কবিতার কালিমাটি ১২১ |
দ্বিধান্বিত আমি
দু’ভাগে বিভক্ত
মনটাকে বাক্সে
পুরে ঠায় দাঁড়িয়ে;
ঝড়ের গতিতে মগজে
চলে জীবনের
সব হিসেব-নিকেষ।
চাইলেই এখনো
ধরা যায় বাসটি; কিন্তু নিচ
থেকে নেমে চলে
গ্যাছে এখন জটিল
সব গঠন, অগণিত
সর্পিল সিঁড়ি নেমে গ্যাছে
অন্তহীন অতলে
গভীর থেকে গভীরে।
হাতের মুঠোয়
একখন্ড স্বপ্ন, রুমালের মত ধরা,
ঘামে ভিজে সপসপে।
পায়ের নিচে
যেন বেড়ে ওঠে
গাছপালা — তারপর সময়ের
প্রলেপ পড়ে
পড়ে প্রস্তরীভূত হতে থাকে
যেন সমস্ত শরীর,
হৃদয়ের ধুকপুক জেগে থাকে
শুধু। যখন তখন
বাস যাচ্ছে ছেড়ে,
দ্বিধান্বিত
আমিই রয়েছি কেবল দাঁড়িয়ে থেকে
থেকে টান দ্যায়
জটিল সেইসব সংযোজন।
অতীতচারণ
এই সেই ঝর্ণা,
বহুকাল আগে সে অন্য এক
জনমে এইখানে
নিমজ্জিত আমি। আজো
আকাশের কোল
ঘেঁষে সেই পাহাড়, সেই ছায়া
ঢাকা বুনো পথ
— আর এর ভেতর যেন কোথাও
বন্দি, সেই
মাতাল দুরন্ত সময়, সেই ক্ষণ, অতল
অতর্কিত এক
স্পর্শ, সেই অবিনশ্বর মুহূর্ত! গাছের
পাতায় পাতায়
নরম রোদে হঠাৎ ঝিকিয়ে ওঠা
ঊর্ণাজাল —
মনকে আদ্র করে, ভীষণ ভীষণ আদ্র
করে। অতীতচারণ,
সে তো অতীতচারণ নয় মোটেও;
সময়ের আবর্তনে
এখন তার ওপর পলির প্রলেপ—
বিভ্রম, বিস্মৃতি,
দুর্বোধ্য সব মেটাফর — কল্পনা, সতৃষ্ণ
আকুলতা, গভীর
বিষাদ এবং আরো কত কী যে!
প্রতিদিন এখন
অতীতের সাথে অল্প অল্প গল্প মেশে।
একাকিত্ব
অনেক অনেক কথা
বলতে ইচ্ছে হয়;
বলার কিছু আছে
নাকি বাকি? হয়তো নেই,
কেবল ইচ্ছেটাই
খরস্রোতা নদী হতে
চায়। বিশ্বাস
অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব, শত সহস্র মত
আর পথের মাঝে
বিহ্বল, বিমুঢ় এক
মূর্তি। অলৌকিক
কোনোকিছুর, অথবা অপেক্ষায়
থাকে কোনো অভয়
বাণীর; মাথার
ওপর কোনো সদয়
হাত নেমে আসে যদি আবারো!
ঝড় থেমে গ্যাছে
অনেক আগে, চারদিক
নিস্পন্দ, অকথিত
এক নীরবতা ঝুলে আছে যেন;
আকাশ তো আকাশ
নয়, আসলে যে
সব শূন্য; ভয়াবহ
একাকিত্ব এই মহাশূন্যে। মোহ,
মায়া সব বিলীন
হয়ে গ্যাছে কিংবা যাচ্ছে!
তাও ক্ষীণ আশা
জাগে মনে, আবারো সত্য যদি
আবির্ভূত হয়
কখনো! গুপ্ত কোনো সংকেতের
আশায় — শেকড়হীন,
বাস্তুহীন, গুরুত্বহীন একজন—
বসে থাকে অবেলায়,
মহাশূন্যে একটি
বিন্দুর মত,
সম্পূর্ণ একা — উন্মুক্ত, অরক্ষিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন