সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭


ঝড়

-ছুটকি কোথায় যাচ্ছিস?

রমেনের কথায় কিশোরী থেমে যায়। নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় নুপুরের শব্দ জোনাকি পোকার মতো জ্বলতে থাকে। এই শব্দই কি রমেন সেদিন সন্ধ্যেবেলায় শুনেছিল, যেদিন রোহিনীর সঙ্গে একযুগ পরে ঘনিষ্ঠ হল!

-এইতো তুই! কখন থেকে তোকে খুঁজছি জানিস!

রমেন এগিয়ে আসে।

হলুদ রঙের ফুলছাপ স্কার্ট আর মলিন হয়ে যাওয়া লাল রংয়ের জামা পরা মেয়েটা স্থাণু। স্থির। চোখ দুটো অভিব্যক্তিহীন। রমেন দ্বিধায় পড়ে যায়।

কী বলবে ও? কীভাবে শুরু করবে?

-রোহিনী মানে তোর মা এখন কেমন আছে? খাওয়া-দাওয়া করছে ঠিকঠাক?

রমেনের ভেতরের উৎকণ্ঠা বেরিয়ে আসে। তবে কথাগুলো বলেই একবার চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় ও। সন্ধ্যা নামছে। আধো-অন্ধকারে ছুটকির মুখটা দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। এই সময় গ্রামের এই রাস্তাটা দিয়ে কেউ যায় না। টিউশন পড়ে ছুটকি এই রাস্তা দিয়েই যেত, ভাগ্যিস জানা ছিল রমেনের! তাই তো এখানে অপেক্ষা করছে ও!

-কী রে তুই উত্তর দিবি না?

রমেন উতলা হয়। ছুটকির নিরুত্তর থাকা রমেনের ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটায়।

মেয়েটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রমেন ওর চোখের দিকে তাকাতে পারে না।

-মা ভালো আছে, তুমি আর এসো না আমি একাই চলে যাব।

অনেকক্ষণ পর আলগোছে এই কটা কথা বলে ছুটকি। কোনমতে কথাগুলো শেষ করেই উল্টো দিকে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।

রমেন ওর হাতে একটা খাবারের প্যাকেট তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গে কিছু ওষুধ।

ছুটকি ইতস্তত করছে। হাতটা কাঁপছে ওর। ওষুধ আর খাবারটা পড়ে যায় রাস্তায়।

ছুটকি পড়ে যাওয়া প্যাকেটটা তোলার চেষ্টা করে না।

-নিবি না এগুলো? কেন এমন করছিস! আগেও তো কতবার তোদের জিনিস কিনে দিয়েছি! তোর বাবা বেঁচে থাকতেও তো তোদের সাহায্য করেছি। রমেনকাকু কি এতটাই পর হয়ে গেল?

ছুটকি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রমেন রাস্তা থেকে প্যাকেটটা তুলে ওর হাতে দেয়।

-নিয়ে নে এগুলো। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে। তোর মা অসুস্থ। এখন অন্য কিছু ভাবিস না। বাড়ি যা। ঝড়-বৃষ্টি আসছে।"

রমেন বেশ দৃঢ়ভাবে কথাগুলো বলে।

-সেদিন সবটা দেখতে পেয়েছিলাম। তুমি আর মা একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলে। মাকে আর তোমায় অদ্ভুত দেখতে লাগছিল। কিন্তু মা খুব কাঁদছিল তুমি চলে যাওয়ার পর। তাহলে কি মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সবটা...?

ছুটকি কাঠের পুতুলের মত কথাগুলো বলে যায়।

রমেন চোখের সামনে ঝড় দেখতে পাচ্ছিল। ছুটকি প্যাকেটটা ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে।

-'রোহিনী আর আমি ছোট থেকেই ভালোবাসতাম একে অপরকে। তোর বাবার জন্যেই ভেঙে যায় সবটা। তোর জন্যই রোহিনী আর গড়তে চায়নি কিছু। তোর বাবা চলে যাওয়ার পর ও...

রমেন বিড়বিড় করতেই থাকে। ছুটকি দূরে মিলিয়ে গেছে। ঝড় উঠেছে। রমেন দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টির অপেক্ষায়। ভেতর-বাইরে ঝড় নিয়ে রমেন বৃষ্টির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন