সিনেমার পৃথিবী – ৩৪
আজ পৃথিবী বিখ্যাত পরিচালকদের নিয়ে
দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে আমরা লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া আর আফ্রিকার পরিচালকদের নিয়ে
কথা বলব। পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিই যে, এই ধারাবাহিকের ৯-১০ পর্বে আফ্রিকা নিয়ে, ২০ নম্বর পর্বে লাতিন আমেরিকা নিয়ে
ও ২৫ নম্বর পর্বে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার সেখান থেকে বা আরো কিছু সংযোজন
করে নিয়ে পরিচালকদের পাঁচালী। অবশ্য এটা ঠিক, যে যে পরিচালককে আমরা আজ কলমের ডগায় আনব,
তাদের সিনেমা নিয়ে কোন না কোন পর্বে আলোচনা হয়ে গেছে। এবং যেহেতু লাতিন আমেরিকা নিয়ে
কথা বলব, তামিল সিনেমার বিখ্যাত চিত্র সমালোচক চারু নিবেদিতা-র কথা আসবেই। ওনার বই
‘Towards a third cinema’। সেখানে উনি লাতিন আমেরিকার পাঁচজন অন্যধরনের পরিচালক নিয়ে,
গ্লবার রোচা থেকে শুরু করে নেলসন পেরেরা দো স্যান্টোস অব্ধি, দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং
দেখিয়েছেন কেন এদের সিনেমা থার্ড ডাইমেনসন ধরতে পেরেছে। বিদগ্ধ চারু নিবেদিতার প্রতি
শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমি যেহেতু এর আগের পর্বেই উল্লেখ করেছি যে পরিচালকদের নিয়ে আলোচনার
সময় স্ট্রেট ব্যাটে খেলব, তাই ওনার বই থেকে কোন পরিচালককে বেছে নিতে পারলাম না। উৎসাহী
পাঠককে বলব, বইটা পড়ুন। উনি আশির দশকের শুরুতে ফিল্ম ফেস্টিভালে লাতিন আমেরিকান ছবি
নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, গোটা হলে মাত্র দুজন দর্শক। আমারও মনে পড়ে গেল,
নব্বইয়ের দশকের শেষে, যখন আমি যাদবপুরে মাস্টার্স করছি, গোর্কি সদনে মুষ্টিমেয় কয়েকজন
সিনেমাপ্রেমীর সঙ্গে ‘ইভান দ্য টেরিবল্’ দেখা। তো, যাই হোক, আমাদের লিস্টে আসা যাক।
১) লাতিন আমেরিকা - এলিসিও সুবিয়েলা
(আর্জেন্টিনা), ফার্নান্দো মিরেলিস (ব্রাজিল), আলফোনসো কোয়ারন (মেক্সিকো), আলেহান্দ্রো
গঞ্জালেজ (মেক্সিকো), গিলের্মো ডেল-টোরো (মেক্সিকো) এবং পাবলো ল্যারেন (চিলি)।
২) অস্ট্রেলিয়া - ফিলিপ নয়েস, পিটার
অয়্যার, বাজ লারম্যান।
৩) আফ্রিকা - উসমান সামবেনে, সুলেমান
সিসে, ডিব্রিল ডায়প মাম্বেতি।
এদের ভেতর উসমান সামবেনে, সুলেমান
সিসে, ফার্নান্দো মিরেলিস, পাবলো ল্যারেন এবং ফিলিপ নয়েস তাদের বাস্তববাদী ও নব্য মানবতাবাদী
ছবির মধ্যে দিয়ে খুব শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন। এদের পরিচালিত যে যে ছবি আলোচনা করেছি,
সেগুলো একবার তলিয়ে দেখলেই বুঝবেন। পিটার অয়্যার ও বাজ লারম্যান যে ধরনের ছবি করেন,
সেগুলো ড্রামা বললে ভুল হয় না। সুবিয়েলা আদ্যান্ত সুর-রিয়েল। মাম্বেতি নন-লিনিয়ার এবং
সিদ্ধান্ত দর্শকের ওপরেই ছেড়ে দেন। ডেল-টোরো দৈত্য-দানব পিশাচ এদের মোটিফ হিসেবে রেখে
কাজ করতে ভালবাসেন। কোয়ারন ও আলেহান্দ্রো জটিল গল্প নিয়ে খেলা করতে ভালবাসেন, সিনেমার
ক্যানভাসে প্রচুর রং নিয়ে তুলি ধরতে ভালবাসেন।
এই সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলার পেছনে
কারণ আছে। এদের সবাইকে নিয়ে তো আলোচনা সম্ভব নয়, তাই কয়েকজনকে মাত্র বেছে নেব। এবং আজ কিন্তু পাঠক, আমায়
পক্ষপাতিত্বের জন্য ক্ষমা করবেন, এই সমস্ত পরিচালকের ভেতর থেকে আমি যে তিনজনকে বেছে
নেব তারা সবাই লাতিন আমেরিকার। হয়ত এর কারণ এটাই যে লাতিন ছবি অনবদ্য, ক্যানভাসে ফুটে ওঠা ছবির
মত, বুদ্ধি দিয়ে ধরতে হয়, ভাল সিনেমাটোগ্রাফি, মোটিফের কাজ এবং গল্প বলার পদ্ধতি এরা
জানে। কিন্তু এইসব ছাপিয়েও লাতিন ছবি সাহসী, প্যাশনেট এবং আমি সাহস পছন্দ করি। এই কারণেই
পারাজানভ আমার হিরো, মখমলবাফ্ আমার হিরো। রাষ্ট্র এদের ধুয়ে দিয়েছে, কিন্তু এঁরা সিনেমার খুঁটিতে এদের সাহসী
হাত রেখে দিয়েছেন, ছাড়েননি। ভালবাসার জন্য, প্যাশনের জন্য যারা জীবনে অনেক কিছু বিসর্জন
দেন কিন্তু কম্প্রোমাইজ করেন না, সেই একগুঁয়ে মানুষগুলো আমার খুব প্রিয়। সে যাইহোক,
আজ আমি বেছে নেব আলফোনসো কোয়ারন, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ এবং গিলের্মো ডেল-টোরো। প্রত্যেকেই
মেক্সিকোর। এরা কি ধরনের ছবি বানান, সেটা একটু পরেই আমরা দেখব। শুরুর আগে শুধু নেরুদার
এই লাইনগুলো মাথায় রাখুন, তাহলেই হবে - I crave your mouth,/ your voice, your
hair/ silent and starving, I prowl/ through the streets.
আলফোনসো কোয়ারন (১৯৬১) ছাত্রজীবন
থেকেই বিদ্রোহী। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, সেখানে সিনেমা বানানো নিয়ে ঝামেলার জন্য
ওনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারপর উনি লাতিন আমেরিকা থেকে পাড়ি দেন উত্তর আমেরিকা।
সেখানে ড্রামা ছবি দিয়ে হাতেখড়ি। এ লিটল প্রিন্সেস (১৯৯৫), গ্রেট এক্সপেক্টেশনস (১৯৯৮)।
আবার ফেরেন লাতিনে। শুরু করেছিলেন ড্রামা দিয়ে, লাতিনে ফিরেই ওনার প্রথম সাহসী যৌন
অ্যাডভেঞ্চার ছবি ‘অ্যান্ড ইয়োর মামা টু’ (২০০১)। সেখান থেকে চিল্ড্রেন অব মেন (২০০৬)
পেরিয়ে গ্র্যাভিটি (২০১৩) এবং রোমা (২০১৮)। ফিল্ম বোদ্ধারা ওনাকে মূলত গ্র্যাভিটি আর
রোমা, এই দুটো ছবির জন্যই চেনেন। আবশ্য হাল্কাচ্ছলে বলতেই হয়, ওনার মা লক্ষ্মীর ভান্ডার
কিন্তু অন্য এক ছবি খুলে দিয়েছিল – হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবান (২০০৪)।
কোয়ারনের ক্যামেরার কাজ নিয়ে কিছু
বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় লং শট, ওয়াইড অ্যাঙ্গল ক্যামেরা এবং ডায়নামিক ক্যামেরা।
খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে বুঝবেন, ওনার অনেক আউটডোর শট হাতে ধরা ক্যামেরা দিয়ে নেওয়া।
এবং কোয়ারনের ছবিতে মোটিফের ব্যবহার অদ্ভুতভাবে আসে। একটা উদাহরণ দিই। সবাই বলে গ্র্যাভিটি কল্প-বিজ্ঞানের ছবি। আমি নিজে
ফলিত বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক-বৈজ্ঞানিক হয়েও সবিনয়ে বলছি, এই ছবি প্রাথমিকভাবে একটা
মনস্তাত্তিক ড্রামা। কি করে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকা যায়, সেই নিয়ে। মহাকাশের মধ্যে
ধবংসস্তূপ আর পাথর দিয়ে তৈরি মোটিফ। মূলত প্রতিকূলতা। মার্ফি’র সূত্র – anything
that can go wrong, will go wrong. অনিশ্চয়তা তৈরির জন্য সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ ধারণাগুলো
উল্টে পাল্টে দেওয়া, পৃথিবীর উষ্ণ নীল আর মহাকাশের ঘন কালো – এই দুয়ের মিশেল। এবার আসুন ওনার অন্য ছবি রোমা-য়। সাদা কালো
এই ছবি নিয়ে আমি ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। তবুও বলি। এর ক্যামেরার কাজ দেখুন। মনে হবে
জীবনীশক্তিতে ভরপুর। আবার ক্যামেরা হঠাৎ ফ্রিজ করিয়ে দিয়ে পরিচালক জীবনের স্মৃতির কিছু
ফ্রেম যেন বাঁধিয়ে দিলেন। শুধু ভাল গল্প বা ড্রামা বা ইমোশন নয়, মনে হবে ক্যামেরাও
যেন ঘুরে ঘুরে জীবন দেখাচ্ছে। এখানেই কোয়ারনের বিশেষত্ব। ক্যামেরাও সজীব, প্রাণবন্ত,
আমাদের মতই গতিশীল।
আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু
(১৯৬৩) প্রথম তিনটে ছবি নিয়ে ডেথ ট্রিলজি বানিয়েছিলেন – লাভ ইজ আ বিচ, 21 গ্রামস, ব্যাবেল।
যেবার লাতিন আমেরিকা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, বলেছিলাম। সেখান থেকে ওনার উত্থান বিউটিফুল
(২০১০), বার্ডম্যান (২০১৪) ও রেভেনান্ট (২০১৫) অব্ধি। বাকিগুলো ভুলে গেলেও, শুধুমাত্র
বার্ডম্যান সিনেমার জন্য ওনাকে স্মৃতির মনিকোঠায় রাখতেই হবে।
এক বর্ষীয়ান অভিনেতা যখন ব্রডওয়ে
থিয়েটারে ‘what we talk about when we talk about love’-র নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করার মধ্যে
দিয়ে নিজের কেরিয়ার পুনরুদ্ধার করতে চান, করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে ধাক্কা খান, কিন্তু
হাল ছাড়েন না, সেই নিয়ে বার্ডম্যান। দু’ঘন্টার সিনেমা। এই ছবি ন’খানা আলাদা বিভাগে
অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিল। বিভিন্ন দিক থেকেই একে সেরা ছবি বলা হয়েছিল। কিন্তু আমার
সবথেকে ভাল লেগেছে ওপেন এন্ডেড শেষ। যা থেকে দর্শক নিজের মত সাজিয়ে নিতে পারে, নিজের
মত ব্যাখ্যা করে নিতে পারে। সেটা আলেহান্দ্রো নিজেও বলেছেন –‘at the ending of the
film, it can be interpreted as many ways as there are seats in the theatre’। একটা
বিভ্রান্তি, এক বিক্ষিপ্ত ক্যাওস, যা সারা সিনেমা জুড়ে। সেটাই এই ছবির ভারকেন্দ্র।
ফলে সিনেমা কখনো বাস্তব ট্র্যাকে, কখনো সুররিয়েল, কখনো ম্যাজিক-রিয়েলিজম। অভিনেতার
ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবন মিলেমিশে যাচ্ছে। বাবা-মেয়ে, যে দুজন ঐ নাটকের সহ-লেখক,
যেভাবে কথা বলছে এবং তাদের অনেকটা একরকম অভিজ্ঞতা তুলে আনছে, পরিচালক দক্ষতার সঙ্গে
তুলে ধরেছেন, কিন্তু সেটাও বিক্ষিপ্ত। আমার মনে হয়, ভুল হবে না যদি একটা রেখা আঁকি ফেলিনির ‘8-1/2’ এবং আলেহান্দ্রোর বার্ডম্যানের
ভেতর। দুটোই শিল্পীর যন্ত্রণার ক্যানভাস নিয়ে তৈরি। কিন্তু বার্ডম্যানকে একটু এগিয়ে রাখতে হবে
যেহেতু এখানে ক্যানভাসটা জটিল। শিল্পীর স্বপ্ন, উড়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ভাঙা,
প্রশংসা, হতাশা, আক্রোশ, এবং পুরটাই বিক্ষিপ্ত। ভাবুন, এক শিল্পীকে ফলো করে ক্যামেরা
স্টেজের পেছন দিক থেকে দৌড়ে নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায়, আবার একদৌড়ে স্টেজের পেছনে।
অদ্ভুত। পাঠককে বলব, আলেহান্দ্রোর আগের ছবিগুলোও মনোযোগ দিয়ে দেখতে। এই যে ক্যামেরার
অস্থিরতা এবং এক বিভ্রান্তি থেকে ছবির ওপেন এন্ডেড হয়ে যাওয়া, এটাই আলেহান্দ্রো। কিন্তু
সূক্ষ্মভাবে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়।
গিলের্মো ডেল-টোরো (১৯৬৪)–র ফেভারিট
বিষয় হল রূপকথা ও ভয়। শুরু করেছিলেন ক্রোনোস (১৯৯৩) দিয়ে, তারপর মিমিক (১৯৯৭), হেলবয়
(২০০৪), প্যান’স ল্যাবাইরিন্থ (২০০৬) –এর মত অদ্ভুত ছবি, প্যাসিফিক রিম (২০১৩), দ্য
শেপ অব ওয়াটার (২০১৭) হয়ে পিনোক্কিও (২০২২) অব্ধি। ওনার দৈত্য দানবের প্রতি অবসেশন
এতটাই যে তারাই প্রতি ছবিতে বারবার ঘুরে ফিরে আসে। তাদের কিছু একটা দিয়েই মোটিফ তৈরি
হয়। এবং খুব ভাল করে খেয়াল করে দেখবেন, দৈত্যরা সমাজের কোন না কোন এক দিক তুলে ধরে।
ওনার স্প্যানিশ ছবি প্যান’স ল্যাবাইরিন্থ নিয়ে ৬ নম্বর পর্বে লিখেছিলাম। আজ শেপ অব
ওয়াটার-কে মাথায় রেখে ওনার বিষয়ে কিছু কথা।
আপনারা এটা জানেন যে শেপ অব ওয়াটার
১৩টা অস্কার নমিনেশন পেয়েছিল। একটা রূপকথা বা দৈত্য-দানবের গল্প কোন পর্যায়ে গেলে এটা
হতে পারে, সেটা নিশ্চয় বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না। এবং ঐ যে একটু আগে বললাম, ডেল-টোরোর
নিজের মুখে শুনুন – this movie is a movie about our problems today and about
demonizing the other and about fearing or hating the other, and how that is a
much more destructive position than learning to love and understand. অর্থাৎ দৈত্য
দানব ভয় অন্ধকার কালো জাদু মায়া... এগুলো সব
আসলে মেটাফোর, সমাজের কিছু দিক দেখানোর জন্য। ডেল-টোরোর চুম্বকের মত গল্প বলার ধরন
বা স্যালি হকিন্সের দারুন অভিনয়, এগুলো ছাড়িয়েও কিন্তু শেপ অব ওয়াটার আরেক জায়গায় অনবদ্য
– প্রতি সিনের ডিটেলিং। এমনভাবে প্রতি সিন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, আপনি বুঝতেই পারবেন না
এটা বাস্তব না পরাবাস্তব। আর ঠিক এই ব্যাপারটাই আমি ডেল-টোরোর সব সিনেমায় দেখেছি। শেপ
অব ওয়াটার-এর গল্প নিয়ে আমি খুব একটা উৎসাহ দেখাব না, কারণ এক উভচর প্রাণী যাকে আমাজনের জঙ্গলে দেবতা হিসেবে পূজো করা
হত, তাকে ধরে এক ট্যাঙ্কে নিয়ে আসা হয়েছে এক রিসার্চ সেন্টারে, তার ওপর পড়াশোনা করার
জন্য। আর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এক বোবা মেয়ে। দ্য ব্রাইড অব ফ্যাঙ্কেনস্টাইন (১৯৩৫)
থেকে শুরু করুন, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৪৬) হয়ে একদম কিং কং (১৯৭৬) অব্ধি। সেই
জন্তু আর মানুষের আকর্ষণ। কিন্তু এখানে গল্প বলার ধরনটা ভিন্ন। এবং ভিন্ন প্রেক্ষিতে। ফলে এখানে স্টিরিওটাইপ ব্যাপারটাকেই
চ্যালেঞ্জ করা হল। একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল অনেক রকমের ধারা। এই চুম্বকের নাম ডেল-টোরো।
তবে হ্যাঁ, উনি যেহেতু ক্যাথলিক ঠাকুমার কাছে মানুষ হয়েছেন, ওনার প্রায় প্রতি ছবিতেই
ক্যাথলিজমের প্রতি একটা টান দেখা যায়। একজন সমালোচক হিসেবে এইসব কুসংস্কার আমি এড়িয়ে
চলব। নো কমেন্টস্।
সবশেষে বলি, ডেল-টোরোর আরেক বিষয়
আমাকে প্রবলভাবে টানে। আপনারাও শুনলে চমকে উঠবেন। ওনার সংগৃহীত বই আর কমিক বইয়ের সংখ্যা
এত যে, সেগুলো রাখার জন্য মেক্সিকোয় ওনার একটা আলাদা বাড়ি আছে। এরপরেও আর কিছু?
আজ যদি এদের তিনজনের পর আর কারো
ছবি আলোচনায় আনতাম, তিনি ডিব্রিল ডায়প মাম্বেতি। সেলুলয়েডে নন-লিনিয়ার কবিতা এভাবে
আর কতজন, মনে করতে পারছি না। দুর্ভাগ্য, মাত্র দুটো পুরো দৈর্ঘ্যের সিনেমা বানিয়েই
উনি ফুসফুসের ক্যানসারে মারা গেলেন (সেই দুটো ছবিই কিন্তু, পাঠক, আমি আগে আলোচনা করেছি)।
নইলে, হয়ত, আমরা নেরুদার মত এইরকম আরো কিছু সেলুলয়েড কবিতা ওনার ক্যামেরা থেকে পেতাম
– I want to do with you/ what spring does with the cherry trees.
(ক্রমশ)