কবিতার কালিমাটি ১২৩ |
মৎস্যকুমারী
সে আসবে
যখন সময় হবে
হয়তো তার ভেজা
শরীরে লেগে থাকবে স্রোতের কারুকাজ
পিছল শরীর থেকে
লোনা জল ঝরে পড়বে মুক্তোর মতো
রূপসী শরীরে
লেগে থাকা কয়েকটি বালুকণা হীরের দ্যুতি ছড়াবে;
ঘাই মেরে চলে
যায় সে এক ঢেউ থেকে আর এক ঢেউয়ে
চতুর ধীবরও
পারে না তাকে আটকাতে
জালের জটিল
ফাঁদে সহসা সে দেয় না ধরা
তবু সে আসে
যখন সময় হয়;
জানে না কেউ
কবে কখন কীভাবে
কোন ধীবরের জালে আটকাবে সে
তার আঁষটে শরীর
থেকে ছড়িয়ে পড়বে কবিতার সুঘ্রাণ,
ধীবর-কবির জাল
ছিন্ন করে এক সময় মূর্ত হয়ে উঠবে সেই মৎস্যকুমারী!
শব্দ-শস্যের রাত
চারদিকে অঘ্রাণের
সুবাতাস
ঘরে ঘরে ফসল
কাটার উৎসব
রাতভর চাষিদের
ধান মাড়াইয়ের কোলাহল আর
পিঠে-পুলি-পায়েসের
আয়োজনে পাড়াগাঁ জেগে আছে
নিদ্রাকাতর
দুচোখ মেলে;
আমার জমি-জিরাত
নেই, নেই কোনো ফসলি জমি
আছে এক খন্ড
শব্দ-শস্যভূমি
সে ভূমি বর্গা
দিই না আমি
ভাগচাষিদের
সাথে ভাগাভাগিও করি না
নিজেই কর্ষণ
করি, মই দেই, লাঙল টানি,
শব্দ-শস্য বীজ
বুনি, শব্দ-চারা তৈরি করে
কর্ষিত মাটির
বুকে রোপণ করি।
যত্নে ও মমতায়
জল সেচন করি, নিড়ানি দিই
ক্রমে ক্রমে
বেড়ে ওঠে আমার শব্দ-শস্যেরা
ফলবতী শরীরের
ভারে নুয়ে পড়ে রৌদ্রস্নাত মাটির বুকে;
আজ আমার ঘরেও
ফসল কাটার উৎসব
রাতভর শব্দ-শস্য
মাড়াই হবে, গোলাঘর পূর্ণ হবে শব্দে শব্দে,
তারপর সেইসব
মজুদ শব্দ পূর্ণতা পাবে একটি কবিতায়
আজ এই শব্দ-শস্যের
রাতে।
রাতের নিজস্ব শব্দ
শব্দগুলোর ঘর
নেই নিরাশ্রয় বাউল
ভাঙা একতারা
হাতে ঘুমকাতুরে মানুষদের আশ্রয় পেরিয়ে
চলে যায় আরও
দূর নিরাশ্রয়ে,
কিছু শব্দ পড়ে
থাকে পরিত্যক্ত আখড়ায়,
এক সময় বর্জ্য
হয়ে অপসারিত হয়ে অন্য কোথাও,
শূন্যতায় শব্দহীনতায়
রাত জেগে থাকে কোনো কোনো ঘরে,
পথের ধারে,
নদীর জলের স্থিরতায়;
তবুও রাতের
নিজস্ব কিছু শব্দ আছে
বিরোহী বধূর
মুখরেখায়
বোবা মেয়ের
কান্নায়
প্রতীক্ষারত
প্রেমিকার অস্থির চোখের তারায় শব্দগুলো কথা বলে;
নিদ্রাহীন রাতের
প্রশস্ত বুকে শব্দগুলো শুয়ে থাকে গভীর ভালোবাসায়,
ঠোঁটে ঠোঁট
রাখে, হাতে হাত
অসম্ভব আন্তরিকতায়
অস্ফুট গুঞ্জন তোলে
সে গুঞ্জন কখনও
কখনও কেউ কেউ শোনে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন