কবিতার কালিমাটি ১২৬ |
গভীর ফাটল
মনে পড়ে তুমুল
বৃষ্টি—
একটি ছাতার
নিচে কাকভেজা দুটো
শরীর, হাড়ের
ভিতর শীতের কাঁপন,
বাতাসে সোঁদা
গন্ধ। কারুর দীর্ঘ দৃষ্টি,
শরীর জুড়ে
অবাক শিহরণ, সেতারের
বাদন।শহরে অলিতে
গলিতে লক্ষ্যহীন
বিচরণ, আনন্দ
ভ্রমণ, দীর্ঘ প্রতীক্ষা;
কিছু মান অভিমান,
মধুর বেদনা—
তবুও স্বপ্নের
চেয়েও সুখকর কিছু!
অকস্মাৎ—
সময়ের প্রলেপে
ঢাকা মগজের
দেয়ালে গভীর
ফাটল, ভেসে উঠে কিছু
চিড় ধরা ক্ষণ
— কোনো ভুলতে চাওয়া
নাম, কোনো মুখ;
গভীর সংশয় জাগে—
আনন্দ নিভে
যায়, ক্লেদাক্ত হয় অন্তর।
অদৃশ্য ছায়ার
মতো তারা — কখনো
আবির্ভুত হয়,
অনাহূত—
বিস্মরণ চায়
মন তখন।
একা
সবকিছুতে আছি,
আনন্দ, দুঃখ, কাজে, সকলের মাঝে।
আবার কোনোকিছুতেই
যেন নেই। কিছুই ভালো লাগে
না, কোনোকিছুতে
মন লাগে না, কেবলই থেকে থেকে চোখ
ভরে যায় জলে।
কষ্টগুলি গিলতে চাই, কিন্তু গলার কাছে
এসে আটকে যায়।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, তারপর বিকেল,
সাঁঝ— ছায়া
ঘনায়, ঝুপঝাপ অন্ধকার নেমে আসে পাহাড়ের
খাঁজে, অদূরে
কোথাও বনে জঙ্গলে শেয়ালের ডাক নির্জনতাকে
যেন আরো উসকে
দ্যায়, বুকের ভিতর হু হু করে, হু হু করে।
মন চলে যায়
দূর থেকে দূরান্তে, ঘুরে বেড়ায় কাল থেকে
কালান্তরে।
সারাদিন মনে পড়ে, সারাদিন মনে পড়ে; কারুর
ছায়া দীর্ঘ
থেকে দীর্ঘতর হয়। এ নতুন কিছু নয়, নতুন কিছু
নয়; এই বিষাদের
স্বাদ বহু পুরাতন; জানি শুধু— সহস্র কোটি
জন, সকলের মাঝে
ভীষণ একা আমারই মতন।
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে
নই আমিই শুধু একা।
আলো ছায়া
এই প্রাসাদ
বানিয়েছি
আলো আর ছায়া
দিয়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন
শীতের রাতে
জড়াজড়ি করে বসি
দু’জন, ঘর উষ্ণ
রাখার উনুনের পাশে।
আমরা দুজন,
আংশিক মানব আর মানবী।
আর কোথাও রয়েছে
আরেক অংশ
একই সময়ে,
শত যোজন দূরে, পৃথিবীর দুই
কোণে, যেখানে
পরস্পরকে চিনি না
মোটেও। সেখানেও
রাতভর বৃষ্টির মতো টুপটাপ
শিশির পড়ে,
তবুও কখনো কখনো বুকের
ভেতর কষ্ট পাক
খেয়ে ওঠে অজানা কিছু না
পাওয়ার শোকে।
স্বপ্নের ভিতর দেখি
আলো ছায়া প্রাসাদে
বসে আছে ঘন হয়ে
এক ছায়ামানব
আর মানবী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন