রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৩


একগোছা রজনীগন্ধা

ইক উম্র কট গঈ হ্যায় তিরে ইন্তিজার মে

ঐসে ভী হ্যাঁয় কি কট সকী জিনসে এক রাত

–– ফিরাক গোরখপুরী

স্বপ্নার জীবনে তো আর কিছু পাওয়ার নেই। তাঁর এই নব্বই বছরের জীবনে, আর বেঁচে থাকার প্রয়োজন কী, তিনি ভাবতে থাকেন। রাত দুটো, তিনটে। আজকাল ঘুম আসে না। আলো জ্বেলে বিছানায় বহুক্ষণ। এই শেষ বয়সে প্রায়ই অসুস্থ থাকা আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোয়াতে হয় তাঁকে। সকালের আয়া দিনেরটা সামলে দিলে, রাতের আয়ার সাহায্যে রাত্রিযাপন। ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনি যে যার কর্মস্থানে ব্যস্ত। তাদের সবাইকে মনে মনে  প্রাণভরা আশীর্বাদ দেন সবসময়। কখনও কখনও ফোনে কথাও হয়। কখনও কখনও দেখাসাক্ষাৎ। এ পর্যন্ত এইরকম চলছিল। আজ সন্ধ্যেবেলা একটি ফোনকলে তাঁর প্রথম যৌবনের উচ্ছ্বাসভরা দিনগুলি জ্বলজ্বল হয়ে উঠল।

জীবনটা যেন বোধশূন্য অবস্থায় পৌঁছে গেল। এই তো সেদিন বছর কুড়ির দুই যুবক-যুবতী কোনো পরোয়া না করে, সারাদিন কলেজ লাইব্রেরী গঙ্গার ধার,  কোনো-কোনোদিন সিনেমা। কোনোদিন স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে অজানা গন্তব্যে ঘুরতে বেশ ভালো লাগতো তাদের। তখন সব পারতো তারা, কিন্তু এখন অবস্থা অবস্থান নিয়ে ভাবনা এসে পড়ে মাঝখানে। কী করবেন স্বপ্না? থমথমে মুখে  জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন স্বপ্না। ইতিমধ্যে রাতের আয়া এসে গেছে।

কলিংবেল বাজছে। হাতে একগোছা রজনীগন্ধা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বছর নব্বই-এর শ্যামল, স্বপ্নার বেডরুমে। দুজনেই চুপ করে রইলেন দীর্ঘক্ষণ। শ্যামল আন্তরিকভাবে বললেন, ‘জীবনযুদ্ধের এখনও অনেকটা বাকি, স্বপ্না। এসো, শুরু করি।’ স্বপ্না হাসতে থাকলেন। রজনীগন্ধার সুগন্ধে ঘরটা বেঁচে থাকার সুবাসে আকুল হয়ে উঠল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন