সমকালীন ছোটগল্প |
ছোট ঘটনা
ছোট ঘটনা! ছোট ঘটনাটা কোথায় ঘটেছিল ঠিক জানা নেই। তবে পুরো সাড়ে তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলে, মিতালি যে কথাটা বলেছিল তা হল 'সংঘ'। বৌদ্ধ।
যে
সময়ের কথা হচ্ছে, সেই তখন এ বঙ্গদেশে কে অমর্ত্য সেন? কে শঙখ ঘোষ বলার সময়। রাস্তা
জুড়ে শুধুই উন্নয়ন! বোলপুর থেকেই প্রতিবিপ্লবের সূচনা হচ্ছে 'চড়াম চড়াম ধ্বনি মাধুর্যে।
তখনও বাজারে কোভিডও আসেনি, ওটিটিও। মধ্যবিত্ত বাঙালি চৌকো জলসাবাক্সে তখন রাখি-বন্ধন
দেখে। তা মিতালির কথায় আশপাশের লোক বুঝলো, এ হয়ত নতুন কোনো মেগা সিরিয়ালের নাম। 'মিতালি
সংঘ'। ছেলেটির নাম সংঘ, আর মেয়েটি অবশ্যই মিতালি! মানুষ যেমন ভেবে আনন্দ পায়।
চারদিনের
মাথায় মিতালি অনুভব করল জ্বালাপোড়া, ভীষণ জ্বালাপোড়া। টয়লেট করার সময় আর কি! সাথে রক্তও! ভয়ে চিৎকার করে উঠলে, সরকারি অনুব্রতী বুঝিয়েছিল,
'ছোট ঘটনা'! এমন হয়। তাও তো তোমার তেমন কিছুই হয়নি। আমাদের পুব পাড়ার, রেবার তো...
মন দিয়ে রুদ্র শিবকে ডাকো। মিতালি অবশ্য ডাকেনি। কেবল অস্ফুটে আবার বলেছিল, লিঙ্গ!
পরদিন
শিবরাত্রি। সে কথাই হয়ত বলছে মিতালী।
পাশের
বেডের অনুব্রতীর সাথে কথা হচ্ছিল মিতালির অনুব্রতীর,
হ্যাঁগা,
তা মিতালির অপরাধটা কী?
-
ওই যে জিনস, ছোট টপ পরত।
সেদিনের
ছোট ঘটনার চারদিন পরও মিতালি কাহিল হলেও, মিতালির সব কিছুই ছিল বড়। স্বপ্ন বড়, সাহস
বড়, বলা ভালো দুঃসাহসই (লোকে তাই বলত), কেবল টপটা ছোট বলেই?
-
আরে, ওর বয়সটাও তো দেখতে হবে!
-তার
মানে ওর বয়সটাই অপরাধ?
-
নয়ত কী? যে বয়সে মহিলাদের স্বামী-পুত্র-কন্যা নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করে। ছুটিতে
দীঘা-পুরি-দার্জিলিং বেড়াতে যায়, সেই বয়সে কেউ অমন ধিঙ্গির মত সেজে ঘুরে বেড়ায়!
-
বুঝলাম, সাজাটাই অপরাধ?
-
না, তা কেন! সাজুক। সাজেরও তো কত রকম ফের আছে। ও খুব উগ্র সাজত। আরে ওই যে সোনাগাছির মেয়েরা যেমন সাজে!
-
সোনাগাছির মেয়েরা বুঝি অপরাধী? পুলিশ যে ওদের সামনে দিয়েই ঘোরাঘুরি করে, ধরে না তো!
-
নয়ত কি, রাত দুপুরে অমন ছেলেধরার মত ঘুরে বেড়ানো ঠিক!
-
তার মানে রাত দুপুরে ঘুরে বেড়ানোই অপরাধ?
-
না, তা নয়। আরে ও তো বারে গেছিল মদ খেতে।
-
মদ খাওয়া অপরাধ? না বারে যাওয়া?
মিতালি
এবার আচ্ছন্ন অবস্থায় বলল, একা।
-
একজন ছিল?
মাথা
নাড়ল মিতালী।
-
তার মানে অনেকজন। তাই তো!
-
এক থেকে বহু, সেই তো গণতন্ত্রের আসল সত্য। আর প্রকৃত বিপ্লব আনে চেতনা। আর চেতনার ফসল
হল ২০১১। পরিবর্তন।
মিতালী
হাত নেড়ে ইঙ্গিত করছিল নিজের যৌনাঙ্গের দিকে। অসম্ভব যন্তন্না তো!
অনুব্রতী
জিজ্ঞেস করছিল, কি হল?
-
মিতালী লিঙ্গ বলল, সংঘও।
অনুব্রতীকে
পাশের অনুব্রতী বলছিল, ও কি সংঘ বলছে, না গণ?
তদন্তকারী
মহিলা পুলিশ অফিসার ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে,
জবানবন্দী নেবেন মিতালীর। তিনিই বললেন, গণধর্ষণ বলছে না গণতন্ত্র?
এ
রাজ্যে অবশ্য গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে আবার।
হাসপাতালের
বাইরে খুব জোর ডিজে বাজছে। কাল শিবরাত্রি যে! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রুদ্র অভিষেক হবে!
তারই প্রিলিউড।
মিতালী
অবশ্য তখন সংঘ, লিঙ্গ, একা আর গণকে পাশ কাটিয়ে কেটে পড়ল মহাশূন্যে।
এবার
'ছোট ঘটনা'র পোস্ট মর্টেম হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন