সমকালীন ছোটগল্প |
পোস্টকার্ড
(১)
বাসারফুলের
সেই রাস্তা। পুজোর প্যান্ডেলে বাজা গান। ছোট ছোট প্রেম, অস্থায়ী, পুজো বেসড। হাটের
ভেতর দিয়ে আসা পথ, মনু মামার স্টুডিও, হাইস্কুল, এপাশে রামপ্রসাদের চায়ের দোকান, উল্টোদিকে
ইস্কুলের বাউন্ডারির পাশের সরু রাস্তা, বাঁদিকে কামারদের বাড়ি, হান্নান মামার বাড়ি,
তারপর রাস্তা চলে যাচ্ছে ন্যাতড়ার দিকে। ডানপাশে বিশাল স্কুলের মাঠ, খেলা হলেই স্কুলের
ছাদে ভিড় করে হাটের লোক, শনি বুধে হাট বসে এখানে। আগে বসত মঙ্গল, শুক্কুর। শুক্কুরবার
অসুবিধে হয় জুম্মাবার বলে, তাই শনি, আর শুক্রবার অসুবিধে হওয়ায় মঙ্গলবারও দেখা গেল
ভয়ানক অসুবিধে, গাঁয়ের মেয়ে বৌ এখন মঙ্গলবার মঙ্গলবার হনুমানের পুজো করতে লেগেছে, তাই
মঙ্গলটা বুধবার করতে হল।
আগে
এরকম ছিল না। মঙ্গল, শুক্র দিব্যি হাট বসত, ব্যবসা ফেলে মসজিদে যেতে বেপারীদের বিশেষ
আগ্রহ ছিল না, তারা, যে পুকুর ধারে হাট, সেই পাত্রপুকুরে হাত পা ধুয়ে পুকুরধারে বাঁধানো
শানে বসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিত। ফিরে এসে যখন বেচাকেনায় লেগে যেত আবার, তাদের
মুখে লেগে থাকত জলের স্নিগ্ধতা।
আর
সেইসময় হনুমানের পুজো করার কথাও শোনা যায়নি। এমনিতেই তো এক ঘর দেবতা, নতুন দেবতা এলে
সিংহাসনে আর জায়গা নেই। আরও আগে সোজা সেলুলয়েডের পর্দা থেকে এক দেবীর আবির্ভাব হয়েছিল।
তাঁর নাম সন্তোষী মা। তিনি কে, কীভাবে তাঁর পুজো হয়, তিনি কাঁচাখেগো দেবতা কিনা, না
শিবের মতো একটি বেলপাতাতেই সন্তুষ্ট, এসব কেউ জানত না এ গ্রামে। ঘোষেদের শংকর, যাকে
আড়ালে সবাই উদয়শঙ্কর বলত তার নেচে নেচে হাঁটাচলার জন্যে, ন্যাকাচৈতন্যও বলত কেউ কেউ, কলকাতার মেয়ে
বিয়ে করে আনার পর, সবাই দেখল সেই ফ্যান্টামাটুম বউটি শুক্কুরবার শুক্কুরবার টক খায়
না, এমনকি ছানার একখানি সন্দেশও না, ছোলা খায় টিয়াপাখির মতো, ছোলা আর গুড়। সেই দেখে
তো গ্রামের মেয়েরা চমৎকৃত। সেইসময় অব্দি শুক্কুরবারে
হাট বসত, আর হাটের প্রধান আকর্ষণ ছিল, যথেচ্ছ তেঁতুলজল আর লঙ্কা পেঁয়াজ সম্বলিত আলু
কাবলি। গ্রামের মেয়েরা শালপাতায় মোড়া আলুকাবলি নিয়ে গিয়ে ঘোষ বাড়ির কলকাতা থেকে আসা
নতুন বউটিকে কত সাধাসাধি করত, কিন্তু আলুকাবলির গন্ধে তার জিভে জল এলেও বউটিকে টলানো
যেত না, এমন তার ব্রতর জোর।
বউটির
নাম বুঝি ছিল বন্দনা। তার দেখাদেখি গাঁয়ের
কয়েকটা আইবুড়ো মেয়েও জয় সন্তোষী মা ব্রত করতে শুরু করল শুক্কুরবার শুক্কুরবার। এমনকি
গোছা গোছা পোস্টকার্ড কিনে ছাড়তে শুরু করেছিল অতি তৎপর দু একজন ব্রতধারিণী। তাদের একজন
হল প্রণতি। তখন বাসারফুলে সদ্য ডাকঘর খুলেছিল, একজন প্রবীণ পোস্টমাস্টার আর নবীন গুটি
তিন কর্মী তার। প্রণতিকে ঘন ঘন পোস্টকার্ড কিনতে যেতে হচ্ছিল। এতদিন তার জীবনে পোস্টকার্ড
একটিই উপ-যোগিতাবালী ছিল। তা হল পুরনো পোস্টকার্ড পুড়িয়ে গুঁড়ো করে তার সঙ্গে মায়ের
সিঁদুরের কৌটো থেকে সিঁদুর মিশিয়ে দারুণ একটা গুঁড়ো টিপ তৈরি করা। কী যে অপূর্ব রঙ
হয়, যাকে বলে রেখা কালার। তো সেসব তো বাড়িতে আসা শুভ বিজয়ার পুরনো পোস্টকার্ডেই চলছিল।
‘তোমরা আমাদের শুভ বিজয়ার প্রনাম নিও।’ কিংবা ‘আমার আশীর্বাদ জানিও’ এইসব, কিংবা ‘শুনিয়া
প্রীত হইবে মামনির যমজ পুত্র সন্তান হইয়াছে’ কিংবা ‘বড়মামা গতকল্য রামকৃষ্ণলোকে গমন
করিয়াছেন। নিশ্চয় অবগত আছ যে গত ছয়মাস যাবত তিনি দুরারোগ্য কর্কট ব্যাধিতে ভুগিতেছিলেন।
সেই সংবাদ জানাইয়া তোমাদিগকে একটি পোস্টকার্ড দিয়াছিলাম। তাহা পাইয়াছ নিশ্চয়, কিন্তু
তাহার পরেও একটিবারের জন্যেও অসুস্থ মানুষটিকে
চোখের দেখা দেখিতে আস নাই। রেলপথে যাদবপুর যেকালে একঘণ্টার রাস্তা। এমনকি একখানি
পোস্টকার্ডেও সংবাদ লও নাই। কী আর বলিব। ঈশ্বর তোমাদিগের মঙ্গল করুন’ লোকে একটি ধানের
ওপর দুর্গা ঠাকুর বা মুসুরডালের ওপর হাওড়া ব্রিজের চিত্র নিয়ে আদিখ্যেতা করে থাকে।
কিন্তু একটা পোস্টকার্ডে কত মানুষ যে মহাভারত লিখে গেছেন, তাঁরা কাব্যে উপেক্ষিতই থেকে
গেলেন। সেইসব শিল্পকর্ম পুড়িয়ে টিপ তৈরি করত প্রণতি। তার কপালে ফুটে থাকত কত মানুষের
আনন্দ আর বিষাদ, মৃত্যু আর জন্ম, শুভেচ্ছা আর দীর্ঘশ্বাসের গুঁড়ো গুঁড়ো অক্ষর। কিন্তু সন্তোষী মার প্রচারের জন্যে নতুন পোস্টকার্ড
চাই। তাই প্রণতিকে পোস্ট আপিস যেতে হয়, আর সেখানে শ্যাম বোসের চক থেকে আসা, স্পোর্টস
কোটায় চাকরি পাওয়া সুঠাম গড়নের বাবলু ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা হয়। বাবলু তার কাছে সন্তোষী
মার সম্পর্কে জানতে চায়। বাবলুর জ্ঞানতৃষ্ণা এত প্রবল হয় যে, ছুটির পরে যে ছেলে বাড়ি
যাবে বলে হাঁকপাক করে বাস ধরার জন্যে ছুটত, সে এখন ইস্কুলবাড়ির পর ভাঙ্গা ব্রিজ পেরিয়ে
পুরনো ব্যারাকের পাশ দিয়ে প্রণতির সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কতদূর চলে যায়। এদিকে এখন সর্ষে
লাগিয়েছে চাষীরা, যতদূর চোখ যায় হলুদ হলুদ, এর পরের গ্রাম বাগালিয়া অনেক দূর। পুরনো
ব্যারাকের পর আর কোন বাড়িঘর নজরে পড়ে না। কাকতাড়ুয়া ছাড়া কেউ কোথাও নেই। বাবলু ভালো
মিডফিল্ডার, সে মাঝ মাঠ ভালো সামলায়, কিন্তু এই হলুদের মাঝখানে কীভাবে খেলবে বুঝতে
পারে না, একটা সর্ষে ফুল তুলে কি? মনস্থির করতে না পেরে সে, আ ছি ছি, দেবী চৌধুরানীর
ব্রজর মতো প্রণতির ঠোঁটে চুমু খায়। প্রণতি বলে ‘এ বাবা আজ শুক্রবার তো!’
(২)
প্রণতি
আর বাবলুর বিয়ে হয়ে যাবার পর গ্রামের মেয়েরা, কেন জানি সন্তোষী মার ব্রত আর করে না।
চোখের সামনে ব্রতের ফল এত সার্থক ভাবে ফলতে দেখেও তারা কেন আর সন্তোষী মার ব্রত করে
না, সে আমি বলতে পারব না। এ গাঁয়ের মেয়েদের বিয়ের ভাগ্য খুব ভালো নয়। তের চোদ্দ পেরোতে
না পেরতেই তারা হাই স্কুলের ছেলেদের ঝপাঝপ প্রেমে পড়ে, যাকে এখানে বলে লাফ কাটাকাটির
কেস। এমন লাফ মারে যে বিড়ি বাঁধা সনাতনের ছেলে বা আলুর গুদোমের কর্মচারীর সঙ্গে পালিয়ে
ষোলতেই বাচ্চার মা হয়ে হতশ্রী চেহারা হয়। সেখানে ভাবা যায়, সেন্ট্রাল গরমেন্টের চাকুরে
ছেলে বাগিয়ে নিল প্রণতি! ও যদি সন্তোষী মা না করত, তবে তো ওর গোছা গোছা পোস্টকার্ড
লাগত না, পোস্টকার্ড কিনতে যেতেও হত না পোস্টঅফিসে, আর দেখাও হত না বাবলুর সঙ্গে। এসব
দৃষ্টন্তেও গাঁয়ের মেয়েরা উদবুদ্ধ হতে পারল না। কিংবা ফি শুক্কুরবার হাটে বিক্রি হওয়া
তেঁতুল জল ছড়ানো আলুকাবলির টান সন্তোষী মাকে হারিয়ে দ্যায়। তাছাড়া আর একটা ঘটনা এর
মধ্যে ঘটে সব এলোমেলো করে দ্যায়। শঙ্কর ঘোষেরা পুরনো ঝুরঝুরে ঘোষ বাড়ির দোতলায় থাকত,
এই ঘোষেরা এ গাঁয়ের জমিদার ছিল এক সময়, জমিদারি
চলে গেলেও, বিশাল বাড়িটা রয়ে গেছে। তার ভাঙ্গাচোরা ঘরে নানান শরিক থাকে এখনো, যারা
এর থেকে ভালো বাড়ির সংস্থান করে উঠতে পারেনি। সেখানে গেলে মনে হত এই বুঝি ভেঙে পড়ে
আর কি। কিন্তু ওর মধ্যেই কলকাতার মেয়েটি সুন্দর সংসার পেতেছিল। টানটান চাদর, জানলায়
পুরনো শাড়ি কাটা পর্দা, ফুলদানিতে রঙ্গন ফুল, ঠাকুরের সিংহাসন পরিপাটি। সেই সাজানো
ঘরে, একদিন ভোরবেলা দেখা গেল সে বিষ খেয়ে মরে পড়ে আছে। পুরনো আমলের কড়ি বরগার ঘর, অনেক
উঁচুতে, ঝুরঝুরে অবস্থা বলে সিলিং ফ্যান নেই, নইলে সে হয়তো গলায় শাড়ি জড়িয়ে ঝুলে পড়ত,
তার আর যাই অভাব থাক, নতুন বিয়ে, শাড়ির অভাব ছিল না। কিন্তু টেকনিকাল কারণে আত্মহত্যার
সেই পথটা সে নিতে পারল না, তাকে বিষ খেতে হল। সে মারা যাবার পর সবার কাছে বড় হয়ে উঠল
একটাই কথা - সে বিষ পেল কোথায়? সে কেন মরল
তা নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামাল না। যেন সবাই জানতই ওইরকম ঝুরঝুরে পোড়ো বাড়িতে, ন্যাকা
চৈতন্যের বৌ হয়ে কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকাটাই বরং আশ্চর্য পরাজয়। দেখা গেল
সাফল্যের থেকে ব্যর্থতা মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে, তাই প্রণতি-বাবলুর প্রেমের বিয়ের
থেকে ন্যাকা চৈতন্যের বউয়ের বিষপানে মৃত্যু বেশি প্রভাবিত করল মেয়েদের। তারা আর সন্তোষী
মা করল না। বউটাকেও সবাই ভুলে গেল, কিন্তু মনের মধ্যে ফিসফিস করে কথাটা ঘুরতে লাগল
‘বিষ পেল কোথায়? বিষ পেল কোথায়?’ বহু বছর পরেও সেই কথাটা গ্রামের পথে ঘাটে ধুলো কাদায়
জড়িয়ে রইল, ধুয়ে গেল, কিন্তু রইল, হারিয়ে গেল না।
(৩)
আজ
অনেক বছর পরে পুজোয় বাড়ি এসেছে প্রণতি, বাসারফুলের সেই যুগের যাত্রী ক্লাবের পুজো। ক্লাবঘর থেকে বহুবছর
আগে প্রণতিকে দেখলেই ছেলেরা ‘মাদার’ সিনেমার গান বাজাত ‘কী দারুণ দেখতে, চোখ দুটি টানাটানা
যেন শুধু কাছে বলে আসতে’ সেখানে অন্য কীসব উতপটাং গান বাজছে, সেইসব ছেলেরাও নেই, যারা
আছে, প্রণতি তাদের চেনে না। চেনার মধ্যে সেই শংকর তার বৌ ছেলে নিয়ে অঞ্জলি দিচ্ছে।
প্রণতিকে দেখে শংকর বউকে ডাকে।
‘এই
দেখো, আমাদের গ্রামের মেয়ে। কলকাতায় গিয়ে কেমন ইস্টাইলের বঁটির বাঁট হয়েছে দেখেছ?’
প্রণতির
এখন ঘাড় ছাঁটা চুল, পুজো বলেই এক চিলতে সিঁদুর ছোঁয়ানো সিঁথিতে, শাঁখা বাঁধানোটাও পুজোয়
গ্রামে আসছে বলেই পরা, না দেখলে মা ঘ্যান ঘ্যান করবে। নইলে শুধু লোহা বাঁধানো বারো
মাস বাঁ হাতে। কেমন মায়ার মতো রয়ে গেছে এই লোহা বাঁধানোটুকু। তাছাড়া অনেক জ্যান্ত ভূতপ্রেতের
হাত থেকেও বাঁচায় এই একটুকরো লোহা।
যে
বাবলু একদিন তার পেছন পেছন সর্ষে ফুলের ক্ষেতের পাশে হেঁটেছিল, তার কপালে পোস্টকার্ড
পোড়ানো মেরুন টিপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল, সেই বাবলু বিয়ের পরপরেই বদলে গেল। আসলে বদলায়নি,
ও এমনই। প্রণতিরই বোঝার ফুল ছিল। এগারো ক্লাসের বেশি পড়া এগোয়নি প্রণতির, তাদের গ্রামের
গার্লস স্কুল এইটের পর ছিল না তখন, রোজ বাসে করে টাউনের স্কুল যাওয়া এক ঝকমারি কাজ,
অতক্ষণ প্রণতি বাইরে থাকলে ভাইবোনদের কে ধরবে? সেই প্রণতিকে লড়াই করতে হল একটা চাকরি
পেতে, বাবলুর থেকে খোরপোষ আদায় করতে।
বিকেলে
শঙ্করের বৌ ওদের বাড়িতে জোর করে টেনে নিয়ে যায় প্রণতিকে। প্রণতি দেখে এই এতগুলো বছর
পরেও, অবিকল এক সে ঘর। দোতলার ভাঙ্গা বারান্দা, খসে পড়া চুন বালি আর ছাতা পড়া গন্ধ,
আর কী যেন একটা ফিসফিস শব্দ - বিছানায় ঝকঝকে চাদর, টিভির শব্দেও ঢাকা যায় না। নতুন
বউটি যখন ওকে ঘুগনি খেতে দিল, ওপরে লেবুর রস চিপে, প্রণতি চমকে উঠে বলল ‘আজ শুক্রবার
না? তুমি টক খাবে?’
‘তুমি
টক খাবে? তুমি টক খাবে?’ সেই ভাঙ্গা ঘরে ঘুরতে থাকে। সন্ধে ঘন হয়। মণ্ডপ থেকে মাইকের
আওয়াজ আসে। বউটির মুখে স্পষ্ট ভয় ফুটে উঠতে দেখে প্রণতি।
শঙ্কর
বলে ‘চল তোকে নিচে ছেড়ে আসি’।
সিঁড়ি
দিয়ে নামতে নামতে শঙ্কর বলে ‘বৌ কিন্তু জানে না বন্দনা বিষ খেয়েছিল’
‘বিষ
পেল কোথায়?’
বিষ
পেল কোথায়?’
ঢাকের
নিচে চাপা পড়েও পড়ে না প্রণতির স্বর।
(৪)
বাড়ি
এসে প্রণতি মার খাটের নিচ থেকে টেনে ওর পুরনো
বাক্সটা বার করে। অতীত যেন ওত পেতে ছিল, ঝাঁপিয়ে
পড়ে ওর ওপর। কত কী হাবিজাবি। সরি ম্যাডাম ক্লিপ, গুচ্ছের সিনেমার গানের বই, এক টাকা
দিয়ে কেনা, এক কৌটো গুঁড়ো টিপ আর একগোছা পুরনো পোস্টকার্ড। না লেখা, লেখা। প্রণতি পাগলের
মতো হাঁটকায়। সেসময় টিপ তৈরি করার জন্যে অনেকের কাছ থেকেই পুরনো পোস্টকার্ড চেয়েছিল,
বন্দনার কাছেও, কিন্তু টিপ বানাবার আর দরকার পড়েনি, বিয়ে হয়ে গেছিল। একরাশ পোস্টকার্ড
বাক্সে রেখে চলে গেছিল বাবলুর ঘর করতে, লোকের চিঠি পড়ার কথা মনেই হয়নি, তার একটা বার
করে টেনে-
‘সাবিত্রী
সমানেষু,
তুমি
কেমন আছ জানিতে চাহি না। কারণ এযাবৎ মিথ্যাই বলিয়াছ। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে সংবাদ
সবই পাইয়াছি। তোমার মা দুশ্চিন্তায় ঘুমাইতে পারেন না। তুমি শীঘ্রই চলিয়া আইস। তোমার
আমরা পুনর্বার বিবাহ দিব স্থির করিয়াছি। এই পত্র নষ্ট করিও। দুর্বৃত্তের হাতে পড়িলে
তোমার উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িবে।
ইতি
আশীর্বাদক
বাবা
পোস্টকার্ডটা
নষ্ট করতে পারেনি বন্দনা। ভুলে অন্য একরাশ পোস্টকার্ডের সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিল প্রণতিকে,
তার কপালের মেরুন টিপের জন্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন