বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

অর্পিতা পোদ্দার

 

লিমেরিক ও হাইকু




নাম দুটো চেনা তো? হ্যাঁ ভীষণ চেনা। হাইকুর সঙ্গে অতোটা পরিচিত না হলেও লিমেরিক তো আমাদের ভীষণ চেনা। তবু যদি অসুবিধে হয় বুঝতে, তবে আর একটু পরিচয় দিলেই বোঝা যাবে।

Hickory dickory dock

The mouse ran up the clock

The clock struck one

The mouse ran down

Hickory dickory dock

বা

Cock-a-doodle-doo

My dame has lost her shoe

My masters lost his fiddling stick

And doesn’t know what to do

এইবার নিশ্চয়ই চেনা গেছে... ঠিক ধরেছেন, আমাদের প্রত্যেকের ছোটবেলায় পড়া কিছু নার্সারী রাইম’স, যা দিয়ে আমাদের বেশির ভাগেরই ছন্দের সঙ্গে, ছড়ার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।

লিমেরিককে বলা যেতে পারে পঞ্চপদী ছড়া, যার প্রথম দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইনের মধ্যে ছন্দমিল থাকে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইনের মধ্যে ছন্দের মিল পাওয়া যায়। এর আরও একটি বিশেষত্ব বা চরিত্র বলা যেতে পারে যে, এটি সাধারণত হাস্যরস যুক্ত ও খুব বেশি সোজাসাপ্টা হয়, যার ফলে হয়তো শুনতে কর্কশ লাগতে পারে। ১৮৪৬ সালে এডওয়ার্ড লিয়র তাঁর ‘Book of Nonsense’এ প্রথম এই ছন্দটি ব্যবহার করেন ও তাঁকেই লিমেরিক-এর জনক বলে মনে করা হয়। লিমেরিক নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতামত চালু আছে, তবে সবথেকে গ্রহণযোগ্য বলে যা বিবেচিত হয়,  সেটা হল আয়ারল্যান্ডস্থিত লিমেরিক শহরের একজন হাস্যরসিক কবি রাজনৈতিক লেখাতে এই ধরনের কিছু ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন। সেই লেখাগুলি ছোট হলেও তাতে স্ফুলিঙ্গ ছিল যথেষ্ট। কিন্তু জনপ্রিয় করেছিলেন ‘লিয়র’ই, তাই কৃতিত্ব তাঁর ভাগ্যেই যায়।

এ তো গেল লিমেরিকের ইতিহাস বা জন্ম কাহিনী। সেই নিয়ে আমাদের খুব একটা না ভাবলেও চলবে, আমরা বরং ভাবি যে আমরা হঠাৎ লিমেরিক নিয়ে ভাবছি কেন? ভাবছি এই কারণে যে, সাহিত্যে এই ক্ষুদ্র জিনিসগুলির অবদান অসামান্য। যেমন অণুগল্প, হাইকু কবিতা লিমেরিক। এরা কম শব্দে অনেক কিছু বলে যায়, যা যেমন মর্মস্পর্শী, তেমনই ক্ষুরধার ও তেজী। বাংলা ভাষায় লিমেরিক ঠিক ওই রকম ছন্দের নিয়ম না মেনে লেখা হলেও এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের লেখা পাওয়া যায় সুকুমার রায়ের লেখায়। তাঁর ‘আবোল-তাবোল’ ঠিক লিমেরিকের ছন্দ অক্ষরে অক্ষরে না মানলেও বাংলার প্রথম ও সম্ভবত একমাত্র সফল Nonsense Verse। ‘আবোল-তাবোল’এর জনপ্রিয়তা বা সাফল্য নিয়ে কিছু বলতে যাওয়াই বাতুলতা, তাই সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, কিন্তু এর থেকেই বোঝা যায় যে লিমেরিক সাহিত্যে কেন বা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও যা নিয়ে আরও কিছু কথা বলার আছে তা হল, হাইকু কবিতা। হাইকুর জন্ম জাপানে, লিমেরিকের থেকে অনেক আগে, প্রায় ৯ম শতাব্দীতে। এর চরিত্র আবার লিমেরিকের ঠিক উল্টো অর্থাৎ লিমেরি্কে যেখানে হাস্যরসই প্রধান, হাইকুতে পাই গভীর জীবনদর্শন। হাইকুর আসল আকর্ষণ হল এর ব্যক্তিগত স্পর্শে। জাপানে আগে পাখায় বা রুমালে এইরকম লেখা হাতে লিখে দেওয়া হত। সেই ছোঁয়ায় জড়বস্তুতে প্রাণসঞ্চার হত। কবিগুরু তাঁর ‘জাপান যাত্রী’তে লিখেছেন, “তিন লাইনের কবিতা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না, এই তিনটি লাইনই জাপানের কবি ও পাঠকের জন্য যথেষ্ট। জাপানীদের হৃদয় জলপ্রপাতের মতো নয় বরং বিশাল দীঘির মত...”। সম্ভবত ভারতীয় ভাষায় এটাই হাইকুর প্রথম পরিচিতি।

তাঁর লেখা কিছু হাইকু কবিতার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে...

“প্রভেদেরে মানো যদি ঐক্য পাবে তবে

প্রভেদ ভাঙিতে গেলে ভেদ বৃদ্ধি হবে”

বা      

“একা এক শূন্যমাত্র নাই অবলম্ব

দুই দেখা দিলে হয় একের আরম্ভ”

এরকম বহু আছে, যা জীবনের গূঢ়তম তত্ত্বকে স্বল্প শব্দে ও পরিসরে যথাযভাবে প্রকাশে সক্ষম।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন