কবিতার কালিমাটি ১২১ |
প্রত্নতাত্ত্বিক দীর্ঘশ্বাস
ইতিহাসের অন্বেষণে মানুষগুলো অবিরাম খুঁড়ে চলেছে
মাটি,
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বেরিয়ে আসে কিছু হাড়-গোড়, ভাঙা
মৃৎপাত্র,
দেয়ালগাত্র, তামা ও লৌহ নিদর্শন
দেয়ালগাত্রে শিকারীর ছবি, ঘোড়দৌড়ের অস্পষ্ট আভাস,
নারীর মুখায়বয়ব
আর বাতাস ভারি করা কিছু দীর্ঘশ্বাস,
তবে তো এখানে কিছু অসুখী মানুষের বাস ছিল!
দুঃখ দিনের গাথা রচনা করতে করতে মানুষগুলো একসময়
হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,
গোধূলির আবছায়ায় যখন ঘরে ফিরতো তখনও হয়তো
বিষাদ ওদের মুখে এঁকে দিত নির্বেদ-কারুকাজ
তারপরও হয়তো স্বপ্ন দেখতে চাইতো ওরা,
নর্তকীর নাচের মুদ্রায় আনন্দ খুঁজতে খুঁজতে ঘুমকাতুরে
মানুষগুলো আবারও স্বপ্ন দেখতো;
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বেরিয়ে আসে এইসব
দুঃখভারে ন্যুব্জদেহ কিছু মানুষের নুয়ে পড়া জীবনের
গল্প,
টুকরো টুকরো ভাঙা কাঁচের মতো ওদের ভগ্ন স্বপ্নের
নিদর্শন।
নামতাবিহীন ধারাপাত
করোটিতে মেদ জমে আছে
অতীত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে গেছে এই মেদবহুল সংসার
ছেড়ে
ঝরা পাতার মতো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বর্তমান
ছায়া শরীরী ভবিষ্যৎ অন্ধকারে গুমরে গুমরে মরছে
তবু কোথায় যেন শঙ্খধ্বনি শোনা যায়
কে বাজায় শঙ্খ, কোন পুরনারী
তার শাড়ির আঁচলে কি জীবনের ঘ্রাণ লেগে আছে!
তার জীবনের হালখাতায় কি নতুন হিসেব শুরু হয়েছে!
তার ধারাপাতের নামতার ঘরে কি নৃত্যপর প্রজাপতির
আলোকিত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি!
এদিকে নামতা মুছে গেছে ধারাপাত থেকে
জলহীন চৌবাচ্চার মতো জীবন ক্রমেই শুষ্ক হচ্ছে
সবুজের বরাভয় ভুলে ধূসরতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে
সময়
জগদ্দল পাথরে মতো বর্তমানের বুকে চেপে আছে
নিষ্ফলা অতীত আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
জলছবি
যতবার তোমাকে দেখি ঘাই মেরে ছুটে চলে যাও অন্যদিকে
স্পষ্ট তোমাকে দেখার আগেই অদৃশ্য হয়ে যাও
জানি তুমি আজ আর শরীরী নও
আলো-অন্ধকারের মাঝে অস্পষ্ট অশরীরী;
শেকড়ের নির্যাসে নেই তুমি
বৃক্ষ-শাখায় নেই
পাতায় নেই, ফুলে নেই
সবুজে নেই, নীলে নেই
লালে হলুদে নেই
কেবল এক সাদা কফিন
অন্ধকারময় কালো অতীত
সাদা-কালোর মিথস্ক্রিয়ায় স্পর্শহীন;
যে নদী তীরে ভিড়ে না
যাত্রীর ওঠানামা নেই
জনসমাগম কোলাহল নেই
যেন স্তব্ধতার সেতারে বন্দি নীরবতার অভিজ্ঞান
তুমি সেই নিশ্চুপ মৃত শুষ্ক নদী
জনহীনতায় জলছবি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন