বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

 দ্য ক্লাউড




কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তার সাথে শরীরে প্রচন্ড অসোয়াস্তি। তবে কি সময় এসে গেছে?  এই যে আমি বলে একটি স্বত্বাধিকারী বিস্কুট। চা-এর কাপে ডুবিয়ে খাচ্ছে যে লোকটা, সে সম্ভবতঃ কবরখানা মাঠের ওপর দিয়ে নেমে এসেছে ঝন্টুর চা-এর দোকানে।

আকাশ ভর্তি কালো মেঘ মাখা লোকটার নাম ধরে নেওয়া যেতে পারে মেঘ। কেননা তার চোয়ালে ছিলো কাঠিন্য। হতে পারে জীবন সংগ্রাম ছাপ ফেলেছে লোকটার চোয়ালে। কপালের নীচে ভ্রুমধ্যস্থল পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবি। কল্পনা করা যেতেই পারে যে, একজন পুরুষ একজন ভালোবাসার নারীকে যে আকাঙ্ক্ষা  নিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, ভ্রুলতা যেন তেমনভাবে কপালের মতো একটা দীর্ঘ মাঠকে আঁকড়ে ধরেছে। আর তার ঠিক নীচেই একজোড়া বন্ধ চোখ। অথচ তার হাতে ধরা ঝন্টুর চা-এর দোকানের কাঁচের গ্লাসের অর্ধেক লাল রং-এর চা। ধোঁয়া হয়ে গেছে চা। গলে গেলো চা-এর মধ্যে বিস্কুট।

এই যে বন্ধ চোখের লোকটা, সে দেখতেই পেলো না, তার গরম চা-এর গ্লাসে গলে যাওয়া বিস্কুট আর চা-এর উত্তাপ কোথায় যেন চলে গেলো!

দূরে দূরে ক্রস চিহ্নিত বাঁধানো সাদা রং-এর  স্থান। এক একটি স্থান এক একটি জীবন। মাটির গভীরে অনন্ত নিবাস। শীতল অনুচ্চারিত সেইসব জীবন।

আকাশে আজ অসম্ভব কালো মোষরঙা মেঘ। মেঘের মধ্যে সাদা পাখিদের আল্পনার মতো উড়ন্ত চলনরেখা। ওপরে, আরও আরও অনেক ওপরে। এরপর পাখি আর নেই। সেই স্থান শূন্য। শূন্য মানে নেই। নেই মানে নেই-ই! তবে কি মোষরঙা কালো মেঘে মিশে গেলো পাখির দল?

লোকটা এতক্ষণে চোখ খুললো। ততক্ষণে তার হাতে ধরা ঝন্টুর চা-এর দোকানের কাঁচের গ্লাসের টুকরোগুলো ধুলোয় বালিতে মিশে আছে।

বজ্রগম্ভীর স্বরে লোকটা, মানে মেঘের থেকে উৎপাদিত একজন জলদ মানুষের চোখের নীলচে মনি থেকে ভাষা বেরিয়ে এলো। সে ভাষার নাম 'সরি'।

সরি অর্থাৎ দুঃখিত। কিসের দুঃখ?  কাঁচ ভাঙার দুঃখ?  কবরের তলদেশে হাজার হাজার বছরের পলি জমা জীবনের দুঃখ?

ঝন্টুর চা-এর দোকানের বাচ্চা কর্মচারীটি বললো, বাবু, লোকটা ভ্যানিশ! ঝন্টু অ্যাঁ করে আঁতকে উঠে হিসেব  কষে কষে বললো - পাঁচ আর পাঁচে দশ আর গ্লাশের কুড়ি মিলিয়ে মোট তিরিশ। গেলো তো সক্কালটা!

ইতিমধ্যে সকালের চা পান করতে আসা খরিদ্দারদের মধ্যে, একদল, লোকটার বজ্রগম্ভীর স্বরে উচ্চারিত শব্দ 'সরি' শুনতে পেয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার লোকটার বসার ধরন আর পোশাক লক্ষ্য করেছিলেন।এইসব মিলে মোস্ট ওয়ান্টেড আর আননোন লোকটা মুখে মুখে সবার কাছে হয়ে উঠলো মেঘমানুষ। সংক্ষিপ্ত নাম মেঘ। উৎপল চিত্রকর খুব ভেবেচিন্তে বললেন, দ্য ক্লাউড। আকাশ বিদীর্ণকারী বিদ্যুৎ চমকালো। কর কর করাৎ করে বাজ পড়লো। যেন খুব কাছেই। চারিদিক আলোকিত হয়ে গেলো। বৃষ্টি নামলো।

(ক্রমশ)


1 টি মন্তব্য: