সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

জরিনা আখতার

 

কবিতার কালিমাটি ১২৯


এক সময় এ বেলাভূমি

 

এক সময় এ বেলাভূম এ রকম পঙ্কিল ছিল না

এক সময় এ বেলাভূমি পরিপূর্ণ ছিল সুদৃশ্য নুড়ি ও শুভ্র বালুকণায়;

আজ মলিন আগ্রাসন গ্রাস করে চলেছে বেলাভূমির শুদ্ধতাকে

অসংখ্য কালো হাতে কলঙ্কিত হচ্ছে বালুর স্বচ্ছ শরীর।  

এক সময় কেবল চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় সজ্জিত হতো এ বেলাভূমি

এক সময় সোডিয়াম বাল্বের আলোয় হারিয়ে যেত না তার প্রাকৃত জীবন;

আজ সামুদ্রিক সভ্যতা বেলাভূমিতে স্হাপিত করেছে নগরীর ক্লেদাক্ত ভুবন

ডেকে এনেছে নষ্ট ফেরিওয়ালাদের ——

নিষিদ্ধ লেনদেন আর বেচাকেনার হট্টগোলে আজ আর শোনা যায় না

আসমুদ্র প্রবাহিত নিরন্তর নির্মল বাতাসের গান |

এক সময় নাগরিক কোলাহল আর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার জন্য সমুদ্রে যেত মানুষ

বেলাভূমির অমল গালিচায় মেলে দিত ক্লান্ত শরীর

ফিরে আসতো আকণ্ঠ নির্জনতা আর শান্তি পান করে

আজ কোথায় যাবে মানুষ!

 

অরণ্যগাথা

 

ভেবেছিলাম আর কখনো অরণ্যগামী হবে না মানুষ

নিঃসঙ্গ বেদনায় পাতারা মর্মরিত হবে

ভোরের জমাট কান্না উদ্বেলিত হবে মধ্যাহ্নের তেজে

প্রবাহিত অশ্রুধারায় রচিত হবে অরণ্যের শোকগাথা।

 

ভেবেছিলাম এটাই অন্তিম লগ্ন  ——

মানুষ আর কখনো বৃক্ষের সাহচর্য খুঁজবে না

অপমানে আহত নাগকেশর নীরবে ঝরে পড়বে

ফুলের সৌকর্য মানুষের চেতনায় কোনো ঝড়ই তুলবে না।  

 

অথচ ভাবনা কোনো স্হির কাঁটাকম্পাস নয় ——

একদিন ভাবনার ভাঙচুরগুলো খণ্ড খণ্ড কালো মেঘ রূপান্তরিত হয়,

তারপর সমন্বিত দ্বীপমালার মতো একতাবদ্ধ কালো মেঘের

আশ্রয় থেকে নেমে আসে ঝড়;

শঙ্কায় কেঁপে ওঠে অরণ্যানী

তার বাত্যাবিক্ষুব্ধ আতঙ্ক-ধ্বনিতে

কীভাবে যে জেগে ওঠে অরণ্য-বিস্মৃত মানুষ

কী বিস্ময়করভাবে বৃক্ষের সমব্যথী হয় সে!

পুনরায় রচনা করে অরণ্যের আনন্দ-গাথা।

 

পৃথিবীর হৃৎপিণ্ডের শব্দ

জরিনা আখতার

 

ক্রমাগত শব্দ করে চলেছে পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড——

এই সন্ধ্যায়ও থেমে নেই তার নূপুর-নিক্কণ ,

শ্যামলীর এই গলিপথে আমিও হেঁটেছি তারই মতো

অনেক কাল ——

জানা ছিল না স্হবিরতা কাকে বলে

কার অপর নাম স্হিরতা !

পৃথিবীর সচল হৃৎপিণ্ডের মতো আমিও চকিত

হরিণী হয়ে আকণ্ঠ পান করেছি অরণ্যের জল ——

তারপর আবার ছুটে গেছি আরো গভীর বনান্চলে

যেখানে জীবন ছিল অবিশ্রান্ত শব্দরত ,

শব্দের গহিনে ডুবে ভেবেছিলাম এই-ই সব ;

আজ সে শব্দ থেমে গেছে ,

সন্ধ্যার ঘুলঘুলি বেয়ে ক্রন্দসী রাত এসে নেমেছে লোকালয়ে ——

পৃথিবীর শব্দ থেমে নেই ,

বিরহ-মিলন রেখার দিগন্ত অভিমুখে

অনবরত বেজে চলেছে তার হৃৎপিণ্ড |


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন