড়বে? ইতালিতে হঠাৎ সরিয়ে দেবে আঁচল, শিল্পী তার ছবি আঁকবে, প্রসন্নময়ী ছাতা খুলে ভাবে, এ জন্মে নয়, পরের জন্মে না হয় নামুক! তাও কী নামবে না?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন