কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৯ |
সেতু
‘হ্যাঁ! তোমার মতো শারীরিক সৌন্দর্য অনেকেরই আছে, হয়তো তোমার তাদের থেকে একটু বেশীই আছে, কিন্তু তাতে কি! সেই সৌন্দর্য আমাদের জীবনে কতটা সুখ আনতে পেরেছে সেটাই আসল কথা। তোমার কাছে আমার ভালোবাসার চেয়ে অনেক টাকায় কেনা সুখগুলো বেশি দামী।’
কথাগুলো সেদিন সুতনু বলেছিল মেধাকে। সুতনুর মুখে অপ্রত্যাশিত কথাগুলো শুনে চমকে উঠেছিল মেধা, তবে দুঃখ পায়নি মোটে, দুঃখ তো মেয়েরা আঁচলে বেঁধে ঘোরে, ওটা আর নতুন কি!
মেধাকে ঘিরে প্রতিদিনের অশরীরী প্রত্যাশার জন্ম হয় সুতনুর মনে, সেগুলো পূর্ণতা না পেয়ে হারিয়ে যায় অতৃপ্তির অতলে। তবু রোজের জীবন চলে নিয়মের বাঁধনে। সেদিন মেধাকে কথাগুলো বলেছিল নিছক রাগের মাথায়, বলে খারাপও লেগেছিল — কিন্তু কি ভূল ছিল কথাগুলোয়? চেয়েছিল একটা পরিপূর্ণ ঘর, সারাদিনের ক্লান্তি যেখানে এসে একটু লাঘব হয়। দুটো ছোট্ট হাত এসে আধো গলায় অনর্গল বলবে তার দিনলিপি, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবদার আরও কত কি!
কিন্তু মেধা তার চাকরি-উন্নতি-প্রতিষ্ঠার পিছনে দৌড়েই হারিয়ে ফেলেছে জীবনের মূল্যবান স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছেগুলো।
সুতনুর সে দিনের কথাগুলো তাই মেধাকে দাঁড় করিয়েছিল একটা চুড়ান্ত সত্যের মুখোমুখি, যেখান থেকে মুখ ফেরানো মেধার পক্ষে সম্ভব হয়নি সেদিন, মেনে নিয়েছিল নিজের ভুল।
তবে আজ ওরা একে ওপরকে ধন্যবাদ দিয়েছে অবলীলায়, কেননা সেদিন যদি সুতনু ওভাবে কথাগুলো না বলতো তাহলে আজ ওরা অনাথালয়ের ঐ লম্বা বারান্দায় পাশাপাশি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত না!
এতদিনে
একটা অতৃপ্ত বাসনাকে পূর্ণতার পথে আসতে দেখে ওরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন