কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৮ |
তাজ ও মহাল
তাজমহলের ওপর সূর্য। সকালে। তাতে তাজমহল আলাদা রূপে এল। সেই রূপকে বলল সুরত উল ফজর। গোলাপী সেই রূপ কুস্তিগীরদের ওপর পড়ে। দেশের তাজ ওইসব কুস্তিগীররা সারসার বসে আছে। তাদের কোন কোনজন মেয়ে, যাদের কোন কোনজনকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। সেই জন্য সুরাহার জন্য তারা সারসার বসে। একটু বেলা হতে তাজমহলের রূপটাও একটু অন্যরকমের খোলে। সেই রূপটাকে কোরানের আয়াতে বলল সুরত উল দোহা। তাজা সূর্যের চনমনে রূপ আবার সারিসারি কুস্তিগীরের ওপর দিয়ে ঠিকরে গিয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ঐসব তাজদের বিষণ্ন মুখ দেখা গেলেও তারা বেশ চনমনে এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। তারপর দুপুর বারোটা-একটা নাগাদ সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর আর গনগনে দেখা যাচ্ছে, রোজ এই সময় তাজমহলও তার রূপ বদলে নেয়। এইরূপে তাজমহল হল সুরত উল সামস। একইভাবে কুস্তিগীরদের সারটাও দেখা যাচ্ছে বদলে গিয়েছে। এরপর মধ্য আকাশে সূর্য সরে যায়। তার জায়গা নেয় দুরন্ত মেঘেরা । তারা বর্ষার বার্তাও আনতে পারে এমনটাই বরাবর ভাবা হয়েছে, কিন্তু এবার একটু অন্যরকম হয়। কুস্তিগীরদের বিছানা বালিশ সব ভিজিয়ে দেয় বারিশ। তারা যেখানে সারসার বসেছিল সেই দেশের তাজদের অবস্থান মঞ্চ হাপুশুটি ভিজে একসা হয়ে গেল। এই রূপকে কী বলে জানতে বেরিয়ে পড়ে তাজমহলের কাছে পৌঁছতে সন্ধে হয়। রাতের ঝোঁকে তাজমহল আবারও, এবারও অন্য এক অপূর্ব লাগতে লাগল। ঘোর লেগে লেগে যখন উচ্চারণ করা হচ্ছে সব আয়াত আর মন্ত্রদের। সেসময় পুলিশ এসে কুস্তিগীরদের দঙ্গলকে সরিয়ে দিল হ্যাঁচকা টেনে। কুস্তিগীরদের হ্যাঁচকা টানা অত সোজা নয়, তবু প্রচুর পুলিস মিলে এ ঘটনা ঘটায়। যখন একজন মহিলা কুস্তিগীর বলে বসে, “দেশের তাজ আমরা! এই কী কপালে ছিল!” তখন তাকে কয়েকজন মহিলা পুলিস আরো হ্যাঁচকা মারে। কয়েকজন হজরতের কাছে যায়। হজরত চোখ বুজে ছিলেন। তারপর তিনি চোখ খুলে এই মহাল পর্যবেক্ষণ করে বললেন, “রাতের বেলা তাজমহলের রূপটা বড় গভীর হয়,গম্ভীর সে মহাল। ”
—কী বলছেন হজরত!
হজরত আবার চোখ বোজেন আর বলতে থাকেন, “রাতের তাজমহলের রূপ হল সুরত উল লাইল।” এর সঙ্গে এখনকার কী সম্বন্ধ, এই ভাবতে ভাবতে সবাই ঘরে ফিরে যায়।
তোমার গল্প নিয়ে কোন কথা হবে না দাদা।
উত্তরমুছুন