শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মৌ চক্রবর্তী

 

দর্শক বসতে লক্ষ্মী বনাম একটি নাট্য-প্রযোজনা

 


তৃতীয় ঘণ্টি বাজতেই শুরু হয়ে যায় নাটক, মানে নাট্য প্রযোজনা মানে নাট্যাভিনয়। শুদ্ধ তাত্ত্বিকবর্গের হলেই নাটক নাকি নাট্যকলা নাকি থিয়েটার এসব নিয়ে আলোচনা চলে। সঙ্গে সঙ্গে হরির দোকানের চা আর চা শেষ। নাট্যপ্রেমীদের তিন নম্বর বেলের সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ু সিধে। এবং মনোসংযোগ। দ্বিতীয় বেল বা তার আগেই তো ঢুকে যেতে হয়। বা হত কিছুকাল আগেও। মানে একুশ শতকের শুরুর দিকেও এটাই ছিল থিয়েটারে ঢোকার নিয়ম। এখন কি তবে নিয়ম উঠে গেছে? নাকি অতিমারি বিধি মেনে আসিয়ে দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ। আগে হলে তো অন্যান্য দর্শক এভাবে কথ্য- খোঁচা দিতেন যেন, এটা গর্হিত কাজ হল। নাটক শুরুর পর আর আসা চলে না। ঢোকার মুখেই বলা হবে যে, শুরু হয়ে গেছে তো। কেন এত দেরি করেন? বা, অপেক্ষা করুন বলব কখন ঢুকতে পারবেন। সবমোট কথা হল গিয়ে, ঢোকা আর নিজের হাতে নেই। এদিকে তো শো-এর ইন্টারভ্যাল বা মধ্য- বিরতিতেও বাকি থেকে যেত আরও ভ্রূ-কুঞ্চিত মুখের টিপ্পনী। যারা মুখে কিছুই না বলেও বলেন, এটা তাদের অস্ত্র। পাশে বসেও তারা যে একই গোত্রের ভাবছেন না, সেটা বুঝিয়ে দিতেন। নিখুঁত অভিনয়ে।  এরাই হলেন থিয়েটারের নিয়মিত দর্শক এবং পৃষ্ঠপোষক। অভিনয়টাও করতে পারেন প্রয়োজন মতন। এরকম ঘটনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। নাটকের শেষে আর না তাকিয়ে অপরাধ বুকে সরে পড়া। না, এসব চোখে পড়ছে না। এখন আবার, গেটে কেউই আটকাচ্ছেন না, ফলে সিনেমা হলের মতন কিছু কুরকুরে দর্শক আসছেন। যাদের প্রবেশ অবাধ, মিনিট পনেরো পরেও ঘটে। প্রবেশের নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র এই প্রাবন্ধিক বা প্রবন্ধের উপরই নির্ভরশীল। এখন কি দর্শক এতটাই দুল্রভ? এখন দর্শক মানে নাটকের চলা না-চলা? মানে থিয়েটারের হালফিল অবস্থাতে দর্শকের অস্তিত্ব লক্ষ্মীতেই?  

তাহলে এতক্ষণে বোঝা গেল এ নাটক নিয়ে লেখা। আবার নয়ও। ফলে,  প্রথমেই শুদ্ধ করে নেওয়া গেল যে, থিয়েটারের দর্শক মূল লক্ষ্য। সন্ধ্যা সাড়ে ছটা। বাজল বেল। পর্দা খুলে গেল। বড় দলের নাটক। অতিমারির পর শো-এর সময় আবার আগের সময়ে ফিরেছে। একাডেমী আবার দর্শকের ফুরফুরে গন্ধে ম ম করছে। মানে একটি বহুদিনের চর্চা করা গ্রুপ থিয়েটারের শো। প্রস্তুতি চূড়ান্ত। আশপাশে আর একটা করে আসন ফাঁক রেখে বসতে হচ্ছে না। এবং প্রায় ভর্তি পেছনের দুটো রো বাদে। আর সামনের সারিতে যেমন খালি থাকে। আর বাম দিকের রো-গুলো তো একেবারেই দলের সংগঠনের সদস্যদের জন্যে। দেখে ভাল্লাগে। দেখে মনেহয় ওয়েবসিরিজের বিরতিতে কিছু দর্শক এসেছেন। বা এখনও থিয়েটার দেখতে যাচ্ছি স্ট্যাটাস যেন সংস্কৃতির উঁচুমাচান। সেসব ভেবে, বেশ লাগছিল। ঠিক পেছনের রো থেকে কুরকুর মুরমুর শব্দ। ভাবলাম, ও কান বাজছে। আবার, আবার, বন্ধ হচ্ছে আবার হচ্ছে। মঞ্চে তখন মিনিট পনেরো হবে কলাকুশলীরা চুটিয়ে অভিনয় করছেন। এবং, যে নাটকটি অভিনীত হচ্ছে তার শুরুয়াত হয়ে গেছে। অর্থাৎ, নাটকের ভাষায় যাকে বলে এক্সপজিশান, তা ঘটেছে। সব চরিত্ররা দর্শককে জানাতে পারছেন যে কেন তাঁরা উপস্থিত হয়েছেন। সংলাপ চলছে। আলো পড়ছে দুই বৃত্তে দুই অভিনেতার মাথা বেয়ে মঞ্চে। উনিশ শতকের প্রেক্ষাপট, একেবারে গোঁড়ার দিক। ওই সময়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে অতীতকালের একটি মেয়ে তাঁর কথা বলছে নিজের মতন করে। আটপৌরে পোশাক। মুখে নরম ভাব। ওদিকে ডাক্তারি করতে এসেছেন ডাক্তারবাবু এবং তাঁর সঙ্গীরা। এই মুহূর্তে মঞ্চে এক বিধবার শেষযাত্রার সময়। যখন একদিকে নামসংকীর্তন করতে হাজির দলসহ ব্রাহ্মণ্যবর্গ।  ডাক্তারকে চিকিৎসা করতে দেবেন না পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য। এবং, তারই মধ্যে একটু বুঝতে হচ্ছে, মঞ্চে গোটা দশ চরিত্র কে কি করছেন একই সময়ে। দেখতে হচ্ছে খুঁটিয়ে কে কোন আলোয় খেলছে। ওদিকে দুটো হলুদে হলুদে কথা। আর ডাক্তারবাবু ধমকাচ্ছেন রোগীর বাড়ির লোককে। এরই মধ্যে একদল মাতব্বরি করে বিধবার নাড়ি টিপে চিকিৎসার বিরুদ্ধে সোচ্চার। বোঝা গেল যে, এখানে সমাজকে দেখানো হচ্ছে। দ্রুত লয়ে তারই সঙ্গে পিছনের সারির আসন থেকে চিবিয়ে খাওয়ার শব্দ। অবশ্যই তালজ্ঞান নেই। এসব কি একুশ শতকের দর্শকের ভাবলেশহীন খাদ্য? যে তিনি বা তারা বেমালুম চিবিয়ে যাচ্ছেন জোরকদমে। জিহ্বার টঙ্কারে কে ভাই আপনি? এভাবে সশব্দে খাচ্ছেন? তাও আবার একাডেমির ভেতরে। তাও শো চলার সময়ে। তাও আবার মঞ্চের মেয়েটি যখন ঘোষণা করছে, আমার পড়তে খুব ভাল্লাগে। আমি ডাক্তারি পড়তে চাই। উনিশ শতকের ওই মেয়েটি পায়ে ধরে ফেলেছে তখন। আর একুশ শতকের দুই সাজগোজ করা কন্যে-দর্শক বোদ্ধার ভঙ্গিতে চিবিয়ে নিচ্ছেন রসবোধ। এখন এই অবস্থায় ওদিকে নাটকের দৃশ্য সংলাপ এদিকে দর্শক খাচ্ছেন সশব্দে। চারদিকে খুঁজলাম আড়চোখে নেই, সেই সংশোধনকারী দর্শকদের কেউই নেই।

এমন সময় মনে এল উনিশ শতকের কথা কেন দেখাচ্ছেন নির্দেশক। কেন লিখেছেন নাট্যকার? আর কেনইবা অভিনয় করতে যোগ দিয়েছেন এই সময়ের শিক্ষিত কলাকুশলীর দল। সেটা তো আর আদপে একুশ শতকের নারীদের সমস্যা নয়। দেখতে দেখতে তাই কি লঘু লাগে? এসময়ে একুশ শতকের দর্শকের খিদে পেলে আশ্চর্য লাগার কিছুই নেই। তবে, এও হতে পারে যে, এরকম ভাবার কিছুই নেই। এটা একটা অভ্যেস। যেমন ঘরে বসে হোম-থিয়েটারে দেখতে দেখতে চিবিয়ে যেতে হয়। খাদ্য শুধু তো খিদে নয়, খাদ্য তো এক অভ্যেসের মতন খেতে থাকতেই হয়। না পড়লেও চলে, কিন্তু না খেলে চলে না। আর না থিয়েটার দেখলেও চলে। কিন্তু না খেতে পারলে চলে?  তাছাড়া ভাবনার সূত্রটিই তো নেই যে, পরিবারের বড়কর্তা, বা সমাজ রক্তচক্ষু দেখাবে। সেদিনের সেই যৌথ পরিবার তো নেই। ফলে, অভিভাবকের সংখ্যা কমে গেছে। পড়াশোনা তো করতেই পারা যায়। এবং, এখন দিন নাগালে, যেমন খুশি সাজো। সেইজন্যে আর অন্য মেয়েদের দুঃখ চোখে পড়ে না। অন্তত উপস্থিত দর্শকদের এই সমস্যা স্পর্শ করে না। এসব উদ্বায়ী সমস্যা দেখলে সিনেমা বা গপ্প ফাঁদা উপন্যাস বলে মনেহয়। মাপা আলোয় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম। না কোনও ফল হল না। মনেহল, ওই আগের দর্শকদের মতন অভিনয় পারলাম না। ফলে কুরকুর চলল। এসব, মনে করতে করতে নাটকের অনেকটাই হয়ে গেল। একটি মৃত্যু, সমাজের সংকট এবং গৃহহীন সমস্যা, বাল্যবিবাহ, বৃদ্ধের সঙ্গে বিবাহ -- তবু দর্শক খেয়ে চলেছেন। রো এফ, সিট নাম্বার ৩২ আর ৩৩। কে ছিলেন সেদিনের দর্শক। হলদে আলো সারাটা মঞ্চে পড়লে নাটক ছেড়ে ওনাদের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আবার দেখতেই হচ্ছে। ওদের ঠিক সামনের সারিতেই বসেছি কিনা ভাগ্যক্রমে। তাই, বারবার ফিরে যাচ্ছি পেছনে। পেছনে যখন ফিরলামই তখন নাটকের ইতিহাসেও যাই।

লেখা রয়েছে যে, উনিশ শতকে থিয়েটারের দর্শক ছিলেন, খানাপিনা করিয়ে বাবুর দল। রঙ্গালয়ের ভাষায়, তারাই লক্ষ্মী। কারণ, টিকিট কাটেন। আর থিয়েটার দেখেন কি? সেটা কথা নয়। একটা কোম্পানির মালিকানার যোগ্যতা যার তিনিও তো থিয়েটার দেখেন না। শুধু টাকা ঢালেন। আর এ তো মাত্র একটা আসন। হলের মালিকের খোঁজ করেন কত মুনাফা হল। এসব তো প্রথমদিকের বাবু-দর্শকের কথা। পরের দিকে, শুদ্ধাচারের আদর্শে, ভাল নাটক করব, ভাল করে করব- ভাবনা নিয়েই থিয়েটার।

এত নাটকের মধ্যে দেখতে যাওয়া নাটকের কথাটি লিখছি পরে। তার আগে বুঝিয়ে দিই কিভাবে অব্যক্ত ক্রোধ চাপা রেখে এই নাটকটি দেখলাম। নাটকের মুন্সিয়ানা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। আর দর্শকের মুন্সিয়ানা, নাটক দেখায়।

এখন, ওই দুই দর্শকের প্রতি জিজ্ঞাসা যে, আপনারা কি টিকিট কেটে এসেছিলেন? কোথা থেকে এসেছিলেন? নাটক করেন তো বোঝাই যাচ্ছে। কোন দলে? আচ্ছা, তবে থিয়েটার ভালই জানেন। তাহলে, নিয়ম আদর্শ আর কিছু জানেন বা শুনেছেন দলের সদস্যদের কাছ থেকে? আচ্ছা, থিয়েটার নিয়মিত দেখেন? আর কুরকুর করে প্লাস্টিকের শব্দে আগের পরের রো-এর দর্শকদের বিব্রত করেন? আর থিয়েটারের কিইবা পাওনা। শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ওসব সমস্যা তো কবেই মিটে গেছে। ফলে দর্শক হল গিয়ে দর্শক। যিনি হলে খেতে খেতে সিনেমা দেখার প্রাথমিক কর্তব্যটি পালন করেন। যিনি সিন্থেটিক কালচারের প্রতিনিধি হয়েও সংস্কৃতির পৃষ্ঠে পোষক তা করেন। সুবেশ ধারণ করেন। কলকাতাকে ঝঞ্ঝাটের শহর বলে দোষী করেন। এবং মুঠোফোনটি হাতে ধারণ করেন কলমের মতন। এবং যিনি সেই কারণেই থিয়েটার দেখেন, যে এটাই কালচার এখনও পাড়ায়। এখনও সমাজে থিয়েটারে টিকিটের দামি টিকিট নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি দর্শক যিনি এই দামি টিকিট কেটে,  লাইভ হতে হতে মঞ্চে থুড়ি থিয়েটারে প্রবেশ করেন। এবং খেতে দোষ কিসের? এই তো গানের দল শো করছিল রবীন্দ্র সদনে। সেখানেও খাই? না তো। এমনকি থিয়েটার করতে আসা দলগুলোর প্রতিও এই একই নিষেধাজ্ঞা ও অনুশাসন মেনে চলতে হয়। কিন্তু কবিতা বলতে গেলেও যে খাই? তার বেলা? তবে থিয়েটারে কেন নয়? আর যেখানে হলে পানীয়, খাদ্যদ্রব্য নিয়ে ঢোকা বারণ লেখা, সেই কবে থেকেই। তবে, বুঝি দেরি হয়ে গেছিল বা যায় রোজই, তাই ওসব লেখায় চোখ যায় না। কতটা সহ্য ক্ষমতা থাকলে এরকম লেখা যায়, সেটা ভেবে দেখবেন মাননীয় পাঠককুল। এটা লেখা মানে তো, নাটকের দৃশ্যের মতন ফের ফের ওসব মনে করা। আর মস্তকে জ্বলুনি। তবুও, ঋণী সেই দর্শকেরই কাছে। রবি ঠাকুরের চেনা কবিতার প্যারোডি করে বলা যায় যে, ' থিয়েটার দেখতে এসেছ যত, ঋণী তত করেছ আমায়।' তবে, তারপর আর হে বন্ধু বিদায় বলার সাহস রাখি না। দর্শক শূন্য মানে শিল্পীর কৃতিত্বে হাততালি কে দেবেন।

হে দর্শক, হে থিয়েটার তোমাদের পরিপূরকতা তো সর্বজনবিহিত। এবং, বেশ ঘটনা দ্বারা সমাদৃত। যেমন, অত অচ্ছেদ্দা করলেও গোলাপসুন্দরী হলেন অভিনেত্রী, নাট্যকার এবং থিয়েটারের ম্যানেজার। যেমন, বিনোদিনী বানালেন স্টার। লিখলেন আত্মজীবনী।  হে দর্শক, আপনাদের জন্যেই তো বিনোদিনী, গিরিশবাবুর প্রিয় ছাত্রীর বিনোদ বি- থিয়েটারটি হতে পেল না। তাহলে? দর্শক কত গুরুতর ব্যাপার সেটা তো জানেন। ক্ষণিকের বিনোদনের জন্যে একই পাড়ায় পাল্লা দিয়ে নাট্যশালা। উনিশের বঙ্গনটীদের নিয়ে কে কোন নাটক নামাবেন সেই মতন ছক কষা। থিয়েটার পুড়িয়ে দেওয়া। আবার বঙ্কিমচন্দ্র মহাশয়ও তো দর্শক হয়ে এসে বলে গিয়েছিলেন যে, অভিনেত্রীর সার্থকতা এখানেই যে, এমন চরিত্র তিনি লেখেননি। আবার দর্শক-রামকৃষ্ণ তো নিমাই-সাজের বিনোদকে আশীর্বাদ করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা এও যে, অভিনেত্রী নেওয়ার আগে পর্যন্ত বিদ্যাসাগরমশাইও তো বিধবা বিবাহ-এর নাটক- প্রযোজনায় উৎসাহী ছিলেন। তিনি নিয়মিত দেখতেন থিয়েটার। কারণ তো সমাজের চেতনা জাগান। অর্থাৎ, দর্শকের চেতনা সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফলে, দর্শকের দিকেই পাল্লা ভারি কিনা। তাই, এরপরের আলোচনা ফের দর্শক নিয়েই। এই দর্শকের জন্যেই তো একসময় বাংলা মঞ্চে নটীদের আসা। নাট্য-প্রযোজনা নিয়ে মাতামতি, দর্শক টেনে আনতে একদল পাখা দেয়। তো অন্যদল বাড়িতে গাড়ি পাঠায়। একদল থিয়েটারের দর্শক না হয়েও গিরিশচন্দ্র ঘোষ মশাইয়ের প্রয়াণসভা করে, তখন দর্শকদের সামনে সভায় বলতে দেওয়া নিয়ে সোচ্চার হন একদল অভিনেত্রীরা। এসব নটীদের কৃতিত্ব, মাইনে, বাজার তো দর্শকের আনুকুল্যেই সম্ভব হয়ে থাকে।

হে পাঠককূল, বিব্রত, কুণ্ঠিত উত্তেজিত হয়ে ওঠার এই কৃতিত্ব তো দর্শকেরই। এবং এই লেখার প্রেক্ষাপট দর্শক সমীপেষু। যারা সতত খুঁচিয়ে ভেতর থেকে জমে থাকা বোধ, সংস্কৃতি, ভাবা, ভাবনা আর থিয়েটারের দর্শক হয়ে ওঠার যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলোকে নিরীক্ষায় ফেলেন। এমন নাট্যের ভুবনে থিয়েটার সতত ঋণী করে রাখে আপামর সেইসব দর্শকের কাছে। যাদের জন্যে বাংলা থিয়েটার, হল, মঞ্চের ধারকাছের ব্যবসা  চলে। চলে হলের কাছাকাছি দাদাদের চপ, শিঙাড়া, ঠাণ্ডা আর জলের বিক্রি। চা বিক্রি করে সংসার চলে বাবুদার। আর একঘরে থাকা ছেঁড়া জামা ঠ্যাঁটা মেয়েটারও বেলুন বেচা চলে। চলে একাডেমি। চলে থিয়েটার ব্যানার, ফেস্টুনওলাদের ব্যবসা। গাড়ির রাখার ঠিকে জায়গাওলাদের ব্যবসাও চলে। এতসব চলে বলেই তো একাডেমি চলে। আর অভিনয় চলে।

একাডেমির গেটে কর্তব্যরত আলমদাকে জিজ্ঞেস করলাম, দর্শক মানে কিরকম বুঝঝ? হেসে বললেন, ভাল। খুব ভাল। আজকাল ভিড় খুব। আর দর্শক যে ভেতরে ঢুকে থিয়েটার চলাকালীন খেয়েই চলেছে? তার বেলা? কে যেন বললেন, তবুও দর্শক তো। যারা আসছেন মুঠোফোন নিয়ে, মানে অর্থ খরচ করতে পারবেন। আর তারা খাচ্ছেন, কি আর করা যাবে, বাঁচতে হবে তাই খাচ্ছেন। এবারে শব্দটা খুব বেশি হলে? তখন যেমন ওই অভিনয় থামিয়ে সীমা মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাজিয়ে নিন, থামালে বলবেন, তারপরই অভিনয় করব।

এবারে, খাওয়ার শব্দে বলি, হে দর্শক, চিবিয়ে নিন বস্তু ও খাদ্যবস্তু, না-হয় তারপরই থিয়েটার করব ইত্যাদি।

ইতি

একুশ শতকের ফ্ল্যাশব্যাক সত্ত্বাধিকারী 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন