প্রতিবেশী সাহিত্য
অনিতা ভারতী’র কবিতা
(অনুবাদ : দেবলীনা চক্রবর্তী)
কবি
পরিচিতিঃ অনিতা
ভারতী হিন্দু সাহিত্যে দলিত মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী
একজন বিশিষ্ট কবি, লেখক, সমালোচক এবং দলিত নারী ও মহিলাদের অধিকারের জন্য এক
লড়াকু কর্মী। তাঁর 'সমকালীন নারীবাদ' এবং দলিত স্ত্রীদের প্রতিরোধ, সমকালীন
নারীবাদ এবং তাদের অবস্থানের মূল্যবান মূল্যায়ন ও সমালোচনা প্রদান করেছে। তার
পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে ১৯৯৪ সালে
রাধাকৃষ্ণান শিক্ষক পুরস্কার, ২০০৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী শিক্ষক পুরস্কার, ২০০৮
দিল্লি রাজ্য শিক্ষকের সম্মান, রামিকাইকা ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৫ সাবিত্রীবাই ফুলে পুরস্কার ও সন্মান দ্বারা
ভূষিত হয়েছেন।
প্রয়োজন
আমার মন বলে
চলে যাই সেই অন্ধ
বদনাম গলির ঘরে
যেখানে ছটপট করেছে
আমার বোনেদের জীবন
যারা জড়িয়ে আছে ইজ্জতের পুরু ওড়না
যা প্রতিদিন কুচলে দিয়ে যায় সমাজ
ইচ্ছে করে,
ওই অন্ধকার বদনাম গলিতে
সদ্যজাত অবোধ কুঁড়ি গুলি
কুড়িয়ে নিয়ে আসি
ফুটে ওঠার জন্য
ওদেরও চাই
স্বচ্ছ হাওয়া নির্মল জল
আর বড় প্রয়োজন
একটা খোলা অঙ্গন।
বাবা তোমার দলিত কন্যারা
তোমার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া
নিজের প্রাপ্য অধিকারটুকু
চেয়ে নেওয়া জন্য
তাও কি পাওয়া সম্ভব?
বাবা! এক পরাধীন জাতির
পরাধীন মানুষ হয়ে
অশিক্ষা আর অভাবের মধ্যেও
সমস্তরকম দায়ভার জড়িয়ে
নুন আর হলুদের আশায় জর্জরিত
কন্যারা স্বপ্ন দেখে আর নিজের
অধিকার চায় তোমার কাছে বাবা।
ও আমার ভালো বাবা!
তোমার দলিত কন্যারা
তোমার দুঃখ, দুর্দশা
তোমার অপমানের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হতে চায়।
তারাও তোমার সাথে মিছিলে হেঁটে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
মরতেও প্রস্তুত
ঝলকারি, ঊদা, মহাবীরি, সাবিত্রীর মতো
শক্তিশালী, দৃঢ় ও স্বাধীন নারী যেমন।
ও বাবা! সাথে থাকো
তোমার দলিত কন্যারা
ভীষণ সক্রিয়
ও লড়াকু
তোমার সাথে
পাল্লা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
স্বাভিমানে মাথা উচুঁ করে
অসাম্যের বিরুদ্ধে
সাম্যের পতাকা হাতে
নেতৃত্বের লাগাম হাতে
বাবা তোমার দলিত কন্যারা।
এসো বাবা
আমার সাথে পা মেলাও বাবা...
অদ্ভুত কথা
কী অদ্ভুত কথা
আমরা একথাই ভাবি যে
আদর্শ আসলে শুধুই একটা কথার কথা
মেনে চলার বিষয় নয়
আমরা সততা ন্যায় আর সাম্যতা
লিখে দিতে চাই বইয়ের পাতায়
আর সেটা হয়ে ওঠে আমাদের
বক্তৃতার প্রিয় বিষয়
কিন্তু বাস্তব জীবনে তাকে মেনে নিই না
আমরা বারবার দিব্যি খাই
আমাদের আদর্শের আর
পক্ষ সমর্থনের ভিড় দেখে
আমরা উৎসাহিত হয়ে উঠি
জয় ভীমের স্লোগান শুনে
আমাদের গলা বুজে আসে,
চোখ ভরে ওঠে আর ফুঁফিয়ে উঠি
কিন্তু মনে রাখি না,
সেই সময় জয় ভীম কতটা
দুঃখ কষ্ট সহ্য করে অন্যায়ের বিরোধিতা করেছিল
আমরা, চোখ বন্ধ করে নিই
আমাদের চোখের সামনে কোন অন্যায় দেখে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন