সলমন রুশদি এবং স্বাধীনতার
৭৫ বছর
(তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ, অমর উজালা)
ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর মহা সমারোহে উৎযাপন করা হলো সারাদেশে ‘অমৃত মহোৎসব’ নামে। ঠিক একই সঙ্গে বিশ্বের বহু আলোচিত ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক সলমন রুশদি তাঁর জীবনের ৭৫ বছর উৎযাপন করছেন, যখন সারা সাহিত্যমহল তাঁর নোবেল পুরস্কারের ঘোষণার অপেক্ষায়, ঠিক তখনই তাঁকে আহত হতে হলো এক অমানবিক অশালীন ও কট্টরপন্থী সমাজের হাতে।
১৯৪৭
সালে ১৯ জুন মুম্বাই শহরে জন্মেছিলেন স্যার আহমেদ সলমন রুশদি। তিনি জন্মসূত্রে একজন
কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারের ছিলেন। তিনি নিজেকে 'মিডনাইটস্ চিলড্রেন' বলে চিহ্নিত করেন।
আসলে তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাসের নাম 'মিডনাইটস্ চিলড্রেন' যেখানে ১৯১৫ থেকে ১৯৭৭ সালের
ভারত চিত্রিত। এই ঐতিহাসিক উপন্যাসে ভারতের স্বাধীনতা এবং ওই তিন দশকের মধ্যবর্তী সময়ের
ইতিহাস, মুখ্য ঘটনাবলী এবং সেই সময়ের ব্যক্তিত্ব সমূহকে একত্রিত করেছেন। এই উপন্যাসের
মুখ্য চরিত্র আচার ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শ্রমিক সেলিম শিনাই এবং তার তিন প্রজন্মের জীবন
ও অনুভব প্রকাশিত হতে হতে পাঠককে পৌঁছে দিয়েছে শ্রীনগর, অমৃতসর, আগ্রা, মুম্বাই ও
করাচী এই সব জায়গায়। তার সাথে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন - ভারত ছাড়ো আন্দোলন,
ক্যাবিনেট মিশন, দাঙ্গা, মুসলিম লীগ, জলিওয়ানাবাগ হত্যাকান্ড, পাকিস্থান যুদ্ধ, বাংলাদেশের
মুক্তি আন্দোলন - সব কিছুর বর্ণনা আছে।
আসলে
এই আত্মকথাত্মক ম্যাজিকাল রিয়ালিজম উপন্যাস তাঁকে এক উত্তরৌপনিবেশিক সাহিত্যের প্রধান
উপন্যাসকারের মর্যাদায় উন্নীত করেছে এবং এরপরই তিনি ১৯৮১ সালে বুকার পুরস্কার পান।
১৯৯৩ সালেও এই উপন্যাসের জন্যই আবার বুকার ওফ বুকার্স সম্মানে ভূষিত করা হয়। এমনকি
২০০৮ সালে তাঁকে বেস্ট অফ বুকার সম্মান ও ব্রিটেন তাঁকে 'স্যার' উপাধি দেয়।
উপরিউক্ত
উপন্যাস ছাড়া সলমন রুশদির ঝুলিতে আরো যে মণিমুক্ত আছে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য স্যালিমার দ্যা ক্লাউন,
শেম, দ্যা গ্রাউন্ড বেনেথ হার ফিট, গোল্ডেন হাউস, দ্যা সেটনিক ভার্সেস প্রভৃতি। তাঁর
লেখা কমপক্ষে ৩০টি বইয়ের মধ্যে ফিকশন, নন-ফিকশন, উপন্যাস, এমনকি ছোটদের জন্য লেখা বইও আছে। তিনি নিজের ছেলের
জন্য হারুন অ্যান্ড দ্যা সী ওফ স্টোরিস লিখেছেন।
ব্যঞ্জনাপূর্ণ
কাব্যিক ও যুক্তিপূর্ণ হাস্যবোধের নিরিখে নিজের কথা বলতে সক্ষম রুশদি তাঁর চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্যা সেটনিক ভার্সেস’
১৯৮৮ সালে ব্রিটেনে ও ১৯৮৯ সালে আমেরিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরই সাহিত্য ও রাজনৈতিক
মহলে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তার নামে ফতোয়া জারি হয়, করেছিলেন
ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি। অপরাধ — ‘ধর্মদ্রোহ’।
খোমেইনি মারা গিয়েছেন, কিন্তু ‘ফতোয়া’ জারি থেকেছে বছরের পর বছর। সলমনের মাথার দাম রাখা হয়েছে প্রায়
৩০ লক্ষ ডলার। তাঁর জীবন সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। তাঁকে এই কারণে ঠিকানা বদল করতে
হয় বারবার এবং জীবন সুরক্ষার জন্য নজরবন্দিও
থাকতে হয়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি, সর্বসমক্ষে রুশদির ওপর হামলা হয়, ছুরিকাঘাত করা
হয়।
স্পষ্ট
লেখনীর জন্য প্রশংসিত রুশদি ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে একবার আক্ষেপ
করে বলেছিলেন, ‘‘সে সময়ে ইসলাম তেমন কোনও বিষয় ছিল না। কেউ অত ভাবতও না। এখন যেটা হয়েছে,
পশ্চিমের মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। বইটা সম্পর্কে সত্যিই ভুল
বোঝা হয়েছিল। সত্যি, লন্ডনের দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের নিয়ে লেখা”। এক বিখ্যাত সংবাদ
মাধ্যমের আলাপচারিতায় তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, তিনি কি ধর্মে বিশ্বাসী নন?
উত্তরে
তিনি বলেন: “মিডনাইটস্ চিলড্রেন-এর এক ঠাকুরদার চরিত্রের মতো তিনিও মনে করেন। উপন্যাসে ঠাকুরদা বলেন যে, ঈশ্বরের
প্রতি তাঁর বিশ্বাস ক্রমশ ক্ষয় হচ্ছে, কারণ তাঁর অন্তরে যেখানে ঈশ্বরের বাস ছিলো সেখানে
ধীরে ধীরে ছিদ্র দেখা যাচ্ছে”।
“আসলে
আমি এটা কখনোই বলি না যে ধর্ম আমার জীবনে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কিন্তু আমি একদমই ধার্মিক নই”।
তিনি
তাঁর বিতর্কিত উপন্যাস সমন্ধে বলেছেন –“আমাকে যদি এই উপন্যাস সম্বন্ধে কিছু বলতে বলা
হয়, তাহলে এক লাইনে এই কথাই বলবো - এটি সম্পূর্ণ
রূপে রূপান্তরের কথা, পরিবর্তনের কথা। এই পরিবর্তন হলো যখন সমাজ এমন কোন বদলের পরিস্থিতির
মধ্যে দিয়ে যায়, তখন তার প্রভাব ব্যক্তি, জাতি ও তার সংস্কৃতির ওপর পড়ে, আর এখানে
সেইরকম পরিবর্তনের কথাই বলা হয়েছে”।
তিনি
তাঁর আলাপচারিতার শেষে তাঁর বিরোধিতার সময়ের বিভীষিকাময় দিনের কথা উল্লেখ করে ব্যথিত হয়েছিলেন।
ভালো লাগল। আরও একটু বিস্তারে গেলে বোধ হয় আরও ভালো লাগত।
উত্তরমুছুনবাহ ভালো লিখেছস।তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।চালিয়ে যা।কলমকে কুর্নিশ। ❤️❤️
উত্তরমুছুনস্বাধীনতার ৭৫ বছরের প্রেক্ষিতটা আলোকিত হলো না তো...
উত্তরমুছুনদারুন। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন