শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

অনিরুদ্ধ সুব্রত

 

কবিতার কালিমাটি ১৩০


নীল বরফ

 

আকস্মিক বরফ পড়তে শুরু করল তারপর

অনভ্যস্ত এ শীতে পর্যুদস্ত হলো অপমানিত শরীর

যার সমস্ত খুলে রাখা জুড়ে বিভৎস কান্না অকপট

ক্রমশ জমে উঠেছে কঠিন, পাথর উদ্বেলিত

রক্তের সংকীর্ত্তন মন্দিরে।

 

ঝাঁক বাঁধা কলকাকলির পাখিরা ফিরে যাচ্ছে হঠাৎ

অকাল শৈত্যে, নিজস্ব জলাভূমি ছেড়ে দূরে দূরে

এতো প্রচণ্ড স্থবির ঠাণ্ডা, এতটুকু ঢেকে নেবার প্রত্যয়হীন,

শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে চোখের সঞ্চিত যত জল

কেলাসিত ভঙ্গুর আজ, আশ্চর্য হৃদয়।

 

একটি স্নানের নদী হলো নীল, ভেসে উঠছে যত

স্তব্ধ-সাঁতারের মৃত মাছ কবিতারা, অনর্গল মুক্ত

ছুটছিল যারা সূর্য চন্দ্রের স্বতন্ত্র আলোর পুলকে

তারা কেবল খণ্ড খণ্ড ভাসমান নীলাভ বরফের মতো নষ্ট,

সুতীব্র অবমাননার স্বপ্ন-শব।

 

দৃষ্টিহীন

 

আমি গন্ধ পাচ্ছিলাম, ফুল ছিল না সেখানে

এমন সুগন্ধি দোষে কেটে গেল সারারাত

ছয় ঋতুর বারোমাস, একদিন যুগান্তর হবে।

 

একদিন হাসি পাবে, অন্ধ নেমে গেলে পথে

বুঝে যাবে বর্ণান্ধ কালো নীলে ডুবে গেছে

রক্তের হলদেটে পটে সবুজ ছোপে ছোপে।

 

কল্প তরলে অবিকল্প বিশ্বাস ছেনে ছেনে সুখে

মুঠো ভরে ভরে গিলেছে এক গোগ্রাস মুখে

ভিখারি শরীরী রোগের তাতে চির আরোগ্য হবে।

 

একদিন থেমে যাবে, বাঁকা সেই ভোঁতা নাক

না-ভেজা মাটির সোদা গন্ধের সংস্কার, অভ্যাস

মেহন-প্রবৃত্ত হাত অথর্ব জড়ের চাকরি নেবে।

 

কতকাল আর গরিব-গোপনে লেগে থাকে দাগ

হঠকারী মানুষ হনন করেছে যার অন্ধবিশ্বাস

নাট্য-সংলাপ-অন্তঃসার, যাবে ঠিক মুছে যাবে।

 

শব্দের মাঠ ঘাট

 

'পাগল' শব্দটির, যখনই অপমান করো

হুট করে ছিঁড়ে যায় তার, একতারার

গান থামে, স্যাঁতসেতে গুমোটের গায়ে

হেলান দিয়ে রাখি--- বাদ্যযন্ত্র, তখনই

অভ্যেসের অভিধান খুলে বসি

বেলা হয়ে যায়, খুঁজি মানুষের

অভিপ্রায়, উচ্চারণ অথবা ধ্যান

 

শব্দ ব্যবহারের লাল শালুর ভিতর

ধ্বনির মজ্জা খাওয়া পোকাদের কিলবিল

পুরনো পুঁথির মতো খেয়ে গেছে

'প্রলাপ' শব্দটিও, এবং আরও

তারপর ফের সেই ভাঙা খুঁটির বারান্দায়

আবার শুরু হয় 'আলাপ' তোমার সঙ্গে

 

পাগলামির স্নায়ুরোগ এভাবে

সারিয়ে দাও যদি, আর কখনও বলব না

শব্দেরও হয় অসম্মান, বলব না

অভিমানে মরে গেছে একুশ হাজার

আদিম উচ্চারণ।

 


1 টি মন্তব্য: